নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্লীলতার মাঝে অশ্লীল উপাধ্যায়-ক্লীবতা আসে জড়তার উন্মাদনায়

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৯

এই লেখাটা খুবই অশ্লীল। খুবই। সাবধানে নিজ দায়ীত্বে পড়ুন!!!!!!
।।--।।
যুগ যুগ ধরে কবি, সাহিত্যিকরা কাব্য, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস কত কী লিখছেন। শিল্পী আঁকছেন, সৃষ্টি করছেন। একটা সময়ে এসে তার সাথে যোগ হল সিনেমা, নাটক, নৃত্যনাট্য অনেক কিছু। শিল্পীর মন মানসে থাকা কোনো একটি ধারনা, বিশ্বাস বা বক্তব্যকে পাঠক ও দর্শকের কাছে পৌছাবার হরেক রকম মাধ্যম আছে। যুগে যুগে সেই মাধ্যমের সাহায্যে মানুষ তার মনের কথা পৌছে দিয়েছে অন্য মানুষের কাছে। লেখালেখির (মানে সৃষ্টিশীল লেখনির কথা বলছি আমি) সঠিক বয়স কত তা আজ আর খুঁজে বের করা কঠিন। তবে সেই আদ্যিকাল হতেই শিল্পের, বিশেষত লেখার ভাষা আর রস নিয়ে বিতর্ক কিন্তু কখনো পিছু ছাড়ে নি।

একটা সময় পর্যন্ত লেখালেখি মানেই ছিল বই, পত্রিকা, সাময়িকি কিংবা ম্যাগাজিনে লেখা। স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের যুগে এসে লেখালেখির হাজারটা মাধ্যম ও প্লাটফরম সৃষ্টি হয়েছে। তার ভিতরে ব্লগ, ফেসবুক অন্যতম। লেখালেখির ধরনধারন আর ধারনাটাকেই আমূল বদলে দিয়েছে অনলাইন প্লাটফরমগুলো। এর ভিতরে ব্লগ ও ফেসবুকে নিজে ওয়ালে লেখাকে আমার কাছে মনে হয় আমার নিজের ডায়রিতে লেখার মতো তবে সেটা মুক্ত করে রাখা হয়েছে সবার জন্য। এখন আবার সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রীক বিভিন্ন গ্রূপ ও পেজেও মানুষ লেখে। যেখানে সেই লেখার কপিরাইট, সোশ্যাল ও রিডার অবলিগেশনের ধারনাটি খুব জটিল।

একটি পাবলিক গ্রূপে বা পেজে লেখার সাথে ব্যক্তিগত ব্লগে বা ওয়ালে লেখার কিছুটা হলেও পার্থক্য আছে যদিও দুটিই মুক্ত মাধ্যম অর্থাৎ, পাঠক বা দর্শকের কাছে মুক্ত করা থাকে তার প্রবেশাধিকার (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে)। তাছাড়া একটি বই যেমন শুধু তার মালিকের কাছেই তার বুকের ভেতরে থাকা কথামালার চরিত্রটি উন্মোচন করে থাকে, অনলাইনে তা না। এখানে রাখা যেকোনো সৃষ্টি বা লেখা লেখকের চতুর্পার্শ্বে এমনকি দূরাগত ব্যক্তিদের কাছেও পৌছে যায় অবলিলায়। আর তাই একজন লেখকের পাঠক দায়বদ্ধতার বিষয়টি এখানে খুব জটিল ও গুরুত্বপূর্ন। তবে আমি শুধু লেখার শ্লীলতা ও অশ্লীলতা নিয়ে বলতে চাচ্ছি না। শিল্পের সব শাখায় অর্থাৎ লেখায়, গানে, সিনেমায়, পেইন্টিং, নাচসহ যেকোনো শিল্পকলায় শ্লীলতার সীমা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। মহাকবি কালিদাস হতে আধুনিক কালের সোশ্যাল মিডিয়ার যুগের লেখক ও কবি-সবার সৃষ্টির সাথেই এই বিতর্কটি জড়িয়ে আছে।

