নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশি বাঙালি, উগ্র সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধতা মুক্ত , বিজ্ঞান চিন্তক একজন লেখক হিসেবে লিখতে চাই মানুষ ও মানবতার কথা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধনের কথা , ধরিয়ে দিতে চাই ধর্মের নামে গড়ে উঠা কুসংস্কার ও ভন্ডামিগুলোকে । পাঠকদের স্বাগতম।।

ভাস্কর রায় ( সৌরভ রাজধন )

পাতি লেখক হলেও মূলত পাঠক, শিখছি ; কোরার পর এখানেই নিয়মিত লিখবো

ভাস্কর রায় ( সৌরভ রাজধন ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

"হাত ছাইড়া দাও দেউড়া রে" গানটি নিয়ে আপত্তির কারণ ও জবাব

১৪ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৩:২২

আমি খুব সাধারণ একজন শ্রোতা, সংগীতের ব্যাকরণ বুঝি না। তবে ভালো কথার ও সুরের গান শুনতে ভালবাসি । প্রতিদিন বিভিন্ন রকমের গান শোনা আমার একরকম অবভ্যাসে পরিণত হয়েছে ।

একটা সময় গ্রামগঞ্জে, শহর-নগরে, অলিতে-গলিতে, হোটেলে-দোকানে-পাড়ায়-মহল্লায় প্রায়ই গান বাজতে শোনা যেত। আর পহেলা বৈশাখ কিংবা ঈদের মতো বড় উৎসবে তো আয়োজন করে গান বাজতো পাড়া-মহল্লায়। এসব উৎসবে প্রিয় শিল্পীর ক্যাসেট ও পরে সিডি কিনে বাজানোটা একটা নিয়মে পরিণত হয়েছিল। উৎসবের অন্যতম আনন্দও ছিল সাউন্ডবক্সে ফুল ভলিউমে গান বাজানো। আর এভাবেই একটি গান ছড়িয়ে পড়তো চারদিকে। কোন শিল্পীর কোন গান বেশি শ্রোতাপ্রিয় সেটা নির্ণয় করা যেত এসব গান বাজার মধ্য দিয়ে। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। যুগ বদলেছে। প্রযুক্তি ভর করেছে সব কিছুতে। ক্যাসেট মাধ্যমের যুগ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। সিডি মাধ্যমও প্রায় বিলুপ্ত। বর্তমানে Spotify , YouTube এসবের মাধ্যমে অনেক গান উঠে আসে , গ্রাম গঞ্জের হারিয়ে যাওয়া গান, লালন বাউল ভাটিয়ালি ভাওয়াইয়া জারি সারি কত গান । যা বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি হিসেবে শ্রব্য
বর্তমানে বেশ আলোচিত সমালোচিত গান হলো কোক স্টুডিও বাংলার হাত ছাইড়া দাও সোনার দেওরা রে । সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘দেওরা’ গানটি লিখেছেন ফজলুল হক। তিনি পেশায় কৃষক ও মাঝি। ফজলু মাঝি হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। গানটিতে সুরারোপও করেছেন তিনি। গানটি অনবদ্যভাবে পরিবেশন করেছেন ইসলাম উদ্দিন পালাকার। কিশোরগঞ্জের গ্রামে গ্রামে তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। গ্রামবাংলার পালাগানের নাট্যরস ও স্বতন্ত্র ভঙ্গিমাকে যথাযথভাবেই তুলে ধরেছেন তিনি।]

