নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভুয়া মফিজ

ভুয়া মফিজের সাথে ভুয়ামি না করাই ভালো...

ভুয়া মফিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিলাতের খুচরা অভিজ্ঞতা: নদী দর্শন

০৩ রা জুন, ২০১৭ রাত ১০:১১

তখন চাকরিতে জয়েন করেছি মাএ কয়েক মাস হয়। নতুন কাজ বুঝতে প্রচুর খাটা-খাটুনি করছি, এদেশে নতুন তাই ভাষা সমস্যাও প্রকট। এরই মধ্যে রিচার্ড (আমার বস) জানালো, পরশুদিন অটোমোবাইল ট্রেডিং এর উপর একটা সেমিনার এবং ওয়ার্কশপ আছে অক্সফোর্ডশায়ারের গ্রোভ শহরে, সকাল ৮:৩০ এর মধ্যে পৌছাতে হবে। দুই-আড়াই ঘন্টার জার্নি, আমি যেন ভোর ৬টার সময় তৈরি থাকি, বলেই সবগুলো দাঁত বের করে শয়তানি হাসি দিল। ব্যাটা বদমাশ এরই মধ্যে জেনে গেছে অত সকালে এই প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে উঠতে আমার কতটা কষ্ট হবে। তারপর চোখ টিপে বললো, ভেন্যু হচ্ছে উইলিয়ামস ফর্মুলা ওয়ান এর কনফারেন্স সেন্টার। শুনে খুশিতে আমার বুকের ভিতরে গুড় গুড় করে উঠলো। সেই যখন থেকে আমি কার রেসিংএর ভক্ত, তখন থেকেই স্বপ্ন ফর্মুলা ওয়ান এর কমপ্লেক্স আর মিউজিয়ামটা দেখার। তবে খুশি গোপণ করে ব্যাজার মুখে বললাম, যেখানেই হোক যেতে তো হবেই, তাইনা?

সারাটা দিন স্বপ্নের মতোই কাটলো। ফেরার পথে রিচার্ড বললো, আমরা এবার অন্য পথে যাবো। তুমি তো নদীর দেশের মানুষ, চলো, তোমাকে আমাদের একটা নদী দেখাই। আমি বিলাতি নদী দেখার আগ্রহে টান টান হয়ে বসে রইলাম। একসময় রিচার্ড বললো, নদী কেমন দেখলা? আমি আকাশ থেকে পড়লাম,
- কই নদী?
- এই যে এইমাএ পার হয়ে আসলাম, দেখো নাই?
- নাতো!
- বলো কি! বলেই গাড়ী ঘোরাতে শুরু করলো।

একটা ছোটমতো কারপার্কে গাড়ী পার্ক করলো। একটু সামনে এগিয়ে দেখলাম ড্রেনের চেয়ে একটু বড় একটা ছড়া মতো, সেটাকে নিয়েই যত আয়োজন। খুব বেশি হলে গোড়ালি-ডোবা পানি। ডান পাশে কায়দা করে একটা ব্রীজ বানানো যার উপর দিয়েই একটু আগে আমরা এসেছি। আমি চরম হতাশ গলায় বললাম, এইটা নদী? রিচার্ড বললো, কেনো, পছন্দ হয়নি? আমি বললাম, না, তা না, সুন্দর। একটু ঘোরাঘুরি করলাম। ব্যাটা এত শখ করে নিয়ে এলো, না হলে মনে দুঃখ পাবে।

ড্রেনমার্কা নদী দেখে মুগ্ধ হলাম না, হওয়ার কথাও না। তবে মুগ্ধ হলাম ওদের উপস্থাপনার সৌন্দর্যে। একটা সাধারন জিনিস কে এত অসাধারন ভাবে উপস্থাপনা এবং maintain করা আসলেই শেখার মতো। প্রচুর মানুষ বেড়াতে এসেছে, বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে এসেছে অনেকে। কেউ একটা গাছের পাতাও ছিড়ছে না, একটা কাগজের টুকরাও পড়ে নেই কোথাও । সবকিছু ছবির মতোই সাজানো-গোছানো। আমাদের এত সুন্দর সুন্দর নদী, এবং তাদের দুরঅবস্থ্া মনে করে নিজের অজান্তেই বড় একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বের হয়ে এলো বুক চিড়ে। আমাদের নেতা-নেএীরা এত আগ্রহ নিয়ে বিদেশে যায়, এত ঘোরাঘুরি করে, এত দেখে, কিন্তু শেখে না কিছুই, কেনো?

