নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

চন্ডালের চোখে ব্রাহ্মণের স্বরুপ: উগান্ডা দ্যাশের রাজকীয় কত্তা ও রাজন্যবর্গের আমলাতন্ত্র

০৮ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৫:১৪

আমাদের আশপাশে, চেনা জগতে যারাই আছেন, তাদের মধ্যে যারা এমনকি যুধিষ্ঠীরসম, তারাও জীবনে যদি একটিবারের জন্যও গালি দিয়ে থাকেন, তাহলে সেই অভিজ্ঞতাটি নির্ঘাত কোনো উগান্ডান রাজকীয় অফিসে সার্ভিস নিতে গিয়ে হয়ে থাকবে।

কেন হয়ে থাকবে এমনটা-সেটা আপনি উগান্ডার আমজনতা হলেই বুঝে যাবেন।

শুরুতেই বলে রাখি, এই শাহনামাটি বিশাল হবে। এই শাহনামা জুপিটার গ্রহের উগান্ডা নামক এক রাষ্ট্রের রাজকীয় আমলাতন্ত্র নিয়ে রচীত। এবং, এই রচনার প্যাঁচাল কোনো বিশেষ সময়, দল বা দ্যাশের রাজা বা রাজত্ব নয়, বরং সবযুগের, সব দ্যাশের, সব চরিত্রের রাজকীয় আমলাতন্ত্র’র চরিত্রের আলোকে রচীত।

আমার নেটওয়ার্কে থাকা সুহৃদ বা কূ-হৃদ কোনো উগান্ডান রাজকীয় কত্তা এটাকে ব্যক্তিগতভাবে না নিলে খুশি হব। আপনারা সবাই আমার নমস্য।

খুব ছোট বেলা হতে আজ তক জীবনে যতবারই এইম ইন লাইফ রচনা লিখেছি, সচেতনে কিংবা অবচেতনে, কখনোই কেন যেন, “আমি একজন রাজকীয় কত্তা হতে চাই” এই খাহেশাতটি এমনকি মনের ভুলেও ব্যক্ত করা হয়নি। আমার প্রয়াত পিতা একজন প্রয়াত রাজকীয় কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও।

এই জীবনে কখনোই রাজকীয় গোলামীর, আই মীন চাকরির জন্য উমেদারী না করা আমাকে কখনোই রাজকীয় নোকরি আকর্ষণ করেনি। (দুঃখিত, ভুলে গিয়েছিলাম, দু’বার করেছিলাম। বিশেষ কারণে।) যদিও আজকের যত যা ই অর্জন, তারপরেও এই বুড়ো বয়সেও খোটা শুনতে হয়-”মিয়া, এইডা একডা কাম হরলা, তুমি মিয়া রাজকীয় গোলামী কেন করলা না?”

হাস্যকর হল, আমার গোড়া কমিউনিস্ট আত্মীয়রাও আমাকে রাজকীয় চাকরি না করায় ভর্ৎসনা করেন এখনও। তবে বুড়ো হবার পরে একবার ভেবেছিলাম, যে, জীবনে কি ভুল করলাম, আর তারপরে শুভাকাঙ্খীদের মতামত জানতে একটা জরিপও করেছিলাম, যার ফলাফল এখানে দেখতে পারেন-https://www.facebook.com/walidur.rahman1/posts/3976758872382090;

বহু বছর আগে যখন গার্মেন্টসে চাকরি করতে আসি, তখন কে যেন একজন বোদ্ধা ব্যক্তিত্ব আমাকে কথাচ্ছলে বলেছিলেন,
“শোনো মিয়া, যতদিন গার্মেন্টে আছ, মনে রাখবা, এইহানে দুইটা শ্রেনী আছে-ব্রাহ্মণ আর নমোশুদ্দুর। তুমি, তোমার ডিপারমেন আর বাদবাকি যতকিছু দেখো, সব হইল নমোশুদ্দুর। ছোট জাত-চন্ডাল। আর একটা জাত হইল ব্রাহ্মণ।”
সেই বাহ্মণ কারা-সেটা তিনি আমাকে বলে দিয়েছিলেন। আমি সেই নামটি উল্লেখ করব না। মানহানী মামলা হতে পারে। আপনি কষ্ট করে একটু জেনে নিয়েন। ইনবক্সে।

সেই হতে আজ অব্দি ওই কথাকে বেদবাক্য ধরে নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি-ছোটজাতের কাজ-আমি এক চন্ডাল। অবশ্য দেশের বাদবাকি সেক্টর, ট্রেড ও ক্যাটেগরীর প্রাইভেট জবের সবাই কিন্তু আমাদের গোটা সেক্টরকেই নমোশুদ্দুরের মতো ছোট জাত বলেই ট্রিট করে।

তাতে করে এখানকার ওই কথিত ব্রাহ্মণরাও তাদের কাছে নমোশুদ্দুরই। ওই বিড়ালের বাঘ হওয়া অথবা, বাঘা কুত্তার জায়গামতো কুঁই কুঁই চক্করের মতো।

আর এই সব কিছু ছাপিয়ে আবার প্রাইভেটের এসব ব্রাহ্মণ, গোটা প্রাইভেট সেক্টর, যেই খাত দেশের অর্থনীতির প্রায় ৯০% এর হকদার ও চলক-তার গোটাটাকেই নমোশুদ্দুর হিসেবে পরিগণিত করার মতো হকদার ও ছহিহ দাবীদার একজনই। সে হল সুপ্রিমেসীর চুড়ায় বসা-----------

The Royal Bureaucracy of Uganda ।

যদিও এই রাজকীয় আমলাতন্ত্রকে ঔরশদান করার সময়ে বলা হয়েছিল, ওঁরা হবেন ‘জনগনের সেবক’, আর সেই সেবা করার জন্য তাদেরকে মাহিনা ও ভরনপোষণ দেবার অর্থ যোগান দেয়া হবে সেবাগ্রহনকারী নমস্য প্রজা বা জনগনের ট্যাকশোর টাকা হতে।

ওই অনেকটা আপনার বাসাবাড়ির কাজের মানুষ হায়ার করার সময়ে আপনি যেই আত্মস্লাঘায় ভোগেন, তেমন করে এর সূচনা। তবে ওই সবই আজ তিস্তা, গঙ্গা ও সুয়ারেজের জলে ভেসে গেছে। আমলারা আজ আর জনগনের সেবক নন-তারা মালিক, প্রভূ। জনতাও আজ আর তাদের প্রভূ ও অন্নদাতা নন। আমলাতন্ত্র এখন ঈশ্বরের দরবারের অঙ্গ। আর সেই জনতা বা ম্যাঙ্গো পিপল, যাদেরকে সেই কোনো এক যুগে আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কনভিন্স করতে মূলা দেখানো হয়েছিল “জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস”, তারা আজকে করসেবকের ভূমিকায়।

