নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আয়নিত

এ জগতে সুখি কে?

আয়নিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপূর্ণতা

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:৪৮

১.
রিপোর্টটা দেখেই ধপ করে বসে পড়লো নীরা ৷ পজিটিভ ৷ এক মুহূর্তের জন্য একটা প্রচন্ড ভয় এসে ভর করলো ৷ মা হওয়াটা সব মেয়ের জন্যই অনেক অানন্দের, কিন্তু সেই মেয়ে যদি হয় সমাজের চোখে অবিবাহিতা যার প্রেমিক মাত্র ১২ দিন অাগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে তবে সেই মেয়ের কাছে মা হওয়াটা অাকাশ ভেঙে পড়ার মতই ত হবে ৷
বাদলের কথাগুলো ভাবে নীরা ৷

"এত রীতিনীতি দিয়ে কি হবে ! বিয়ে মানে যদি একসাথে থাকা হয় তবে ত অামাদের বিয়ে অাপনাতেই হয়ে যাবে!"
নীরা ভয় পেত ৷ বলত,
"ছি! এ কেমন কথা"
বাদল হাসতো..হাসতে হাসতে বলত..
"অাচ্ছা বাবা, তোমাকে একহাজার গোলাপ দেনমোহর দিয়ে বিয়ে করবো ৷ রাজি?"
নীরাও হাসতো ৷

বাদল কি খারাপ ছেলে ছিল? নীরা ভাবে ৷ নাহ, পাগলাটে ছিলো, অদ্ভূত ছিলো, উদ্ভট ছিলো ৷ কিন্তু একটুও খারাপ ছিলো না ৷
অাচ্ছা, ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে? বাদলের মত হবে? বাদলের সেই অদ্ভূত সুন্দর চোখদুটো পায় যেন ৷ অার হাসির শব্দটা ৷
ভাবতে ভাবতে নীরার চোখ ঝাপসা হয়ে উঠে ৷
বাসায় ফেরার পথে দুইহালি অাপেল কিনে নিয়ে অাসে ৷ এখন ত তার ভালো ভালো খাবার দরকার ৷
অানন্দ, বিষাদ, ভয় অার অপরাধবোধের একটা কিম্ভুত অনুভূতি নিয়ে বাসার কলিংবেল চাপে নীরা ৷

মায়ের কাছ থেকে কতদিন লুকানো যায়? নীরা যেদিন তার মায়ের কাছে সব স্বীকার করে সেদিন মা চড় থাপ্পরের সাথে যেসব অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি দিচ্ছিলেন তা শুনে নীরা অবাক হয়ে গিয়েছিল ৷ তার নিরীহ মা এত অশ্লীল কথা ও বলতে পারে?
শেষে মা যখন একটা শিশি হাতে নিয়ে বলেন , 'হয় অামার কথা শুনবি নয়ত তোর মত *** কে বিষ খাইয়ে মারতেও অামার বুক কাঁপবে না' নীরা তখন কাঁদতেও ভুলে গিয়েছিলো ৷

২.
 ডা. তাহসিনা রেজওয়ান ৷ গাইনোকলজিস্ট ৷ রেজওয়ান নামটা তার বরের কাছ থেকে নেয়া ৷ তার কাছে অাসা সব সন্তানসম্ভবা রোগিরা কি জানে তিনি কত মমতায় তাদের ট্রিটমেন্ট করেন? এর পেছনে অবশ্য একটা ব্যক্তিগত স্বার্থ অাছে ৷ তার ধারণা স্রষ্টা তার এই মমতায় মুগ্ধ হয়ে একদিন একটা মিরাকেল ঘটাবেন ৷ তার ডাক্তারি বিদ্যা যদিও মানে না কিন্তু তিনি স্রষ্টার অসীম করুণা অার ক্ষমতার প্রতি প্রচন্ড অাস্থাবান ৷ ডা. তাহসিনা রেজওয়ান মাঝে মাঝেই ভাবেন , দীর্ঘ ১৩ বছরের পেশাজীবনে কত কত মানবশিশু তার হাত ধরে পৃথিবীতে এসেছে ! অথচ এদের উপর তার কোন অধিকার নেই  কোন দাবি নেই ! এরা তাকে চিনে না, তিনিও না! কেউ কি কোনদিন তাকে মা বলে ডাকবে না? তিনি অবশ্য রেজওয়ানকে দত্তক নেয়ার কথা বলেছিলেন, রেজওয়ান রাজি হয় ৷ কিন্তু তার শাশুড়ি, রেজওয়ান যার একমাত্র সন্তান- কিছুতেই রাজি হলেন না ৷ কার না কার বাচ্চা..শেষে কি না খুনি ডাকাত হয়..৷
সমস্যাটা অবশ্য ডা. তাহসিনার ৷ মাঝে মাঝে তিনি ভাবেন, বলা যায় ভাবতে বাধ্য হোন, তার কারণে রেজওয়ান কেন সন্তানহীন হয়ে থাকবে সারাজীবন?? কখনো অাবার একটু স্বার্থপরের মত ভাবেন, তার শাশুড়ির একমাত্র ছেলেরই যদি সমস্যা টা হত তবে তার শাশুড়ি কি এমনটা বলতে পারতেন??

