![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝঞ্ঝা!
“কোরআনে নাই, হাদীসে নাই, আরবে নাই, আযমে নাই, কোথাও নাই। সব বে‘দাত।” হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে চললেন মেজকাকু।
মেজকাকু এরকমই। কখন কী বলে, কী বলতে কী বলে, আগামাথা ধরতে পারি না। মতিগতি বুঝা বড় দায়। এখন কী নিয়ে খেপলেন, সেটাও আন্দাজ করতে পারছি না। জিজ্ঞেস যে করবো, তাও সাহসে কুলোচ্ছে না। এমনিতে মেজকাকুর চেহারা-সুরত দেখতে ঝাঁটার কাঠির মাথায় আলুর দম মনে হলেও হাবভাব কিন্তু সুমো কুস্তিগীরদের মতো। কখন ঝাঁপটে ধরে আছড়ে মারে, সে ভয়ে কাছেও ঘেঁষি না খুব একটা। তারপরেও কাকুর কথাগুলো মাটিতে পড়ার আগেই খপাৎ করে ধরে নিয়ে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “ব্যাপার কী, কাকু? কোরআনে-হাদীসে, আরবে-আযমে কী নাই?”
“কথা শেষ করার আগে প্রশ্ন করলে বুঝবি কী, হ্যাঁ? শবে বরাত, শবে বরাত।” চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন মেজকাকু।
“বুঝো ঠ্যালা! কাকু আবার কবে থেকে ধর্ম-কর্ম নিয়ে রিসার্চ শুরু করলো!” মনে মনে ভাবছি আমি। এর মধ্যেই কানের কাছে গমগম করে উঠলো, “আমাদের শায়খ হুজুর বলেছে কুরআন-হাদীসে কোথাও শবে বরাত নাই। এমনকি নবির দেশ আরবেও নাই। এসব এ দেশের পেটপুজারী বেদাতী মোল্লাদের বানানো। প্রমাণ চাস তো আমি ইউটিউব থেকে কয়েকশ’ লেকচার দেখাতে পারি।”
অবশেষে পূর্ণদৈর্ঘ্য বেদাত কাহিনীর হাকীকত বুঝতে পারলাম। কথায় বলে কুত্তার পেটে ঘি… না থাক, এসব কথা মুখে না আনাই ভালো। ডিজিটাল হুজুর আর ইউটিউব যে কাকুর মাথার গ্যাস্ট্রিকের জন্য দায়ী, সেটা বুঝে নিলাম। এখন দরকার দাওয়াই। স্পেশাল থেরাপি।
“কাকু, নামায-রোযাও তো কোরআন-হাদীসে নাই। এগুলাও কী বেদাত?” শুরুটা বুমেরাং থেরাপি দিয়ে।
“ইয়ে মানে… না। তাইলে কেমনে কী হলো?” আকস্মিক বজ্রপাতে মুখ থুবড়ে পড়া বকের মতো অবস্থা!
“শোনেন, কুরআন-হাদীসে নামায রোযা না থাকলেও সালাত সাওম আছে। তেমনি শবে বরাত না থাকলেও সহিহ হাদীসে ‘নিসফ শাবান’ বা অর্ধ শাবান শব্দটি উল্লেখ আছে। মানে হলো নামায রোযা শবে বরাত এগুলো সব ফার্সী শব্দ। তাই কোরআন-হাদীসে থাকার কথাও না।
রাসুল (দ.) বলেন, অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহ পাক সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতঃপর মুশরিক এবং হিংসুক ছাড়া গোটা সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।[১] শাবান মাসে আল্লাহর কাছে বান্দাহর আমলনামা পেশ করা হয়।[২] রাসুল (দ.) আর্ধ শাবানের রাত কবর জেয়ারত করেছেন।[৩]
ইবনে তাইমিয়া (র.) বলেন, ১৫ শাবান রাতের ফযীলত সম্পর্কে একাধিক মারফু[৪] হাদীস ও সাহাবীর উক্তি আছে, এবং এগুলোর সমর্থনে আসলাফের উক্তি আছে যেগুলো সুনান, মুসনাদ এমনকি সহীহ শিরোনামে সংকলিত হাদীসগ্রন্থসমূহে রয়েছে। এগুলো দ্বারা ওই রাতের ফযীলত ও মর্যদা প্রমাণিত হয়। সালফে সালেহীনের কেউ কেউ এ রাতে নফল সালাতে যত্নবান হতেন। [৫]
আরো ইন্ট্রেস্টিং ব্যাপার হলো ইউটিউব শায়খদের সর্বগুরু আলবানীও (র.) শবে বরাতের ফযীলত বিষয়ক একটি হাদীসকে সহীহ বলেছেন।[৬] গুরুও কথাও মানে না। এরই নাম গুরুমারা বিদ্যা!
