![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাপড় বিতরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে। যত না কাপড় তারচে' বেশি অনুষ্ঠান।
একটা বড় সামিয়ানার তলে ক’জন নেতা ব্যস্ত হয়ে ঘোরাফেরা করছে। একটি টেবিলে শীতের জামার স্তূপ। তাদের চারপাশে ব্যস্ত ক্যামেরাম্যান।
তাদের সামনে যবুথবু বসে আছে গরিব দুখী নারী-পুরুষেরা। তারা শীতে কাঁপছে।
অনেকক্ষণ ধরে বসে আছেন তারা।
‘এই, বাবারা তোমরা কাপড় দিবা কোন সোময়। ঠাণ্ডায় শইল্যে কারফি উঠছে।' এক দুর্বল মহিলা বলল।
নেতারা দুহাত বাড়িয়ে বারবার বলছে, ‘শান্ত হোন, আপনারা অধৈর্য হবেন না, কাপড় পাবেন সবাই। প্লিজ, আপনারা চুপ করে বসুন। বড় নেতা আসছেন। তাঁর হাত দিয়ে বিতরণ হবে কাপড়। আজ আপনারা বড় ভাগ্যবান।'
ঠক্ঠক্ করে কাঁপতে কাঁপতে দুর্বল বুড়ি সামিয়ানার তলে গিয়ে বলল, ‘বাবারা আর টিকতে পারছি না। একটা কাপড় দিলে গায়ে দিয়ে বসি।'
নেতাটি বলল, আরে বলেন কি, বড় নেতার হাতে কাপড় নিবেন। এই সুযোগ পাবেন কই?'
বুড়ি বলল, কেন আপনেগর হাত নাই। দিলে দেন না দিলে যাইগা। ঠাণ্ডায় শইল জইম্যা যাইতাছেগা।'
মাথা কাৎ করে দুই আঙুল এক করে নেতাটি বললেন, প্লিজ আর একটু...।
দুই.
বড় নেতা এলেন। তিনি দামি গাড়ি থেকে নামলেন। নেতা ও কর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে সামিয়ানার তলে এলেন। কর্মী ও ক্যামেরাম্যানদের ব্যস্ত ছোটাছুটি। অসংখ্য কণ্ঠে দৃপ্ত শ্লোগান উঠল ‘আমার ভাই, তোমার ভাই, জনদরদী ... ভাই’।
শ্লোগান আর হাততালির শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে উঠছে। এই পবিত্র আনন্দ উৎসবের ভেতর দিয়ে কাপড় বিতরণ সভার কাজ শুরু হয়ে গেল।
বুড়ির ডাক পড়লো। কর্মীরা সমাদর করে যত্নের সাথে বুড়িকে সামনে নিয়ে এলো।
বুড়িকে নানা ঢঙ্গে দাঁড়াতে বলল ক্যামেরাম্যানরা।
শীতে প্রায় জমে গেছে বুড়ি। নেতার হাতে একজন একটা কাপড় তুলে দিলো। ক্যামেরার সুবিধা মতো করে কয়েকজন বুড়িকে ধরে নানাভাবে দাঁড় করালেন। নেতা কাপড় হাতে নিয়ে বুড়ির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন। বুড়ি কাপড় নিয়ে চলে আসতে চায়। নেতা কাপড় ছাড়ে না।
দুর্বল বুড়ি কাপড় ধরে ভিড়ের চাপে বলে উঠল, ‘মরণ, ইত্তা কী করতাছেন আফনেরা, কাপড় ছাড়েন না কেরে।'
নেতা কান পর্যন্ত লম্বা হাসি মেলে ধরে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছেন। আর ডান-বাম থেকে ক’জন কর্মী এসে বুড়িকে ঘিরে ধরে বলছে, চাচি হাসেন, হাসেন, ফটু উঠতাছে, হাসেন।'
চাচি একটু হাসি দিয়ে কাপড়টা টেনে ধরে বলে, ‘এলা ছাড়েন।'
নেতা বলল, রাখেন, রাখেন। আপনার হাসিটা চিমসে গেছে চাচি। বড় নেতার সাথে ফটো উঠতাছে, বড় করে একটা হাসি দিয়া রাখেন, কালকে পত্রিকায় ছবি ছাপবে, আপনি দেখবেন, সারা দুনিয়া দেখবে।'
চাচি ভিড়ের চাপে অস্থির। রেগে মেগে বললেন, ‘আমার গায়ে এত তেল নাই যে হাসি দিয়ে থাকুম। বড় হাসি দিমু ক্যামনে, ঠোঁট ফাইট্টা বাঙ্গি হইয়া আছে। হের পরেও হাসি দিছি হেই কোন সোময়। খালি আজাইড়া কথা। এতখন আবার হাসি মাইরা থাহে ক্যামনে?'
একজন বলল, দেখছেন না, নেতা যে ক্যামনে হাসি মাইরে আছে, আপনিও এভাবে বড় কইরা হাসেন, ফটো উঠতাছে।'
চাচি অনেক কষ্ট করে আবার হাসি মেলে ধরলেন।
অসহায় দুর্বল ও ক্ষীণকায় বুড়িকে কাপড় বিতরণ করা হচ্ছে এমন ছবি স্মরণীয় করে রাখার জন্য নেতার পেছনে ডানে বামে ছবি তোলার জন্য প্রচণ্ড ভিড়। বুড়িকে ঘিরে ধরে কাপড়ে হাত লাগিয়ে নেতা-কর্মীরা একের পর এক ছবি তোলার জন্য পোজ দিচ্ছে। আর ক্যামেরাম্যান রেডি, রেডি, ওকে, ওকে বলছে। সবার মুখে লম্বা হাসি। ক্যামেরা জ্বলে উঠছে। ক্লিক্ ক্লিক্ ক্লিক্।
তিন.