আমার মনে পড়ে, আমরা যখন খুব ছোট, আমাদের বাসাবাড়িতে মকছুদুল মুমিন নামে একখানা কিতাব থাকত। বিভিন্ন ধর্মীয় রীতি, নিয়ম, পদ্ধতি শিখতে ও জানতে পুস্তকখানা খুব সহজ ও সাবলীলভাবে এর পাঠককে সাহায্য করত। কিন্তু গোল বাঁধত ওই পুস্তকের কিছু পারিবারিক অধ্যায় নিয়ে। ছোট মানুষ হিসেবে আমরা যখন অমন একখাো ধর্মীয় কিতাব পড়তাম, বড়রা খুব খুশি হতেন, ছেলে ধর্মীয় জ্ঞান নিচ্ছে বলে। কিন্তু একই সাথে তারা শ্যেন দৃষ্টি রাখতেন, ওই বইয়ের পারিবারিক (মূলত দাম্পত্য) জীবন সংক্রান্ত নানা উপদেশ যেন আমরা না পড়ি। কারন ওই অংশগুলো ওনাদের তখনকার দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল নিষিদ্ধ ও অশ্লীল। এমনকি আমার এও মনে পড়ে, আমার বাসায় একখানা পারস্য উপন্যাস ছিল। আমার মা খালারা কড়া দৃষ্টি রাখতেন, সেই বইখানা যেন আমি খুব একটা না পড়ি। কারন ওই বইয়ে পারস্যের নানা রাজা রাণীর প্রেম উপাখ্যানের বর্ননা থাকত। মাসুদ রানার মতো বই পর্যন্ত নিষিদ্ধ বস্তু ছিল সেই যুগের মায়েদের কাছে। অভিযোগ সেই একই-ওই বইয়ে প্রেম ছিল, প্রণয়ের হালকা গন্ধ ছিল, নর ও নারীর শরীর নিয়ে কথা থাকত যা অশ্লীল! এই কনটেন্ট ওই যুগে অবলীলায় হজম করার মতো মানসিকতা তখনো তৈরী হয়নি। সেইদিক দিয়ে বিচার করলে মাসুদ রানা এমনকি মকসুদুল মুমিন এর কিছু অংশ তখনকার দিনে অশ্লীল ছিল। অথচ আজ সেই পারস্য উপন্যাসের একশোগুন বেশি আবেদনময় কনটেন্ট বাবা-মা, সন্তান সন্ততি নিঃসঙ্কোচে টিভিতে, সিনেমায় উপভোগ করছে একত্রে বসে। শারীরিক শিক্ষা (আসলে যৌন শিক্ষা) সেই যুগেও নিষিদ্ধ বস্তু ছিল। আজও সেই ট্যাবু খুব একটা বদলেনি সমাজে।

যদিও সেই ইন্টারনেটবিহীন এ্যানালগ যুগ হতে আজকের ওপেন এয়ারের যুগ-সবসময়ই বাড়ন্ত বা এডাল্ট বয়সের নর ও নারীর কাছে নিষিদ্ধ বস্তু মানেই আকর্ষন। সেই আকর্ষনে ফুটপাতের চটি পুস্তকও ও পরম আরাধ্য। খুব স্বাভাবিকভাবেই, ফুটপাতের চটি (যার প্রায় ৯০% হল সস্তা বিকৃত যৌন সুড়সুড়িমূলক অখ্যাদ্য, আর ১০% হবে পৃথিবীর সকল বিষয়ের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান) সেযুগেও অশ্লীল তকমা পেয়েছিল কোনো কথা ছাড়াই। এ যুগেও সে কোনো ভদ্রলোকের বইয়ের শো-কেসে স্থান পাবার যোগ্যতা পায়নি। যদিও কারনটা সাহিত্য মান নয়। কারনটা খুব সহজ-শ্লীলতা। এখনো আপামর মানুষের কাছে ও এক অশ্লীল অখাদ্য। যদিও ফুটপাত হতে চটি বই কিনে বা বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে পড়েনি এমন পুরুষ (নারীও) চিত্রাঙ্গ ঠাকুরের বালামে নেই। যদিও দিনের আলোয় আমরা তা কবুল করব না।