না না, আপনি করসেবক বলতে আবার গো-মাতাল্যান্ডের করসেবকদের ধরে নেবেন না। কর-সেবক মানে যিনি কর দিয়ে দেবতার সেবা করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য ও স্বর্গত মনে করেন। এই যে, আমলারা আজ কর দিয়ে আমাদেরকে তাদের উদরপূর্তি ও উদোম ফূর্তি সেবা করার সুযোগ করে দিচ্ছেন, সেটাতেই জনতা বর্তে যাচ্ছে।

তাদের দপ্তরে গেলে সেবা প্রাপ্তি তাই নেহাতই বাড়তি পাওনা-স্যার স্যার করে অনুনয় বিনয়ের অবয়বে মুখে ফেনা তোলা নিতান্তই ছোটজাতের থেকে কাম্য আদব সেখানে। অবশ্য, বারংবার “আমাদের করের টাকায় রাজকীয় কত্তাদের বেতন হয়”-এই কথা বলা এখন অসার। কারন, গবেষনায় দেখা গেছে, জনতার করের টাকার সামান্য বেতন কত্তাদের না হলেও চলে। তারা নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরাই করে নিয়েছেন। উগান্ডার উপচানো অঢেল অর্থ-সেটাকে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও প্রকল্প ব্যায়ের থ্রূ দিয়ে তিন টাকার কাঁচা মরিচ তিন লাখ টাকায় দর দেখিয়ে তারা একটা মাসকাবারি করে নিয়েছেন। শুনেছি, কোনো কোনো উগান্ডান রাজকীয় দপ্তরে নাকি উপরি বা ঘুষের একটা স্ট্যান্ডার্ড দর ধরে নেয়া হয়েছে।

যেমন ধরুন, কোচোয়ান থেকে কোতোয়াল হতে চাইলে ২৫ লাখ তঙ্কা, স্যার হতে মহোদয় হতে হলে ১ কোটি, উগান্ডা হতে প্রোপাগান্ডা বদলি হতে চাইলে ১০ কোটি। ভাইরে ভাই, মজাই মজা।

যাহোক, উদ্দেশ্য ও বিধেয় আগেই বলেছি। এই বয়ান রাজা বা রাজ্য বা রাজকীয় বহর নয়, রাজকীয় আমলাতন্ত্র ও রাজকীয় চাকরির স্বরুপ নিয়ে লেখা। দুটো দুই জিনিস। প্রথমটা হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় লেজিসলেটিভ । কিন্তু, আমি লিখছি এক্সিকিউটিভ শাখার কাজ ও দায়ীত্ব নিয়ে।

আমার ভাষায় হাফেজে-MP3 রাজকীয় কত্তা, তাদের রাজকীয় আমলাতন্ত্র, এর চরিত্র, কত্তাদের যোগ্যতা, সক্ষমতা, চরিত্র, লক্ষ্য, মিশন ও ধরনধারন নিয়ে। আবারও বলছি রামগোপাল ভার্মার ‘সরকার’ নামক মূভি নিয়ে এই লেখা নয়। আমি রাজনীতি ও রাজনৈতিক পছন্দ বর্জিত।

অনেক আগে একটা লেখা পড়ে সেভ করে রেখেছিলাম। মাত্রই গত বছর মুছে ফেলেছি। লেখাখানা ’জৈনক’ অভিজ্ঞ প্রাক্তন রাজকীয় আমলা কর্তৃক রাজকীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণার্থী রাজকীয় কত্তাদেরকে কীভাবে ডায়নিং এটিকেট মেইনটেইন করতে হয়-তা নিয়ে লেখা। ওটা পড়ে বুঝেছিলাম, বাপরে, রাজকীয় কত্তাদের এমনকি কী করে চামচ ধরতে হয়, হ্যান্ডশেক কীভাবে করে-

সেই তুচ্ছাতিতুচ্ছ ব্যক্তিগত ট্রেইট ও হ্যাবিটও যেহেতু হাতে কলমে দীর্ঘ ৬ মাস/১ বছর শেখানো হয়, তাহলে নিশ্চয়ই তারা দেবতা ইন্দ্রের রাজসভার সভ্যদের মতোই কেউ হয়ে ওঠেন। বা কমপক্ষে হয়ে ওঠার সব আয়োজনই করে রাখা হয়। তবে সেই বিশ্বাসে চিড় ধরে, যখন আবার দেখি, জৈনক রাজকীয় আমলা কত্তা গাঁয়ের দুই অশিক্ষিত বয়োজেষ্ঠ প্রজাকে প্রকাশ্য বাজারে রাজকীয় আইন অমান্য করায় কর্ণ হস্তগত করান, মানে কানে ধরিয়ে ওঠবস করান।

(অবশ্য সেই কারনে নন্দিত ও নিন্দিত-দুই ই হন)।

বিশ্বাসে ধাক্কা লাগে, যখন দেখি, কষ্ট করে অর্জিত চেয়ারে বসা ব্যক্তি নিজেকে ‘ষাড়’ ডাকবার দাবী নিজেই করেন। ’ষাড়’ না ডাকায় জৈনক রাজকীয় কর্ত্রী জৈনক নিম্নবর্ণের প্রজার মনোহারি দ্রব্য, মৎস্য-ইত্যাদি পণ্য শ্রীপদযুগলের লাত্থিতে নালায় বিসর্জন করান। (অবশ্য এই সবই পত্রিকা মারফত জ্ঞান। সাংবাদিকরা আজকাল প্রচুর মিথ্যা কথা বলার জন্য নিন্দিত।)

দুই রকম চিত্র দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি বুঝে উঠতে পারি না, রাজকীয় চাকরি আসলে কেমন? সে কি দেশ সেবার মহান ব্রতে ব্রতী কোনো দিক্ষা? নাকি.........................মোটা মানিব্যাগ, বাড়ি, গাড়ি, নারী, চেয়ার, স্যালুট, মহোদয়-এসবের হাতছানিময়?