আর শোনেন, আরবের কথা বললেন না? সেখানে তো অনেক কিছুই হয়। সিনেমা, ডিস্কো, ক্যাসিনো। আরব যেমন নবির দেশ, তেমনি নবির বড় বড় শত্রুও কিন্তু আরবীয়ই ছিলো। সেজন্য আরব আরব বলে রব না তুলে কুরআন হাদীস দেখেন।”
“বুঝলাম। কিন্তু শবে বরাতের নামে হালুয়া-রুটি উৎসব, আতশবাজি, রাতভর শোরগোল করা কি ঠিক?” মেজকাকুর গলা খাদে নেমে এলো।
“শবে বরাত ইবাদতের জন্য। কেউ যদি ইবাদতের বদলে অনৈসলামিক কাজ করে, পটকাবাজি-আতশবাজি করে কিংবা হালুয়া-রুটির উৎসব করে, সেটা তার দোষ। আপনি মসজিদে যান নামায পড়তে, চোর যায় জুতা চুরি করতে, সেজন্য আপনাকেও জুতাচোর বলবো?” বলতে বলতে আলতো করে কেটে পড়লাম। বলা তো যায় না, কিঞ্চিত মাইন্ড খেয়ে কাকু যদি আবার হ্যাঁচকা টান মেরে কান ছিঁড়ে নেবার চেষ্টা করে!
১. সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫, রাবী: মুয়ায বিন জাবাল
২. মুসনাদে আহমদ: ২১৭৫৩, নাসাঈ: ২৩৫৭
৩. তিরমীযী: ৭৩৯, ইবনে মাযাহ: ১৩৮৯
৪. সরাসরি রাসুল (দ.) থেকে বর্ণিত
৫. মাজমুউল ফাতওয়া, ৩/১৩১-১৩২
৬. সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহীহাহ ৩/১৩৫ হা: ১১৪৪
২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৩০
আবু আফিয়া বলেছেন: শবে বরাত- ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে আদৌ কোন গুরুত্ব রাখে কী? লেখাটিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ফুটে উঠেছে, আসলে না জানার কারণে আমরা কত কিছুই না করছি।
লেখককে এবং আকাশকে দু’জনকেই ধন্যবাদ জানাই
৩| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৬
আলোর পথে বিডি বলেছেন: শাবানের মধ্য রজনীর সম্পর্কিত হাদীসসমূহ পর্যালোচনার সারকথাঃ
এ সকল হাদীসের কোথাও এ কথা নেই যে, আল্লাহর রাসূল ﷺ ও সাহাবায়ে কিরাম এ রাতে গোসল করেছেন, মাসজিদে উপস্থিত হয়ে নফল সালাত আদায় করেছেন, যিকির-আযকার করেছেন, কুরআন তিলাওয়াত করেছেন, সারারাত জাগ্রত থেকেছেন, ওয়াজ নাসীহাত করেছেন কিংবা অন্যদের এ রাতে ইবাদাত বন্দেগীতে উৎসাহিত করেছেন অথবা শেষ রাতে জামাতের সাথে দু’আ-মুনাজাত করেছেন।
→ এ হাদীসসমূহের কোথাও এ কথা নেই যে, রাসূল ﷺ বা সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) এ রাতের সাহরী খেয়ে পরের দিন সিয়াম (রোযা) পালন করেছেন।
→ আলোচিত হাদীসসমূহে কোথাও এ কথা নেই যে, রাসূল ﷺ বা সাহাবায়ে কিরাম এ রাতে হালুয়া-রুটি বা ভাল খানা তৈরী করে বিলিয়েছেন, বাড়ীতে বাড়ীতে যেয়ে মীলাদ পড়েছেন।
→ এ সকল হাদীসের কোথাও নেই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ﷺ বা সাহাবায়ে' কিরাম (রাঃ) এ রাতে দলে দলে কবরস্থানে গিয়ে কবর যিয়ারত করেছেন কিংবা কবরে মোমবাতি জ্বালিয়েছেন।
এমনকি রাসূল ﷺ এর যুগ বাদ দিলে খুলাফায়ে রাশেদীনের ইতিহাসেও কি এর কোন একটা আমল পাওয়া যাবে?
যদি না যায় তাহলে শবে বরাত সম্পর্কিত এ সকল ‘আমল ও আকীদা কি বিদ’আত নয়? এ বিদ’আত সম্পর্কে উম্মাতে মুহাম্মাদীকে সতর্ক করার দায়িত্ব কারা পালন করবেন?
এ দায়িত্ব পালন করতে হবে আলেম-উলামাদের, দ্বীন প্রচারক, মাসজিদের ইমাম ও খতীবদের। যে সকল বিষয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীসের ইশারা নেই সে সকল আমল থেকে সাধারণ মুসলিম সমাজকে বিরত রাখার দায়িত্ব পালন করতে হবে নবী-রাসূলগণের উত্তরসূরীদের।
৪| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৪১
শহীদ আম্মার বলেছেন: @নাইমুর রহমান আকাশ:
ভাই আগে আপনার নাগরিকত্ব ঠিক করে নেন। তারপর দেশ নিয়ে ভাবনে।
ধরুন যদি কোন পাকিস্তানি আমাদের বাংলাদেশের সংবিধান-আইন-দিবস এসব নিয়ে মাথা গামায় কেউ এটাকে পাত্তা দিবে?
