নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জয় করবো বাংলাদেশ ।।

বাংলাদেশপন্থী ।।

Aabid

মানুষের স্বভাব হচ্ছে পিছন দিয়ে টেনে ধরা ।সে চায়না তার সামনে দিয়ে কেউ এগিয়ে যাক ।খুব অল্প সংখ্যক মানুষ এই স্বভাবের বাইরে থাকতে পারে ।যুগে যুগে তারাই মহাপুরুষ হয়েছে,হচ্ছে,হয়ে যাবে ।।(প্রথম লাইনটা আমার স্কুল জীবনের প্রিয় শিক্ষক জাবেদ স্যারের ।পরের লাইনগুলি আমার লেখা)

Aabid › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন হুমায়ূন আহমেদ

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৩৩

আজ ১৩ নভেম্বর ।
১৯৪৮ সালের আজকের
এই দিনে নেত্রকোণা জেলার
মোহনগঞ্জে তিনি জন্মগ্রহণ
করেছিলেন ।
তাঁর পিতার নাম
ফয়েজ আহমেদ ও মাতার
নাম আয়েশা ফয়েজ ।

হুমায়ূন আহমেদের সাথে
আমার পরিচয় বহুদিন আগে ।
আমি তখন বোধহয় ক্লাস
টু'তে পড়ি ।
তখন ঈদের অনুষ্ঠান দেখা
হতো আয়োজন করে আর
বিনোদন মাধ্যম হিসেবে
ছিল একমাত্র বিটিভি ।
একদিন রাকিব ভাই
বললেন-
আজকে হুমায়ূন আহমেদের
নাটক হবে-ভূত-অদ্ভুত !

আমি নাম শুনেই আত্‍কে
উঠলাম তাও হবে আবার
রাত ১০ টার ইংরেজি
সংবাদের পর ।
ততোক্ষণে আমাদের বাড়ির
সবাই ঘুম ।
তবে জেগেছিলাম আমরা
তিন ভাই-আমি,রাকিব আর
তারিখ ভাই ।
শুরু হলো ভূত-অদ্ভুত ।
অভিনয়ে ছিল জাহিদ হাসান ।
আর কারো চেহারা মনে
পড়ছেনা ।
আমি ছিলাম চেয়ারে বসা ।
কিছুক্ষণ দেখার পর লেপের
তলে চলে গেলাম ভয়ে ।
অসাধারন সেই নাটকটি
আমি সব দেখেছিলাম আর
একজন শ্রেষ্ঠ নাট্যকার
হুমায়ূন আহমেদের
সাথে আমার পরিচয় হলো ।
তারপর থেকে আর কোনদিন
ঈদ অনুষ্ঠানে হুমায়ূন
আহমেদের নাটক মিস
করিনি ।।

লেখক,উপন্যাসিক ও
প্রখর সৃজনশীল মানসিকতার
মানুষটির সাথে তার ৪
বছর পর আমার সাথে
পরিচয় ঘটে ।
আমি তখন ক্লাস ফাইভে
পড়ি,রাকিব সে বার
এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে
ঢাকা কলেজে পড়তে চলে
গেছে ।
রাকিবের রুমের বিশাল
জগত তখন আমার
কন্ট্রোলে :-D
একদিন স্কুল থেকে এসে
ওর রুমের সানসেট
চেক করতে লাগলাম,
বাইরে তখন প্রচন্ড
বৃষ্টি ।
তীব্র বাদল দিনে আমি
তাঁর "নির্বাসন" নামক
একটি উপন্যাস খুঁজে পাই ।
আমার বই পড়ার নেশা
ছোট বেলা থেকেই ।
সেই বৃষ্টিঝরা দুপুরেই
বইটা শেষ করলাম আর
সত্যিই আমি কেঁদে
ফেলেছিলাম :'(
একজন মানুষ কতটা
ক্ষমতার অধিকারী হলে
পাঠককে কাঁদাতে পারেন
ভাবা যায় !!!
আমি আজ পর্যন্ত যতো
বই পড়েছি "নির্বাসন"
উপন্যাসটি হচ্ছে শ্রেষ্ঠ,
এই উপন্যাসটির শেষ
পাতার একদম নিচের
দিকের কয়েকটি লাইন
পড়লে চোখের পানি
আঁটকাতে পারিনা ।।

