নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'পৃথীবিকে গড়ার আগে,সবার আগে নিজকে গড়ো\' (Build thyself to build the world)

অভ্র হাসান আবির

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র,নানান ভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্রি

অভ্র হাসান আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ছায়ার সাথে বসবাস............

১২ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:২৬

→‘কি হে কোথায় যাচ্ছো?ওখানে কি?’

‘ওখানে কিছু না।চলো আজ ওখানে
কিছুক্ষণ কাটাবো।সব সময় তুমি আমাকে
নিয়ে যাও,আজ আমি তোমাকে নিয়ে
যাবো।চুপচাপ কোন কথা নেই,চলো।’

→‘আরে না,ওটা পরিত্যক্ত বাড়ি,খুব
ভৌতিক পরিবেশ।ভয় করবে।’

‘ওহ!তাহলে তো আরো ভালো।দুজন
মিলে ভূত দেখবো।ভূতের সাথে কথা
বলবো।’

→‘মেয়ের সাহস কতো!ধুরু,আমার ভূত ভালো
লাগে না,পরী ভালো লাগে।’

‘পরী ভালো লাগে?হি হি হি... পরীদের
সাথে প্রেম করবা নাকি?’

→‘হুম, আমার ভীষণ ইচ্ছা একটা পরীর সাথে
প্রেম করার।তার সাথে তাদের দেশে
বেড়াতে যাবো,অনেক মজা হবে।তুমি
যাবে?’

‘হে পরী জাতি তোমরা শুনো, অভ্রের
নাকি পরীদের ভীষণ ভালো লাগে,
তোমরা একজন ওর সাথে প্রেম করো আর
ওকে তোমাদের দেশে নিয়ে যাও,
হাহাহহাহা...’

→হাসতে হাসতে আর হাঁটতে হাঁটতে
আমরা একেবারে বাউন্ডারীর ভিতরে
চলে এলাম।বিশাল পুরাতন বাড়ি,
পরিত্যক্ত।বাড়ির সীমানা প্রাচীর
ঘেঁষে অসংখ্য দেবদারু গাছ।গাছগুলোর
বয়সও কম না।আরো অসংখ্য লতাপাতা
ঝোপঝাড় -এ বাড়ির নির্জনতাকে যেন
আরো বেশি নিবিড় করে তুলেছে।
বাড়ির সামনে বিশাল উঠোন,উঠোনের কোল
জুড়ে সবুজ ঘাস যেন শামিয়ানা বিছিয়ে
দিয়েছে।তবে ঘাসের অবস্থা দেখে
বুঝা-ই যাচ্ছে কেউ একজন এখান থেকে
নিয়মিত ঘাস কেটে নিযে যায়।
আমরা দুজন উঠোনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে,
বাড়ির এদিক সেদিক দেখছি।এতো
বেশি গাছপালা,ঝোপঝাড়, বাড়ির
পুরো পরিবেশটাকে ছোটখাটো একটি
অরণ্যের সাথে তুলনা করা যায়।গাছের
নিচে শুকনো হলুদ পাতা পড়তে পড়তে
মোটা স্তর হয়ে গেছে।কুড়ানোর কেউ
নেই!পাতা কুড়ুনো ছেলেমেয়েরা
পেলে হয়তো অনেক খুশি হতো।
উঠোনের দক্ষিণ প্রান্তে অনেক বড়
লাউয়ের মাচা।কয়েকটা পুঁই শাকের
লতাও বেড়ে উঠেছে,শাখা-প্রশাখা
মেলে দিয়েছে মাচায়।আরো অনেক
শাক সবজির গাছ।
বাড়ির মূল দরজা উত্তর মুখি হলেও
পূর্বমুখি আরেকটি ছোট দরজা আছে।
আমরা দুজন পূর্ব দরজার সিড়িতে গিয়ে
বসলাম।

‘আচ্ছা,তুমি এ বাড়ি সম্পর্কে কিছু
জানো নাকি?’

→‘না।তুমি জানো?’

‘হুম,আমার এক খালু থেকে শুনেছিলাম,
এই বাড়িটি নাকি বৃটিশ আমলের!
এখানে এলাকার জমিদার থাকতেন।
ওনার অনেক জমিজামা ছিল।এলাকার
লোকেরা ওনার জমিতে চাষ করে
ওনাকে খাজনা দিতেন।অন্যান্য
জমিদারদের মতো ওনি নাকি এতো
নিষ্ঠুর ছিলেন না।এলাকার লোকেরা
ওনাকে অনেক ভালোবাসতেন।
দেশ স্বাধীনের পরও ওনারা এখানে
ছিলেন।ওনারা কয়েক পুরুষ ধরে এখানে
জমিদারী চালিয়েছিলেন।
সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে সব কিছু
বদলে ‍যায়।এরশাদ আমলের শুরু দিকে
জমিদার পরিবারের উত্তরসূরিরা এই
মফস্বল ছেড়ে শহরে চলে যায়।
চকবাজারের ওখানে নাকি ওনাদের
বিশাল বাড়ি, বড় বিজনেসও আছে। তবে
ঈদ-কুরবান ছাড়াও ওনারা মাঝে মাঝে
এখানে আসেন,কবর জিয়ারতের জন্য।’