আমাকে চুপচাপ দেখে রিচার্ড বললো, এত ছোট নদী দেখে মন খারাপ? একদিন সময় করে লন্ডন গিয়ে থেমস নদীটা দেখে এসো, ভালো লাগবে। ওকে বললাম, নদী দেখে মন খারাপ হয়নি, হঠাৎ দেশের কথা মনে পড়লো! ফেরার পথে আর তেমন কথা হলো না।

একটা সুন্দর দিন পার করেও প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে বাসায় ফিরলাম।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুন, ২০১৭ রাত ১১:১৫

দ্যা ফয়েজ ভাই বলেছেন: নদী-দর্শনের আলোচনা ভালো লাগলো।ফর্মুলা ওয়ানের মিউজিয়াম দেখতে যাবেন শুনেই ভোর ছয়টা কোন ব্যাপার নাহ। =p~ ;)
স্বদেশের সকল কিছুই আলাদাভাবে টানে।তা অন্যকোন কিছুতেই মন ভরায় নাহ।টেমস নদীও হয়ত আপনাকে সেই আনন্দ দিতে পারবে না,যা আপনি বাংলার খাল দেখে পান।

০৪ ঠা জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৫

ভুয়া মফিজ বলেছেন: নদী-দর্শনের আলোচনা ভালো লাগলো ধন্যবাদ, উৎসাহ পেলাম।
স্বদেশের সকল কিছুই আলাদাভাবে টানে।তা অন্যকোন কিছুতেই মন ভরায় নাহ।টেমস নদীও হয়ত আপনাকে সেই আনন্দ দিতে পারবে না,যা আপনি বাংলার খাল দেখে পান খাটি কথা বলেছেন ভাই। আসলে আমাদের এত সুন্দর দেশটা কিছু মানুষের জন্য অসুন্দর হয়ে আছে ভাবলেই কষ্ট পাই।

২| ০৩ রা জুন, ২০১৭ রাত ১১:১৮

সুমন কর বলেছেন: প্রথম লেখা এবং আপনার অনুভূতির কথা পড়ে ভালো লাগল।

লিখতে থাকুন।

০৪ ঠা জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৮

ভুয়া মফিজ বলেছেন: আরও লেখার উৎসাহ পেলাম, ধন্যবাদ।

৩| ০৩ রা জুন, ২০১৭ রাত ১১:৪৩

শোভন শামস বলেছেন: আপনার অনুভূতির কথা পড়ে ভালো লাগল।

লিখতে থাকুন।

০৪ ঠা জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:৫০

ভুয়া মফিজ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৪| ২৯ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:২৭

ইসিয়াক বলেছেন: চমৎকার ।

৩১ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৫১

ভুয়া মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ। ব্লগের প্রথম লেখা। এর মুল্যই আলাদা। :)

৫| ২৯ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৬

আরোগ্য বলেছেন: শুভ ব্লগিং প্রিয় ভুয়া ভাই। ব্লগে আপনার যাত্রা দীর্ঘ ও শুভ হোক।

কে বলে আমাদের মন্ত্রীরা কিছু শিখে না। ওসব দেশের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে প্রাসাদ বানায়। :P

৩১ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:২৭

ভুয়া মফিজ বলেছেন: কে বলে আমাদের মন্ত্রীরা কিছু শিখে না। ওসব দেশের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে প্রাসাদ বানায়। সে আর বলতে। বিদেশ বলতে উনারা অজ্ঞান। তবে কথাবার্তায় এটা বোঝা যায় না, আচার-আচরণে আমরা কিছুটা ধারনা পাই মাত্র। =p~

৬| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:৩৬

নীল আকাশ বলেছেন: মফিজ ভাই, আপনার প্রথম লেখায় ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলাম।
এই সময়ে খুব সাবধানে থাকবেন।
ধন্যবাদ।

৩১ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৩১

ভুয়া মফিজ বলেছেন: এই লেখাটা আমার খুবই প্রিয়। প্রথম সন্তানের মতো। :)

আমি যেহেতু পাবলিক ট্রান্সপোর্ট একেবারেই ব্যবহার করি না, তাই রিস্ক একটু কম। সমস্যা হলো, আমি একটু কেয়ারলেস টাইপের মানুষ। তারপরেও চেষ্টা করছি। আপনিও সাবধানে থাকেন, আর সুস্থ্য থাকেন।

৭| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:১৯

আখেনাটেন বলেছেন: আপনার পত্থম পোস্টও পড়ে নিলুম। :D

আপনার এই ধরনের যাপিত জীবনের লেখাগুলো কিন্তু বেশ।

আমার ব্লগের প্রথম পোস্টে তো দাউদাউ করে আগুন লেগে গিয়েছিল। শেষে উত্তাপে পোড়াবাড়ি রেখেই পালিয়েছিলুম। :P