এটি কোক স্টুডিও বাংলার প্রথম আলোচিত সমালোচিত গান নয় । এর আগে নাহুবো গানটিও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে । তার আগে প্রার্থনা । তাছাড়া ‘নাসেক নাসেক’ ]গানটা নিয়েও কত কম কথা বলেন নি নেটিজেনরা । বিভিন্ন ধরনের , বিভিন্ন রকমের — মানুষ এই সমালোচনায় অংশ নেয় । যেটা নিয়ে প্রশ্ন — সেই হাত ছাইড়া দাও সোনার দেওরা রে সেটা নিয়ে মানুষের আপত্তি মূলত বা সমালোচনা মূলত দুই জায়গায় —
এক . ভাবি বা দেবরের মতো সম্পর্ক ( পবিত্র ) নিয়ে নেতিবাচক বা অনৈতিক কথা বার্তা।
আরেকটি আপত্তি হলো — গায়কের পোশাকে ।
প্রথম কারণটির উদ্ভব হয়েছে মূলত ভাষা বা অর্থগত বা ভাবগত জানার সীমাবদ্ধতার কারণে । আপনারা যেটা ভাবছেন সেটা সত্যি নয় এর ব্যাখ্যা একজন নেটিজেন দিয়েছেন— "হাত ছাইড়া দাও সোনার দেওরা রে" doesn't mean দেবর ভাবির হাত ধরে রাখছে। It means, বৈঠা ধরে রাখতে রাখতে দেবরের হাতে ব্যাথা হয়ে গেলে বৈঠাটা ছেড়ে দাও। "হাতে লাগে ব্যাথা রে" মাঝি গাইবে, "হাত ছাইড়া দাও সোনার দেওরা রে" এটা ভাবি গাইবে।জারি,সারি অথবা ভাটিয়ালি গানের অন্তমিল এভাবেই সাজানো হয়।
ভাবি-দেবরের সম্পর্ক অপবিত্র করছি আমরা সো কলড সভ্য সমাজের ডার্ক ফ্যান্টাসিওয়ালা বাসিন্দারা। ভাওয়াইয়া, জারি, সারি গান গেয়ে নৌকা নিয়ে মাঝ নদীতে ১৫/২০ দিন খেটে বাড়ি ফেরা মানুষ যারা তাদের মাথায় আমাদের মত এই লেভেলের অসভ্য চিন্তা হয়তো আসে না!

গ্রাম বাংলার নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় এখনো এই গান গাওয়া হয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় দেওরা গান দ্বিতীয় পোশাক — পোশাক নিয়ে বাংলাদেশে আপত্তি কোথায় ছিলো না , এটা কেবল এই গানের পোষাক পরিধান নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে না , এর আগে অনেক পোশাক নিয়ে কথা হয়েছে । যারা অন্য দেশে পোশাকের স্বাধীনতার কথা বলেন তারা নিজেরা নিজেদের দেশে কথা বলেন ধর্মীয় পোশাক নিয়ে। ভিন্ন কোনো পোশাক কেউ পরিধান করলেই তাকে শুনতে হয় কটুক্তি । আমি পোষাক পরিধান নিয়ে কোনরকম আপত্তি দেখি না । গায়ক চাইলে তার মতো ইচ্ছে পোশাক পরিধান করতে পারে । একটি স্বাধীন দেশ তাকে সেই অধিকার দেয় । সে তো আর উ ল ঙ্গ হয়ে গান করতেছে না !!গ্রাম বাংলার ঘেটু গানের কথা জানেন কি ? আপনি চাইলে ঘেটুপুত্র কমলা কালজয়ী এই নাটকটি দেখতে পারেন। কিছুটা ধারণা পাবেন। এখানে ঘেটুপুত্র কমলার একটি গান — শুয়া পুড়িলো
ঘেটুপুত্র কমলার শুয়া পুড়িলো

সংগীত সব সময় বিনোদনের মাধ্যম নয়, তা তুলে ধরে একটি জাতিগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক পরিচয়, রাজনৈতিক অবস্থান ও সংঘাতের ইতিহাস। অনেক সময় এই সংগীত হয়ে ওঠে একটি জাতির অস্তিত্বের স্মারক। আমাদের নাগরিক ক্ষমতা এবং ক্ষমতাসীনের দাপটে সেই সংগীতও হয়ে যেতে পারে বেহাত, তাই নয় কি! সেসব ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই সর্তক থাকা উচিত।


পড়ার জন্য ধন্যবাদ
~ ভাস্কর রায় ( সৌরভ রাজধন )

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৩:৪১

আমি সাজিদ বলেছেন: গানটা নিয়ে আমারও ধারণা ভুল ছিল। ইউটিউবে নৌকা বাইচের সময়ে এই গানটির অরিজিনাল ভার্সণের কয়েক মিনিট দেখার পর ভুল ভেঙ্গেছে।

১৪ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৬

ভাস্কর রায় ( সৌরভ রাজধন ) বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ সাজিদ ভাই , অনেকের মতো আপনারও এই ভুল ধারণা ছিলো যা আপনি বুঝতে পড়েছেন। কিন্তু অনেকেই সেটা বুঝতে পারেন নি বা বলতে পারেন বুঝেও বুঝেন না ।

২| ১৪ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৯

কিরকুট বলেছেন: যাদের আপত্তি তাদের পূর্বপুরুষরাও আপত্তি করতো । এটা তাদের পৌরাণিক স্বভাব।