মনে পড়ে কি, আজ হতে কিছু বছর আগে (সম্ভবত ২০০০ সালের আশপাশে), বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে (তথাকথিত) অশ্লীলতার একটা মড়ক লেগেছিল। যদিও আমাদের চলচ্চিত্রের গৌরবজ্জ্বল অধ্যায়টি খুব বিশাল না। তবুও যা একটু ছিল, ডিশ টিভি, বলিউড আর হলিউডের তীব্র ঝড় আমাদের ঢালিউডকে নাড়িয়ে দিল। দর্শক ধরে রাখতে আর সিনেমার দর্শককে সিনেমার পাড়ায় ফেরাতে চলচ্চিত্রাঙ্গনের মানুষেরা (খুব সামান্য কিছু মানুষ বাদে) লুঙ্গি কাছা মেরে নেমে পড়লেন আইটেম ছবি (মুলত স্বস্তা সুড়সুড়ি দিয়ে, নায়িকা ও এক্সটাদের প্রায় নগ্ন বসন পড়িয়ে) বানাতে। সাথে থাকত, ভিলেন এমনকি নায়কদের মুখে অত্যন্ত ইঙ্গিতবহ ডায়লগ। কনটেন্ট, কস্টিউম, ডায়লগ ও প্রোজেকশনে সেই ছবি ফুটপাতের চটি বইয়ের লাইভ ভার্সনই হল। সিনেমার মধ্যবিত্ত দর্শক যথারীতি ‘সমাজের’ দোহাই দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। কিন্তু সিনেমার সবকালের মুখ্য দর্শক অর্থাৎ সমাজের বিত্তহীন শ্রেনী ওই অখাদ্যকে ব্যাপকভাবে গিলল। সিনেমা হাউসফুল হতে থাকল। নির্মাতারাও আরো দিগুনে উৎসাহে ঝাপিয়ে পড়লেন। ঢালিউডের নগ্নতার কাটতি এমনকি টলিউডের বাংলা সিনেমার নায়িকা (ও নায়কদেরও) কাউকে কাউকে বঙ্গদেশে এনে ছাড়ল। এমন জোয়ার যাচ্ছে, তাতে গা ভাসিয়ে দুহাতে কামানোর সুযোগ কে ছাড়ে। কিন্তু বাঁধ সাধল একদল স্রোতের বিপরীতে চলা মানুষ। তারা রাস্তায় নামল এর বিরুদ্ধে। আর একটা পর্যায়ে অশ্লীল কনটেন্ট ও মেকিং এ দর্শক ও সাধারন মানুষেরও অরুচী ধরল। ভাটা পড়ল উৎসাহে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫-৬ বছর রাজত্ব করার পরে (তথাকথিত) অশ্লীলতা বিদায় হয় আপাতত।

