নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা কিছু ভালো, সত্য ও সুন্দর; তার সাথে।

বরতমআন

সাগর কবির

বরতমআন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সৈয়দ মুজতবা আলী : একশ’ বারোতম জন্মবার্ষিকীতে স্মরণাঞ্জলি

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৫

আজ থেকে ১১২ বছর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯০৪ সালে অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতে আসামের অন্তর্ভুক্ত সিলেটের করিমগঞ্জে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র সৈয়দ মুজতবা আলী। বিংশশতাব্দীর শুরুতে বাংলা সাহিত্য সিরিয়াস ধর্মী রচনার আবর্তে ঘুরপাক খচ্ছিলো। সাহিত্যের রম্য-গল্পশিল্প এনিমিয়ায়
ভুগছিলো। ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, রাজশেখর বসু (পরশুরাম নামে খ্যাত), শিবরাম চক্রবর্তী তখন কিছুটা রক্ত সঞ্চালনের আয়োজন করেন। সেই সময় সৈয়দ সাহেব যেন পুরো ব্লাড ব্যাংক নিয়ে হাজির হলেন।

তিনি সবকিছু দেখার আগেই ভ্রমণোপন্যাস ‘দেশে-বিদেশে’ দিয়ে জয় করে নিলেন জাতি ধর্ম বর্ণ বয়স নির্বিশেষে দেশ বিদেশের বাঙালী পাঠকদের। প্রথম গ্রন্থই
তাঁকে খ্যাতির শিখরে নিয়ে গেলো।

বিধাতা তাঁকে বাঙালির ঘরে নিয়ে না আসলে বাংলা সাহিত্যে স্বরূপ অনেকটাই অনুন্মোচিত থেকে যেত। আমাদের পড়া হতো না ‘ভবঘুরে ও অন্যান্য, ‘জলে ডাঙ্গায়’ কিংবা ‘মুসাফির’-এর মত ভ্রমণ কাহিনী।

নেশায় বুদ হয়ে যেতে পারতাম না ‘শহরইয়ার’, ‘শবনম’, ‘অবিশ্বাস্য’ বা ‘তুলনাহীনা’ -এর মত উপন্যাস পড়তে গিয়ে। কোন গ্রন্থের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় যে হিপনোটিক সুপার গ্লু থাকতে পারে ‘পঞ্চতন্ত্র’ না পড়লে বুঝতে পারতাম না।

বানরিপাড়ার পিলু শাহ্র রসগোল্লা যিনি খাননি, তিনি বুঝবেন না রসগোল্লা কি জিনিস ! তেমনি এ কথা অনেকে স্বীকার করবেন, সৈয়দমুজতবা আলীর ‘রসগোল্লা’ যিনি পড়েননি, তিনি বুঝবেন না রসগোল্লা নিয়ে কী গল্প-শিল্প হতে পারে !

‘সৈয়দের ব্যাটা’ কী প্রতিভাধর একজন মানুষ ছিলেন! তরোবারিসম তীক্ষ্ণ মেধা, আবার বুদ্ধ-যিশুর মতো সংবেদনশীল, প্রাণবন্ত হৃদয়। সিলেটের চা বাগানের দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির মতই ছিল সারাজীবন তাঁর সবুজ সতেজ মন। স্বল্পপরিচিত অথবা নতুন পরিচিতজনদের সাথেও তাঁর অল্প সময়ে হার্দিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে যেতো। অপরদিকে সুগভীর প্রজ্ঞার দ্যুতিতে প্রদীপ্ত এই মানুষটির চিত্ত ছিলো বেপরোয়া, সদা বহির্মুখী। জীবনের বেশীরভাগ সময় বোহেমিয়ান জীবন কাটিয়ে
গেলেন। অর্থকষ্টেও ভুগেছিলেন কখনো কখনো।