তারপর ক্লাস সিক্সে
উঠলাম ।
রাকিব ভাই সেবার ঢাকা
থেকে অনেকগুলি হুমায়ূন
আহমেদের বই আনলেন-
মিসির আলীর চশমা,
কুটু মিয়া,নলীনী বাবুBsc,
অন্য ভূবন,অনন্ত নক্ষত্রবীথি ।
কুটু মিয়া পড়ে তো আমি
ভয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু
করেছিলাম ।
আর নলীনী বাবুBsc পড়ে
আমি ক্ষণিকের জন্য হলেও
বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি ।
মিসির আলী দিয়ে আমার
সাথে পরিচয় হয় অসাধারন
প্রতিভার হুমায়ূন আহমেদের
সাথে আর অন্য ভূবন ও
অনন্ত নক্ষত্রবীথি পড়ে
পরিচয় হয় ছোটদের প্রিয়
সায়েন্স ফিকশন হুমায়ূন
আহমেদের সাথে ।
সে বার বার্ষিক পরীক্ষার
পর বেড়াতে চলে যাই
বড় আপাদের বাসায় ।
সেখানে আমার মেঝো
আপার বাসাও ।
আমার মেঝো দুলাভাইয়ের
রয়েছে বিশাল লাইব্রেরী ।
এতো বই পেয়ে আমি তো
আনন্দে আত্মহারা হয়ে
গেলো তবে এতো এতো
বইয়ের ততোদিনে প্রিয়
হয়ে যাওয়া হুমায়ূন
আহমেদের একটা বই ছাড়া
আর কোনো বই পাইনি ।
বইটি ছিল-
"এলেবেলে-১ ও ২"
এই বই পড়ে হাসতে হাসতে
আমি পেট ব্যথা করে
ফেলেছিলাম ।
সাংঘাতিক হাসির বই আর
এর দ্বারা পরিচয় হয়
ছোটদের প্রিয় হাসির
লেখক হুমায়ূন আহমেদের
সাথে ।

সে বার বেড়িয়ে বাসায়
এসে পরিচয় হয় হিমু সাহেবের
সাথে ।
আমি তখন ক্লাস সেভেনে ।
রবিউল কাকার কাছ থেকে
"আজ হিমুর বিয়ে" নিয়ে
পড়লাম ।
আর সাথে সাথেই আমার
প্রবেশ ঘটে হিমুর আশ্চর্য
এক মায়াময় জগতে,
আমি ক্লাস সেভেন থেকেই
নিজেকে একজন হিমু ভাবা
শুরু করি,
ক্লাস এইটে তো পাঞ্জাবীই
বানিয়ে ফেলেছিলাম একটা ।
হিমু দিয়ে হুমায়ূন আহমেদ
যে বাণী প্রচার করেছেন
তা অসাধারন ।
যেমন কয়েকটি-
রোযা আসলেই সব
"ঘুষখোররা ভাল হয়ে যায়,
তারাবির নামায পড়ে
তারপর ঈদের নামায পড়ে
আবার ঘুষ খাওয়া শুরু
হয়",
"যার মন পাপ নাই তার
ভয়ও নাই",
"পৃথিবীতে দুই ধরনের
রিমান্ড আছে ।
একটা হচ্ছে পুলিশী রিমান্ড
আর একটা প্রকৃতির রিমান্ড ।
পুলিশি রিমান্ড থেকে
বাঁচা যায়,প্রকৃতির রিমান্ড
থেকে নয় ।"

তিনি অত্যন্ত কৌশলে
এদেশের রাজনীতিবিদদের
কালো মুখোশ প্রকাশ করেছেন
আবার সমাজ ও রাষ্ট্রের
নানা অসঙ্গতির দিকে আঙুল
তুলেছেন ।
হিমু শুধু আমাদের আনন্দ
দেওয়ার জন্য নয়,
অনেক কিছু শেখানোর জন্য ।
হিমুর গভীর মর্মার্থ আমাদের
বুঝতে হবে ।
হুমায়ূন আহমেদ এতোটা
অবুঝ নন যে শুধু আনন্দ
দিয়ে ২৪ টি হিমু লিখবেন ।
উল্লেখ্য,
হিমু সিরিজের প্রথম বই
"ময়ূরাক্ষী" আর শেষটা
"হিমু ও হার্ভার্ড পিএইচডি
বল্টু ভাই "।।