যাহোক। বলছিলাম রাজকীয় আমলাতন্ত্রের স্বরুপ নিয়ে। ’অক্সফোর্ড’ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদেরকে ওই বিষয়টা পড়াতেন যিনি, তিনি পরের দিকে রাজকীয় কত্তিপক্কের পদলেহন করে বিভাগীয় প্রধানের পদও অলংকৃত করেছিলেন।

তার কিঞ্চিত চেষ্টা আর আমার ফাঁকিবাজি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়ন-দুইয়ের যুগপতে আমলাতন্ত্র নিয়ে হাতিঘোড়া কিছু শিখতে না পারলেও, নিজ গরজ, উন্মুক্ত পড়াশোনা, চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা আমার সেই অভাব পূরণ করে দিয়েছে।

আর, বিগত ২ কুড়ি বছরের জীবনে রাজকীয় কত্তা-বিশেষত যারা আমার মেট ও অগ্রজ তালিকা হতে রাজকীয় কত্তা হয়েছেন-তাদের দেখে, আমার পিতার চাকরি জীবনের চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা দেখে, আর ঘাটে অঘাটে নানা ছুরতে রাজকীয় কত্তাদের চরিত্র ও আর পত্রিকা, ফেসবুকের বিদ্যা-সব মিলিয়ে পেটে ওই বিষয় নিয়ে বিদ্যা কম জমেনি।

রাজকীয় চাকরি কেন এত দ্রষ্টব্যযোগ্য-তা নিয়ে যদি একটু জানতে চান, উত্তরটি হতে পারে-

১. ক্ষমতা:
গণ বা স্বৈর-উভয় তন্ত্রেই রাজত্ব বা সরকার এক অতি দানবীয় ক্ষমতার অধিকারী। রাজকীয় কত্তা হতে পারলে তার আশপাশে থাকায় ক্ষমতার ছিটেফোটাতো মিলবেই। আর ইতিহাস বলে, রাজার চেয়ে রাজার আমলারা সবসময়ই বেশি দাপুটে। রাজার বিনাশ, বদল আছে। রাজকীয় আমলা চিরস্থায়ী।

২. কড়ি:
কড়ির যোগান রাজকীয় চাকরিতে যখন কম ছিল-মানে মাহিনা বাবদ, তখনও তা সুনিশ্চিত যোগান হওয়ায় পুষিয়ে যেত। আর উগান্ডা উন্নত দেশে পরিণত হবার পরে তো সেই কড়ির যোগান, মানে মাহিনা বহু আগে হতেই আকাশ ছুঁয়েছে। যদিও, সেই বৃদ্ধিকেও তারা যৎকিঞ্চিতই মনে করেন। সেই বৃদ্ধির কর যোগাতে গিয়ে গরীব আর অ-রাজকীয় নমোশুদ্র জনতার ওপর ট্যাকশোর হার ও আওতা কতটা বেড়েছে-সেটা জানতে চাইলে আপনি উগান্ডার টাইম ম্যাগাজিন পত্তম আলুর সাংঘাতিক মিজ. মর্জিনা’র পরিণতি দেখে ক্ষান্ত হোন।

আর মাহিনা ও পারিতোষিকের বাইরে রাজকীয় কর্মে বাড়তি বা উপরির যে কত কত কত সুযোগ, প্রবাহ-সে নিয়ে লিখতে গেলে খোদ চু.দ.ক (চুরি দমন কমিটি) এর চেয়ারম্যান এর হাতের আঙুল প্যারালাইজড হয়ে যেতে বাধ্য।

৩. স্থায়ীত্ব:
দুর্মুখেরা বলে, রাজকীয় চাকরি পাওয়া যত না কষ্ট, টাফ, চ্যালেঞ্জিং; সেটা চলে যাওয়া তারও চেয়ে কঠিন ও কার্যত অসম্ভব। রাজকীয় ব্যবস্থাপনা এমনভাবে ডিজাইন করা, যে, ওই ডিজাইন ও ফ্রেমে কাউকে চাকরিচ্যুত করার জন্য দেবতা জিউসকে তিনবার গঙ্গায় আত্মহনন করতে হবে।

৪. নিরাপত্তা:
রাজকীয় চাকরির খাতায় যদি একবার নাম লেখাতে পারেন, আপনার জীবন বর্তে গেল। আপনি কাজ জানেন কিনা, পারেন কিনা, জানলে সেটা আদৌ আবার করেন কিনা, করলে কতটা করেন, কতটা ইফিশিয়েন্টলী করেন, বা আবার ইফিশিয়েন্টলী করলে তার জন্য কত করে চা-পানির খরচা নেন সেটা কেয়ামতের আগে কেউ আর খবরদারী করতে আসবে না।

আসবেই বা কে? যে আসবে বা আসবার কথা-তিনিও তো সেই রাজকীয় কত্তাই। তারও তো একটা ভবিষ্যত আছে। আর স্থান, কাল, পাত্র ভুলে কোনো রাজকীয় কত্তা যদি জাত বিসর্জন দিয়ে ‘ভাল মানুষ’ সাজতে কিছু কেরেদদারী দেখাতেই চান, তার পরিণতি তো জানেনই। তাই ভুলেও কেউ ওপথ মাড়ান না।

ফলাফল-তামাকে গাড়ু, চুনাকে গাড়ু---আমরা সব শালাই গরু, যেটার ভদ্র ভারসন হল-আমরা সবাই রাজা। (না, কনডমের রাজা না, উগান্ডার রাজা।)

রাজকীয় চাকরিতে ঢুকুন-সেটা যে পথেই হোক-এমপিথ্রি মুখস্ত করেই হোক কিংবা যথাস্থানে ছাপানো কাগজ গুজে দিয়েই। আপনি মরা তক রাজামশাই ও রাজকীয় রক্ষাকবচের অধীনে চলে গেলেন। পরকীয়া করবেন-বড়জোর বদলী হবেন। চুরি করে ধরা পড়বেন-প্রত্যাহার হবেন (যার মানে কেউ জানে না), মানুষ মেরে ফেলবেন-প্রমোশন পাবেন, আর এমনিতে পেনশনতো পাবেন মরা তক। এমনকি আপনি মরলে আপনার বুড়ো বিধবার দায়ও রাজার। মজাই মজা।

চাকরি করেন আপনি, সুবিধা পাবে আপনার বউও। এমনকি, আপনি মরলে-বাঁচলে আপনার ছেলে-মেয়ে কোটা নামক শরাব পান করতে পারবেন। মজাই মজা। আমরা সবাই রাজা। (না, কনডমের রাজা না, উগান্ডার রাজা।)

৫. স্বীকৃতি:
আসলে শেষে বললেও, এই মেওয়াটাই হল যাবতীয় মোটিভেশনের ওস্তাদ। রাজকীয় চাকরি ও চাকরিজীবি এই এখনও ২০২১ সালের পৃথিবীতে, বিশেষত উগান্ডায় দেবতাদের পরেই পূজিত হন-বিশেষত মেয়েদের মা ও বাপেদের দ্বারা। রাজকীয় চাকরি করেন-এমন আমলার সামাজিক প্রভাব, প্রতাপ, স্বীকৃতি ও সম্মান-খোদ রাজাকেও মাঝে মধ্যে ইর্ষান্বিত করে থাকবে।

রাজকীয় চাকরির এই মহান চিত্র দেখে যদি আপনার মনে খাহেশ জাগে যে, রাজকীয় কত্তা হবেন, তাহলে দুটো রাস্তা তো আগেই বললাম-কড়ি আর না হয় MP3। তার বাইরে মামা, খালুর রাস্তা আগের দিনে ছিল। এখন তার সাথে যোগ হয়েছে-’ভাই, ভাইয়া, আপু, বস, নেতা, খাতা, ত্রাতা, পাতিনেতা, এ্যালাকা, দল, কোটা, চ্যাতনা” অনেক কিছু। সুতরাং, রাজকীয় কত্তা হবার খাহেশ জাগলে ওর যে কোনো একটা আপন করে নিন। আয়ত্ত করুন আর নিজে করুন।

(না, আবেগে ‍উদ্বেলিত হয়ে জীবনের সব কাজ নিজে করতে যাবেন না।)

হ্যা, রাজকীয় কত্তা হয়ে গেলে এমনকি আপনাকে শৌচ করিয়ে দেবার জন্যও একজন রাজকীয় শুচনদার নিয়োজিত থাকবে। যে আপনাকে শৌচ করিয়ে দেবে। এমনকি হাগতে ইচ্ছে না করলে আপনার হয়ে হেগেও দেবে। অবশ্য সেটা হবে, যদি আপনি হ্যাডোমঅলা হন।) অবশ্য যেই দ্যাশে অন্যের হয়ে জেল খেটে দেয়া যায় স্বেচ্ছায়, সেখানে আপনি রাজকীয় কত্তা হয়ে নিজের কাজ নিজে করবেন কেন?