আপনি যে দেশের নাগরিক সে দেশ নিয়ে ভাবুন। কথাটা একটু ঘুরিয়ে বললাম।
৫| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৭
সনেট কবি বলেছেন: সুন্দর উপস্থাপনা।
৬| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:১৩
রাজীব নুর বলেছেন: শবে বরাত বিশেষ একরাত।
প্রার্থনা করেই এই রাত পার করা উচিত।
৭| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৪
মুহাম্মদ তারেক্ব আব্দুল্লাহ বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন ভাই।
৮| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:২৯
কানিজ রিনা বলেছেন: যাহা কিছু ভাল দিক পবিত্র দিক ইসলামে
তাহা গ্রহন যোগ্য।
আমাদের নবী মোহাঃ সঃ স্ত্রী
আয়সা রাঃ আঃ হাদীস কি বানোয়াট?
সে বিষয়ে আর বলছিনা। নিসফুমিন সাবান
অর্থ গুনাহ্ মাফের রজনী। লাইলাতুন
বারাআহ্ এই রাতে আমরা সারা রাত
নামাজ জিকির কোরআন তেলয়াতের
মধ্যে রাত অতিবাহিত করি। দিনে রোজা
রেখে হালুয়া রুটি ইফতারী তৈরি করে
খাই কিছু আত্বিয় স্বজন মিসকিনের দেই
সেটা ভাল দিক নয়? বলে মনে হয়না।
সবে মেরাজ, সবে বরাত সবে কদর।
সবই তো ভাগ্য আমাদের। সবে কদর
কোরআন নাজীলের দিন কোরআন মুসলিমের
ভাগ্যের কিতাব তো বটেই এই শ্রেষ্ঠ
কিতাবের উপর কিতাব নাই। তাইত
মুসলিমের জন্যই কোরআন ভাগ্য কি নয়?
সবে মেরাজ হযরত মোহাঃ সাঃ উর্ধকাশে
আল্লাহর সান্যিধ্যে গিয়েছিলেন এবং
উম্মতের জন্য আল্লাহর কাছে আরজি
করেছিলেন সেটাও তো আমাদের ভাগ্য
রজনী তাই নয় কি? নিসফুমিন সাবান
গুনাহ্ মাফের রজনী গুনাহ্ মাফ হওয়াই
তো ভাগ্য গুনাহ মাফের সাথে আল্লাহ্
আমাদের ত্বগদীর নির্ধারন করেন তাহলেও
ভাগ্য। এত বিরোধ কোত্থেকে আসে।
আমাদের চার খলিফা চার মতবাদের রকম
ফের আছে তা নিয়ে আজ মুসলিম বিশ্ব
হানাহানী করে নিজেরা নিজেদের বিরোধ
সৃস্টি করছি।
আবারও বলব সবে বরাত বাংলায় বলি।
আরবি ফারসী উর্দূ নানান রকম করে
বলি। সাহাবাদের মুখের হাদীস হযরত মোহাঃ
সাঃ জীবন আদর্শের হাদীস অনেক রকম
ফের আছে তাই বলে কোরআনের সাথে
সাংঘর্সীক নয়। আমাদের বিজ্ঞআলেম
উলামা এবিসয়ে একসাথে বসে আলাপ
আলচনা করলে সমাধান নিশ্চয় বেড় হবে।
বায়তুল মোকাররম মজসিদের খতিব কি
বলেন সবেবরাতের রাতে সবাই অনুরোধ
রইল একটু মনযোগ দিয়ে শুনতে। আসুন
জ্ঞানে মুসলমান হই তাই কোরআনের মহা
জ্ঞানে গুনাম্বিত হয়ে সব ভালদিক মেনে
নিতে শিখি মুসলমান হয়ে মুসলমানের
সম্মান করি। ধন্যবাদ।
৯| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৩০
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: হাহাহা। আর কত বৃথা চেষ্টা করবেন? ব্যবসা কমে আসছে, আরো কমবে ইনশাআল্লাহ। শর্টকাট মুসলমানের দিন শেষ...
১০| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৪২
ক্স বলেছেন: আরবে থাকা না থাকা নিয়ে কথা নয়, কথা হল হারম শরীফের ইমামগণ এই হাদীসসমূহ সম্পর্কে অবগত কিনা! তারা যদি জেনেই থাকেন, তাহলে সেই হাদীসের গুরুত্ব দিয়ে 'স্পেশাল' ইবাদতের আয়োজন কেন করছেন না?
১১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:০১
আবেদ আল ইসলাম বলেছেন: যে কোন বিষয়ে প্রান্তিকতাবাদ ভালো নয়। শবে বরাত শরীয়তে নেই- এটা যেমন ভিত্তিহীন কথা, তেমনি শবে বরাতে আলাদা স্পেশাল ইবাদাত আবিস্কারও ভিত্তিহীন। আমি কিন্তু এ দুটোর কোনটিই বলিনি।
১২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:০৫
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: @নাইমুর রহমান আকাশ
আহমদিয়া জামাত মানে কি ? হুজুররা যাদের কাদিয়ানি বলে সেটাই কি?
আপনি কি সেই জামায়াতের অন্তর্ভূক্ত?
প্রশ্নটা এলো আপনি যে বিশাল কপি-পেষ্ট দিয়েছেন তাতে বারবার ঐ রেফারেন্স এসেছেতো তাই!!!
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:২১
নাঈমুর রহমান আকাশ বলেছেন: শবে বরাত- ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে আদৌ কোন গুরুত্ব রাখে কী?
আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরান, ভারত ও বাংলাদেশ শবে বরাত অত্যন্ত জমকালোভাবে পালন করা হয়।( আশ্চর্যের বিষয় হলো সউদি আরবে শবে বরাত বলতে কোন অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয় না।) ১৫ ই শাবান হলো শবে বরাতের দিন ও রাত হলো শবে বরাত। এ রাত সর্ম্পকে বলা হয়, এ রাতে প্রত্যেক মানুষের ভাগ্য লিখে দেয়া হয়। তাই এ রাতে অনেক বেশী নামায পড়ে খোদাকে সন্তুুষ্ট করতে হয়। এছাড়া বলা হয়, ১৫ ই শাবান রসূল করীম (সা.) রোযা রাখতেন এবং রাতে কবর যিয়ারত করতেন ও বেশী নওয়াফেল পড়তেন। তাই দিনে রোযা রাখতে হবে এবং রাতে নওয়াফেল পড়তে হবে এবং কবর যিয়ারত করতে হবে। বলা হয় এ রাতে মৃত আত্মারা পৃথিবীতে ফিরে আসে এবং তাদের আত্মীয়স্বজনদের দেখে যায়। অনেকে বলেন, জান্নাতে একটি গাছ আছে যার পাতাগুলোতে পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষের নাম লেখা আছে যে পাতাগুলো এ রাতে পড়ে যায়, সে পাতাতে যে সব মানুষের নাম লেখা থাকে তারা এ বছর মারা যাবে। অনেকের মতে এ রাতে মানুষের জীবন ও মৃত্যু সর্ম্পকে সিদ্ধান্ত হয়। বলা হয় এ রাতে আল্লাহ্ তা’লা পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং বলেন কে আছে যে ক্ষমা চাইবে আর আমি ক্ষমা করবো। কে আছে যে চাইবে আর আমি তাকে দিব।
শবে বরাতে হালওয়া রুটি বানানো হয় এবং আতশবাজী পোড়ানো হয়। এ নিয়ে মুসলিম উম্মতে অনেক মতবেধ আছে। অধিকাংশের মতে এটি বিদাত ও কুরআন ও সুন্নাতে এর কোন ভিত্তি নেই। যারা শবে বরাত উদযাপন করে তাদের মতে কুরআনে এর দলীল আছে। আর তা হলো সূরা দুখান (কুরআন মজীদের ৪৪ নং সূরা)-এর ৪, ৫ ও ৬ নম্বর আয়াতে যেখানে বলা হয়েছে-
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ ۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ ٘ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ ٘ أَمْرًا مِّنْ عِندِنَا ۚ إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ ٘ رَحْمَةً مِّن رَّبِّكَ ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ٘
অর্থাৎ আমরা একে নিশ্চয় এক আশিষপূর্ণ রাতে অবতীর্ণ করেছি। আমরা (বিপথগামীদের) সর্তক করে থাকি। আমাদের পক্ষ থেকে আদেশক্রমে (এ রাতে) প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নিশ্চয় আমরাই রসূল প্রেরণ করে থাকি।
তাছাড়া তারা কিছু হাদীসও উপস্থাপন করে থাকেন। প্রায় চৌদ্দটি রেওয়ায়াত শবে বরাতের পক্ষে উপস্থাপন করা হয়। কিছু লোকদের মতে, দ্বিতীয় হিজরীতে কিবলা পরিবর্তন হয়। আর সে দিনটি ছিল ১৫ ই শাবান। এ জন্য এ দিনটি উদযাপন করা হয়। আজকাল আলেমগণ শবে বরাতকে সূরা দুখানের আয়াতে বর্ণিত“ লায়লাতুন মুবারাকাতুন” বলে থাকে।
কুরআন ও হাদীসের আলোকে পর্যালোচনা করলে এ রাতের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। আর এ রাত সর্ম্পকে যে ধ্যান ধারনা অনেক মুসলমানদের মধ্যে রয়েছে, এর কোন প্রমাণ কুরআন, সুন্নাহ ও হাদীসে পাওয়া যায় না। হযরত রসূলে করীম (সা.)-এর যুগে তো নয়ই, বরং তাবেঈনদের যুগেও এর কোন নামগন্ধ পাওয়া যায় না। শবে বরাত ইরান থেকে অন্যান্য দেশে ছড়িয়েছে। ‘শবে বরাত’ ফার্সি শব্দটিও এদিকে সুস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে। আসলে লায়লাতুল কাদর এর ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করলে শবে বরাত হয়। শাবান ইসলামী ক্যালেন্ডারের অষ্টম মাস। এ মাসের ১৫ তারিখ অর্থাৎ ১৫ ই শাবান ‘শবে বরাত’ বলে পরিচিত। আরবে ‘লায়লাতুন নিসফে মিন শাবানা’ অর্থাৎ শাবান মাসের অর্ধেক বলে পরিচিত।
‘শব’ ফারসি শব্দ। এর অর্থ হলো রাত এবং বরাতও ফার্সি শব্দ। এর অর্থ হলো ভাগ্য। এ শব্দটি কুরআন ও হাদীসের কোথাও ব্যবহার হয় নি। তবে এর বিপরীতে সূরা কদর এ “লায়লাতুল কাদর” শব্দ পাওয়া যায় যা রমযানের সাথে সম্পৃক্ত শাবান মাসের সাথে নয়।