আপনি যদি এই পর্যন্ত পড়ে মনে করেন, সার্বিক বিচারে বাংলাদেশের মানুষ অশ্লীলতার বিরোধি আর অশ্লীলতা বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য হতে বিদায় নিয়েছে, তবে অবশ্য ভুল ভাবছেন। অশ্লীলতা বিদায় নেবার নয়। অন্তত যতক্ষন অশ্লীলতার স্বরুপটি সার্বজনীনভাবে চিহ্নিত না হয়। একটি শিল্পসৃষ্টিকে শ্লীল কিংবা অশ্লীল-তকমা দেয়ার বিষয়টি খুব জটিল। কারন শ্লীলতার কোনো বিশ্বজনীন ও সার্বজনীন সংজ্ঞা নেই। একজনের কাছে যা শ্লীল, সেটাই আরেকজনের কাছে চরম অশ্লীল। অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও সূক্ষ্ন ব্যবধান দুয়ের মধ্যে। সেই ব্যবধানের আবার রয়েছে স্থান, কাল, উপলক্ষ্য, পাঠক, দর্শক, প্রদর্শনের মান ও ধরন, প্রেক্ষাপটের বিচার ইত্যাদি। একটা উদাহরন বলি। চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা ঠেকাতে আমাদের দেশে সেন্সরবোর্ড আছে। সেই বোর্ড’র কাজ হল নির্মীত প্রতিটি চলচ্চিত্র দেখে তাতে (দৃশ্যমান) কোনো অশ্লীল বা (রাষ্ট্রবিরোধী) ক্ষতিকর কোনো উপাদান আছে কিনা তা নীরিক্ষা করা। তো অশ্লীলতার যেই মানদন্ডে ঢালিউডের মুভিতে কাঁচি চালানো হয়, সেই মানদন্ড আপনি যদি হলিউডে গিয়ে বলেন, তারা হেসেই মরে যাবে। এমনিতে সাধারনত অধিকাংশ দেশেই সেন্সর কর্তৃপক্ষের কাজের প্যাটার্ন হল, তারা একটা রেটিং সিস্টেম অনুসরন করে। নির্মিত মুভি বা নাটক বা একই ধরনের সৃষ্টি তারা দেখে তাকে নির্দিষ্ট রেটিং লেবেল দিয়ে দেন। এরপর দেশের অনুমোদিত মিডিয়া নীতি অনুযায়ী সেই কনটেন্ট, মুভি, নাটক টিভি, সিনেমা বা অন্যান্য মিডিয়াতে প্রদর্শিত হয়। দর্শকও বয়সভেদে ভাগ করা থাকে। মূলত ’এ্যাডাল্ট কনটেন্ট’ বিষয়টিকেই এখানে দেখা হয়। শিশু ও কিশোররা তাদের নির্দিষ্ট রেটিং এর বাইরে কোনো কনটেন্ট পাবলিককি দেখতে পারে না বা তাদের দেখানো যায় না। কিন্তু মূল বিষয়টা হল, কনটেন্টটির কোনো অংশকে শ্লীলতার দোহাই দিয়ে কাটা হয় না। বরং সেটির দর্শক নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়।
খেয়াল করে দেখবেন, বিদেশী মুভি, লেখা, ছবি ইত্যাদির অনলাইন প্রোজেকশনে প্রায়ই “আপনি এ্যাডাল্ট কিনা” তা জানতে চাওয়া হয় কনটেন্ট ওপেন হবার আগে। আমাদের চলচ্চিত্রে সেই শাবানা, কবরী, রাজ্জাক যুগ বা তারও আগে ভিলেন নায়িকার আঁচল টেনে ধরলে সেটাকেই মনে করা হত সাহসী শট। আজকালকার মতো ধর্ষন দৃশ্য তো কথাই নেই, বড় জোর ভিলেন নায়িকাকে একটি রুমে আটকে ফেলত। ছিটকিনি লাগানো আর তারপর ব্যকগ্রাউন্ডে নায়িকার চিৎকার-এই পর্যন্তই সাহস দেখাতেন এক কালের পরিচালকরা। ভিলেন রমনী বা ভালগারদের পোষাকে হাতাকাটা ব্লাউজ ছিল সর্বোচ্চ সাহসীকতার কাজ। নায়ক নায়িকাকে চুমু খেয়েছে-এমন দৃশ্য আপনি শাবানা, ববিতা, রহমান যুগের সিনেমায় পাবেন? আর আজকের বাংলা সিনেমার সাথে একে মিলালে আপনি খাবি খাবেন। প্রায় কোনো দৃশ্যই চিত্রায়ন করতে পরিচালককে খুব একটা ভাবতে হয় না। নায়িকা ও এক্সট্রারাও উদার। (হ্যা, তবে এই যুগেও কোনো বাংলা ছবির নায়ক নায়িকাকে চুমু খাবার দৃশ্য সংযোজিত হলে তা সেন্সরে কাটা পড়বেই। কারন বাংলাদেশে আজও প্রকাশ্য চুমু অশ্লীল।)

তাহলে কী বোঝা গেল?