শত হলেও আপনি একজন রাজকীয় কত্তা। হাতি মরলেও লাখ টাকা। সেই হাতি হবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ-কেবল শয়নে স্বপনে বিচিএচ।

https://www.facebook.com/walidur.rahman1/posts/4441155022609137; / Click This Link

রাজকীয় কার্যালয়ে বহু স্তর আছে। আপনি কোন স্তরের দেবতা-সেটার ওপর ভর করে আপনার চরিত্র, রাষ্ট্রীয়, আমলাতন্ত্রীয় ও সামাজিক স্ট্যাটাস নির্ধারিত হয়ে থাকে। স্তরগুলোর নাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখিপড়া করলেও পাশ করার সাথে সাথে ডাস্টবীনে ফেলে দিয়েছি ওই বিদ্যা।

ওই স্তরবিন্যাস এমনকি আমাদের গার্মেন্টসের র‌্যাংকিং ল্যাডার যতটা আছে-তার চেয়েও Faulty। আর সেই ফলটি স্তরবিন্যাসটুকুও শুধু বানানোর জন্যই বানানো। বাস্তবায়ন করার জন্য না। বিধায়, স্তরবিন্যাস কাগজে থাকলেও বাস্তবে তার উদাহরন খুঁজতে হলে আপনাকে FBI এর সহায়তা নিতে হবে।

তবে মোটা দাগে রাজকীয় আমলাতন্ত্রে মহোদয় মানে একদম বড় কত্তা, ষাড় নামীয় মেঝো কত্তা, সাহেব তকমার লেয়ার-৩ আর কর্মচারী নামক “সূর্য’র চেয়ে বালি গরম” লেয়ার-৪ থাকে। অবশ্য বাদবাকি জনতা-মান ব্ল্যাডি সিভিলিয়ানদের সাথে মোয়ামালাতের ক্ষেত্রে রাজকীয় অফিসের কুত্তাটাও ষাড় পর্যায়ের। মানে, বাঁচতে হলে আর কাজ উদ্ধার করতে চাইলে, তাকেও স্যার ডাকতে হবে।

বিশ্বাস না হলে, আপনি রাজকীয় দপ্তরের একজন দপ্তরিকে স্যার ডেকে ও না ডেকে তফাৎটা একজামিন করে নিতে পারেন। ডাকলে ম্যাজিক হবে। না ডাকলে গজব। কথা না ফললে-আপনার জুতা, আমার গাল।

এই একেবারে বড় কত্তা হতে শুরু করে ৪র্থ শ্রেনীর নমো শুদ্র-এনাদের কাজ কী জানতে চান? কাজের ধরন কী তা জানতে চান? রাজকীয় দপ্তরে এবং তথায় দেশের জন্য জীবনদানে রত কত্তাদের সেবায় নিয়োজিত যারা থাকেন, তাদের পদবিন্যাস ও কর্মাধিকার নিয়ে একটু নজর বুলাতেই পেলাম-

পাখা করার জন্য-পাখালচি;

মশাল বয়ে নেবার জন্য-মশালচী; (এখন তাদের কাজ হল মোবাইল নিয়ে ঘোরা আর কত্তাদের ছবি তোলা।)

কত্তাদের খানা পাকানোর জন্য-বাবুর্চি (বাবু খাইছোর সাথে একটা যোগ আছে এর।);

চা বানানোর জন্য টি-বয়চি আর পানের পরে কাপ নিয়ে যাবার জন্য পিওনচি।;

বাবুদের হয়ে পত্র লেখার জন্য-কলমচি (ডিজিটাল উগান্ডায় এটার এখন নাম মুদ্রাক্ষরিক);

খাজনা সামলানোর জন্য-খাজাঞ্চী (লোকে বলে, ওই খাজনা মানে হল ঘুষের টাকা);

কত্তাদের বাহন চালানোর জন্য-কোচোয়ান;

কত্তাদের ও রাজন্যবর্গের হয়ে জনতাকে সাইজে রাখতে-কোতোয়াল ও তার কোরাস দল;

কত্তাদের মনোরঞ্জনের জন্য-পিএস-জি (না, এটা নেইমারের টীম না।)

বাবুদের পায়খানা সাফ করার জন্য-সুইপারজি (না, থ্রি জি বা ফোর জি না, সুইপারজি ই বলেছি।)

বাবুদের হয়ে হুকুম জারি করবার জন্য-ফরমাবরদার;
পান বানিয়ে দেবার জন্য-পাঞ্চালী;

কত্তাদের পোলাপান মানুষ করার জন্য-কেয়ারটেকারজি;

বাবুদের সোনার চামুচ মুখে জন্মানো বাবুখাইছোদের জন্য-পাবজি;

বাবুসাবদের সময় কাটানোর জন্য-ফোরজি;

বাবুসাবদের দপ্তর দেখে শুনে রাখবার জন্য-দপ্তরী;

আর,

বাবুসাব দপ্তরে না থাকলে যেন ওইসব মহান কর্মসাধনে ঘাটতি পড়ে দেশের ক্ষতি না হয়ে যায়-সেজন্য আরো ডজনখানেক উপ, অতিরিক্ত, সহকারী, উপ-সহকারী কত্তাসাব থাকেন।

খেয়াল করে দেখুন, রাজকীয় দপ্তরে বাবুসাব বা কত্তাদের যাতে কোনো কাজ নিজের হাতে করতে না হয়, তার জন্য প্রতিটা কাজের জন্যই আলাদা আলাদা লোক আছে। আমার প্রশ্ন জাগে, তাহলে ওনাদের নিজেদের কাজটা কী?