সূরা দুখানের যে আয়াতটি শবে বরাত সর্ম্পকে দলীলরূপে উপস্থাপন করা হয় তা সম্পূর্ণরূপে এক ভুল ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তিকর দলীল। সূরা দুখানের এ আয়াতে বলা হয়েছে إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ ۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ ٘ অর্থাৎ আমরা একে নিশ্চয় এ আশীষপূর্ণ রাতে অবতীর্ণ করেছি। এখানে ‘হু’ অর্থাৎ ‘একে’ সর্বনামটি কার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে তা নির্ণয় করতে হবে। সব মুফাসসিরগণ এ সর্বনামটি কুরআনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বলে একমত। এখন প্রশ্ন হলো কুরআন কবে অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয়েছে শাবান মাসে না রমযানে ? পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তালা বলে দিয়েছেন, شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ অর্থাৎ রমযান সেই মাস যাতে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সূরা বাকারা :১৮৫) অতএব পবিত্র কুরআন রমযান মাসে অবতীর্ণ হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। উম্মতে মোহাম্মাদীয়া একমত যে, কুরআন রমযান মাসে অবতীর্ণ হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে “লায়লাতুন মুবারাকা” শাবান মাসের নয় রমযান মাসের রাত বলে আল্লাহ্ তা’লা নির্ণয় করছেন। যাদের মতে “লায়লাতুন মুবারাকা” শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত, তারাও এ কথাটি মানেন যে, কুরআন রমযান মাসে অবতীর্ণ হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন করাই যেতে পারে এমন ভুল ব্যাখ্যা করে তারা মুসলমানদের কেন বিদাতের দিকে ঠেলে দিল? এর উত্তর আমরা এছাড়া আর কি দিতে পারি “শুধুমাত্র হালুয়া রুটির” জন্য। কারণ সূরা দুখানের এ আয়াতের হালুয়া রুটির সাথে কোন সর্ম্পক নেই। সূরা দুখানের আয়াতগুলিতে আল্লাহ্ তা’লা বলেন, এ রাতে প্রতিটি বিষয়ের বিজ্ঞতাপূর্ণ ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত আল্লাহ্র নির্দেশে প্রকাশ হয়। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হযরত ইবনে ওমর (রা.) , মুজাহিদ, কাতাদা ও হাসান বসরীর মতো প্রখ্যাত তাফসীরকারকগণ “লায়লাতুন মুবারাকা” বলতে “লায়লাতুল কদর”-কে আখ্যায়িত করেছেন। সূরা কাদর (কুরআন মজীদের ৯৭ নং সূরা) পড়লে এ বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে যায়। আল্লাহ তা’লা বলছেন
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ ٘وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ ٘لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ ٘ تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ ٘ سَلَامٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ الْفَجْرِ ٘
নিশ্চয় আমরা এ কুরআন কদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি। আর তোমাকেকিসে বুঝাবে কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এতে ফিরিস্তারা এং পবিত্রত্মা সব বিষয়ে তাদের প্রভু-প্রতিপালকের আদেশ নিয়ে অবতীর্ণ হয়ে থাকে। এ এক অনাবিল শান্তি। আর এ অবস্থা ভোর পর্যন্ত বিরাজ করে।
অতএব ‘শবে বরাত’ বা ‘লায়লাতুল মুবারাকা”হলো লায়লাতুল কদর তা কুরআন থেকেই প্রমাণিত হয়। আর এটিও সুস্পষ্ট কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ ঘোষণা স্বয়ং আল্লাহ্ তা’লার। ১৫ই শাবানের রাতের উল্লেখ কুরআনে নেই প্রমাণিত হলো। তফসীরকারকদের নীতি “কুরআনের একাংশ আরেকাংশের ব্যাখ্যা করে দেয়” তাও প্রমাণ করে দিল “লায়লাতুল মুবারাকা” আসলে “লায়লাতুল কাদর”।
এখন প্রশ্ন উঠে যে এ রাতে মৃত্যু অথবা ভাগ্য নির্ধারিত হয় অথবা মৃত আত্মীয়স্বজনদের আত্মা পৃথিবীতে আসে এসব কি? এর উত্তর হলো কুরআনে ও হাদীসে এর কোন উল্লেখ নেই। “লায়লাতুল কাদর” এর সর্ম্পকে কুরআনে বর্ণিত আয়াতগুলোতে এর কোন উল্লেখ নেই। একটু চিন্তা করলেই বলা যায় এ সব কিছু মনগড়া কথা। মৃত্যু সর্ম্পকে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা’লা বলেন,