শ্লীলতার মানে পাল্টায় দেশে দেশে, সময়ের হেরফেরে। শ্লীলতা ও অশ্লীলতা নির্ভর করে ব্যক্তির ওপর। আরো ভাল করে বললে, দর্শক ও পাঠকের ওপর। আর নির্ভর করে ভাষা, প্রদর্শন, মাত্রা, স্থান, কাল, মিডিয়াম, প্রেক্ষাপট, ব্যবহারের মুন্সিয়ানা ইত্যাদির ওপর। এক কালিদাস নারী ও পুরুষের প্রেম, প্রণয়, আবেগ আর শারিরীক বর্ণনাকে সেই যুগের আদি রসাত্মক ভাষা ও প্রয়োগ কৌশলে তার কাব্যে স্থান দিয়েছেন। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্যের বন্ধুরা সেই সাহিত্য নিয়ে প্রথম প্রথম মানে ফার্স্ট ইয়ার বা সেকেন্ড ইয়ার তক নানা ঠাট্টা তামাশা করতেন। একজন সমরেশ, সুনীল হতে শুরু করে আমাদের আধুনিক প্রেম ও প্রণয়ের গল্প, উপন্যাস, কবিতা রচয়ীতাগন (মূলত পুরুষ) তাদের রচনায় নর ও নারীর প্রেম, প্রণয়ের পাশাপাশি ব্যাপক মাত্রায় নারীদেহের রক্ষনশীল কিংবা অবাধ বর্ণনা তাদের রচনায় পরতে পরতে ব্যবহার করেছেন। কেন যেন, পুরুষ লেখকদের একচেটিয়া অধিকার বা দখল প্রতিষ্ঠিত সেখানে। সাহিত্যবোদ্ধারা এমনকি এই শারিরীক বর্ননাকে লেখকের স্বাধীনতা ও সৌন্দর্যপ্রিয়তা হিসেবে দেখেন। মূলত নারীর শারীরিক সৌন্দর্য পুরুষ কবি ও লেখকদের লেখার খোরাক যুগিয়েছে ও যোগাচ্ছে।
সে তুলনায় নারী লেখক বা নির্মাতা কর্তৃক একজন পুরুষের দেহবল্লভ, তার নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, অঙ্গসৌষ্ঠব, দৈহিক আকর্ষন নিয়ে প্রণয় নিবেদনের আড়ালে (তথাকথিত) অশ্লীলতার প্রদর্শন খুবই বিরল।

তবে কল্পনা করে দেখুন, একজন নারী কবি তার একটি কবিতায় খোলাখুলিভাবে পুরুষের অঙ্গসৌষ্ঠব নিয়ে রগরগে বর্ননা দিলে পাঠক হিসেবে কতটা প্রতিক্রিয়া হবে আপনার ও আপনাদের মনে? সহজভাবে নিতে পারবেন ক’জন পাঠক? হয়তো তার অন্যতম কারন সমাজের চিরচরিত পুরুষ ডোমিনেশন বা ম্যাসকুলিনিজম। একজন নারীর সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা বা একজন ঔপন্যাসিক হয়ে ওঠাটা এখনো খুব সহজ, স্বাভাবিক নিয়মিত ঘটনা নয়। সেখানে একজন নারী লেখক বা শিল্পী কর্তৃক সামাজিক ট্যাবুর বিরুদ্ধে গিয়ে নর-নারীর প্রণয়াখ্যান বা পুরুষ লেখকদের বিপরীতে পুরুষ চরিত্রের অঙ্গসৌষ্ঠব বর্ননা স্বাভাবিকভাবেই খুব বিরল হবে। যারা পুরুষ কবিদের আবেদনময় সৃষ্টিকে স্রেফ শিল্প হিসেবে দেখাতে চান, তাদের কাছেও আমার প্রশ্ন থাকবে, একজন নারী কবি ঠিক তার বিপরীত কাজটি করলে তাকে সহজভাবে পাঠক নেবে কিনা? এক তসলিমা নাসরিনের লেখাই তো হজম করতে পারল না এদেশের পাঠক। অন্যরা আর সাহস করবে বলে তো মনে হয় না।
কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও চলচ্চিত্রে নগ্ন ও উন্মুক্ত নারীদেহ কেন যেন সবযুগেই শিল্পের প্রধান মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। ইদানিং যেটা খুব বেড়েছে। যদিও বলেছি, শ্লীলতা ও অশ্লীলতার সুক্ষ্ন ভেদ নির্ভর করে কয়েকটি প্রেক্ষিতের ওপরে। তার মধ্যে কনটেন্টের প্রদর্শনের ধরনও একটি। একজন কালিদাস তার যুগে আদি রসাত্মক রসে যেভাবে নারীদেহ বা প্রেমকে চিত্রায়ন করেছেন, সেটা যদি এই যুগেও একই ধারায় চলে, সেটা পাঠক সমাজের চোখে লাগবেই। কিছুদিন আগে আমি ব্লগে একজন উঠতি কবির কবিতা নিয়ে আরেকজন পাঠকের রিভিউ পড়েছিলাম। মূল কবিতাটির প্রায় ২০টি লাইন। তার একটি লাইনও এমন নেই, যেখানে ওই (তথাকথিত) কবি, মানব দেহের যেকোনো একটি স্পর্শকাতর গোপনাঙ্গ বা নরনারীর শারিরীক সম্পর্ক নিয়ে স্থূল ভাষায় বর্ননা দেননি। কোনো এক কারনে ব্লগ কর্তৃপক্ষ তার লেখাটি ব্যানও করেননি। আমি সাহিত্য বিষারদ নই। তাই এই কনটেন্টের সাহিত্যমান এবং শ্লীলতা নিয়ে খোলাখুলি বিজ্ঞমত দিতে পারব না।

