নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওয়েলথ মে বী ইয়োরস বাট, নট রিসোর্স

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:০৮

অনেক আগে, সম্ভবত ক্লাস সেভেন বা এইটে মুজতবা আলী বা অন্য কারও লেখা একটা গল্প পড়েছিলাম-পন্ডিত মশাই। সেখানে পন্ডিত মশাই’র নানা কীর্তিকান্ডের পাশাপাশি একদম শেষে একটা অংশ ছিল। সেখানে পন্ডিত মশাই তার প্রিয় ছাত্র শাখামৃগকে একটা অংক কষতে দেন যে, পন্ডিত মশাই’র ৮ সদস্যের পরিবার লাট সাহেবের পালিত ল্যাংড়া কুত্তাটার কত ঠ্যাংএর সমান।

অনেক দিন আগে একটা দাওয়াত খেয়েছিলাম। বুফে হওয়ায় সবাই যার যার সাধ্য ও ক্ষুধার তিনগুন প্লেটে বোঝাই করে টেবিলে বসেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রচুর অপচয় হয়ে উচ্ছিষ্ট আকারে পড়ে থাকছে। আমি হাত ধুতে গিয়ে খেয়াল করলাম সার্ভিসম্যানদের মধ্যে এক কাকা সবার প্লেটের উচ্ছিষ্ট এক টুকরা মাংস, ভাঙ্গা একটুকরা মাছ, একটু সালাদ, কামড়ানো একটা টিকিয়া, লালা লাগানো ক্ষির-এসব একটা গামলায় জড়ো করছে নিয়ে যাবার জন্য। সেটাও খুব সাবধানে যাতে বাবুসাবরা দেখে না ফেলে। কারণ বাবুসাবদের মেজবান হতে এঁটো খাবারও নেয়া নিষেধ। হয়তো বাড়িতে একটা বিধবা মেয়ে আছে। আছে তার ৬ বছরের পিলে পেটের নাতি। রোগা স্ত্রী হয়তো সেই এঁটো খাবারই মেজবানের তৃপ্তিতে খাবে। তাই বাড়িতে নিয়ে যাবার চেষ্টা। তবে বাবুসাবরা তাও তাদের দেবে না।

অনেকদিন আগে ওয়েষ্টইন হোটেলে একটা প্রোগ্রাম করেছিলাম। অর্গানাইজার আমি ও সহকর্মী রাসেল। মেডিটারনিয়ান ডিশ নামক ভয়ংকর মেন্যু হওয়ায় টু থার্ড খাবার বেঁচে যায়। অনুষ্ঠান শেষে আমরা হোটেলের লোকদের জিজ্ঞেস করলাম যে উদ্বৃত্ত খাবার কি হবে। তারা জানালেন ওয়েস্টইনের নিয়ম হল লেফট ওভার ফুড পার্সেল হয় না বা নিতে দেয়া হয় না। সব বাজেয়াপ্ত হয়। এখন কথা হল এত এত বেচে যাওয়া খাবার তারা কি করে? চমৎকারভাবে প্যাক করে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়? আমাকে হাসাবেন না প্লিজ। সেখানকার বো পড়া, টাই পড়া স্ট্যাফরা রাতে কাজ শেষে নতুন প্যাক করে বাসায় নিয়ে যান আর তাদের সদা পেটুক ঘরওয়ালাদের কাছে ক্রেডিট নেন।
উভয় ঘটনাতে একই ইস্যু। লেফট ওভার ফুড। শুধু বাবুসাবরা নিলে ক্ষতি নেই। ক্ষতি শুধূ লুঙ্গি পড়া কাকু নিলে।
কাল একটা অনুষ্ঠান ছিল। হোষ্ট মশাই ১০-১৫ জন লোকের জন্য মোটামুটি মেজবান করে ফেলেছেন। আমার ধারনা মতে খরচটা লাখের কম না। উপলক্ষ্য? আমাকে হাসাবেন না।
আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে বাংলাদেশের ব্যপক উন্নতির যে বিজ্ঞাপন আমাদের গিলানো হচ্ছে তারপরও যে জনসংখ্যার ৯০% অতি দরিদ্র, দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত (এরা সবচেয়ে ওঁচা)-এদের গোটা মনুষ্য জীবন সমাজের বাকি ১০% অতি ভাগ্যবানের পালিত কুকুর, বিড়াল, ময়না’র কত ঠ্যাং এর সমান?