→‘তাই বুঝি।এতো বিশাল বাড়ি অথচ
এখানে কেউ নেই।বড় লোকের ধন নাকি
মাটিই খায়।হয়তো ওনাদের বেলায়ও
তাই হচ্ছে।’

‘হুম,হয়তো।’
‘এই চলো আমরা ওদিক থেকে একটু হেঁটে
আসি।’উত্তর দিকে হাত দিয়ে ইশারা
করে নীলুফার বললো।

→আমিও সম্মতি জানালাম, ‘হুম চলো।’
পাশাপাশি ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে
আমরা বাড়ির প্রায় উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে চলে এলাম।
এদিকে অনেকগুলো গাঁদা ফুলের গাছ।
নীল সাদা চামচ ফুলের গাছও অনেক,
একেবারে লতা বেয়ে যেন শুকনো
বাঁশের গায়ে আলপনা হয়ে আছে।বড়
চামেলী ফুলের গাছও আছে অনেক।
আরো অনেক ফুলের গাছ, হয়তোএখানে
জমিদারদের বাগান ছিলো।
একটি লোহার দোলনাও দেখছি এখানে,
অনেক পুরানো,জং ধরে একেবারে শেষ
করে দিয়েছে। এমন প্রাচীন পরিবেশে এই
দোলনাটাকে এমন সাজেই যেন মানাচ্ছে ভালো।
সেগুন গাছের বড় বড় কয়েকটা পাতা
নিয়ে আমরা দুজন দোলনাটায় গিয়ে
বসলাম।

(মাথার এলোকেশে হাত দিয়ে
আচড়াতে আচড়াতে)
নীলুফার বললো, ‘এই
একটা কবিতা শোনাওনা’

→‘কবিতা?আমি তেমন কবিতা পারি না।’

‘তেমন পারতে হবে না,যেমন পারলেই
হবে।ছোট বাচ্ছাদের মতো সরল ভাবে
শুনালেও হবে।শুনাওনা,প্লিজ।’

→ওর কোন আবদারই আমি ফেলতে পারি
না।তাই অনেকটা ভাঙ্গা ক্যাসেটের
মতো একটি কবিতা আবৃত্তি শুরু
করলাম-
‘সুরঞ্জনা,অইখানে যেয়োনাকো তুমি,
বোলোনাকো কথা অই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা:
নক্ষত্রের রূপালি আগুন ভরা ‍রাতে;
ফিরে এসো এই মাঠে,ঢেউয়ে;
ফিরে এসো ‍হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূরে-আরও দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর।’

‘ওয়াও, তুমি তো দারুণ আবৃত্তি পারো!

→এটাতো জীবনানন্দের কবিতা।

আরেকটা শোনাওনা,প্লিজ। তুমি না ঐদিন
বলেছিলে,তুমি কবিতা লিখো,তোমার
একটা কবিতা শোনাওনা।’

→আমি পিছনের পকেট একটি ছেঁড়া কাগজ
বের করে ওকে দিলাম।একটি কবিতা
লেখা ছিলো তাতে।সে গুণগুণ করে
পড়তে শুরু করলো।বাতাসে নড়তে থাকা
একটি হলুদ গাঁদার দিকে তাকিয়ে আমি
ওকে বললাম,
‘আরেকটু বড় করে পড়ো, আমিও শুনি।’
কিন্তু কে শুনে কার কথা।
‘এই আরেকটু বড় করে পড়োনা, আমিও
শুনবো তো।’

হঠাৎ একটা পুরুষ কণ্ঠ আমার কানে ভেসে
এলো।

‘ভাই আপনি এখানে কি করছেন একাকী?
কার সাথে কথা বলতেছেন?’

→আমি দোলনা থেকে উঠে গেলাম।
লোকটার দিকে নির্লেশ দৃষ্টিতে
তাকালাম।হাতে একটি লাই এবং কাচি,
ওনিই হয়তো এই জমিদার বাড়ির
চৌকিদার।আমাকে এই কথাটি বলে ওনি
লাউয়ের মাচার দিকে হাঁটতে শুরু
করলেন।কবিতার কাগজটা দেখলাম
নিচে পড়ে আছে।একটু বাঁকা হয়ে আমি
কাগজটা নিতে গেলাম।

হঠাৎ একটি মেয়েলি কণ্ঠ হি হি হি হি হি.....
(অট্টহাসির অনুরণন তুলতে ‍তুলতে যেন
শূণ্যে মিলিয়ে গেলো)

→এই নির্জন পরিবেশে এ কি কোন ভূতের কণ্ঠ
নাকি কোন পরীর?
আমার হৃদয় বীণার প্রতিটি তারে তারে এ
হাসি স্পর্শ করে গেলো।ব্যাকুল হৃদয়,
মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে শুধু বের হলো,

‘নীলুফার তুমি কই?’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.