নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রথম বই ও অটোগ্রাফের গল্প (১৩/০২/২০১৬ তারিখ শনিবার দৈনিক পূর্বদেশ এর ডানপিটে পাতায় প্রকাশিত)

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২০


এক ছড়াকার বইমেলার ভিড় ঠেলে ছুটোছুটি করছেন। তিনি ডানে বামে উপরে নিচে কী যেন খুঁজে ফিরছেন। তাঁর বোতামখোলা কোর্টটা শরীর থেকে প্রায় পড়ে যাচ্ছে।
ভিড়ের মধ্যে পিঠ বাঁকা করে এক লোক চেঁচিয়ে উঠল, ‘আরে ভাই কী হয়েছে আপনার, এমন ছুটোছুটি করছেন যে?’
‘ভাই আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে। এই মাত্র ছড়ার বইটা স্টলে তুলেছি। বই থেকে একটি ছড়া পালিয়ে গেছে। খুঁজে পাচ্ছি না এখন।’ বলল ছড়াকার।
‘কি বলেন! ছড়া আবার পালায় ক্যামনে, ছড়ার কি হাত পা আছে?’ বলল একজন।
‘দেখুন, ছড়া যে কতটা বেপরোয়া হতে পারে তা আপনি বুঝবেন না ভাই। এর হাত-পা নেই তো পাখা গজিয়েছে, তা না হলে ছড়াটি ছদ্মবেশে মেলাতে ঘুরে বেড়চ্ছে।’
‘ছড়াটা কেমন একটু খোলাসা করে বলুন তো।’ মুখ বাড়িয়ে বলল আরেক জন।
‘বেজায় ত্যান্দড়, দুষ্টুর হদ্দ। ছড়াটা জন্মের সময় সাংঘাতিক রকমের যন্ত্রণা দিয়েছিল আমাকে। তাকে গড়তে গিয়ে আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল কয়েক বার। ছন্দ মেলে তো তাল মেলে না; তাল মেলে তো মাত্রা মেলে না। বড়ো কেরদানি করে ছড়াটা সৃষ্টি করেছিলাম আমি।’
‘তা বুঝলাম, আপনার পলাতক ছড়ার খানিকটা পরিচয় দেন তো, দেখি ছড়ার কোন হদিস পাই কি না। যদি পেয়ে যাই তো কোলে করে নিয়ে আসব আাপনার কাছে।’
ছড়া পালানোর কথা শুনে অনেকেই নানান প্রশ্ন আর কেৌতূহল নিয়ে এগিয়ে এলো। ছোটখাটো একটা ভিড় জমে গেল। হঠাৎ একটা লোকের পকেটে কী যেন নড়ে উঠল। ওমনি ছড়াকার ছুটে গিয়ে ভদ্রলোকের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিলেন।
‘আরে, আরে, করছেন কী, করছেন কী আপনি? আমার পকেট হাতাচ্ছেন কেন, ছাড়ুন, ছাড়ুন বলছি।’
‘ছাড়ব মানে? আমার মনে হয় ছড়াটা আপনার পকেটেই লুকিয়েছে, পকেটটা নড়ে উঠল যে!’
ছড়াকার লোকটার পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে খুব মনযোগ সহকারে ঘাটাঘাটি করতে লাগল। পকেট ফুঁটো হয়ে আঙুল বেরিয়ে এসেছে। টান মেরে হাত বের করে ‘পালিয়েছে’ বলেই আবার দেৌড়তে লাগল ছড়াকার।
বেচারা ছড়াকার মেলাজুড়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজল কিন্তু ছড়াটিকে আর পাওয়া গেলো না। অবশেষে মন খারাপ করে স্টলের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন তিনি।
এমন সময় এক লোকের হাতে ছড়ার বইটি দেখে ছড়াকার দেৌড়ে গিয়ে বিনয়ের সাথে বললেন, ‘ভাই দারুন একটা বই কিনেছেন দেখছি।’
‘জ্বী, এইমাত্র কিনলাম। আমার এই পুচ্ছি মেয়েটা ছড়ার পাগল।’
ছড়াকার মেয়েটিকে আদর করতে করতে বললেন, ‘বইটি আমার লেখা। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে এই বয়সের শিশুদের জন্য লিখেছি। মজা পাবে পড়ে। আপনি দয়া করে একটু দেখুন তো নয় নম্বর পৃষ্ঠার ছড়াটি আছে কি না।’
‘বলেন কি, ছড়া থাকবে না কেন। অ, আচ্ছা বুক বাইণ্ডিং এর সময় মিস ওতো হতে পারে। আচ্ছা দেখি।’
লোকটা নয় নম্বর পৃষ্ঠাটি খুললেন। ‘হ্যা আছে তো, আছে; এই যে!’
ছড়াকার বইয়ের উপর ঝুকে পড়ে ঘাড় কাৎ করে দেখলেন, সত্যি সত্যি তার ছড়াটি আছে। মুহূর্তে তাঁর শরীরটা শীতল হয়ে গেলো। লোকটা সালাম দিয়ে একটু সামনে গিয়ে আবার পেছন থেকে লেখককে ডাক দিল। ‘ভাই, এই যে ছড়াকার ভাই, একটু দাঁড়ান, প্লিজ।’
তিনি দাঁড়ালেন। লোকটি বিনয়ের সাথে বলল, ‘বইটা নিলাম কিন্তু আপনার অটোগ্রাফ তো নেওয়া হলো না’ বলেই ছড়াকারের সামনে বইটা মেলে ধরলেন।
ছড়াকার কাঁপতে কাঁপতে কোটের সব পকেট হাতিয়ে মাতিয়ে কলম খুঁজে পেলেন না। যাকে সামনে পেলেন তার দিকেই তিন আঙুল এক করে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলছেন, ‘ভাই, আপনার কলমটা একটু, প্লিজ।’ এক লোক কিছু না বলে কলমটা দিতেই তিনি অটোগ্রাফ দিতে গিয়ে কলমটা উল্টো ভাবে ধরেছেন।
ছড়াকার খুব যত্ন করে অটোগ্রাফ দিলেন। অতঃপর মাথা ডানে বামে কাৎ করে দেখে নিলেন। কোথাও ‘’ে-কারের মাথাটা গোল করে দিলেন; ‘’ি-কারের শেষ অংশটা টান মেরে উপরে তুলে বাঁকা করে দিলেন এবং স্বাক্ষরের নিচে তারিখের পরে ‘খ্রিস্টাব্দ’ লিখে দিলেন।

লোকটি মুচকি হাসি দিয়ে ছড়াকারকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে চলে গেলেন। ছড়াকার লোকটির চলে যাওয়ার দিকে মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে রইলেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.