এবার একটি সংগৃহিত ঘটনা। একশোভাগ সত্যি কিনা সেটার নিশ্চয়তা দেয়া কঠিন।রতন টাটা একবার এই গল্পটি রতন টাটার জবানিতে লেখা। সত্য বা মিথ্যা এখানে মূখ্য নয়, শিক্ষাটা খুব চমকপ্রদ। উর্দ্ধতন কর্মীদের নিয়ে জার্মানিতে যান ব্যবসায়িক কাজে। তারা একটি বিলাসবহুল রেষ্টুরেন্টে খেতে যান। মেনু দেখে অনেক খাবারের অর্ডার করলেন। ওয়েটার অর্ডার মতো খাবার দিয়ে গেলে তারা সেখান থেকে যা খাবার খেলেন। এরপর ওয়েটার এলো বিল নিতে এসে দেখে প্রচুর খাবার টেবিলে পড়ে আছে উদ্বৃত্ত হয়ে। ওয়েটার তাদের বলল খাবার নষ্ট করা যাবেনা। তাদেরকে সেই সব অর্ডার করা খাবার পুরোটা অবশ্যই খেতে হবে। টাটা বুঝে উঠতে পারলেন না এর কারন কি। তিনি ও তার সঙ্গীরা ওয়েটারকে বরং ধমকানোর সুরে বলতে লাগলেন তারা যেটার জন্য বিল দেবেন তার কতটা খাবেন কতটা নষ্ট করবেন এতে রেষ্টুরেন্টের এত মাথাব্যথার কি আছে। তর্কাতর্কি শেষতক ম্যানেজার পর্যন্ত গড়াল। সেও একই কথা বলল যে, তারা অতিরিক্ত অর্ডার কেন করেছেন এবং কিছুতেই খাবার নষ্ট করতে পারবেন না। টাটা ও তার সঙ্গীরা সেটা না মানতে চাওয়ায় ম্যানেজার এমার্জেন্সি কল করলেন। সাথে সাথে সোস্যাল সিকিউরিটি পুলিশ হাজির। সব শুনে তারা টাটা ও তার সঙ্গীদের বড় অঙ্ক জরিমানা করলেন খাবার অপচয়ের অপরাধে। টাটা পুলিশের কাছে জানতে চাইলেন, তার যেহেতু টাকা আছে, খাবার অরডার করেছেন এবং তার কতটা খাবেন বা ফেলবেন সেটাতে সরকারের কী? পুলিশের লোকেরা তখন তাকে জানালেন, জার্মানিতে খাবার অপচয় আইনত অপরাধ। আপনার অর্থ থাকতে পারে।সেটা অঢেলও হতে পারে। সেটা আপনি অপচয়ও করতে পারেন। কিন্ত পৃথিবীর সম্পদের পরিমাণ সীমিত এবং সেটা আপনার একার নয়। তাই টাকা অপচয়ের অধিকার থাকলেও সম্পদ বিশেষত খাবার অপচয়ের কোনো অধিকার আপনার নেই। ঠিক ততটাই আপনাকে অর্ডার করতে হবে যতটা আপনি খেতে পারবেন। তার বেশি নয়।সুতরাং আমার টাকা আমার সম্পদ আমি ইচ্ছা মতো উড়াব-সেটা পৃথিবীর সবাই বিশ্বাস করেন না।