১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৪৮

ভুয়া মফিজ বলেছেন: আমার পত্থম পোষ্টে আপনার উপস্থিতি পোষ্টের মুল্য অনেকগুন বাড়িয়ে দিলো! :)
আপনার পত্থম পোষ্টে যাচ্ছি, দেখি পোড়াবাড়িতে খুজে পেতে কোন আলু পোড়া পাই কিনা!! =p~

৮| ২৩ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:৪৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: অসাধারণ সুন্দর একটা পোস্ট।

২৫ শে মে, ২০২০ ভোর ৬:৩১

ভুয়া মফিজ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ঈদ মোবারক!!! :)

৯| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১৩

ফয়সাল রকি বলেছেন: শুরু থেকেই ভূয়ামি করছেন তাহলে?
যাকগা, এটা কত সালের ঘটনা?

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৩৯

ভুয়া মফিজ বলেছেন: বিলাতি নদী দেখার অভিজ্ঞতায় ভুয়ামি পাইলেন কই? B-)

এটা কত সালের ঘটনা? এই প্রশ্নের উদ্দেশ্য কি? :P এটা সম্ভবতঃ ২০০১ সালের ঘটনা। :-B

১০| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার এ পোস্টটা পড়ছিলাম, আর প্রতিটি লাইন পড়ে মনে হচ্ছিল, এ পোস্ট আমি আগেও পড়েছি। সেরকমটিই হবার কথা, কারণ আমি সহব্লগারদের দুই একটা পোস্ট পড়ে পরিচিত হয়ে তাদের ব্লগবাড়ীতে গিয়ে প্রথম পোস্টটা পড়ে আসি। আর একটা পোস্ট পড়লে আমি সাধারণতঃ কিছু না বলে ফিরে আসি না। কিন্তু পোস্ট এবং মন্তব্য পড়তে পড়তে একেবারে নীচে এসেও আমার কোন মন্তব্য খুঁজে না পেয়ে কিছুটা অবাক হ'লাম। হয়তো মনের ভুলে কোন মন্তব্য না করেই অন্য কোথাও চলে গিয়েছিলাম। যাক গে সে কথা।
দেশে আমি যখনই মুক্ত, বিশুদ্ধ বাতাসের আশায় শহর ছেড়ে অনতিদূরে কোথাও যাই, সবখানেই যত্র তত্র ছড়ানো ছিটানো দেখতে পাই অসংখ্য প্লাস্টিক বোতল, পাত্র এবং পলিথিন ব্যাগ। এর থেকে যেন জাতির মুক্তি নেই। মাঝখানে পরিবেশবাদীদের তীব্র আন্দোলনের ফলে কিছুদিন বাজারে ও দোকানে পলিথিন ব্যাগ এর ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। এখনো হয়তো কাগজে কলমে আছে। কিন্তু কয়েক মাস পরেই অবস্থা আগের চেয়ে আরো বেশি খারাপ আকার ধারণ করে এবং দিন দিন তা অবনতির দিকেই যাচ্ছে। জানিনা, এর প্রতিকার কে, কিভাবে করবে!
ঘটনাটির কথা পড়ে আপনার মত আমারও মনটা খারাপ হয়ে গেল।
পোস্টে অষ্টম প্লাস + +।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:২৪

ভুয়া মফিজ বলেছেন: বাব্বাহ.........এই পোষ্টে আপনার উপস্থিতি!! খুবই সারপ্রাজড হলাম!!!

দেশে মুক্ত, বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া মানে তো হাতে স্বর্গ পাওয়া। জাতি যতোদিন সচেতন নেতৃত্ব না পাবে, ততোদিন এর থেকে মুক্তি নাই। অনেকেই জনগনকে দোষ দেয়। তবে, আমি দেই না। জনগনকে বাধ্য করার দায়িত্ব সরকারের। সেই দায়িত্ব তারা যতোদিন পালন না করবে, ততোদিন কিছুই হবে না।

আপনার মতো যারা বিদেশে আসেন, বেশকিছুদিন থাকেন, তাদের চোখে দেশের অসংগতিগুলো চোখে পড়বে খুব ভালোভাবে।

অসংখ্য ধন্যবাদ খায়রুল ভাই। :)

১১| ১৬ ই জুলাই, ২০২২ রাত ৯:০৪

মিরোরডডল বলেছেন:

এই পোষ্টে ড্রেনমার্কা নদীটার একটা ছবি দেয়া কিন্তু ফরজ ছিলো :)

১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:২৯

ভুয়া মফিজ বলেছেন: ড্রেনমার্কা নদীটার ছবি তুলি নাই। তখন ব্লগিংয়ের বিষয়টা মাথায় ছিল না। থাকলে অবশ্যই তুলতাম। B-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.