তবে গড়পড়তা ও সমাজ বলে কিছু মীথতো আমরা মেনে চলি। তাতে যতটা মনে হয়, এই কবিতাটি খুব বিরল ঘটনা না হলে, ৯৯% পাঠকের কাছে অগ্রহনযোগ্য ও অশ্লীল বলে আখ্যা পাবে। আর যদি কেউ মনে করেন, সাহিত্যের কোনো শ্লীল ও অশ্লীল বলে কিছু নেই, সবই শিল্পীর শৈল্পিক স্বাধীনতা, তবে আর কিছু বলার নেই। তবে ওই রকম লিবারেল ব্যক্তি আবার নিজ সন্তান, স্ত্রী বা কাছের বন্ধু বা নিজের বালিকাবান্ধবীর মানে গার্লফ্রেন্ড একই ধরনের সৃষ্টি নিয়ে কাজ করাকে সমানভাবে উৎসাহিত করেন কিনা সেটাও জেনে নেবেন।

আপনি যদি একটু খেয়াল করেন, দেখবেন, বিশেষভাবে ইউরোপের দেশগুলোতে প্রকাশ্য রাস্তায় প্রচুর নগ্ন মূর্তি রয়েছে যেটা তাদের নাগরিকদের শ্লীলতাবোধে বিন্দুমাত্র বাধা ঘটাচ্ছে না। মায়েরা তাদের বাচ্চাদের রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাবার সময় তাদের চোখে ঠুলি এঁটে দেবার দরকার মনে করছে না। কিন্তু ভাবুনতো ওটা বাংলাদেশে হলে কী হত? মাইকেল এঞ্জেলো, পিকাসো, দ্য ভিঞ্চিসহ বিখ্যাত আঁকিয়েদের শত শত বিখ্যাত সৃষ্টির একটা বড় অংশই তথাকথিত নগ্নতার মানদন্ডে উত্তীর্ন হবে না। কিন্তু সেগুলোই বিশ্বজুড়ে শৈল্পিকতার বড় নিদর্শন। প্রাচীন যেকোনো মন্দীরে যান। আপনি তাদের আর্কিটেকচারাল ডিজাইনে নগ্নতার বিরাট প্রভাব দেখবেন।
প্রশ্ন হল, নগ্নতা আর অশ্লীলতা সমার্থবোধক কিনা।
আমি মনে করি, না। দুটির প্রেক্ষিত সম্পর্কযুক্ত কিন্তু সমার্থক নয়।
কেউ কেউ বলে বসতে পারেন, আমি হয়তো নগ্নতাকে সমর্থন ও প্রমোট করছি। না, আমি শুধু যেটা যা, সেটাকে তা বলার চেষ্টা করছি। শ্লীল ও অশ্লীলের সুক্ষ্ন ও স্পর্শকাতরতা সুষ্পষ্ট মানদন্ডে যদিও অতিসুক্ষ্নভাবে মেপে দেয়া যায় না, কিন্তু তবু কিছু কথা থেকে যায়। কমোন প্লেসে, ওপেন ফোরামে, পোস্টে, লেখায়, গল্পে, ডায়লগে, কবিতায়, গানে ডানে বামে না যাওয়াই ইন জেনারেল সবার জন্য মঙ্গল। তাতে আর কাউকেই ঝামেলায় পড়তে হয় না।
একবার ভাবুনতো, আপনি আপনার সন্তানকে নিয়ে বা বাবা-মার সাথে ঠিক কোন কোন কনটেন্ড এনজয় করতে পারবেন? নিশ্চই সব নয়। তাই পাবলিক প্লেসে অস্বস্তি হয় বা হতে পারে, এমন জিনিস প্রকাশ করার আগে ভেবে নেয়াটাই কাম্য। হ্যা, গোপনীয় বিষয় মানেই নিষিদ্ধ নয় বা খারাপ নয়। কিছু গোপনীয়তা প্রাইভেসীর জন্য করতেই হয়। তার সাথে অশ্লীলতার সম্পর্ক নেই। কেউ কেউ ভাবতে পছন্দ করেন, আমি বন্ধুদের ফোরামে একটু হালকা মেজাজের জোকস, গল্প করি। বন্ধুরাই তো। তো? বন্ধুর সাথে রসালো গল্প করা যায়-এমনটা কে কবে লাইসেন্স দিল? একটা বড় সংখ্যক মানুষের (নারী/পুরুষ) ভিতরে, মধ্যে লালসা, কাম, লাম্পট্য, পারভারসন, স্থূল পছন্দ হাইবারনেট অবস্থায় থাকে।শুধু সুযোগ পেলেই লকলক করে ওঠে।ওৎ পেতে থাকে।চকিতে ঝাপিয়ে পড়ার অপেক্ষায়।হোক সেটা কারো আদি রসাত্মক সাহিত্যের প্রেক্ষিতে, হোক কারো সাথে চায়ের আড্ডায়, হোক দেয়ালে সিনেমার পোস্টার দর্শনে।

