![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝঞ্ঝা!
হিজরত ইসলামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। বিশ্বের ইতিহাসেও সবচে’ তাৎপর্যবহ ও সুদূরপ্রসারী একটি ঘটনা। দ্বীন ও মানবতার বৃহত্তম স্বার্থে ত্যাগ ও বিসর্জনের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। মক্কার পৌত্তলিক মুশরিকদের আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দেয়ার ফলস্বরূপ রাসুল (দ.)সহ নওমুসলিমরা মক্কার কাফেরদের ভয়াবহ পাশবিক নির্যাতন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবরোধে অমানবিক অবস্থায় দিনাতিপাত করতে থাকে। এরি মধ্যে মুশরিকরা মহানবীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আল্লাহ পাক তাদের এই ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে রাসুল (দ.)কে মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। ইতিহাসের মোড় পরিবর্তনকারী এই ঘটনার স্বারক হিজরী সন।
হিজরি সনের ইতিহাস :
হিজরি সন মুসলিমদের সন। এর সাথে মিশে আছে মুসলিমদের ইতিহাস-ঐতিহ্য। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ই সেপ্টেম্বর আল্লাহ্র নির্দেশে মক্কা হতে মদিনায় হিজরত করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি কুবায় পোঁছেন এবং ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি মদিনায় পোঁছেন। মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ বা ১৫ জুলাইয়ের সূর্যাস্তের সময়কে হিজরি সন শুরুর সময় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। কেউ কেউ এটাকে ১৬ই জুলাইও বলেছেন। ১৭ হিজরি সন (৬৩৮ খ্রি.) হতে তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের শাসক হযরত ওমর (রা.)র শাসনামলে হিজরি সন গণনা শুরু হয়। হিজরী সন প্রণয়নের কারণ হিসেবে একটি ঘটনা প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তা হলো- হযরত ওমর (রা.)র নিকট ইরাক ও কুফার প্রশাসক আবু মুসা আশয়ারী (রা.) এক চিঠিতে লিখেন, “ আমিরুল মু’মিনিন, আপনার পক্ষ থেকে আসা শাসন সংক্রান্ত উপদেশ, পরামর্শ এবং নির্দেশ সংবলিত বিভিন্ন চিঠিপত্র ও দলিলে কোন সন-তারিখ না থাকায় আমরা তার সময় ও কাল নির্ধারণে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হই। অধিকাংশ সময় এসব নির্দেশাবলির মধ্যে পার্থক্য করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে বলে আপনার নির্দেশ ও উপদেশ পালন করতে গিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।” এ পত্র পাওয়ার পর হযরত ওমর (রা.) মুসলিম বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে এক পরামর্শ সভার আয়োজন করেন। সভায় হযরত আলী (রা.)র প্রস্তাবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মদিনায় হিজরতের ঐতিহাসিক দিন থেকে একটি সন তৈরী করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। হিজরতের মাধ্যমেই মুসলিমরা একটি নতুন দেশ লাভ করে, স্বাধীনতা পায় এবং ইসলাম গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তাই এটাকে স্বরণীয় করে রাখার জন্য বর্ষপঞ্জি তৈরির ক্ষেত্রে হিজরতকে বেছে নেয়া হয়। -(উমদাতুল কারী : ১৭/৬৬)
মুহাররমকে প্রথম মাস ধরার কারন :
রাসুল (সা) মদিনায় আসেন রবিউল আউয়াল মাসে। কিন্তু হিজরি নববর্ষের প্রথম মাস ধরা হয় মুহাররমকে। এর মধ্যে নিগুঢ় রহস্য রয়েছে। যদিও রাসুল (সা) রবিউল আউয়াল মাসে হিজরত করেছিলেন, কিন্তু তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিলো আরো আগেই। নবুওয়াতের ১৩তম বছরে জিলহজ্জ মাসে আকাবার ২য় শপথে একদল মদিনাবাসী ইসলাম কবুল করেন এবং তখন থেকেই রাসুল (দ.)র মদিনায় হিজরতের ক্ষেত্র তৈরী হয়। আর মুসলিমদের প্রথম হিজরতকারী দলটি মদিনায় পোঁছায় মুহাররম মাসে এবং এটাই ছিল রাসুল (দ)র হিজরতের প্রস্তুতি পর্ব।
আল্লামা শাওকানী বলেন, “ চান্দ্রমাসের ধারাবাহিকতা এবং এগুলোর নাম আল্লাহ পাক নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এগুলো কোন মানুষের তৈরী নয়।”
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “ নিশ্চয় আল্লাহ্র বিধান ও গণনার মাস বারোটি ” – তাওবাহ : ৩৬
হিজরী সনের গুরুত্ব :
মুসলিমদের জীবনে হিজরি সন-তারিখ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুসলমানের ইবাদতের তারিখ, ক্ষণ ইত্যাদি চান্দ্রমাসের ভিত্তিতেই অনুষ্ঠিত হয়। যেমন- রোযা, হজ্জ, যাকাত ,ইদ্দত ইত্যাদি। ফকীহগণ চান্দ্রমাসের হিসাব রাখাকে ফরযে কিফায়া বলেছেন।
হিজরী বারো মাসের নাম :
১. মুহাররম
২. সফর
৩. রবিউল আউয়াল
৪. রবিউস সানী
৫. জমাদাল আউয়াল
৬. জুমাদাস সানী
৭. রজব
৮. শা’বান
৯. রমযান
১০. শাওয়াল
১১. জিলকদ
১২. জিলহজ্জ
শেষকথা হচ্ছে হিজরী সন মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্যর নিদর্শন এবং আমলী জিন্দেগীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্ববহ বিষয়। তাই মুসলমানদের জন্য এর প্রসার ও ব্যবহারের প্রতি আগ্রহী হওয়া জরুরী।
-আজহারুল ইসলাম
©somewhere in net ltd.