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ كِتَابًا مُّؤَجَّلًا
অর্থাৎ আর আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ মরতে পারে না। কেন জন্য এক মেয়াদ নির্ধারিত রয়েছে। (সূরা আলে ইমরান : ১৪৬)। তিনি আরও বলেন,
وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ٘
অর্থাৎ তিনি বৃষ্টি অবতীর্ণ করেন। আর গর্ভাশয়ে যা-ই আছে তিনি তা জানেন। আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং (এটাও) কেউ জানে না কোন স্থানে সে মারা যাবে। ( সূরা লুকমান : ৩৪) সূরা হিজরের ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ্ তা’লা বলেন,وَإِنَّا لَنَحْنُ نُحْيِي وَنُمِيتُ অর্থাৎ আর নিশ্চয়ই আমরাই জীবিত করি ও আমরাই মৃত্যু দেই। তিনি বলেন, إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ্ যা চান তাই করেন। ” (সূরা হাজ্জ : ১৫) এছাড়া আরো বহু আয়াত রয়েছে যা থেকে জানা যায় মৃত্যু সর্ম্পকিত বিষয়াদী আল্লাহ্ তা’লা শাবানের ১৫ তারিখ নির্ধারণ করেন না বরং এই তকদীর বা পরিমাপ আল্লাহর হাতে এবং এটা তিনি লায়লাতুল কাদরের রাতেও তা নির্ধারণ করেন না। এ মেয়াদ জন্ম হতেই নির্ধারিত হয়। আল্লাহ্ তা’লা বলেন,
إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ ٘وَمَا أَمْرُنَا إِلَّا وَاحِدَةٌ كَلَمْحٍ بِالْبَصَرِ ٘
অর্থাৎ নিশ্চয় আমরা সবকিছু এক পরিমাপে সৃষ্টি করেছি। আর আমামাদের আদেশ চোখের পলক ফেলার ন্যায় এক নিমিষেই (কার্যকর হয়)। (সূরা কামার : ৫০) তবে মানুষের আমল, দোয়া ও খোদার নৈকট্য প্রাপ্তির কারণে এ তকদীর দীর্ঘায়িত হতে পারে। যেমন আল্লাহ্ তা’লা বলেন, “
وَأَمَّا مَا يَنفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ ۚ
আর যা (বা যে) মানুষের উপকার করে তা (বা সে) পৃথিবীতে স্থায়ী হয়। (সুরা রাআদ ১৭) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা’লা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ ٘
অর্থাৎহে যারা ঈমান এনেছা! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া সেভাবেই অবলম্বন কর যেভাবে তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করা উচিত। আর তোমরা কখনো আত্মসমর্পনকারী না হয়ে মরো না। (সূরা আলে ইমরান : ১০৩) মৃত্যু যদি “লায়লাতুল মুবারাকাতে” নির্ধারিত হয় তবে এ আয়াতের কি অর্থ করবেন? ইসলাম তো কর্মের কথা বলে যা প্রতিনিয়ত করতে হয়। এ নয় যে একদিন বা এক রাতে ইবাদত কর, আর প্রয়োজন নেই। তৌহিদ, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, তাকওয়া, দানখয়রাত এক রাত বা একদিনের ব্যাপার নয়। এ এক নিয়মিত কর্ম। যদি এক রাতেই বছরের সব কিছু নির্ধারিত হয় তবেএক রাতের পর সারা বছর ইবাদত আর আমলের কোন প্রয়োজন থাকে না।আল্লাহ্ তা’লা বলেন,
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ٘
তুমি বল, হে আমার বান্দারা যারা নিজেদের প্রাণের ওপর অবিচার করেছ! তোমরা আল্লাহ্র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ্ সব পাপ ক্ষমা করে দিতে পারেন। নিশ্চয় তিনিই অতি ক্ষমাশীল (ও) বার বার কৃপাকারী। ” ( সূরা আয যুমার ৩৯: ৫৪)
এ আয়াত খোদার ক্ষমার দ্বার এক রাতের জন্য নয় বরং প্রতিটি মুহূর্তের জন্য খুলে দিয়েছে। প্রকৃত তওবা করলে যে কোন দিন , যে কোন রাত , যে কোন মূহুর্তে সে খোদার কৃপার অধিকারী হতে পারে। তাই খোদার সিদ্ধান্ত বান্দার আমলের কারণে হয়। আল্লাহর এ সিদ্ধান্ত আমল করলে পরে হয় আমল করার আগে নয়। আল্লাহ তা’লা বলেন,
مَّا أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللَّهِ ۖ وَمَا أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٍ فَمِن نَّفْسِكَ ۚ وَأَرْسَلْنَاكَ لِلنَّاسِ رَسُولًا ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا ٘
তুমি যে কল্যাণই লাভ কর তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে এবং তোমার যে অকল্যাণ হয় তা তোমার নিজের কারণেই হয়। (সূরা নিসা : ৮০)
