নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই বসন্তে সাতটি অমরাবতী

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৯

নাতাশা কফির ছোট্ট তোবড়ানো পটটা চুলায় তুলে দিল। ওর মধ্যে ছেড়ে দিল কিছু কফি বিন। ওটুকুই ছিল শেষ।

পাশের তাবুর আনাতলিয়ার কাছে হাত পাততে হবে আবার। আনাতলিয়া অবশ্য অত কফি খায়না। আর বড় ভাল মেয়েটা। কিন্তু বারবার হাত পাততে তার বড্ড সংকোচ লাগে। কখনো হাত পাততে হয়নি তো আগে।

রাকা শহরে রুশ হামলা শুরুর পরে সেই যে বাড়ি ছাড়ল, এ শহরে ও শহরে ঘুরে দিন কাটানো শুরু হল। বাবা-মা, ছোটভাই তাশদিক একদিন এয়ার এ্যাটাকের মধ্যে পড়ে কোথায় ছিটকে গেল। এখনতো হাসপাতালেও বম্বিং হয়। নাতাশার কপালে চিন্তার রেখা পড়ল।

পরের ত্রাণের কনভয় না আসা পর্যন্ত আর কফি পাওয়া যাবে না। তার ওপরে মরুভূমির মধ্যে শরনার্থী ক্যাম্পে প্রচন্ড শীত। গত এক সপ্তায় নাতাশা অন্তত ৮ জনকে মারা যেতে দেখেছে প্রচন্ড শীতের কামড়ে। লাশগুলো জমে শক্ত হয়ে গিয়েছিল। রেডক্রস এসে ত্রিপলে মুড়ে নিয়ে যায় তাদের জমে যাওয়া দেহাবশেষ।

নো ম্যানস ল্যান্ডের কাছেই একটা নতুন কবরস্থান খোলা হয়েছে। সেখানে দিনকে দিন বাড়ছে নেমপ্লেটের সংখ্যা।

কবরস্থানটা যখন খোলা হয় তখন কতগুলো গাছ লাগানো হয়েছিল সীমানা ঘেঁষে। বসন্তে তাতে সুন্দর বাসন্তি রঙা ফুল আসে। ধূর, বাসন্তি রং কোথা হতে আসবে এই মরুতে।
এখানে সাদামাটা হলুদই বাসন্তির নামান্তর।

নাতাশাদের তাবু হতে গাছগুলোর উঁচু মাথাটা শুধু নজরে আসে। আরব বসন্ত নাতাশার জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে। বসন্ত শুধু ফুল, রং, নতুন কিশলয়ই আনে না। কোনো কোনো বসন্ত নিয়ে আছে মৃত্যু, বুলেট, ধ্বংস।
এবারের বসন্তেও গাছগুলো কেমন বিবর্ণ হলুদ রঙে মন খারাপ করা চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে।

আরব বসন্ত আর প্রকৃতির বসন্ত এক হয়ে গেছে কবরস্থানের ওধারটাতে। এরই মাঝে বেড়ে চলে নেমপ্লেটের সংখ্যা।

।।
পৃথিবীর ওপ্রান্তে বঙ্গদেশের এক গাঁয়ে ঠিক এমন সময়টাতেই মইফুলি তার অন্ধ বুড়ি মাকে নিয়ে রাতের খাবার শেষ করে।
খাবার বলতে একটুখানি আলু শাক, ছোট টেংরা মাছের খানিকটা ঝোল, সাথে দুপুরের ডেলা পাকানো ভাত।
পরের বাড়িতে কাজ করে মইফুলি এর চেয়ে বেশি জোটাতে পারে না। বাপ নেই তার।

বাপ তো গেছে সেই যখন ওর মা দুর্গার তিন মাসের পেট। মাত্র দুইদিন টিকল ওর বাপ। পাশের গাঁয়ের সিরাজ ওঝা খুব নামকরা। তাকে তিনকুড়ি টাকা মেনে দুর্গা আনিয়েছিল। সে বহুক্ষণ চেষ্টা করল বসন্ত দেবীর নজর হতে মইফুলির বাপ অনিল মাঝিকে ছিনিয়ে আনতে।
ঘন্টা তিনেক চেষ্টার পর সিরাজ ওঝার আজীবনের সিদ্ধ ক্ষমতাকে মিথ্যে প্রমাণ করে অনিল মাঝি তার তিন মাসের পোয়াতি বউকে রেখে ভবলীলা সাঙ্গ করল।