মহিলাদেরও আজকাল রগরগে বচন বিনিময় ও উপভোগে কম যেতে দেখিনা। কিন্তু আমরাই আবার ময়ুরীদের অশ্লীল বলে দূরে থাকি। কৃষ্ণ করলে লীলা কেষ্টা বেটা করলে কিলা। আজকাল ১৮+ লেবেল লাগিয়ে রসালো কনটেন্ট দিব্যি বিক্রী হয়। কেমন একটা ’সেমি-লাইসেন্সড রেপের’ মতো মনে হয়। যাহোক, পছন্দ নিজের।
কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ-তার সবচেয়ে বড় আদালত আমাদের ঔচিত্য বোধ। সেটাকে কাজে লাগাই। আমি মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমি মনে করি, একজন মানুষ তার ব্যক্তিজীবনে যা ভাল মনে করে করুক। সেখানে কোনো শ্লীলতা ও অশ্লীলতার ভ্রূকুটি নেই। কিন্তু তার সেই নিজস্ব কাজ বা চিন্তা যখন অন্যের জীবনে ঢুকে পড়ে তখনই সেটা আপত্তির। দু’জন মানুষ যখন স্বেচ্ছায় কোনো (আপাত অনৈতিক) কাজ করে, সেটাকেও হয়তো ব্যক্তিস্বাধীনতার লেবেল লাগিয়ে ছেড়ে দিলেও দেয়া যায়। কিন্তু মুশকীল হল, তৃতীয় আরেকজন বা আরো অনেকের উপস্থিতি। তখন সেটা আর প্রাইভেট থাকে না। সেটা তখন বাজার, সেটা তখন কমোন ফোরাম, সেটা তখন সমাজ। প্রকাশ্য প্লাটফরমে, ফোরামে, পোর্টালে, পাবলিক গেদারিংয়ে (হোক ইয়ার বন্ধুদের বা সমবয়সীদের) আদী রসাত্মক জোকস, ইঙ্গিতপূর্ন জোকস, ছদ্ম রগরগে গল্প, ছদ্ম ভাষায় ইঙ্গিতপূর্ন জোকস, গল্প ইত্যাদিও বর্জনীয় বলে মনে করি।

বলতে পারেন, বন্ধুদের ফোরামে জোকসের কি কোনো সীমা টানা যায় নাকি টানা উচিৎ?