আমি তাঁর অসংখ্য বই
পড়েছি ।
আমার সবার থেকে আলাদা
হওয়ার পিছনে এই মানুষটির
অবদান অপরিসীম ।
আমার চিন্তাজগতকে তিনিই
সীমালংঘন করিয়েছেন আর
তাই আজ আমি অনেক কিছু
জানি যা এতোটুকু বয়সে
আমার না জানলেও চলতো ।।

একটা বই পড়েছিলা "পুফি" ।
রাজু ভাইয়ের কাছ থেকে
নিয়ে পড়েছিলাম ।
এই বইটি অনেক মজা ও
হাল্কা ভয় নিয়ে পড়তেছিলাম
কিন্তু একদম শেষ কয়েক
পৃষ্ঠায় গিয়ে আমি প্যাঁচ
লাগিয়ে ফেলি,আমার
মাথার ভেতর একধরনের
যন্ত্রণা হচ্ছিল,
মনে হচ্ছিল,
আমি মানসিক ভারসাম্য
হারাচ্ছি ।
দোয়া দরুদ পড়া শুরু
করেছিলাম ।
বহু কষ্টে ঐ বইটির শেষ
কয়েক পৃষ্ঠা আমাকে
শেষ করতে হয় ।

আর একটা উপন্যাস
"আয়না" ।
এই বইটি পড়তে গিয়ে
আমি প্রচন্ডরকম ভয়ে
শিহরিত হই এবং বই
অর্ধেক পড়ে আর পড়তে
সাহস না পেয়ে রেখে দেই ।

সায়েন্স ফিকশন
"ফিহা"তে তিনি যে
অসাধারন ক্ষমতার পরিচয়
দিয়েছেন তা আমাকে
বিস্মিত করেছে ।

আমি পাগলা হুমায়ূন ভক্ত ।
তাঁর কোনো বই পড়ে আমি
কখনো বিরক্তি হইনি,
একটা বই ব্যতীত ।
সেটা হচ্ছে-শুভ্র !
এই বইয়ের কয়েক পৃষ্ঠা
পড়েই আমার এমন বিরক্তি
ধরেছিল যে ঐখানেই শেষ
করতে বাধ্য হই ।।

হুমায়ূন সমালোচকরা
তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগটা
সাধারনত যে তিনি হচ্ছেন
নাস্তিক ।
তবে তাঁর কোনো বইতে
আমি নাস্তিকতার প্রমাণ
পাইনি,বইতো আর কম
পড়িনি ।
মৃত্যুর আগে তিনি
আমাদের নবী মুহাম্মদ (সঃ)
কে নিয়ে "নবীজী" বসেছিলেন
কিন্তু শেষ করে যেতে
পারেননি ।
শেষ করতে পারলে
নিঃসন্দেহে মীর মশাররফ
হোসেনের "বিষাদসিন্ধু"র
মতো এটিও বাংলা সাহিত্যের
অমূল্য ধন হতো ।

যাহোক,
সমালোচনা,বিতর্ক
এগুলো আজীবন থাকবে ।
তারপরো তিনি শ্রেষ্ঠ,
তিনি একজন হুমায়ূন
আহমেদ ।

"শুভ জন্মদিন"
জানি যেখানেই আছেন
ভালো আছেন,জানি ভালো
থাকবেন ।
আমরা কোটি হিমু,রূপা,
মিসির আলী,বাকের ভাই,
মুনা আপনার জন্য সদা
প্রার্থনা করি,করবো ।।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:১০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: "ভূত-অদ্ভুত" নাটকটা কি হুমায়ুন অাহমেদ কর্তৃক রচিত ও পরিচালিত? অামার তো মনে হয় হানিফ সংকেতের । যাহোক, তাঁর "অাজ রবিবার", "বহুব্রীহি", "কোথাও কেউ নেই", "উড়ে যায় বক পক্ষি" ধারাবাহিকগুলো দেখতে পারেন । মুগ্ধতা বাড়বে ।

২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২১

Aabid বলেছেন: ভূত অদ্ভুতও তাঁরই ।
উনার অনেক নাটক দেখেছি ।

৩| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯

চলন বিল বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদ নাকি নাস্তিক ছিল? ঘটনা কি সত্য?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.