১৪ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৪:০২

ভাস্কর রায় ( সৌরভ রাজধন ) বলেছেন: সহমত পোষণ করলাম কিরকুট ভাই

৩| ১৪ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৪

ঢাবিয়ান বলেছেন: ১০/১৫ দিন খেটে এসে বাড়ি ফেরা মানুষের মাথায় আমাদের মত এত অসভ্য চিন্তা আসে না।

এটাই আসল কথা।তথাকথিত এই অশিক্ষিত মানুষগুলোই আসলে স্বশিক্ষিত এবং শিক্ষিতদের বিড়াট একটা অংশ কুশিক্ষিত।

১৪ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:১৯

ভাস্কর রায় ( সৌরভ রাজধন ) বলেছেন: এটাই সত্যি

৪| ১৪ ই জুন, ২০২৩ রাত ৯:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।
একমত জানিয়ে গেলাম।

৫| ১৫ ই জুন, ২০২৩ সকাল ১০:৪৫

ধুলো মেঘ বলেছেন: এখানে দেবর ভাবি না হয়ে প্রেমিক প্রেমিকা বা জামাই-বউ হলে অসুবিধা কি ছিল? মা-ছেলে হলেও একটা সুন্দর মিনিং বের করা যেত। কিন্তু বাংলাদেশের কোন নৌকা বাইচের ছবি দেখাতে পারবেন, যেখানে বিবাহিত মহিলারা দলে দলে বাইচ খেলা দেখতে গেছে?

আসল কথা হচ্ছে চটকদার শিরোনাম এবং প্যান্ট পড়া মেয়েদের অশ্লীল নাচ। নইলে মাত্র দুই সপ্তাহে ৩ কোটি ভিউ হবার আর কোন যৌক্তিক কারণ আমি দেখিনা। যত্ন করে বানানো দাঁড়ালে দুয়ারে মোর এবং নদীর কুল নাই - দুই মাসেই ৫০ লাখ ভিউ পায়নি। এখানে আসলে কোয়ালিটি ম্যাটার করেনা। দেওরা নাম দেখেই পাবলিক ঝাঁপিয়ে পড়েছে নিষিদ্ধ রস আস্বাদনের আশায়।

৬| ১৫ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:০০

অধীতি বলেছেন: কিছুদিন আগে ড.মো. আমিনের একটা পোস্ট দেখেছিলাম যে দেবর শব্দটি এসেছে 'দ্বিতীয় বর' থেকে, প্রাচীন ভারতে নারীরা নাকি সামাজিক ভাবেই দেবরের সাথেও মিশতে পারত।
রেফারেন্স দিয়েছেন অতুল সুর এ বই ভারতীয় বিবাহের ইতিহাস
বর্তমানে উগ্রতার ছড়াছড়ি বেশি হচ্ছে ফলে মানুষ যে কোন কিছুতেই মনের অজান্তে বিরোধ খুঁজে বেড়াচ্ছে। এর একটা কারণ আমার কাছে মনে হয় শিক্ষা ব্যবস্থার দূর্বল কাঠামো।

৭| ১৬ ই জুন, ২০২৩ সকাল ৮:০০

নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: বাহ্ ভালো বিষয় টানলেন ,

যদিও এই নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা হয়ে গেছে ইতমধ্যে । কিন্তু কিছু প্রশ্ন রয়ে যায় , এটা নৌকা বাইচের গান । কিন্তু শুনে এটাকে নৌকা বাইচের গান বলে মনে হয় না । উদ্দীপনার গান এমন হয় কী ? নৌকা বাইচে তো উদ্দীপনা প্রয়োজন বেশি , এই উদ্দীপনামূলক গান বলে তো এটা মনে হয় না যদি আপনার ব্যাখ্যাটা মেনে নেয়া হয় তো এটা একটু ভেবে দেখবেন ।

সে যাক , দেবর ভাবীর খুনসুটি নিয়ে গান এই দেশে কম না । এবং সেসবে অশ্লীলতার মাত্রাও কম না , তাই চট করে এমনটা ভাবা অস্বাভাবিক কিছু না । এইদেশের মধ্যযুগের যত সাহিত্য দেখবেন সেখানে প্রেম মানেই পরকীয়া , এই যে প্রেম নিয়ে এইদেশের মানুষের এক অতীত অভিজ্ঞতা এটাকে দূর করা অসম্ভব । অধীতি যা তুলে ধরল তা মিথ্যে নয় , এবং এটাও একটা মূল কারণ !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.