উত্তরটা খুব সোজা।

আপনি যদি ১০ রেটিং পর্যন্ত কোনো কনটেন্টকে বৈধ মনে করেন, গ্রহনযোগ্যতা চান, তবে আরেকজন ১২ রেটেড কিছু, আরেকজন ১৮+ রেটেড, আরেকজন আরো এগিয়ে ৩৬+ রেটেড কনটেন্টকে তার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গী হতে যায়েজ মনে করবেন, শেয়ার করবেন। তখন কাকে আটকাবেন? আমি বিশ্বাস করি, বাগানের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছেন, একটা গোলাপের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে একটু তাকালেন, বড় জোর “বাহ’ বলে প্রশংসা করলেন, এতটুকু পর্যন্ত ঠিক আছে কারন ওটা ব্যক্তিস্বাধীনতা। কিন্তু সেই গোলাপকে হাতে ছুয়ে দেখার খাহেশ হলে সেটা ব্যক্তিস্বাধীনতার লঙ্ঘন। কালীদাস যাকে আজ মহাকবি বলে মানা হয়, তার অনেক লেখা (তথাকথিত শ্লীলতার বিচারে) চরম মাত্রার অশ্লীল। তবু কিন্তু তার লেখা নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে কোর্স আছে। লেখকের লেখা দেখেই তাকে বিচার না করে তার লেখা বুঝবার চেষ্টা করলে অবশ্য অনেক কনফিউশন কমে যায়।

আমার এক বন্ধু একবার রাগ করে বলেছিল, অশ্লীল কিছু না লিখলে আর আজকাল কোনো উপাধি পাওয়া যায়না, মানে সেলেব্রিটি হওয়া যায় না যেমনটি কালিদাস। আমি মনে করি, এই ধারনা খুবই ভুল। কোনো অশ্লীল কিছু না লিখেও রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি এবং নোবেল বিজয়ী। আবার (তথাকথিত) অশ্লীল লিখেও তাসলিমা কোনো টাইটেল পাননি। লেখকের/কবির সবচেয়ে বড় বিচারক তার পাঠক। পাঠক কীভাবে নেবে সেটা দেখার বিষয়। তবে হ্যা, পাঠকের দাবী ও রুচীকেও একটি নিয়ম মেনে চলতে হবে। তাকেও বুঝতে হবে, একজন লেখক, কবি, চিত্রকর সৃষ্টিশীল শিল্পি। তিনি অবশ্যই পাঠকের মন রক্ষা করে শিল্প সৃষ্টিতে বাধ্য নন। আর তাছাড়া, শিল্পীর অশ্লীলতায় অন্যরা বদার না করলেই তো হয়। তিনি তো পলিটিশিয়ান নন যে তার অশ্লীল সাহিত্য লোকজনকে জোর করে গেলাচ্ছেন। তিনি যা লেখেন বা বানান, তা না পড়লেইতো লেঠা চুকে যায়। পাবলিক না খেলেই তো তার সৃষ্টি বন্ধ হয়ে যেত।

আমাদের জানাশোনা জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি, মতামতের একটা বড় অংশ নির্ধারিত, সংজ্ঞায়িত আর নিয়ন্ত্রিত হয় খুব বায়াজড পদ্ধতি দ্বারা এবং বিভিন্ন মাধ্যমের সুবিধা অনুযায়ী। তাই আমাদের ভাবনা ও মতামতের প্রকৃতি খুব বায়াজড হয়ে থাকে। সাহিত্য ও শিল্পের ভাল/মন্দ সবসময়ই আপেক্ষিক। দুনিয়াতে প্রমোদালয়ও থাকবে আর উপাসনালয়ও থাকবে। যার যেটা পছন্দ সেটা বেছে নিলেই যথেষ্ট। আর ভাল ও মন্দ’র মধ্যে পার্থক্য করতে পারার জন্যইতো শুধু মানুষকে বিবেক নামক একটা বস্তু দেয়া হয়েছিল। পাড়ার দেয়ালে দেশী নায়িকাদের ফিল্মের পোস্টার দেখলে তা অসহ্য অশ্লীল বলে আমরা ওয়াক থু করি কিন্তু ভ্যান গগ বা দ্যা ভিঞ্চি আঁকলে তা কালজয়ী শিল্প। আমাদের দ্বিচারিতা একটু কমালেই শ্লীলতা আর অশ্লীলতা নিয়ে মারামারিটা অনেকটা কমে যায়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন:

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৪

মা.হাসান বলেছেন: Those who find ugly meanings in beautiful things are corrupt without being charming. This is a fault.

Those who find beautiful meanings in beautiful things are the cultivated. For these there is hope.

They are the elect to whom beautiful things mean only Beauty.

There is no such thing as a moral or an immoral book. Books are well written, or badly written. That is all.
Oscar Wilde, The Preface, The Picture of Dorian Gray

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.