উদ্ধৃত কুরআনের আয়াতগুলো এ বিষয়টি পরিষ্কার করে সারা বছরের জন্য তকদীর নির্ধারিত হওয়া ‘শবে বরাত’ বা ‘লায়লাতুল কদরে’-র সাথে সম্পৃক্ত নয়। ইসলামে কর্ম হলো এক চলমান প্রক্রিয়া যা জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত করে যেতে হবে। হাদিসের দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা দেখতে পাই হযরত রসূলে করিম (সা.) “আইয়্যামুল বীজ” অর্থাৎ আলোকিত দিনগুলোতে প্রতি মাসে রোযা রাখতেন। আর এ দিনগুলো হলো প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ। এ সর্ম্পকে বুখারী, নাসাঈ ও মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বলে সহীহ্ রেওয়াত রয়েছে। সুতরাং এ বিষয়টি স্পষ্ট যে হযরত রসূলে করীম (সা.) শুধুমাত্র শাবানের ১৫ তারিখে রোযা রাখেন নি বরং প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোযা রেখেছেন। তাই প্রমাণিত হলো ১৫ ই শাবান অর্থাৎ শবে বরাত বলে যা চালানো হচ্ছে বিশেষ করে এর সাথে শবে বরাত নামক দিনের রোযার কোন সর্ম্পক নেই। তবে রেওয়াত হতে জানা যায় শাবান মাসে হযরত নবী করীম (সা.) অনেক বেশি রোযা রাখতেন । এর ব্যাখ্যায় অনেক কিছু বলা যায়। তবে রমযানের প্রস্তুতি হিসেবে যে এ রোযাগুলো রাখতেন এতে অধিকাংশ মুহাদ্দেসীন একমত। দ্বিতীয়ত হযরত নবী করীম (সা.) প্রায়শই দাউদী রোযা রাখতেন। আর এ নফল রোযা হলো এক দিন পর পর রাখা। বর্ণিত হয়েছে আল্লাহর দৃষ্টিতে হযরত দাউদ (আ.)-এর রোযা ছিল উত্তম- যিনি একদিন পর পর রোযা রাখতেন। জানা উচিত এ হলো নফল রোযা।
তথাকথিত শবে বরাতের পক্ষে ১৪ টি হাদীস উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। মুহাদ্দেসীন ও আসমাউর রেযালের (অর্থাৎ বর্ণনাকারীদের সততা, স্মরণশক্তি ইত্যাদি নির্ণয়করণ) পুস্তকাদীতে এসব রেওয়ায়েতকে “যয়ীফ” (দূর্বল) এবং “মাওযূ” (বানানো) বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। এ সব হাদীসের এক বর্ণনাকারী “ইবনে আবি যাবারাহ” এর ওপর “মাওযূ” হাদীসের অপবাদ রয়েছে। হাদীসের আসমাউর রেযালের ওপর হযরত ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.)-এর পুস্তক “তাকরীব”-এর ৩৯৬ পৃষ্ঠায় এর উল্লেখ আছে। আসমাউর রেযালের ওপর বিখ্যাত পুস্তক “মীযানুল ই’তেদাল”-এতে হযরত ইমাম বুখারীর বরাতে শবে বরাত সম্পর্কিত হাদীস সমূহের সনদের কয়েকজন বর্ণনাকারীকে “যয়ীফ” দুূর্বল বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। সুতরাং ১৫ ই শাবান সর্ম্পকে বর্ণিত অধিকাংশ হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। তবে মূল কথা হলো যার উল্লেখ কুরআনে নেই এবং সুন্নাহ ও আসার থেকে সাব্যস্ত নয় তা কি ভাবে ইসলামের অংশ হতে পারে ? বলা হয়ে থাকে ১৫ ই শাবানের রাতে আল্লাহ্ তাল’লা পৃথিবীর আকাশে অবতীর্ণ হয়ে বান্দাদের ক্ষমা করার ঘোষণা দেন, দান করার ঘোষণা দেন ইত্যাদী। জেনে রাখা উচিত এরূপ হাদীস শুধুমাত্র ১৫ ই শাবানের জন্য নির্ধারিত নয়। বরং আহাদীসে বর্ণিত হয়েছে প্রত্যেক রাতে যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ পার হয়ে যায় তখন আল্লাহ তা’লা পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটতম আকাশে অবতরণ করেন এবং ঘোষণা দেন কে আছে যে আমার কাছে চাইবে আর আমি তাকে দিব......। এছাড়া রমযানের ফযিলত সর্ম্পকে আমরা সবাই জানি। এ মাসে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং জান্নাতের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। রমযানের প্রথম ১০ দিন রহমতের দিন, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফেরাতে দিন আর শেষ ১০ দিন নাজাতের। আবার এর মেধ্য শেষ দশকের বেজোড় রাতে “লায়লাতুল কাদর”ও আছে। অতএব ১৫ই শাবানের রাত সর্ম্পকে যা কিছু বলা হয় তা হাদীস হতে প্রমাণিত সত্য নয়। বরং এর তুলনায় রমযানের প্রতিটি দিন ও প্রতিটি রাত এবং লায়লাতুল কাদর যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এর গুরুত্ব অনেক বেশী এবং হযরত নবী করীম (সা.)উম্মতের দৃষ্টি জোরালোভাবে এদিকে আকর্ষণ করেছেন।