আমি একটা ছোট্ট লেখার লিংক দিচ্ছি, যেটা হতে জানতে পারবেন, তারা কী কী মহান দায়ীত্বে নিয়োজিত থাকেন আর আপনারা না জেনেই তাদেরকে শাপশাপান্ত করেন-https://www.facebook.com/walidur.rahman1/posts/3181154278609224;

জৈনক অভিজ্ঞ বিধবা আমলা (মানে অবসরসুখপ্রাপ্ত) কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, রাজকীয় আমলাদের JD ও Expected Role তাহলে কী? তিনি জানালেন-
১. মিটিং এটেন্ড করা, মিটিং আয়োজন করা এবং সেখানে আহুত ও উপবিষ্ট হয়ে ঘুমানো হতে শুরু করে দেশোদ্ধার করা।

২. ফিতা কাটা (পায়জামার ফিতাসহ)।

৩. দেশকে নিয়ে ভাবা-ঘুমের ঘোরে ও বাইরে-সবরকমভাবেই।

৪. উপরের কত্তার হয়ে টোল সংগ্রহ ও তার হিসাব-নিকাশ রক্ষা।

৫. দেশের কন্যাদায়গ্রস্থ পিতাদের উদ্ধার করা। নিজেদের ঔরশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে রাজকীয় চাকরিতে ঢুকানোর বন্দোবস্ত পাঁকা করে যাওয়া।

৬. রাজামশাই কর্তৃক বরাদ্দকৃত যাবতীয় শান, শওকত, পারিতোষিক, সুযোগ-সুবিধা যথানিয়মে গ্রহন করে রাজকীয় খাজাঞ্চিকে উদ্ধার করা।

৭. উগান্ডার উর্বর জমিতে বাতাবীলেবুর চাষ করা ও তার তদারকী।

৮. অসভ্য, বর্বর, উশৃঙ্খল, নিম্নবর্ণীয় ’জনগন’ নামক নমোশুদ্দুরদেরকে কীভাবে রাজা মশাইয়ের আরো অনুগত, বাধ্য, সুশৃঙ্খল প্রজা হিসেবে করায়ত্ব করে রাখা যাবে-তার মন্ত্রণা সৃষ্টি ও দান।

৯. কী করিলে কী হইবে-নামক ঐশ্বরিক কিছু পগগাপোন ড্রাফট ও অবমুক্ত করণ।

১০. দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের জ্ঞান আহরন এবং রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে রাজামশাইয়ের সুনাম ও পয়গাম পৌছানোর জন্য নিয়মিত রাজকীয় খরচে বিদেশ ভ্রমন। সেই সাথে নিজ নিজ পরিবার ও ১৪ গুষ্টির জন্য আগামী ১০০ বছরের সোনো, পাউডার খরিদকরণ।

১১. কী করে পুকুর কাটতে ও বুজাতে হয়, কী করে শুচতে হয়, কী করে খিচুড়ি রাঁধতে হয়, কী করে কালো কলম দিয়ে লাল লেখা যায়, কী করে ফুচুত করে স্প্রে করে নাকের করোনা মারা যায়-সেই জ্ঞান আপন MP3 মস্তক হইতে উৎসারন। আর তাতে না কুলাইলে চট করে অনেক কষ্ট সহ্য করে প্রোজেক্ট প্রোপোজাল বানিয়ে নিয়ে তা দিয়ে বিদেশে টেরনিং গমন করা।

মনে চাইলে এটা পড়ে চোখের শান্তি আনয়ন করুন: Click This Link

১২. রাজকীয় বহরে থাকতে থাকতেই কী করে অবসরে যাবার পরেও রাজাবাহাদুর ও দ্যাশের সেবায় নিয়োজিত থাকা যাবে-মানে রাজকীয় কত্তা হতে রাজন্য হবার মন্ত্রতে দিক্ষীত হওয়া ও পথ পরিষ্কার করা।


এখন সিরিয়াস একটা প্রশ্ন হল, এই যে, এত এত নাজ, নেয়ামত, শান-শওকাত, প্যাকেজ, বেনেফিট, এ্যারেঞ্জমেন্ট-রাজকীয় কত্তাদের পালবার জন্যে, তাও সংখ্যায় লাখে লাখে, ঝাঁকে ঝাঁকে, এবং একটা বড় অংশই বিনা দরকারে, আর উগান্ডার রাজকীয় কত্তারা দিন-রাত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে দিনরাত একাকার করে দ্যাশের জন্য জীবন দিয়ে দিচ্ছেন, তার পরেও কেন উগান্ডাল্যান্ড খ্যানাডা, আম্রিকা বা ডয়েসল্যান্ডের মতো না হয়ে আফ্রিকান, ইথিওপিয়ান বা রামরাজত্বের মতো কানটিরি রয়ে গেল? সেটা বুঝতে হলে আপনাকে একটু ভাবতে হবে। বুঝতে হবে।

প্রথমত;
উগান্ডার এই রাজকীয় আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য কিন্তু মোটেই দেশ সেবা বা কার্যকর রাজকীয় কর্মযজ্ঞের জন্য নহে।

ইহা পয়দা হয়েছে ”অন্য দেশেও আমলাতন্ত্র আছে, আমাদেরও লাগবে”-সেই মূলনীতির ওপর ভর করে। বিশেষত বৃটিষ ও পাক লিগ্যাসী এর জেনোম সোর্স।

দ্বিতীয়ত;
রাজকীয় আমলাতন্ত্রের বহরে কত্তা ও কর্মচারী নিয়োগে ইংরেজিতে প্রফিশিয়েন্সী, সফট ও হার্ড স্কীল টেস্ট, সাইকোমেট্রিক ও পারসোনালিটি টেস্ট, প্রেজেন্টেশন পাওয়ার, গ্রূপ ওয়ার্ক, টীম প্রেজেন্টেশন ও এসাইনমেন্ট টেস্ট এসবতো হারাম।

শুধু মুখস্ত করুন আর জায়গামতো ৩ ঘন্টায় ঢেলে আসুন। ব্যাস। আর ভাইভার দিন পরীক্ষকের মেজাজ আর পরীক্ষার্থীর কপাল-হয়ে যাবে।

আর তার পরে কমপিটেনসী বেজড পদায়ন, এমপাওয়ারমেন্ট, এক্সট্রাকশন, এপ্রোপ্রিয়েশন, ট্যালেন্ট হান্ট, ট্যালেন্ট এ্যকুইজিশন, ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও ট্যালেন্ট রিটেনশন-এই সব কিছুই এক স্বপ্নের নাম। প্রাইভেট অরগানাইজেশনগুলো তাদের কর্মী খুঁজতে ও আধুনিক যুগের কমপিটিটিভ মার্কেটে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে সুযোগ্য কর্মীকে নিয়োগ দিতে যে নিরন্তর গবেষনা ও গবেষনালব্ধ পন্থা অবলম্বন করে, সেগুলো রাজকীয় দপ্তরের দরোজায় হত্যে দিয়ে কাঁদে।