তার পরের বছর তিন গাঁয়ে ভাল গেল। বছর ঘুরতে না ঘুরতে মা আবার আশির্বাদ দিলেন আওয়ালপুরের উত্তর পাড়ায়। এবারে মইফুলির মা দুর্গা পড়ে তার নজরে। কোনোমতে তার সাথে যুঁঝে দূর্গা টিকে গেলেও তার সারা গায়ে, মুখে তার গভীর দাগ ফেলে যায় গুটি বসন্ত। আর নিয়ে যায় দুর্গার চোখের দৃষ্টি।
সেই থেকে সে অন্ধ।

বাপ মরা, মা অন্ধ মইফুলি বেড়ে ওঠেনি আর দশটা সাধারন মেয়ের মতো। যদিও বিয়ে নামে একটা প্রহসন একবার হয়েছিল। সে অনেকদিন আগে, কবে তা মইফুলিও ভুলে গেছে।
তার ডাগর গতরে উঠতি বয়সি এমনকি তিন ছোয়ালের বাপ ব্যাটাদের শকুন নজর থাকলেও সাঙ্গা করে ঘরে নেবার চিন্তা কেউ করে না। পড়ন্ত যৌবনের মইফুলি বসন্তের সময় দোল পূর্ণিমায় অনুভব করে না কোনো বিশেষ আকর্ষণ।

মইফুলিদের ঘরে বসন্ত আসে না। ফাগুনি পূর্নিমায় শুধু ঘরের চালের ক্ষয়ে যাওয়া খড়ের ফাঁক দিয়ে যখন পূর্নিমার চাঁদের আলো এসে পড়ে ঘরে, তখন শুধু মইফুলির মন কেমন কেমন করে।

।।
বাসন্তি গত প্রায় বছর চারেক ধরে এই দক্ষিনের ঘরটাতে আছে। সে আছে না বলে, বলা ভাল, তাকে এই ঘরটাতে থাকতে দেয়া হয়েছে। ’আম্মা’র দয়ায়।
প্রথম যখন তাকে এখানে আনা হয় বা বলা যায় তাকে বিক্রি করা হয়, তখন চত্তির মাস। বসন্তের শেষদিকে। তখন অবশ্য এত সুখ ছিল না তার। একটু খুপড়ি মতো ঘরে তাকে রাখা হত। কোনোদিন একবেলা, কোনোদিন আধপেটা।
তখন মোটে ১২ বছরের সে। আর এখন সে ১৬।

বয়সে না হলেও গতরে বেশ বেড়েছে আম্মার নেক নজরে পড়ে। অন্তত বাবুদের মন জোগানোর মত বড় তো সে হয়েছেই। আর বাবুরাও অল্পবয়সী মেয়ের খোঁজে ছোঁক ছোঁক করে। বাসন্তির খুব মনে আছে। তার বাসন্তি নামের ইতিহাস। বড় বু’ তাকে প্রায়ই বলত বিকেলে পুকুর ঘাটে ষোলগুটি খেলার সময়।

“বুঝলি, তোরে জম্ম দেবার সময়, ফাল্গুন মাসের শেষাশেষি, মা’র শইলডা জানি কেমুন এক্কেরে হইলদা হইয়া গেছিল। মায় তো মরো মরো। তুই হইলি। বাজানে গেরামের ডাক্তররে দেহাইল। হ্যায় কইল, হেপা না কি জানি হইছে মায়ের। ওষুদ পানি বহুত করছিল বাজানে। তয় ডাক্তরে কইছিল, শহরে বড় ডাক্তর দেহাইতে। বাজানে কই পাইব অত টেহা। মক্তবের হুজুরের থোন পানি পড়া আইন্না খাওয়াইল। মায় বাঁচল না তবুও। তোরে ৭ দিনের রাইখ্যা মায় গেল গা। দাদীয়ে মায়’র হইলদা রোগের কথা ভাইববা তোর নাম থুইল বাসন্তি।”------------------
------------------------------------
”বাসন্তি কই?

