নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রশ্ন ফাঁস, গলার ফাঁস

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৩৯

।।--।। (পর্ব-১)
---------আমার একজন ব্যারিষ্টার বন্ধু হঠাৎই আমাকে প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে একটা কিছু লিখতে বলে। ব্যারিষ্টার ও তার সহকর্মীরা সম্প্রতি উচ্চ আদালতে একটি রীট করেছে প্রশ্নফাঁস প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেবার আর্জি নিয়ে। সম্ভবত বিগত কয়েক বছরে অতি দরকারী ও কাঙ্খিত রীটের মধ্যে এটি একটি।

আমাদের বর্তমান সময়ের শিশুদের বেড়ে ওঠা ‍ও ভবিষ্যত নিয়ে একটা লেখা শুরু করেছিলাম কয়েকদিন ধরে। তার ভেতরেই গত ১৪ ফেব্রূয়ারী তারিখ আস্ত একটি বাসে দলেবলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক আর শিক্ষকরা ফাঁসকৃত প্রশ্নসহ ধরা পড়ে জেল, রিম্যান্ড, জামিনের দুষ্টচক্রে পড়েছেন। আমার মনে হল, এই বিষয়টাতে কিছু কথা লেখা উচিৎ। আজ রাতে যখন আমি প্রশ্নফাঁস নিয়ে লেখাটা কীবোর্ডে টাইপ করছি, তখনো সবগুলো চ্যানেলে প্রশ্নফাঁসের রীট নিয়ে খবর আর টিভি পর্দায় উদ্বিগ্ন, হতচকিত ও আতঙ্কিত শিক্ষার্থীদের পান্ডূর মুখ বারবার দেখা যাচ্ছে।

যদিও আমার কাছে মাঝে মাঝে মনে হয়, ’প্রশ্নপত্র ফাঁস’ বাংলাদেশে এখন একটি পানিভাত বিষয়। কারন অফিশিয়ালী এখনো প্রশ্নপত্র ফাঁস বলে কোনোকিছুর অস্তিত্ব স্বীকার করা বা এটাকে বড় কোনো সমস্যা হিসেবে দেখা হয়না। অবশ্য সেটাকে স্বীকৃতি দেবার কোনো সত্যি সত্যি উপায়ও নেই। রাষ্ট্রীয় মেকানিজম আমাদের নিত্যদিনের আবেগ মেনে চলে না। তার আছে নিজস্ব গতিধারা ও ডিসকোর্স।

শুরুতেই বলি, এই বিষয়টার টেকনিক্যাল ও নন-টেকনিক্যাল দুটো দিক আছে। আমি প্রথাগত একাডেমিশিয়ান নই বিধায় ওই প্রশ্ন ফাঁস আর তা বন্ধ করার টেকনিক্যাল দিকটি নিয়ে আমার খুব বেশি দখল আমার নেই। আমি শুধু একজন অভিভাবকের দৃষ্টিতে আর একজন প্রাক্তন বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট হিসেবে আমার ধারনা শেয়ার করব। আমার একটা স্বভাব হল, অল্পতে কথা বোঝাতে পারি না। আর কথা বলতে বসলে আনুসঙ্গিক নানাদিক বলতে গিয়ে লেখার কলেবর বাড়িয়ে তুলি। কিন্তু কি জানেন, প্রশ্ন ফাঁস বিষয়টা নিয়ে যদি আপনি সত্যিই চিন্তিত হন আর তার আদ্যোপান্ত নিয়ে সত্যিই জানতে চান, তবে আপনাকে ধৈর্য ধরে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার নাড়িনক্ষত্র না হোক, কিছুটা মৌলিক পাঠ না নিলে আপনি বিষয়টির তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারবেন না।

তাই আমি একটু পিছন হতে শুরু করব। পাঠককে আমার অনুরোধ থাকবে, আমার এই লেখাকে কোনোরকম রাজনৈতিক রং দেবার চেষ্টা করবেন না। আর মন্তব্যেও রাজনীতিকে টানবেন না। কারন আমি কোনো বায়াজড বা পার্শিয়াল দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করি না। প্রশ্নফাঁস শুধু সরকারের একার দায় নয়, এই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, পরিবেশ, সাংস্কৃতিক অধঃপতন, সামাজিক অধঃপতন, অভিভাবক, শিক্ষক, ছাত্র, আপামর জনসাধারনও বিভিন্নভাবে দায়ী। কেন, সেটা বুঝতে হলে পুরোটা পড়ুন।

এক;
দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অনেক ইউনিক কিছু বৈশিষ্ট আছে। প্রশ্নফাঁস নিয়ে বিব্রতকর ও ভয়ঙ্কর অবস্থায় পড়ার নজিরও তার একটি। এমন অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ বাদে আর কোনো দেশের আছে কিনা আমার জানা নেই।

এদেশে বিগত কয়েক বছর ধরে কী ফাঁস হচ্ছে না? যেকোনো ক্লাসের এমনকি ক্লাস ৫ এর থেকে শুরু করে, যেকোনো পাবলিক বা প্রাইভেট পরীক্ষা, ভর্তি পরীক্ষা, চাকরীর পরীক্ষা সব কিছুর প্রশ্নই পরীক্ষার আগে পৌছে যাচ্ছে উদগ্রীব ও আপাত চতুর লোকজনের কাছে। একসময় একটু রাখঢাক থাকলেও এখন ঘোষনা দিয়ে, রীতিমতো ডিজিটাল মাধ্যমে ফলাও করে অফার করা হচ্ছে প্রশ্নপত্র। কী লজ্জা কী লজ্জা একটি দেশের জন্য!