আর জানেনই তো, হাতির নড়ে বসতে ছ’মাস। শ্লথ হলেতো কথাই নেই। রাজকীয় সিস্টেম হল হাতি ও শ্লথের ক্রস ব্রিডিং-বলা চলে-শ্লতি। প্রাইভেট সেক্টরের ওসব আধুনিক কনসেপ্ট রাজকীয় নিয়োগকান্ডে আসতে আরো কয়েকশো বছর লাগতে পারে।

নিয়োগ হতেই শুরু করুন। যেই প্রক্রিয়াতে রাজকীয় বহরে কত্তা নিয়োগ হয়, সেটা আর যাই হোক, ট্যালেন্ট এ্যাকুইজিশন নয়। ওটাকে বড়জোর নিয়োগ প্রক্রিয়াই বলা চলে।

https://www.facebook.com/walidur.rahman1/posts/1952844678106863?_rdc=1&_rdr

বুঝে না আসলে একটি আধুনিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ট্যালেন্ট এ্যাকুইজিশানের সাথে উগান্ডার রাজকীয় আমলাতন্ত্রের আমলা নিয়োগ প্রক্রিয়া ও নীতির তুলনা করে দেখুন। মেধার সন্নিবেশ ও ক্যাপিটালাইজেশনের কী উপাদান ও ব্যবস্থা সেখানে আছে?

MP3 গাইড, কারেন্ট এফেয়ার্স এবং তৎপরবর্তিতে বিশ্বের সর্বোচ্চ চুড়ার নাম, পাকভারতের ইতিহাস এই হল কাম্য জ্ঞান ও মেধা। সফট ও হার্ড স্কীল নামের কোনো চিড়িয়া সেখানে কাম্যও নয়, প্রাপ্তও নয়।

বলতে পারেন, রাজার দপ্তর তো ফ্রেশ মানুষ নেবে। তাদের ট্রেইনড করে নেবে। সাধু সাধু। ২২ বছর ধরে জনগনের রক্ত পানি করার ট্যাক্সের টাকায় বিপুল সাবসিডি দিয়ে তাকে পালি ও সংস্কৃতি ভাষায় মাস্টার্স করালেন।

তার পরে তাকে ফ্রেশার ও দক্ষতাহীন সাদা কাগজ হিসেবে হায়ার করলেন, তার পরে তাকে আবার করের বিপুল সাবসিডির টাকায় দক্ষতা অর্জন করালেন মৎস চাষ বিষয়ে। তারও পরে, তাকে আরো ৫০ টা বিভাগ ঘোরালেন, ৫০ টা বিষয়ে দক্ষতার পেছনে খরচ করলেন।

স্রেফ ওই রাষ্ট্রীয় মহান দায়ীত্ব মনে করে-জনগনের টাকা কি আসলেই গাছে ধরে? বিশ্বাস না হলে এই গল্পটা শুনুন: আমার এক বদ্দা। তিনি ’অক্সফোর্ডে’ আমার সিনিয়র ছিলেন বছর তিনেক। তো, তিনি মাস্টার্স করলেন সামাজিক বিজ্ঞানের এক বিষয় হতে। ইর্ষণীয় রেজালট। দুটো ফাসটো কেলাস।

পাশ করেই বিয়ে করলেন। তার পরপরই বিচিএচ হয়ে গেল। রাজকীয় নিরীক্ষা দপ্তরে। তো, এই সামাজিক বিজ্ঞানী ভদ্রলোক কীভাবে নিরীক্ষক হন, যেটা একাউন্টিং গ্রাজুয়েটদের হবার কথা-সেটা অবশ্য বিচিএচ সিস্টেমকে জিজ্ঞেস করা যাবে না। যাহোক।

তিনি বিচিএচ ফাসটো কেলাস কত্তা। পাকেচক্রে যখন তিনি নিরীক্ষায় এসেই পড়েছেন, তাকে তো এবার গড়ে পিটে নিতে হবে।

তো, তাকে ১ বছরের দীর্ঘ প্রশিক্ষণ দেয়া হল। রাজকীয় খরচে-মানে পাবলিকের টাকায়। তিনি যোগ্য নিরীক্ষক হয়ে উঠলেন। তার পরে কাজ শুরু করলেন। বছর তিনেক পরেই শুনি, তাকে লিয়েনে আরেকখানা রাজকীয় ’শিটি কর্প’ এর কত্তা করা হয়েছে-যেখানে তার কাজ পরিসংখ্যান নিয়ে। তো, এবার কী হবে?

তিনি তো পরিসংখ্যান জানেন না। তাকে আবার পাঠানো হল ১ বছরের প্রশিক্ষণে। তিনি সরকারী পয়সায় ১ বছর সাবসিডি পেয়ে পরিসংখ্যান শিখলেন। আগের সব গচ্চা।

কাজ শুরু হল। তিনিও মজা পেলেন। সবশেষ যখন স্বামী বিদেশ এ্যাপ মানে ইমুতে তার সাথে কথা বলি, তখন তিনি রাজকীয় পরিকল্পনা মন্ত্রকে দেশোদ্ধার করার দায়ীত্ব পাওয়ায় নতুন করে প্রশিক্ষণের জন্য যাচ্ছেন।

আর এমনিতে তো জানেনই, উগান্ডায় একজন মহোদয়ের কোনো ফিক্সড ডিপারমেন নেই। আজ এই মন্ত্রণালয়, তো কাল সেটা। ফলাফল-পানি বিভাগের আমলার ব্যাকগ্রাউন্ড ইসলামের ইতিহাস আর কাজ করেছেন আজীবন ক্রীড়া বিভাগে।

এনার্জি কত্তা হয়তো পাশ দিয়েছেন সংস্কৃত ও পালি বিভাগ হতে, আজীবন দক্ষতা নিয়েছেন স্থানীয় সরকারে। এখন আছেন এনার্জিতে। এর মাঝে ঘুরেছেন ৫২ টা বিভাগ। সর্বগুনে গুনান্বিত কাঠালি কলা।

তৃতীয়ত; তাও ধরুন রাজকীয় বহরে একজনকে নিলেন। এরপর আসে কাজের কথা। উগান্ডান ব্যুরোক্রেসী ও রাজকীয় আমলাদের নিয়োগ, পদায়ন, প্রয়োগ, নীতি, ডেকোরাম, প্রটোকল, সিস্টেম, কালচার-এই সবকিছুই এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে কত্তারা রাজকীয় শোভাবর্ধক হওয়া ছাড়া চাইলেও কাজ করতে না পারেন।

আর কোনো কোনো মানুষ যদি ভুল করে করার সাহসও দেখায়, তাকে সাইজ করার সব এন্তেজাম এখানে করা আছে। এই যেমন ধরুন, উগান্ডার বিভিন্ন রাজকীয় অফিসে কয়েক হাজার কোটি টাকার গাড়ি কেনা হয়। আবার কয়েক হাজার কোটি টাকার পুরোনো গাড়ি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।

