নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঋষিলিপি

বাঙালী ঋষি

Cogito, Ergo Sum

বাঙালী ঋষি › বিস্তারিত পোস্টঃ

আগামী শীতল প্রজন্ম

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৩:১৯

খুব ছোটবেলায়, আমার বয়স হয়ত ৫-৬ বছর। আমি তখন আমাদের পৈতৃক বাড়ী রাজবাড়ীতে থাকি। অবশ্য আমার পুরো শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে রাজবাড়িতেই। বলার ধরন দেখে কেউ আবার ভেবে বসবেন না আমরা জমিদার ছিলাম। বাংলাদেশের অন্যতম ক্ষুদ্র একটি জেলা শহরের নাম হচ্ছে রাজবাড়ী।
যাই হোক... তখন এত বিনোদনের ব্যাবস্থা ছিল না। শহরতলীর দুপুরগুলো সবসময়ই অলস ছিল, এখনও হয়ত আছে। তখন দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ হলে একটা ভাতঘুম দেয়ার একটা রেওয়াজই ছিলো বলতে গেলে। বাড়ীটা তখন কেমন যেন নির্জন লাগত। কিছুতেই যেন সময়গুলো কাটতে চাইত না। শুধু অলসভাবে বাড়ীর আশে পাশে ঘোরাঘুরি করা। আর একটু পরপর রাস্তায় গিয়ে বিরসমুখে ফিরে আসাই ছিল আমার একমাত্র কাজ। আর বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করতাম, ধুর এত দেরী করে ক্যান? পকেটে একগাদা খুচরো পয়সার ঝুনঝুনানি সেই মুহুর্তগুলোকে আরো বিষণ্ণ করে তুলত।
হটাত একটা ক্ষীণ শব্দ অনেক দূর থেকে ভেসে আসে...
টুং টুং টুটুটুং টুং টুং... আমার কানদুটো খরগোশের মত খাড়া হয়ে যায়। আমি আরো মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকি। নাহ...!!! শব্দটা কোন কল্পনা নয়। সে সত্যিই আসছে। শব্দটা যত বাড়তে থাকে আমি ভেতরে ভেতরে তত অস্থির হয়ে উঠি। চোখের সামনে ভেসে ওঠে নানান রঙ। গলার ভেতরে যে তেষ্টা এতক্ষন আটকে ছিল সেটা যেন একটুকু প্রশান্তির জন্য ছটফট করছিল। আমি যেন হাওয়ার উপরে ভর করে বাইরে বেড়িয়ে আসি। বুকের ভেতরে হৃৎপিণ্ডটা যেন হাতুড়ির বাড়ি মেরে চলেছে। পকেটের ভেতরে রাখা কয়েনগুলো যেন তার আগমনের বাজনা বাজাচ্ছে।
কি গো খোকা, এত হাপাচ্ছ ক্যানে? তার হাস্যজ্জ্বল সরল জিজ্ঞাসা। আমি লজ্জা পেয়ে পকেট থেকে কয়েনগুলো বের করে তার হাতে সপে দিতেই তিনি হাসিমুখে রঙ্গীন আইসক্রিমগুলো আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে তার বেল বাজাতে বাজাতে এগিয়ে যান। আর আমি, মুখে বিস্তির্ন এক হাসি নিয়ে তার যাবার পথে চেয়ে থাকি। বাড়ীর পাঁচিলে বসে আইসক্রিমগুলো খেতে খেতে কতবার ভেবেছি বড় হয়ে আইসক্রীমওয়ালা হব। আজও আমার চোখে ভাসে তার সেই হাস্যজ্জ্বল মুখ। কি অসাধারনভাবেই না তিনি আমাদের শৈশবের নায়কে পরিনত হয়েছিলেন। শুধু আমি কেন আমাদের পাড়ার প্রায় সব বাচ্চারাই তার আগমনের অপেক্ষায় থাকত। তিনি ছিলেন ঠিক হ্যামিলনের বাশীওয়ালার মত। আসতেন, আর আমাদের মনটাকে তার আইসক্রিমের গাড়ীতে বন্দি করে নিয়ে যেতেন। আমার মত হয়ত অনেকেই আছেন যারা ছোটবেলায় আইসক্রিমওয়ালা হতে চেয়েছিলেন। এখন নিশ্চই সেইসব দিনগুলির কথা মনে পড়লে হাসি পায়। কি সহজ ভাবেই না তারা ছোট ছোট বাচ্চাদের মাঝে খুশী বিলিয়ে দিতেন। ভেবে অবাক হই।
অনেকদিন হল সে বেলের আওয়াজ শোনা হয় না। সেই শৈশবও আজ কিছুই অবশিষ্ট নেই। ভাগ্যিস, অতীতকে কখনও দেখা যায় না। নইলে আজকে আপনার সন্তানই আপনাকে যখন প্রশ্ন করত “তোমাদের শৈশব কত মজার ছিল, আমাদের শৈশব এত জটিল কেন? তোমরা কত আনন্দ করে, খেলা করে বড় হয়েছ, আর আমাদের ঠিকমত কথা বলার আগেই জটিল সব সুত্র মুখস্ত করতে হচ্ছে কেন?”। সেই প্রশ্নের জবাব আমরা কেউই দিতে পারতাম না। এখনকার শিশুরা ধরেই নেয় পৃথিবীতে শৈশব মানেই হচ্ছে জটিল এক ধাঁধা, যা সমাধান করতে করতে বড় হতে হবে, নইলে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে তার স্থান হবে আস্তাকুড়ে। জন্মের পর থেকেই যে প্রতিযোগীতা শুরু হয়, তাতে শৈশব বলে যে কিছু আছে সেটাই তারা জানে না। তাহলে আমরা কি করে একজন মুক্তমনের প্রজন্ম তৈরী করব, যখন আমরাই তাদের চারপাশে বিভিন্ন প্রতিযোগীতার দেয়াল তুলে দিচ্ছি। আর তাদের কাধে চাপিয়ে দিচ্ছি বিশাল বিশাল সব জ্ঞানের নামে প্রতিযোগীতার জোয়াল।
হ্যা এর ফলে আমরা একটা প্রজন্ম পাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু সেটা হতে যাচ্ছে নিষ্ঠুর এক প্রজন্ম। যাদের ভেতরে কোন ভালবাসা নেই, মমতা নেই, আবেগ নেই, কোন স্বপ্ন নেই। আছে শুধু জেতার নেশা। যে কোন মূল্যেই প্রতিযোগীতা যে তাকে জিততেই হবে। হেরে গেলে চলবে না।
কি নাম দেওয়া যায় সেই প্রজন্মকে, “Cold-hearted” দিলে মনে হয় কিছুটা সার্থক হয়।
অপেক্ষা করুন তারা আসছে!!!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মে, ২০১৯ রাত ৮:১০

মা.হাসান বলেছেন: আইসক্রিম গুলো? কতগুলো আইসক্রিম এক বারে খেতেন!
শৈশবের বিষয়টা আসলে মানুষে মানুষে ভ্যারি করে। আমার চেয়ে আমার ছেলের শৈশব মনে হয় কিছুটা বেশি ভালো কাটছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মনে হয় আপনার বক্তব্যই সত্য। বইয়ের ভারে নুয়ে পড়া শিশুদের দেখে বড় খারাপ লাগে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.