লোকে বলে প্রশ্ন ফাঁসের শুরু বিগত কয়েক বছরে। কিন্তু আমার মনে হয় কি, আমাদের শৈশবে সেই নব্বইয়ের দশকেই প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টার শুরু। কিংবা তারও আগে।

আমার খুব ভালই মনে পড়ে, এসএসসি, মানে ক্লাস টেন এর আগে অন্তত ৫টি ক্লাসে (৫-৯) যেখানে কোনো বোর্ড পরীক্ষা ছিল না, সেখানেও (আর বোর্ড পরীক্ষায়তো অবশ্যই) পরীক্ষার মাস খানিক আগে আমরা শিক্ষককে অনুরোধ করতাম আমাদের বিষয়ভিত্তিক সাজেশন (আসলে সোজা কথায় বললে, সম্ভাব্য প্রশ্ন) দিতে। শিক্ষক শুরুতে না, না করলেও, পরের ক্লাসে ১০ থেকে ১৫ টি ব্রড কোশ্চেন বলে দিতেন। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের কাছে কোচিং করলেতো কথাই নেই। প্রশ্ন মাস্ট। ব্রডে ওই সময় মার্কস থাকত প্রায় ৭০। বলতে পারেন, একজন শিক্ষক তার ছাত্রদের সম্ভাব্য প্রশ্ন বললে সমস্যা কী? আর ছাত্ররা ওই প্রশ্নগুলোই পড়ত এমনতো নয়? জ্বি হ্যা, আমরা ফাঁকিবাজরা ওই ১০টি প্রশ্ন পাবার ভরসাতেই সারাবছর পড়তাম না। তাছাড়া একজন শিক্ষক যিনি কয়েকদিন পরেই ওই ক্লাসের প্রশ্নপত্র প্রনয়ন করবেন (বা হয়তো ইতিমধ্যেই বানিয়ে বসে আছেন), তিনি যদি ১০-১২ টি প্রশ্ন বলে দেন, সেটাকে কি এক অর্থে প্রশ্ন ফাঁস করে দেয়া বলে না?

দুই;
সন ১৯৯৬। মার্চ বা এপ্রিল মাস হবে।

আমাদের এসএসসি পরীক্ষা শেষ। বাকি শুধু প্রাকটিক্যাল। কৃষি শিক্ষা সাবজেক্ট আমরা খুব আগ্রহ করে নিতাম। কারন ওর প্রাকটিক্যালে ৪০ মার্কস যা টিচারের সাথে একটু খাতির থাকলেই বিনা আয়াসে পুরোটা মিলবে। তো ওই পরীক্ষায় একটা সেগমেন্ট ছিল কৃষি উপকরণ সনাক্তকরণ।
পরীক্ষার আগের দিন টিচার আামাদের সবাইকে ডাকলেন। পরের দিনে পরীক্ষায় যেসব উপকরন সনাক্ত করতে হবে সেগুলো আমরাই কিছু কিছু করে সংগ্রহ করে দিয়েছিলাম। তবুও এক্সটারনালের সামনে যাতে ভুল না বলি তাই এই সতর্কতা।
তিনি প্রতিটি উপকরণ একটা একটা করে বের করে আমাদের নাম মুখস্ত করালেন। আর কোনটা কোনটা কাল এক্সটারনালের সামনে জিজ্ঞেস করবেন তাও বলে দিলেন। পরের দিন যথারীতি তিনি ওই ১০টি উপকরণ এক্সটারনালের সামনে একে এক সবাইকে সনাক্তকরণ দিলেন। সবাই ১০ এ ১০ পেয়ে স্কুলের ও স্যারের (অপরাধী) মুখ আরেকটু উজ্বল করল। প্রাকটিক্যাল খাতায় মার্কস ছিল ১০। ওই ১০ তো আমাদের হয়ে আমাদের বড় ভাইরা কিংবা পেশাদার আঁকিয়েরা করে দিত।

প্রশ্ন ফাঁস নামক চৌর্যবৃত্তির সাথে সেই আমাদের প্রথম পরিচয়। যারা বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের মড়ক শুরু হয়েছে গত বছর কয়েক, তারা আসলে ভুলের স্বর্গে বাস করছেন।