মহানবী (সা.) এর পবিত্র জীবনে এরকম রাত বহুবার এসেছে কিন্তু মহানবী (সা.) নিজে কখনো এ রাতকে বিশেষভাবে উদযাপন করেন নাই আর না-ই তিনি (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে বলেছেন যে এটিই একমাত্র বিশেষ রাত, এ রাতে বিশেষভাবে ইবাদত কর তাহলে তোমাদের ভাগ্য ভালো হবে এবং তোমরা সফল হবে। এর বিপরীতে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’লা বলেছেন وَالَّذِیۡنَ جٰہَدُوۡا فِیۡنَا لَنَہۡدِیَنَّہُمْ سُبُلَنَا অর্থাঃ আর যারা আমাদের উদ্দেশ্যে চেষ্টাসাধনা করে নিশ্চয় আমরা তাদেরকে আমাদের পথে তাদের পরিচালিত করবো। (আনকাবুত ৬৯)। মহানবী (সা.) তাঁর সাহাবা ও তাঁর উম্মতকে অবিরাম ও চলমান চেষ্টাসাধনার শিক্ষা দিয়ে গেছেন এবং নিজেও আজীবন তা করে তাঁর উম্মতের সামনে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে গেছেন। ইসলামে কোন সংক্ষিপ্ত পথ নাই। চলমান এক চেষ্টা প্রচেষ্টা রয়েছে যার ফলদাতা মালেকে ইয়াওমিদ্দীন। সবকিছুই কর্মের উপর নির্ভরশীল।
যূগ ইমাম আহমদীয়া মুসলিম জামাতের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, প্রতিশ্রুত মসীহ ও ইমাম মাহদী (আ.) শাবান মাসের এ রাত সম্পর্কে বলেন,“ এসব রীতি নীতি ও হালওয়া রুটি বিদআত” (মালফুযাত, নবম খন্ড,২৯৭ পৃ)
আহমদীয়া জামাতের প্রথম খলীফা হযরত মৌলভী হেকীম নূরুদ্দীন (রা.) বলেন,“ শবে বরাত উদযাপন,গিয়ারহুয়ী শরীফ, কুল খানী ইতাদ্যী যা বর্তমানে চালু আছে, এসবের ইসলামের শরীয়ত হতে প্রমাণিত নয়। ”
আহমদীয়া জামাতের দ্বিতীয় খলীফা হযরত মির্যা বশীর উদ্দীন মাহমুদ আহমদ (রা.) কে প্রশ্ন করা হলো,শবে বরাতের দিন হালওয়া রুটি তৈরি করা কি আহমদীদের জন্য বৈধ? তিনি (রা.) উত্তর দিলেন, “ না, এটি বিদআত।” ( আলফযল, ৩০ শে এপ্রিল ১৯৫৪)
জামাতের চতুর্থ খলীফা হযরত মির্যা তাহের আহমদ (রাহে.) কে প্রশ্ন করা হয়, “মহানবী (সা.) এর জীবন হতে এ রাত সম্পর্কে কি জানা যায়, তিনি (সা.) কি এরাতে অন্যান্য রাতের তুলনায় বেশী ইবাদত করতেন?” তিনি (রাহে.) উত্তরে বলেন , "আমি মহানবী (সা.) এর ইবাদত সম্পর্কিত রেওয়ায়েতগুলি অত্যন্ত মনোযোগের সাথে পড়েছে ও দেখেছি। সেগুলোতে কোন বিশেষ রাতের ইবাদতের কথা উল্লেখ নাই। বরং (জীবনের) অনেকরাত সারা সারা রাত দাড়িয়ে ইবাদত করার কারণে পা ফুলে যাবার কথা উল্লেখ রয়েছে। আর এটাই মহানবী (সা.) এর সুন্নত ছিল। মহানবী (সা.) এর সুন্নত অনুযায়ী সারা রাত দাড়িয়ে ইবাদত করতে না পারলে এর উপর নুন্যতম আমল হলো প্রতিরাতে শেষ রাতে উঠে কিছু ইবাদত করা।” ( আলফযল, ২০ শে জানুয়ারী, ২০০১)।
অতএব হালুয়া রুটি এবং আতশবাজীর সাথে হযরত নবী করীম (সা.) এর দূরতম সম্পর্ক নেই। এটি এক বিদাত। আজ যারা ইসলামের নামে এসব করছে কুরআনের এ আয়াত তাদের জন্য সর্তকবাণী উচ্চারণ করছে এবং আমাদের সবাইকে পথ প্রদর্শন করছে। আল্লাহ তালা বলেন,
وَإِنَّ مِنْهُمْ لَفَرِيقًا يَلْوُونَ أَلْسِنَتَهُم بِالْكِتَابِ لِتَحْسَبُوهُ مِنَ الْكِتَابِ وَمَا هُوَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَقُولُونَ هُوَ مِنْ عِندِ اللّهِ وَمَا هُوَ مِنْ عِندِ اللّهِ وَيَقُولُونَ عَلَى اللّهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
“ আর নিশ্চয় তাদের মাঝে এমনও একদল আছে যারা কিতাবের বেলায় স্বরকে (এমনভাবে) বদলায় যেন তোমরা তা কিতাবের অংশ মনে কর অথচ তা অংশ নয়। আর তারা বলে, এ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে। অথচ এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। আর তারা জেনেশুনে আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা বানিয়ে বলে। ” (সূরা আলে ইমরান : ৭৯)
আল্লাহ তা’লা আমাদের সব ধরনের বিদাত থেকে মুক্ত রাখুন। (আমীন)
___________________________________________________________________________________
আলহাজ্ব মাওলানা সালেহ আহমদ,
অধ্যাপক, জামেয়া আহমদীয়া, বাংলাদেশ।
মূল প্রাপ্তিসূত্র: web.facebook.com/notes/বিমূর্ত-সত্য/শবে-বরাত-ধর্মীয়-প্রেক্ষাপটে-আদৌ-কোন-গুরুত্ব-রাখে-কী/716205478581325/