একটি বেওকুফ কোম্পানী ওই পুরোনো গাড়ি রিপেয়ার ও রিনোভেট করে এ্যানটিক ভ্যালু যোগ করে অন্তত ১৫০০ কোটি টাকা বাঁচানোর একটা পন্থা বের করে প্রস্তাব দিয়েছে। রাজকীয় আইনে পুরোনো গাড়ি রেনোভেট করার বিধান লেখা নেই এবং বাইরের লোককে ফপরদালালী করার বিধান ও সুরাহা নেই বলে, ওই গাড়ি তাদেরকে ধরতে দেয়া হবে না-সাফ বলে দেয়া হয়েছে গাড়ির মোহাফেজখানা হতে।

মানে হল, আপনি জানবেন, বুঝবেন, দেখবেন, কিন্তু কিছু করতে হলে নিয়েমে নেই। আপনার কাজ বিধি মেনে চলা। কাজ করা না। আরো উদাহরন চান? বস, কান ও চোখ পাতলেই উদাহরন পেয়ে যাবেন। আমাকে উদাহরন দিতে বলে আমার বউটাকে বেধবা করার ধান্দা কেন বস? রাজকীয় মেকানিজম কীভাবে কাজ করে তার কিছু আন্দাজ পাবেন এখানে:

https://www.facebook.com/walidur.rahman1/posts/3628140160577298;


রাজকীয় দপ্তর ও তার দাপ্তরিক সিস্টেম, কালচার, ব্যবস্থাপনা, প্রথা নিয়ে যতটা জেনেছি ও এই দুই কুড়ি বছর জীবনে দেখেছি, তাতে বোঝা সহজ, যে, ওই সিস্টেমে কাজ করতে হয় না, কাজ জানতে হয় না, কাজ করলেও তার কোনো জবাব কাউকে দিতে হয় না, কাজের মান নিয়ে কোনো দাবী নেই। এমনকি কাজ না করে ঘুমালেও কোনো অসুবিধা নেই। বরং কাজ করতে চাইলেই খবর আছে। এটা পড়ুন, বুঝে যাবেন-

https://www.facebook.com/walidur.rahman1/posts/4441182499273056;

এইরকম সিস্টেম ও কালচারে স্বয়ং জমরাজকেও যদি নিয়োগ দেয়া হয়, তিনি হয় ঘুষ নেবেন, নয়তো ঘুষ দিয়ে নিজের কাজ আউটসোর্স বা সাবকনট্রাক্ট দেবেন, নিজের কাজ সাবকনটাক দিয়ে তিনি মুদি দোকানের ব্যবসায় মন দেবেন, আর না হয় তো ইলেকশনে দাড়াবেন।

আপনি তো আর জমরাজকে পাচ্ছে না পরীক্ষার জন্য।

আপনি কষ্ট করে একটু উগান্ডায় যান। সেখানকার রাজকীয় কত্তাদের ইতিহাস দেখুন। তাদের একাডেমিক ক্যারিয়ারেরর বিপরীতে তাদের বর্তমান ক্যারিকেচার মিলান। দেখবেন, গন্ডায় গন্ডায় জেফ বেজোস, মার্ক জুকারবার্গ, টীম কুক, ল্যারি পেজ, সুন্দর পিচাই ওই খোঁয়াড়ে বিভিন্ন সময় ঢুকেছে ঠিকই,

কিন্তু ঢোকার পরে আর থাকার পরে, তারা সবাই গ.দা.খা.মা.সু হয়ে গেছেন। সঙ্গদোষে লোহাও ভাসে।

আর এত কিছুর পরে, যখন কর্মচারী জানে, যে, পারফরম না করা ও করার মধ্যে কোনো তফাৎ হবে না, কোনো পারফরম্যান্স মেজারমেন্ট বা পারফরম্যান্স ইভ্যালুয়েশনের বিষয় নেই, বরং, ওসব নিয়ে ভাবলে বিপদে পড়তে হয়-তখন উগান্ডার রাজকীয় কত্তাদের থেকে আপনি শেরিল স্যান্ডবার্গ কিংবা এ্যাপলের সিইওর মতো মেধা ও কর্মপটুত্ব তো আশা করতেই পারেন।

যেই সিস্টেমে একজন কত্তা তার উপরস্থ ‘মহোদয়’ এর লিখিত অনুমতি ব্যতিত এমনকি ‘হাগতে’ যেতেও পারেন না, সেখানে ক্রিয়েটিভিটির একদম আম্মিকা আব্বি। শেষ করার আগে একটা গল্প বলি।

রাজা মশাই একবার স্বপ্নে দেখেন, রাতের বেলা ভগবান এসে তাকে আদেশ করছেন, এই রাজ্যে যত পাঁঠা আর ভেড়া আছে-সবগুলোর জন্য আসছে শীতে কম্বল বরাদ্দ করতে হবে। ওদের শীতে বড্ড কষ্ট হয়। ঘুম ভাঙতেই সকাল বেলায় রাজামশাই মন্ত্রীকে গরম হুকুম জারি করলেন-আগামী ৩০ দিনের ভিতরে রাজ্যের সব পাঁঠা ও ভেড়ার মোট সংখ্যাসহ টোটাল ‘এশটাটিটসটিকস’ আমার চাই। না দিতে পারলে গর্দান ঘ্যাচাং।

মন্ত্রী পড়লেন বিপদে। এই মাত্র ৩০ দিনে তিনি কীভাবে এই তথ্য জোগাড় করবেন। গর্দান বুঝি যায়। তবে রাজকীয় কত্তা তো। মাথা ভরা MP3। তিনি তার সচিবকে ডেকে বলে দিলেন, “আগামী ১৫ দিনের আগেই তথ্য যেমনে করেই হোক, চাইই চাই। নচেত গর্দান নাই।

সচিব চাপ দিলেন পত্তম শ্রেণীর বিভাগীয় মহোদয়কে। ৭ দিনের ভিতরে পাঁঠার সংখ্যা চাই।

বিভাগীয় কত্তা গরম গরম হুকুম দিলেন জেলার কত্তাকে-৩ দিনের ভিতর পাঁঠার শুমারী শেষ চাই। নচেৎ চাকরি নাই।

জেলা কত্তা ডাকলেন উপজেলাকে-উপজেলা ডাকলেন ইউনিয়ন কত্তাকে-ইউনিয়ন কত্তা ডেকে হুকুম দিলেন চেয়ারম্যানকে-চেয়ারম্যান চাপিয়ে দিলেন কমিশনারকে-২৪ ঘন্টার ভিতরে পাঁঠা-ভেড়ার শুমারি রাজ্যদপ্তরে পাঠাতেই হবে।

কমিশনার কাঁদতে কাঁদতে বাসায় গেল। সুখের চাকরি আর গর্দান-দুটোই বুঝি যায় যায়। রাতে কমিশনারের বউ দেখে স্বামীর মেজার তিরিক্ষি। কায়দা করে কারন জেনে নিয়ে স্বামীকে তিনি অভয় দিলেন। একটা খাতা কলম নিয়ে বসে গেলেন। মিনিট পনেরো পরেই স্বামীকে হিসেব করে তাদের ওয়ার্ডের ‘ন্যাশনাল ডাটাবেজের এশটাটিসটিকস’ বানিয়ে দিলেন। কীভাবে তিনি এত পারঙ্গম হলেন? কী ছিল তার ম্যাজিক?