তিন;
একটা সময় ছিল, মানুষ মক্তবে বা টোলে পড়ত। সেই শিক্ষা ব্যবস্থা আজকের স্কুল কলেজের আদলেই শিক্ষাদান করলেও কিছুটা মৌলিক ব্যবধান আছে ওর সাথে।
যাহোক, বলছিলাম, আমরা কেন একাডেমিতে পড়তে যাই জানেন কি? আমার কাছে মোটা দাগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া ও আনুষ্ঠানিক পড়াশোনা করার মূল লক্ষ্য হতে পারে এই ২টির যে কোনোটি-

ক.মানুষের মৌলিক মানবীয় গুনাবলি ও জ্ঞানের আলোর সাথে পরিচীত হয়ে ইথিক্যাল ও মনুষ্যত্ববোধ সম্পন্ন একজন মানুষ হবার পাঠ নেয়া।
খ.’শিক্ষিত/সনদপ্রাপ্ত’-এমন একটি সার্টিফিকেট বগলদাবা করে সোস্যাল স্ট্যাটাস বাগানোসহ চাকরী বাকরী বাগানো।

আমার মনে হয় আজকালকার শিক্ষার্থীরাতো বটেই, এমনকি তাদের প্রথম ও প্রধান আইকন বাবা-মায়েরাও আজকাল প্রথমটির কথা শুনে নিজেরাই হাসেন। মানতে যত কষ্টই হোক, শিক্ষা এখন একটি পণ্য। ঠিক আলু, মুলা, পটল, সিমেন্ট, কন্ডম, মায়াবড়ি, ফুল, বই যেমন একটি পণ্য, শিক্ষাদান ও গ্রহনের প্রক্রিয়াটি এখন পুরোদস্তুর একটি বানিজ্যিক প্রক্রিয়া।

শিক্ষা এখন সেবা সেক্টর না, বানিজ্য বাজার। খাদ্য ও হাসপাতালের পরেই বোধহয় বাংলাদেশে শিক্ষার ব্যবসার এখন খুব কাটতি। আর ব্যবসায়ি পণ্যের বাজারে প্রতিযোগীতা জিততে যেকোনো কিছুই করাই তো দস্তুর। (৩ পর্বে সমাপ্য। দয়া করে কোনো রাজনৈতিক বা অফেন্সিভ মন্তব্য না করার অনুরোধ রইল।)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: শুধু শিক্ষাখাত না, সব খাতেরই একই অবস্থা।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৯

বেচারা বলেছেন: তা ঠিক।

২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৫৩

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: যখন ক্ষমতা নিয়ে কামড়া কামড়ী তখন তাদের কাছে প্রশ্ন ফাঁসের মতো ফালতু(!) বিষয় নিয়ে চিন্তুা করার সময় কই? :(

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৯

বেচারা বলেছেন: সেটাই সত্যি।

৩| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০৩

সোহানী বলেছেন: একটি দেশকে ধ্বংস করার প্রথম উপায় শিশুদের ধ্বংস করা, তাদের মনস্বত্ত ধ্বংস করা... আমরা মনে হয় শতভাগ সফল।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৪০

বেচারা বলেছেন: কোনো সন্দেহ নেই। আমরা সফল।

৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:১৮

করুণাধারা বলেছেন: আপনি বলতে চাচ্ছেন প্রশ্ন ফাঁস নতুন কোন বিষয় নয়, আগেও ছিল। মানছি ছিল, কিন্তু তার পরও তা এমন ক্ষতিকারক ছিল না- তখনো ভাল ছাত্ররা ভাল ভাবেই পড়াশোনা করত, শিখত আগ্রহ নিয়ে। ভাল আর খারাপ ছাত্র বলে একটা তফাত ছিল। এখন সেটা নেই। টিউমার ক্ষতিকারক না হলে তা রেখে দেয়া যায়, কিন্তু ক্যান্সার হয়ে গেলে তার বিরুদ্ধে কথা বলা দোষের নয়।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৬

বেচারা বলেছেন: ঘটনা হিসেবে নতুন না। ব্যবধান বেড়েছে, যেমনটা বললেন, ফ্রিকোয়েন্সিতে।

৫| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৬

বারিধারা ২ বলেছেন: পাকিস্তানীরা যদি ৪৭ এর দেশভাগের পরপরই যদি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার দিকে মনোযোগী হত, তবে পূর্ব পাকিস্তান কোনদিন স্বাধীন হতে পারতনা। পাকিস্তান যে ভুল করেছিল, ভারত আর সে ভুল করবেনা। এই জাতিকে আদর্শিকভাবে পঙ্গু করতে, মেরুদন্ড দুর্বল শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের কোন বিকল্প নেই। নাহিদ তাই এই পদে সবচেয়ে 'যোগ্য' ব্যক্তি। এ কারণে সব সাংসদরা তার পদত্যাগ চাইলেও 'উপরের' আশীর্বাদে তিনি স্বপদে বহাল আছেন।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৪১

বেচারা বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। একক ব্যক্তির চাইতে সমষ্টিক দোষ বেশি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.