সমাজের মোটামুটি একটা ওঁচা লেভেলে থাকার সুবাদে প্রায়শই নিশ্চই আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাবার বা বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের সুযোগ হয়। অবশ্যম্ভাবীভাবে এসব অনুষ্ঠানে প্রচুর খাবার উদ্বৃত্ত হয় যা ফেলে দেয়া হয় অথবা আয়োজকরা সংরক্ষন করেন। পরবর্তি কয়েকদিন প্রয়োজন না থাকা স্বত্বেও তারা এগুলো খান বা অপচয় করেন। আমরাও যতটা পারব তার তিনগুন প্লেটে নিয়ে শেষে এঁটো করে খাবারের একটা বড় অংশ নষ্ট করি। বিশেষত রমজানে যেখানে প্লেটে হাজারটা ইফতার আইটেম দেয়া হয় তার কতটা আমরা খাই কতটা নষ্ট করি খেয়াল করেছেন কি? এই সংস্কৃতি পরিবর্তন হওয়া দরকার। প্লেটে দু’য়েকটা আইটেম দিলে হয়তো প্রেস্টিজ নষ্ট হবে কিন্তু আমরা সবাই সেটাকে সহজ করে নিলে দেশ তথা পৃথিবীর বড় একটা অংশ অন্তত একবেলা খেতে পারবে।প্লেটে একটু কম খাবার নিলে অপচয় কম হবে।বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো গরীবদের দিলে কোনো ক্ষতি নিশ্চই নেই। অনেকে হয়তো সার্ভ করা পুরো খাবার সত্যিই খেতে পারেন না বিধায় রেখেই উঠে আসেন। আমরা কি পারি না লজ্জা না করে খেতে না পারা খাবারটা প্যাকেট করে সেটা কোনো দরিদ্র বাচ্চাকে দিতে? আমি শপথ করেছি এখন থেকে যেকোনো অনুষ্ঠানে খেলে আমাকে দেয়া কোনো খাবার যদি বেঁচে যায় সেটা দাওয়াত দাতাকে বলে প্যাকেট করে বাইরে নিয়ে কাউকে দেব। প্লেটে খাবার বেড়ে না দিয়ে যদি বুফে দেয়া হয় তাহলে অনেক খাবার এঁটো না করা সম্ভব।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৬

রিফাত_হাসান বলেছেন: আসলেও আমরা প্রচুর খাবার নষ্ট করি। এমনকি আমরা বাংলাদেশীরা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাই। আমি দুবেলায় যে ভাত খাই, একজন জাপানী সেই পরিমান ভাত প্রায় তিন বা চারদিনে খায়। একটু কম ভাত খেলে আমি মারা যাব না কিন্তু আমাদের মানুষিকতাই এমন হয়ে গেছে, এর কম খেলে মনে হয় পেট ভরেনি। চিন্তা করে দেখেন, আজ থেকে হঠাৎ যদি বাংলাদেশের সকল মানুষ জাপানীদের মত করে ভাত খায় তবে, একজনের ভাত তিনজন খেতে পারবে। মানে প্রায় তিনগুন মানুষ ভাত খাবে। অন্যভাবে চিন্তা করলে একমাসের চাল তিন মাসে খাওয়া হবে। আমরা আসলে খাই খাই জাতি। :(

২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৬

সেলিম৮৩ বলেছেন: অামাদের মানসিকতা পরিবর্তন হওয়া দরকার। যেখানে হতদরিদ্ররা দু'মুঠো অন্নের জন্য দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে সেখানে উচুতলার লোকেরা দামি দামি খাবার ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। অাফসোস!
ধন্যবাদ বাস্তবসম্মত একটা বিষয় তুলে ধরারা জন্য। ওয়েলথ মে বী ইয়োরস বাট, নট রিসোর্স
এটা জার্মানীতে হতে পারলে অামরা কেন পারবোনা।

৩| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪০

বেচারা বলেছেন: আমাদের মানসিকতায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ওইযে, আমরা আমাদের ওয়েলথ এর মতো রিসোর্সকেও নিজের মনে করি আর সাধ্যমতো সব নিজে ভোগ করতে চাই। দোকানে একটা ভাল জিনিস পেলে সবকটা কিনে নিয়ে আসি যেন আর কেউ সেটা না পেতে পারে। দুনিয়ার সবটুুকু ভাল, সবটুকু দামী-সব আমার কাছে রাখতে হবে। শেয়ার করব শুধু ফেসবুকের স্ট্যাটাস।