বাবু আইছে, আম্মা তোরে বোলায়।” একটা বছর কুড়ি বয়সের মেয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ একটা অশ্লিল ভঙ্গি করে বাসন্তিকে ডেকে যায়।

হালকা বাসন্তি রঙের ঘের দেয়া বিছানার চাদরটা কেন যেন এক নজর দেখে ফিক করে হাসে বাসন্তি। তারপরই সে তড়াক করে উঠে পড়ে। বসন্ত বাবু দেরী পছন্দ করেন না।

।।
এই নিয়ে ৫টি বসন্ত অপেক্ষায় পার করল জয়গুন।
সেই যে তার বিয়ে হল তার ২৭ বছর বয়সে। অনেকদিন আটকে ছিল তার বিয়ে।
গায়ের রংটাতেও হয়তো ঠেকত না,
কিন্তু বিয়ের দিন তার বর সাপের কামড়ে মরেছে-শুনলে বিয়ের সম্মন্ধ এগোয় না।
শেষ পর্যন্ত দুই গ্রাম পরের লষ্কর বাড়ির আছেম লষ্করের সাথে বিয়ে ঠিক হল আইবুড়ো জয়গুনের। আছেম লষ্করের বউটা মরেছিল তৃতীয়বার বাচ্চা বিয়োতে গিয়ে। তারপরে আর বিয়ে না করে ছিল আছেম। শেষ পর্যন্ত আছেমের বরাতে জয়গুনের একটা গতি হয়।

যদিও জয়গুনের মত ছিল না বিয়েতে, হাজার হোক যুবতি মেয়ে আর ওদিকে দোজবর। কিন্তু যার বাপ দ্বিতীয় নিকার বউয়ের সাথে ঘর করে, যার বিয়ের দিন বর সাপের কামড়ে মরে, এমন ঘোর শ্যামবর্ণ আইবুড়ো মেয়ের মত গ্রামে শুনতে চাওয়াটাও কাপুরষত্ব।

নগদ দুটো হালের বলদ আর একটা ইন্ডিয়ান সাইকেল নিয়ে আছেম জয়গুনকে নিকা করে ঘরে নেয়। পাশের বাড়ির রহিমা বু’ বলেছিল, বর্ষা আসলেই সে তার বাপকে কয়ে নাওরে আনাবে তাকে। আর তার মাস ঘুরতেই বর্ষার আগেই জয়গুন আবার তার বাপের গলগ্রহ হয়ে ফেরত আসে।
তার নাকি চরিত্রে দোষ।

জয়গুন শিমুল গাছটার পাশে খালপাড়ে বসে অপেক্ষা করে। হয়তো তার দোজবর স্বামীর মতি ফেরার অপেক্ষায় কিংবা আসগরের। শিমুল গাছটার বয়স হয়েছে।
তবু আজও ফাল্গুনের শেষ দিকে ওটাতে কিছু ফুল ধরে। সেই গাছটা যেটার তলায় বসে আসগর তাকে শিমুলের বসন্ত বিলাসের গল্প বলত। কিভাবে বসন্তের শেষে শিমুলের ফল ঠাস ঠাস শব্দে ফেটে নিজের শুভ্র শ্বেত গর্ভ থেকে সাদা পেজা পেজা তুলো বাতাসে ছেড়ে দেয়।

পেটানো চেহারার খালি গতর আসগর যখন গল্প করত, জয়গুন গল্প না শুনে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকত। কোথায় হারিয়ে যেত তার মন। সেই গল্প করাই হয়েছিল কাল। বসন্ত আসে যায়।

জয়গুন’র নাইওর শেষ হয় না।

।।
নামের মধ্যে কৃষ্ণ থাকলেও কৃষ্ণচূড়া কেন লাল সেই প্রশ্নটা ছেলেমানুষির মতো ভাবাতো বোটানির একসময়কার দুঁদে প্রফেসর আলিম সাহেবকে।

একদিন সেই উত্তরটা পেয়েছিলেন তিনি।

সেই দিনটাও ছিল বসন্তের একটা সাদামাটা দিন। ৮ই ফালগুন। বসন্ত। একটু কি বেশিই লাল মনে হচ্ছিল সেই বসন্ত দিনটার কৃষ্ণচূড়াগুলোকে? আর দশটা দিনের মতোই প্রফেসর আলিম সাহেব ক্লাস নিতে বেরিয়ে পড়েন।