[পাশের বাসার ভাবি তার জামাইকে সবসময় বলেন ভেড়ুয়া। হল-১ টা। সামনের বাড়ির করিম সাহেব তার গুড ফর নাথিং ছেলেকে সবসময় পাঁঠা বলেই আখ্যা দেন। হল-২। পাড়ায় রাস্তাঘাটে, মাঠে, গোয়ালার ঘরে যতটা যাতায়াত তার আছে আর চোখে পড়ে, তার সাথে বাজারের দুই চারটা কুত্তা, সামান্য ভেজাল-সব মিলিয়ে ওই ওয়ার্ডে পাঁঠা হল ৮ টা, ভেড়া ১১ টা।” ব্যাস, কেল্লা ফতে।

পরদিন সব ওয়ার্ড কমিশনারের ওই একই তরিকায় সংগৃহিত অথেনটিক ও সফিসটিকেটেড ফিল্ড ডাটা কমপাইল করে চেয়ারম্যান তার ইউনিয়ত কত্তাকে তার জুরিসডিকশনের পাঁঠা ও ভেড়ার সংখ্যার নিঁখূত তথ্য দিয়ে দিলেন।

ইউনিয়ন কত্তা ক্যালকুলেটর চেপে, মোট ওয়ার্ড’র সংখ্যা দিয়ে মাল্টিপ্লাই করে পুরো ইউনিয়নের হিসেব বের করে তা উপরে ফরোয়ার্ড করলেন।

বিভাগীয় দপ্তরে গেল। তিনি আবার তার সব জেলার সংখ্যা দিয়ে মাল্টিপ্লাই করে বিভাগের তথ্য করে ফেললেন। রাজকীয় সেন্ট্রাল দপ্তরে গেলে সচিব সাহেব সব কটা বিভাগের এভারেজকে গুন করেই দুই মিনিটে গোটা রাজ্যের পাঁঠা-ভেড়ার টোটাল ’এশটাটিসটিকস’ রেডি করে মন্ত্রীকে তরিৎ পাঠিয়ে দিলেন।

মন্ত্রী তো বাকবাকুম। ৩০ দিনের কাজ তিনি ১ দিনে শেষ করে দিয়েছেন। রাজা মশাইকে গিয়ে পরের দিনই পুরো রাজ্যের টোটাল পাঁঠা ও ভেড়ার স্টাটিসটিকস পেশ করে তাক লাগিয়ে দিলেন। রাজাও খুশি। বাহ। তার কত করিৎকর্মা কর্মী ও অমাত্য বাহিনী।

যাক, ঈশ্বরের কাছে তার সুনাম আর ঠেকায় কে?

(শ্রূত এই গল্পটি স্মৃতি হতে লেখা। বয়ানে ভুল থাকা অস্বাভাবিক নয়।)

এভাবেই উগান্ডার রাজকীয় দপ্তরসমূহের তথ্য ও ডাটা (তরকারীর ডাটা না কিন্তু) সংগ্রহ হয়, সেটাকে ছোট কত্তা হতে বড় কত্তা তক ভেরিফাইড করে কীভাবে জানেন-

ছোট কত্তা তার কলমচি, মানে কম্পোজাররা যা লিখে আনে, গোঁজামিল যাই হোক একটা কিছু করে, তাতে ছোট কত্তা সাক্ষর করে দেন,

এই চিন্তা করে, যে, এর ভাল-মন্দ তো বড় স্যার দেখবেনই, আমার আর এত ভাববার দরকার কী?

ওদিকে ওপরে গেলে আবার ছোট কত্তা বা পাতি কত্তা সাক্ষর করেছেন দেখলে মেঝো কত্তা ধরেই নেন, ছোট কত্তা নিশ্চয়ই সব বুঝে শুনেই সাক্ষর করেছে। তাই সে ও চোখ বুঝে সাক্ষর করে দেয়।

এভাবেই মাঠ পর্যায় হতে ‘অথেনটিক’ ডাটা ও ’সার্ভে’ আসে, রাজকীয় আমলালয়ে যায়, মহোদয়রা সেই ডাটা ও জরিপ দেখেই প্রকল্প বানান, পয়সা ঢালান, আর তারও পরে, বছর দুয়েক পরে গিয়ে দেখবেন, শুকনো খটখটে এক জমির মাঝখানে কে যেন একটা ৮০ ফুট লম্বা পুল বানিয়ে রেখেছে।

আর কিছু বললে চাকরি থাকবে না।

সব কথার বড় কথা হল, এই এত এত এত গোঁজামিল ও অসঙ্গতি যদি না ও থাকত, তারপরেও উগান্ডার রাজকীয় আমলাতন্ত্র ও আমলার বহরের কেরেদ্দারী ও কারিশমাতে খুব একটা অদলবদল হত না।

তার অবশ্য কারনও আছে। কারনটার সামারি হল-

উগান্ডায় ব্যাপক ও বিপজ্জনকভাবে ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া-

অসুস্থ Politics, Politicization, Political criminalization, deviation in educational excellence, absence of good governance, denial of rule of law-সবকিছুতে, সবখানে, সবভাবে, সর্বোতভাবে।

এই মরক হল এক ব্ল্যাকহোলের মতো। যেখানে আস্ত নক্ষত্রও মিলিয়ে যায়। সেই কারণেই সার্বিক বিচারে আমি উগান্ডার রাজকীয় কত্তাদের কোনো কিছুতেই অবাকও হই না, দোষও দিই না।

ইনফ্যাক্ট, আমি যেই মঙ্গলগ্রহে থাকি, সেখান হতে কোটি কোটি মাইল দূরে অবস্থিত Jupiter নামের গ্রহে আরেকটি দেশ উগান্ডার জনতা, রাজন্য-সবাই যদি এই সবকিছু নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ হয়েও বেঁচে থাকে,

তাতে আমার কোন সার্কিটটাতে গন্ডগোল দেখা দেবে?

আমি এক নগণ্য রোবট চন্ডাল।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: কি পোষ্ট দিয়েছে?
আপনার পোষ্টের আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না।

০৯ ই জুন, ২০২১ দুপুর ২:২৪

বেচারা বলেছেন: ’কি’ পোস্ট নয়, ওটা কী পোস্ট হবে।

কী পোস্ট দিয়েছি, সেটা হেডিংয়েই দেয়া আছে।

আগা মাথা কিছুই না বুঝতে পারলে বোঝানোর চেষ্টা বৃথা। তাই আর বোঝাতে গেলাম না।

যদি কিছুটা বোঝেন আর কিছুটা নয়, তাহলে চেষ্টা করা যেত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.