৩.
তিন ছেলেমেয়েকে খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখলো সালমা ৷ চার নাম্বারটা এখনো ট্যাঁ ট্যাঁ করছে ৷ এই মেয়ে অর্ধেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে ৷
সালমা চিন্তিত চোখে ঘড়ি দেখে ৷ একটা পঞ্চাশ বাজে ৷ মানুষটা তো কখনো এত দেরী করে না ৷ অন্যদিন মালিকের কাছে রিকশা জমা দিয়ে অাসতে অাসতে বারোটা-সাড়ে বারোটা পর্যন্ত বাজে ৷
অাড়াইটার সময় সালমা পাশের ঘরের বশিরের মা কে ডাকে ৷ "কুসুমের বাপ ত এহনো অাইলো না"
-"কি কও! এহনো অাহে নাই?"
চেঁচামেচিতে বস্তির অর্ধেক লোক জেগে গেলো ৷ কতজন খুঁজতেও গেলো ৷
খবর পাওয়া গেলো সকালবেলা ৷ গতরাতে ব্রিজের উপর ট্রাক-রিকসার সংঘর্ষ হয় .. হাসপাতালে অাছে কুসুমের বাপ ৷
সালমা দৌড়ে হাসপাতাল যায় ৷ বেশি খুজাখুজি করতে হয় নি ৷ হাসপাতালে গিয়ে বলতেই ওরা মর্গটা দেখিয়ে দেয় ৷

১.১
নার্সিং হোমের করিডরে বসে অাছেন মিসেস রেহনুমা ৷ তার ক্লান্তিহীন মুখটাকে দেখে বুঝার উপায় নেই যে গত ১৭ রাত তার একফোঁটা ও ঘুম হয় নি ৷ নীরা- তার বড় মেয়ে প্রথমে রাজি হয় নি ৷ বলেছে 'তার চেয়ে মা তুমি অামাকে বিষ খাইয়ে দাও ৷ ওকে একা মারার চেয়ে দুজনে একসাথেই মরি'  ৷ শেষে রেহনুমা নিজের মুখে বিষের শিশি ধরে মেয়েকে রাজি করিয়েছেন ৷ এমনভাবে ব্যবস্হা করেছেন যেন কাকপক্ষী ও টের না পায় ৷ তার অারো দুই মেয়ে ৷ বড়টা নষ্ট হলে বাকিরাও নষ্ট হবে ৷ নাহ ..কেউ টের পাবে না..এমনকি নীরার বাবাও না ৷ হারামি টা অার পৃথিবীতেই অাসবে না কোনদিন ৷

২.১

সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া বাচ্চাটার দিকে একমুহূর্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন ডা.তাহসিনা ৷ এই শিশুটি- সামান্য হাত পা নাড়ানো ছাড়া যে অার কোন কাজই পারে না... নিজে থেকে বাঁচার কোন উপায়ই নেই যার.. সেই শিশুটি কি জানে তার কত ক্ষমতা? কত ভাঙতে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগিয়ে দিতে পারে, কত সম্পর্কে ফাটল ধরিয়ে দিতে পারে এই নিরুপায় শিশুটি! স্রষ্টা এত অল্পপ্রাণের ভেতরে ওতটুকু ক্ষমতা কিভাবে দিতে পারেন!
হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরবার পথে তিনি তার নাম নিয়ে ভাবছিলেন ৷ রেজওয়ান বাদ দিতে হবে ৷ অাজকেই তিনি তাদের ১১ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টেনেছেন ৷

৩.১
ছোট ছোট ছেলেমেয়ে থাকলে কেউ কাজ দিতে চায় না ৷অনেক কষ্টে ছোট একটা কাজ যুগার করে সালমা ৷ কিন্তু কাজের হাতের চেয়ে যেন খাওয়ার জন্য মুখের সংখ্যা বেশি ৷একসময় কাজটা চলে গেলে ঘরের পাঠ চুকিয়ে তিন ছেলেমেয়ে কে নিয়ে পথে নামে সে ৷ ঘরভাড়া মিটিয়ে দেওয়ার পরও তার অাঁচলে বেশ কিছু টাকা থেকে যায় ৷শুধু কোলে তিনমাস বয়সি মেয়েটা থাকে না ৷ এই সন্তানের মূল্যতেই তার অাঁচল ভারী হয়ে থাকে ৷

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৬:৪৬

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
কেউ সন্তানকে চায় না কলঙ্কের ভয়ে।
কেউ একটা সন্তানের অপেক্ষায় সারাজীবন কাঁটিয়ে দেয়।
আর, কেউ শুধু সন্তানদের টিকিয়ে রাখার জন্য নিজের সন্তানকে অন্যের হাতে দিয়ে দেয়।

অদ্ভুত!

লেখাটা ছোট, অপূর্ণ - কিন্তু ভাবটা দুঃখজনক।

লেখাটা ভাল লাগলো আমার। +

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৫

আয়নিত বলেছেন: ধন্যবাদ ৷

২| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:৫০

পুলহ বলেছেন: রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
কেউ সন্তানকে চায় না কলঙ্কের ভয়ে।
কেউ একটা সন্তানের অপেক্ষায় সারাজীবন কাঁটিয়ে দেয়।
আর, কেউ শুধু সন্তানদের টিকিয়ে রাখার জন্য নিজের সন্তানকে অন্যের হাতে দিয়ে দেয়।"-- ভালো লাগলো উনার এই অবজার্ভেশনটুকু।
আপনার লেখার হাত ভালো। আমার ভালো লেগেছে। সহজ ভাষায় গভীর জীবনবোধ তুলে আনাটা দুঃসাধ্য, আপনার সে ক্ষমতা আছে বলেই মনে হয়।
শুভকামনা

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৭

আয়নিত বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.