তিনি অবশ্য বাংলা দিন তারিখ অত মনে রাখেন না। দুপুরের দিকে যখন বারুদের মতো ছড়িয়ে পড়ল, পুলিশ মিছিলে গুলি করেছে, অনেকে মারা গেছে, আলিম সাহেবের খুব ভাবান্তর হয়নি। তিনি ওসবে গা সওয়া হয়ে গেছেন। তাছাড়া এইসব ছেলেছোকরাদের গন্ডগোলকে (!) তিনি খুব পাত্তাও দেন না। শুধু দুপুরে যখন ক্লাস নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন তখন রাস্তায় অনেকের রক্তের দাগ দেখে একটু বিচলিত হয়েছিলেন। মেডিকেলের সামনের কৃষ্ণচূড়াটা যেন একটু বেশিই ফুল ফুটিয়েছিল সেদিনও। আলিম সাহেব একবার আগ্রহ নিয়ে সেদিকে তাকিয়েওছিলেন।

কিন্তু বিকেল নাগাদ যখন খবর এলো তার বড় ছেলে অপূর্বও সেদিন দুপুরের লাশের মিছিলে ছিল, তিনি কেমন যেন নির্বাক হয়ে গিয়েছিলেন। একটুও কাঁদেননি অপূর্ব’র মায়ের মতো।

দুপুরে রাজপথে যেই রক্তের দাগ দেখেছিলেন সেই রক্তের মধ্যে তার অপূর্ব’র রক্তও মিশে ছিল ৫২’র লাশের মিছিলে। কালো রাজপথের পিচ তার অপূর্ব’র রক্তে লাল রূপ নিয়েছিল।

দিনটা ছিল ২১শে ফেব্রূয়ারী, ফালগুনের মধ্য বসন্তে।

প্রফেসর আলিম সেই থেকে কখনো কৃষ্ণচূড়া ফুল পছন্দ করেন না। ওরা যে তার অপূর্ব’র লোহুতে রঞ্জিত।

।।
মৃন্ময় ছুটে বের হয়ে গিয়েছিল সেই সকালে। দিগ্বিদিক ছোটার সময় সে খেয়াল করেনি দু’পায়ে দুরকম স্যান্ডেল পড়েই বেড়িয়েছিল। রাস্তায় অনেকটা ঘোরার পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মোড়টাতে যখন একটু বসে জিরোতে, তখন খেয়াল হয়।

সকাল হতে সে দু’ব্যাগ রক্তের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছে। তার কলিজার টুকরো মেয়ে মুনিয়ার লিউকোমিয়া। যেকোনো মূল্যে দুই ব্যাগ রক্ত আজ পুশ করতেই হবে। সামান্য প্রেস কর্মচারী মৃন্ময় এমনিতেই নিঃস্ব। দু’ব্যাগ রক্ত দয়া করে দেবার মতো ডোনারের খোঁজে সে শেষতক হোস্টেলে হোস্টেলে ব্যর্থই ঘোরে।

আজ বোধহয় কোনো একটা পর্ব চলছে ইউনিভার্সিটিতে। সবাই কেমন বাসন্তি রঙের কাপড় পড়ে জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ক্যাম্পাসটাতে। মৃন্ময় কখনো এমনটা দেখেনি। টিভিও সে খুব একটা দেখে না।
দলে দলে তরুন তরুনী হাত ধরাধরি করে ঘুরছে। ইস! আজ যদি মুনিরা থাকত!.............................. চিন্তায় ছেদ পড়ে মৃন্ময়ের। সে রওনা হয় চাঁনখার পুলের দিকে।
রক্ত কেনার পয়সা নেই তার কাছে। শেষতক একটা ব্লাড ব্যাংকের সাথে রফা হল, সে দুই ব্যাগ রক্ত বিক্রি করবে ব্লাড ব্যাংকে। বিনিময়ে মুনিয়ার গ্রূপের রক্ত নেবে দু’ব্যাগ।

বিকেল নাগাদ হাসপাতাল হতে ফোন পেয়ে সে দুই ব্যাগ রক্ত নিয়ে তড়িঘড়ি রওনা হয় হাসপাতালে। ফাল্গুনের পড়ন্ত বিকেলে সারাদিনের উৎসব বরণের ধকল শেষে ছেলেমেয়েগুলো একটু ক্লান্ত। উদভ্রান্ত মৃন্ময়ও, পরাজিত। ................................
কার্জন হলের কাছে একটা পলাশ গাছে কয়েক থোকা পলাশ রক্তরঙা ছটা নিয়ে ফুটে আছে। আজ বসন্ত। মৃন্ময় একবার হাতের লাল রক্ত আরেকবার পলাশের দিকে তাকায়। পলাশ বা তার হাতের রক্ত কি তার মা মরা মেয়ে মুনিয়ার চলে যাবার আঘাতে হৃদয়ে যে ক্ষত হয়েছে তার থেকেও লাল?

