![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষের স্বভাব হচ্ছে পিছন দিয়ে টেনে ধরা ।সে চায়না তার সামনে দিয়ে কেউ এগিয়ে যাক ।খুব অল্প সংখ্যক মানুষ এই স্বভাবের বাইরে থাকতে পারে ।যুগে যুগে তারাই মহাপুরুষ হয়েছে,হচ্ছে,হয়ে যাবে ।।(প্রথম লাইনটা আমার স্কুল জীবনের প্রিয় শিক্ষক জাবেদ স্যারের ।পরের লাইনগুলি আমার লেখা)
শাপলা ও জান্নাতী সহপাঠী ।
তারা একই কলেজে দ্বিতীয়
বর্ষে পড়ে ।
শাপলার বাবা একজন
কৃষক আর জান্নাতীর
বাবা ব্যবসায়ী ।
শাপলারা অনেক গরীব ।
সমাজে তাদের অবস্থান
নিম্নশ্রেণীর পর্যায়ে ।
বিপরীতে তার বান্ধবী
জান্নাতীদের অনেক টাকা ।
সমাজে যেহেতু টাকার
পরিমাণ মেপে শ্রেণী বিন্যাস
করা হয় তাই জান্নাতীদের
অবস্থান উঁচু শ্রেণীভুক্ত ।
সমাজে তাদের একটা
মূল্য আছে ।
শাপলা ও জান্নাতী একই
সাথে কলেজে যায় ।
লাপলা বোরখা পড়লেও
জান্নাতী থাকে অনেকটা
খোলামেলা ও রং বেরংয়ের
পোশাকে সজ্জিত ।
শাপলা গত তিনবছর
ধরে একটি বোরখা
পড়ে অপরদিকে জান্নাতী
নিত্য নতুন নানারকম
জামা পড়ে কলেজে যায় ।
কলেজের স্মার্ট ছেলেগুলি
শাপলার দিকে কখনোই
তাকায়না,তার পাশে থাকে
জান্নাতীকে শিষ দিয়ে
চলে যায় ।
শাপলার চেহারা খুব
খারাপ নয় ।
সাজলে তাকেও রূপবতী
মনে হবে কিন্তু তার বাবা
একজন দিনমজুর ।
নতুন একটা বোরখা আর সাজগোজের
জিনিস কেনার ইচ্ছা
থাকলেও শাপলা পয়সার
অভাবে সেই ইচ্ছাকে
চাপা দিয়ে রাখে ।
দেখতে দেখতে রমজান
মাস চলে আসে ।
শাপলা খেয়ে না খেয়ে
সবকটা রোযা থাকে ।
আর জান্নাতী
"আব্বু রোযা থাকতে দেয়না"
এই অযুহাতে মাত্র কয়েকটা
রোযা আছে ।
রোযার শেষ দিকে
শুরু হলো পোশাক
কেনার হিড়িক ।
ঈদের একদিন আগে
জান্নাতী বাজারের সবচেয়ে
দামী পোশাকটি কিনে
এনে শাপলাদের বাড়ি
গেলো দেখাতে ।
জান্নাতী গিয়ে দেখে
দরজার ওপাশ থেকে
ফুঁপানো কাঁন্নার আওয়াজ
ভেসে আসছে ।
দরজা টান দিতেই দেখলো
শাপলা মুখ লুকিয়ে কাঁদতেছে ।
জান্নাতীকে আগেই নতুন
জামা নিয়ে আসতে দেখে
শাপলা দরজার ওপাশে
লজ্জায় লুকিয়েছে ।
শাপলার এখনো জামা
কেনা হয়নি,
যদিও তার সমবয়সী সব
মেয়েই পোশাক কিনেছে ।
ঈদের দুই দিন আগে
শাপলা তার বাবাকে বললো
একটা নতুন জামা কিনে
দেওয়ার কথা ।
শাপলার দিনমজুর বাবা
কাঁধ থেকে গামছাটা নামিয়ে মুখটা একটু মুছে বললো-
মা রে,আমারো ইচ্ছা করে
তোরে একটা জামা কিনে
দিতে কিন্তু মা আমগো
তো পেটই চলেনা,জামার
টাকা কৈ পামু ক ?
এ কথা শুনে শাপলা
এক দৌড়ে ঘরে ঢুকে
গেলো,দরজার ওপাশে
দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলো ।
একটা ছেঁড়া,ময়লা বোরখা
পড়ে সে তিনবছর কাটিয়ে
দিয়েছে এ কথা ভেবে সে
আরো জোরে কাঁদতে
লাগলো ।
বাইরে থেকে কাঁন্নার
আওয়াজ শুনতে পেয়ে
শাপলার বাবা উঠে দাঁড়ালো ।
গামছা দিয়ে আরেকবার
মুখটা মুছে সে ঘর থেকে
বেরোলো ।
একটা দীর্ঘশ্বাস শোনা গেল ।
ঈদের দিন চলে আসলো ।
শাপলা এই শাপলা
তাড়াতাড়ি ওঠ,
জান্নাতী আসছে তোরে
ডাকতে...।
মায়ের এমন ডাকে
শাপলার ঘুম ভাঙলো ।
তার চোখ,মুখ ফোলা
ফোলা ।সে যে সারাটা
রাত বালিশে মুখ গুঁজে
কেঁদেছে তা স্পষ্টই বোঝা
যাচ্ছে ।
তার গায়ে ছেঁড়া একটি
ফ্রক ।
রং চেটা ফ্রকটা গতবছর
আগে তার মামা তাকে
কিনে দিয়েছিলো ।
পোশাক বলতে শাপলার
এই ফ্রক আর বোরখাটাই
আছে ।
শাপলা ঘর ছেড়ে বাইরে
এসে দ্যাখে জান্নাতী দাঁড়িয়ে
আছে ।
জান্নাতীর গায়ে দামি পোশাক,
হাতে টাকার ব্যাগ আর চোখে
ইয়া বড় এক চশমা ।
শাপলার ছেঁড়া জামার দিকে
খেয়াল না করেই জান্নাতী
তাকে বললো-
শাপলা বেরোবি না,
তাড়াতাড়ি আয়,সবাই
অপেক্ষা করছে ।
সবাই মানে শাপলার
সব বন্ধুরা ।
শাপলা কোনো কথা
না বলে ঘরে চলে গেলো,
দরজা লাগিয়ে সে আবার
কাঁদতে লাগলো ।
.............................
এই গল্পে আমরা মাত্র
একজন শাপলার কথা
জানলাম,
কিন্তু এরকম সারা
বাংলাদেশে অসংখ্য শাপলা
আছে যাদের কাছে ঈদ
মানে কষ্ট,ব্যথা আর
অভিশপ্ত একটা দিন ।
কিন্তু এমন অনেক জান্নাতীও
আছে যারা ঈদে কয়েকটা
পোশাক পায় ।
যদি এইসব জান্নাতীরা
শাপলাদের কথা ভাবতো
তাহলে হয়তো ঈদের দিন
আর কোনো মেয়েকে
দরজার ওপাশে ফুঁপিয়ে
ফুঁপিয়ে কাঁদতে হতো না ।।
©somewhere in net ltd.