৪| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:২১

The Tourist বলেছেন: ওয়েলথ মে বী ইয়োরস বাট, নট রিসোর্স লেখাটি পড়ে একটা সাম্প্রতিক ঘটনা মনে পড়ল, অপ্রাসঙ্গিক যদিও, তবুও লিখে ফেললাম।

আমরা যারা প্রতিদিন খবরের কাগজে গৃহকর্মীদের নির্যাতিত হতে দেখে হা হুতাশ করি, কিভাবে বাসায় গরম খুনতি ব্যবহার বন্ধ করা যায় সেটা নিয়ে আলাপ করি আর সব গৃহকর্তীদের এই নিয়ে গালাগাল করি, আবার বাসায় গিয়ে নিজেই নিজেদের বাসার কাজে সাহায্য করার জন্য রাখা কম বয়সী মেয়েটাকে মুরগীর পা অথবা ডানা দিয়ে নিজেরা রান চিবাতে থাকি তাদেরকে চপোটাঘাত করার মতো বেশ কিছু মানুষের মাঝে একজনকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে চারদিন আগে।

ঘটনা এরকম, রাতে আমার বাবার সৌজন্যে খেতে গিয়েছি এক রেস্টুরেন্টে। হটাৎ দেখলাম বেশ ছোট একটা মেয়ে, এগারো বার বছর বয়স হবে, চেহারা আর ভীত-সন্ত্রস্ত আচরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে সম্ভবত বাসার গৃহকর্মী, এক ভদ্রমহিলা আর তার মেয়ের সাথে তাদের ছায়ায় ছায়ায় হাঁটছে। একটুপর দেখলাম তিনজনের এই পরিবারের সাথে এই মেয়েও বুফে খাবারে অংশগ্রহণ করেছে। চার অংকের এই বুফে ডিনারে শুধু তাকে যে সুযোগই দেয়া হয়েছে তা নয় বরং গৃহকর্তীকে দেখলাম হাতে ধরে ধরে তাকে ঠিকভাবে ডিনার নাইফ আর ফোর্ক ধরাও শেখাচ্ছেন। মাত্র কয়েক মিনিটেই এই মেয়ে পূরো ব্যপারটিই ঠিকভাবে ধরে ফেলল।
টাকার অংকে হয়ত এটা আহামরি খুব বেশি কিছু নয় কিন্তু যে আন্তরিকতা এই মহিলা দেখিয়েছেন সেটা অনেকেই পারবেন না, বিশেষ করে এই সাহস আর জড়তা ভেঙ্গে এগিয়ে যাওয়া, চাইলেও হয়তো আমরা সবাই পারব না, অন্তত আমি নিজে তো পারতামই না।

৫| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:১৫

বেচারা বলেছেন: আমি অনেক আগে একজন গৃহকর্মী এনেছিলাম স্রেফ আমার স্ত্রীকে সঙ্গ দেবার জন্য আর টুকটাক হেল্প করতে। যদিও তাকে সবরকম আতিথ্য দেবার পরও নানারকম জটিলতা হওয়ায় পরে তাকে তার অভিভাবকের কাছে ফেরত পাঠাই। এরপর হতে আমি আর আমার স্ত্রী শপথ করেছি গৃহকর্মী আর নয়। ঘরের যত গৃহস্থালী কাজ আছে সব দু’জন ভাগ করে করি। নারী বা পুরূষ ভাগ নয়, যত কাজ জমে যে যখন সময় পাই করি। আমাদের চিন্তাটা ছিল, এত ভালবাসা দিয়েও যেহেতু কর্মীর সাথে ব্যাটে বলে হয়নি তাহলে আর হবে না। আর তাদের অত্যাচার করে কাজ করাতে রুচীতে বাঁধবে। সবরকম স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন না করে মানুষের সেবা নিতেও বাঁধে। তাই ও চ্যাাপ্টার বন্ধ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.