।।
টিএসসির মোড়টা পাড় হবার সময় মমিনুন্নেসার বুকটা আজও হু হু করে ওঠে। তিনি রিক্সা করে ফেরার সময় কখনো রাস্তার ওই ধারটাতে তাকান না। রিক্সাওলাকে তাড়া লাগান দ্রূত পাড় হয়ে যেতে। পুপলুর মারা যাবার পর (কিংবা খুন হবার পর) রাস্তার পাশে ইউনিভার্সিটি হতে একটা শহীদ বেদী বানিয়ে দিয়েছিল।

প্রথম প্রথম পুপলুর মৃত্যুদিবসে সেখানে জড়ো হত তার বন্ধুরা, পার্টির লোকেরা। ফুল দিয়ে ভরে দিত ওর নামে করা ফলকটাকে। গেল বছর অবশ্য রাস্তা চওড়া করার সময় মিউনিসিপ্যালিটি ফলকটাকে ভেঙে ফেলে। আর তাতে বিশ্ববিদ্যালয়েরও সায় ছিল। শত হোক, নাগরিক সুবিধা তো সবার আগে।

১৪ ফেব্রূয়ারী পুপলুরা যখন স্বৈরাচার পতনের জন্য মিছিল নিয়ে ওখান দিয়ে যাচ্ছিল, সামরিক জান্তার কুত্তারা কয়েক রাউন্ড চায়নিজ রাইফেলের গুলি করে। পুপলুর লাশ উদ্ধার হয় অনেক পরে। পুলিশের ভয়ে কেউ যায়নি। খবর পেয়ে মমিনুন্নেসা নিজেই ছুটে যান। না, একটুও কাঁদেননি তিনি। পুপলুর বাবার জন্যই শেষ কেঁদেছিলেন যেদিন রাজাকাররা তাকে স্টাফ কোয়ার্টারের বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। আর খোঁজ পাননি।
.................................

আজকেও বোধহয় ১৪ তারিখ। আরেকটা ফেব্রূয়ারী। তবে মমিনুন্নেসার একটু দ্বিধাদ্বন্দ্ব লাগে। রিক্সা করে যেতে যেতে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, জান্তার পতন দিবসের কোনো নামগন্ধও পান না টিএসসির মোড়ে। সবাই কেমন উৎসবের আবেশে।

পুপলুর গুলি খেয়ে পড়ে থাকার স্থানটায় যেখানে চওড়া ফুটপাত করে দিয়ে কয়েকটা বেঞ্চ বসিয়ে দিয়েছে মিউনিসিপ্যালিটি, সেখানে লাল শাড়ি, সাদা পাঞ্জাবী পড়া কয়েকটা জুটি ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে গল্প করছে। ওহ! আজ তবে ভালবাসা দিবস বোধহয়?

কিন্তু ওরা পুপলুর মৃত্যুর দিনে তারই মরে পড়ে থাকার স্থানে ভালবেসে একটা ফুলও কি দিতে পারত না? এ কেমন ভালবাসা? এ কেমন ফাল্গুন মাস? মমিনুন্নেসা রিক্সাওলাকে তাড়া লাগান। ঘন ঘন প্যাডেল পড়ে জোয়ান রিক্সাওলার রিক্সায়।

পেছনে পড়ে থাকে ১৪ই ফেব্রূয়ারীর দাগ, স্বৈরাচার পতনের ফাল্গূন স্মৃতি নয়, বসন্ত মাসে ভালবাসার বিকিকিনির দাগ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:১৮

মা.হাসান বলেছেন: পুপলুর কথা শুনেছে বা নাম জানে এমন ছেলে ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ে খুব বেশি নেই। জনাব এরশাদ গত দশ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি।
ভালোলাগলো।
জয় ভালোবাসা।

২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লাগলো পড়ে।

৩| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:১১

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: বহুদিন পর সুন্দর একটা গল্প পড়লাম। একই ফাল্গুন, নানান জায়গায়, নানান রঙে, নানান ঢঙে। গল্পে ++++ আর ভালোলাগা। অনেকদিন আগে এরকম একটা গল্প লিখেছিলাম একটি ঝড়ের রাতের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা নিয়ে, সেটার কথা মনে পড়ে গেল।

ভাল থাকুন সবসময়, শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.