মহাত্মা আলী’র পেশাগত জীবনও ছিল বড়ই বিচিত্র, অস্থির। তিনি কাবুলে ইংরেজি ও ফরাশি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। বরোদার মাহারাজার আমন্ত্রণে বরোদা কলেজে তুলনামূলক ধর্মতত্বের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্ট্যাটিজ বিষয়ের উপর খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। কাজ করেছেন দিল্লীর শিক্ষামন্ত্রণালয়ে। স্টেশন ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আকাশবাণীর কটক, পাটনা, কোলকাতা এবং দিল্লী কেন্দ্রে। কিছুদিন অধ্যক্ষ ছিলেন বগুড়ার স্যার আজিজুল হক কলেজে। তামাম দুনিয়া ঘুরে প্রবীণ বয়সে ১৯৬১ সালে তিনি ফিরে আসেন তাঁর প্রাণের বিদ্যাপীঠ শান্তিনিকেতনে অধ্যাপক হিসেবে। এখান থেকেই ১৯৬৫ সালে অবসরে যান।

সৈয়দ মুজতবা আলীর জীবনের অস্থিরতা তাঁর লেখার উপরও প্রভাব পড়ে। বাংলা সাহিত্যের রম্য লেখক হিসেবে তাঁর আইডেন্টিটি এস্ট্যাবলিশ্ড্‌ হয়ে গেলেও গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণ-কাহিনী, কবিতা, শিশু সাহিত্য, অনুবাদ, সংবাদ পত্রে নিবন্ধ এইরূপ বহু ক্ষেত্রে নিঃসঙ্কোচে নির্বাধ বিচরণ করেছেন। কিন্তু কোথাও স্থায়ীভাবে মনঃসংযোগ করেন নি। তাঁর অস্থিরচিত্ততা এবং মসীহর প্রতি অনীহার কারণে অনেক সম্ভবনাপূর্ণ বিরল রচনা থেকে তাঁর লেখার অনুরাগীরা বঞ্চিত। ডঃ
সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের ভীষণ প্রিয় মানুষ ছিলেন তিনি। তাঁর চঞ্চলতা সম্পর্কে ডঃ চট্টোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন, সৈয়দ যদি শুধু তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের উপর মনোনিবেশ করতো, তাহলে তাঁর রচনা ও শিক্ষাদানের কল্যানে এই উপমহাদেশে অনেক ধর্মীয় বিবাদ ও বিভেদ কমে যেতো।

এক জীবনে একজন মানুষ ইংরেজি, সংস্কৃত, আরবী, ফার্সি, হিন্দী, গুজরাটি, জার্মান, ফরাসী, ইটালিয় ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে পারেন, যে কোন তুচ্ছ বিষয় নিয়েও চরবড় করে শব্দের চৌম্বককার্ষণ তৈরি করতে পারেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও এতো বেশি স্মরণশক্তি বা স্মৃতিধর হতে পারেন, শব্দ রূপক শ্লোক উপমা দিয়ে এমন হাস্যরস সৃষ্টি করতে পারেন, পর্যবেক্ষণ আর অনুভূতি ছোঁয়ায় এমন জীবনবোধ ফুটিয়ে তুলতে পারেন, তাঁর বিভিন্ন ধর্মী লেখার সাথে পরিচয় না হলে অজানা থেকে যেতো।

আজ তের সেপ্টেম্বর বাংলা সাহিত্যের অতি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক মহাত্মা সৈয়দ মুজতবা আলী’র জন্মতিথিতে তাঁর প্রতি এই অধমের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০০

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: শুভ জন্মদিন। উনার সৃষ্টি বেচেঁ থাকুক অনাদিকাল।

২| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: রম্য সাহিত্যের মহীরুহ সৈয়দ মুজতবা আলীর ১১২ তম জন্মবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

৩| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৪৮

ইমরান আশফাক বলেছেন: উনার ভ্রমনকাহিনীগুলিতে সেইসব অন্চলের লিভিংস্টাইল বা সংস্কৃতি উঠে আসে। তাদের মানসিকতা, জাতীগত বৈশিষ্ট্ ও কথার ছলে উঠে আসে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.