হঠাৎ ক্যামেরার আলো নিভে গেল। ব্যাপার কী!
বুড়ি কই? বুড়ি কই?
ডানে বামে কোথাও বুড়ি নেই।
অনুষ্ঠান শেষ হলো। নেতারা কাপড় বিতরণ সভা শেষ করে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন।
তাঁর বাড়ি ফেরা হলো না। পদতলে পিষ্ট হয়ে পড়ে রইল অসহায় বুড়ি।
ছবি: নেট থেকে সংগৃহীত
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৪৯
বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত।
এসব মহৎ কাজে যখন রাজনীতির ছোঁয়া লেগে যায় তখনই নানান অঘটন ঘটে যেতে পারে।
কারণ এসবের ভেতরে লোকদেখানোর প্রবণতাটা থাকে প্রবল।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ভাল থাকবেন।
২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০৬
রাজীব নুর বলেছেন: বুঝা যাচ্ছে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই লিখেছেন।
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৮
বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: কোথাও না কোথাও এমনটি ঘটে। এর একটা বিহিত হওয়া উচিৎ।
কিন্তু আমি টেনশনে আছি আপনার সমস্যা নিয়ে।
৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০৮
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: এই ঘটনা বারবার ঘটে, তবুও আম ঠাটানোর জন্য নেতারা-ধনীরা একই কাজ বারবার করে।
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৯
বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়।
লোকদেখানো ভাবটা ছেড়ে দেয়া উচিৎ।
আমার শুভেচ্ছা নিন।
৪| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:০৩
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
যে পরিমান আয়োজন করে কাপড় বিতরণ করেন তার চেয়ে কম খরচে বাড়ি বাড়ি হাতে হাতে কাপড় পৌছে দেওয়া সম্ভব। দেশে কোরবানীর এক/দুই টুকরো মাংসের জন্য মানুষ পিষ্ট হয়। লেখা ভালো হয়েছে। +++
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:০৮
বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: নিখাদ দান-খয়রাত এখন খুব একটা চোখে পড়ে না।
যে-দানে লোভ থাকে তা নানা দোশে দুষ্ট হয়ে যায়।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাই।
৫| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:২০
নেওয়াজ আলি বলেছেন: চিল্লাইয়া না দান করলে আমি জন দরদী ও সমাজসেবক কেমনে হবো
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:০৯
বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: এখন দান-খয়রাত করার বিষয়টি সবাইকে না জানালে আর হয় না। এই যে প্রচারণা এটাই ক্ষতিকর।
শুভেচ্ছা রইল।
৬| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
শেখ সাহেব জাতিকে ভিক্ষা শিখায়ে গিয়েছিলেন, তা চলছেই চলছে। গরীবদের সাহায্য করার কথা সরকারের।
৭| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৮
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: গরিবদের নিয়ে পরিহাস।আইনকরে বন্ধ করা দরকার।অনেক সময় সরকারও এটা করে।চাউল দিবে ১০০ জনকে লোক জড় করে এক হাজার।
৮| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:২৯
মুজিব রহমান বলেছেন: ফেসবুক আসার পরে স্ট্যাটাস দেয়ার জন্য এই প্রবণতা আরো বেড়েছে। এখন একটি দেড়শো টাকা দামের কম্বল দিতেও ৮/১০ বার পোচ দিয়ে দাঁড়াতে হয়। এরা একটি কলা চারজন মিলে দান করে। এবার করোনার শুরুতেও কয়েকজনকে ক্যামেরাবাজি করতে দেখলাম। এটা করে ওরা সামান্য দান করে বটে তবে তার চেয়েও বেশি করে দরিদ্র মানুষদের অসম্মান।
৯| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: কোথাও না কোথাও এমনটি ঘটে। এর একটা বিহিত হওয়া উচিৎ।
কিন্তু আমি টেনশনে আছি আপনার সমস্যা নিয়ে।
টেনশন করার কিছু নাই।
১০| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৭
রাজীব নুর বলেছেন: "একটা মানুষের মধ্যেই গোজামিল থাকে। কিন্তু যে সাপ সে হান্ড্রেড পারসেন্ট সাপ। যে শেয়াল সে হান্ড্রেড পার্সেন্ট শেয়াল। মানুষ সাপও হইতে পারে, শেয়ালও হইতে পারে, পাখিও হইতে পারে। মানুষেরই বিভিন্ন চরিত্র নেয়ার ক্ষমতা আছে। বুঝেছো, গ্রাম দেশে আগে সাপ আর শিয়াল পাওয়া যাইতো। এগুলা নাই এখন! কারন সাপ শিয়াল এরা মানুষ হিসাবে জন্মাইতে আরম্ভ করছে"।
- আহমদ ছফা
১১| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৫১
রামিসা রোজা বলেছেন:
নিজে দান করে অন্যকে উৎসাহিত করা এক বিষয় কিন্তু
লোক দেখানো ট্রেডিশনের নামে মানুষ প্রাণ হারায় ।
লেখায় বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন ++
১২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৩
মোড়ল সাহেব বলেছেন: বাস্তব চিত্র এটাই
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩৮
শাহ আজিজ বলেছেন: মর্মান্তিক !!!
আমরা অনেক দফা এমন লাশের মুখোমুখি হয়েছি । এসব নেতাদের ডি এন এ টেস্ট করে দেখা দরকার কি বিশেষত্ব আছে ওই জিন প্যাটার্নে ।