নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভুয়া মফিজ

ভুয়া মফিজের সাথে ভুয়ামি না করাই ভালো...

ভুয়া মফিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্নযাত্রা: ইটালী - ৫

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:২৩



স্বপ্নযাত্রা: ইটালী - ৪

আমার টিকেটে লেখা পিয়াজ্জা ফ্যালকন ই বরসেলিনো থেকে বাস ছাড়বে, বিকাল ৩:৪৫ এ। যাত্রীকে ১৫ মিনিট আগে বাসস্ট্যান্ডে পৌছানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ২০ মিনিট আগে এসেছি। এসে দেখি বাসস্ট্যান্ড ধু ধু করছে। না কোন বাস আছে, না কোন যাত্রী! আমার বাহন ফ্লিক্সবাসের কোন সাইনবোর্ডও নাই। টেনশানে পড়লাম, ভূল জায়গায় আসলাম না তো আবার! আশেপাশের পথচলতি ২/৩ জনকে জিজ্ঞেস করাতে বললো, এটা বাসস্ট্যান্ড কিন্তু তারা ফ্লিক্সবাসের নামও শোনে নাই। এদিকে ঘড়িতে সময় ৩:৫৫! ঘামতে শুরু করলাম। ৪:০০ টায় এক মহিলা আসলো ব্যাগসহ। জিজ্ঞেস করাতে বললো সেও রোম যাবে, ফ্লিক্সবাসেই, শুনে এতো শান্তি পেলাম যা বলার মতো না। ৪:০৭ এ বাস এলো অবশেষে। ব্যাটা ড্রাইভার বাস থেকে নেমে এমনভাবে সিগারেট ধরালো যেন সে আধাঘন্টা আগে চলে এসেছে! ইচ্ছা করছিলো ব্যাটাকে কষে এক চড় লাগাই।

রোমের তিবুরতিনা বাস স্টেশানে নামলাম সন্ধ্যাবেলা। এই সেই রোম যার প্রতাপে একসময় কাপতো সারা দুনিয়া। যে ব্রিটিশরা ২০০ বছর আমাদের শাসন করলো তদেরকেও এরা পরাধীন করে রেখেছিলো সাড়ে তিনশত বছরেরও বেশী (৪৩ - ৪১০ খ্রীষ্টাব্দ) সময়! রোমে নেমেছি একমাথায়, আর আমার হোটেল সম্পূর্ণ উল্টাদিকে আরেক মাথায়। বহু ঝামেলার পর যখন হোটেলে পৌছলাম তখন রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। ভাষাগত সমস্যা যে কতো বড় তা মাঝে মধ্যে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়!

পরদিন সকাল ৮টায় হোটেলের রেষ্টুরেন্টে নাস্তা করতে করতে ম্যাপ দেখলাম। রোমের প্রথমদিন। আজকের মূল প্রোগ্রাম হলো ভ্যাটিকান সিটি দেখা। রোমের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সম্মন্ধে ধারনা নেয়ার জন্য রিসেপসনিষ্টের সাথে আলাপ করলাম, সে আমাকে ’হপ অন হপ অফ’ বাসের এক লিফলেট ধরিয়ে দিল। পাবলিক ট্রান্সপোর্টের কথা বলাতে মুখ-চোখ বাকিয়ে এমন ভংগি করলো যেনো রোমের চেয়ে খারাপ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এই দুনিয়াতে নাই। বুঝলাম কমিশন লেনদেনের ব্যাপার আছে, তাই আর কথা না বাড়িয়ে বেড়িয়ে পড়লাম রোম দর্শনে।

রোমের একটা অদ্ভুদ ব্যাপার দেখলাম। এদের বাস-ট্রেনের টিকেট বিক্রি হয় গ্রোসারী শপ আর মদ-সিগারেটের দোকানে! কোন কোন স্টেশানে মেশিন বা কাউন্টারের ব্যাবস্থা আছে কিন্তু এটাই টিকেট কেনার সবচেয়ে সহজ উপায়। এক দেশী হকার ভাইএর সহায়তা নিয়ে ৭২ ঘন্টার ট্রাভেল কার্ড করে নিলাম। বাস-ট্রেনের টিকেটের আর কোন ঝামেলাই থাকলো না।

রোমের সাবওয়ে বা আন্ডারগ্রাউন্ড মূলতঃ দুই ভাগে বিভক্ত। লাইন এ (লাল) আর লাইন বি (সবুজ)। এই দুই লাইনের ব্যাপ্তি অনেকটা ইংরেজি এক্স অক্ষরের মতো যা পুরোটা রোমকে কাভার করেছে। এই দুই লাইন (অর্থাৎ এক্স এর দুই বাহু) যেখানে পরস্পরকে ছেদ করেছে সেটাই এদের মূল স্টেশান, টারমিনি।

লাল লাইন ধরে ওত্তাভিয়ানো স্টেশানে নামলাম। প্ল্যান ছিল প্রথমে ভ্যাটিকান সিটির মিউজিয়াম দেখবো। কপাল ভালো অনলাইনে এটার টিকেট করি নাই। দেখি ঢোকার বিশাল লাইন, বিশাল মানে বিশাল। লাইনের একমাথা থেকে আরেক মাথা দেখা যায় না। আমার মাথায় হাত, শুধু মিউজিয়াম দেখতেই তো একদিন লাগবে! আবার এক দেশী হকার ভাইএর শরনাপন্ন হলাম। রোমে ৩ দিন থাকবো শুনে উনি বললেন, তিনদিনে তো ভ্যাটিকান সিটিই দেখা যায় না, পুরা রোম কি দেখবেন? উনি পরামর্শ দিলেন, শুধুমাত্র সেইন্ট পিটারর্স ব্যাসিলিকা দেখে চলে যান, তাও দিনের অর্ধেকটাই চলে যাবে। ভ্যাটিকানে এর বেশী দেখতে চাইলে কোলোসিয়াম, রোমান ফোরাম আর রোম নগরী ঘোরা কোনোটাই ঠিকমতো হবে না। কি আর করা, অভিজ্ঞজনের কথা তো মানতেই হয়! ঢুকে পড়লাম ব্যাসিলিকার চত্বরে।

পুরা ইটালীতেই ব্যাসিলিকার ছড়াছড়ি। প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যে এর বিরাট গুরুত্ব ছিল। প্রাচীন রোমে ব্যাসিলিকা ছিল সরকারী ভবন যেখানে বিচার এবং অন্যান্য জনগন সম্পর্কিত কাজ পরিচালিত হতো। রোমান সাম্রাজ্যে খ্রীষ্টধর্ম চালু হবার পর রোমান সম্রাটরা এই ব্যাসিলিকার মডেলে চার্চ বানানো শুরু করে। পরবর্তীতে পোপ কিছু বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে কিছু চার্চের মর্যাদা বাড়িয়ে ব্যাসিলিকায় রুপান্তর করেন। সুতরাং বলা যায়, ’সকল ব্যাসিলিকাই চার্চ, কিন্তু সকল চার্চ ব্যাসিলিকা নয়।’ সেইন্ট পিটার ছিলেন প্রথম পোপ, উনার নামেই এর নামকরন। এর নির্মানকাজ শুরু হয় ১৫০৬ সালে আর শেষ হয় ১৬২৬ সালে।


ব্যাসিলিকার পথে ভ্যাটিকান সিটির এক ভবনের বহিরাংশে, খ্রীষ্টানদের প্রধান ধর্মীয় নগরীর ছাপ সর্বত্র।



সেইন্ট পিটার ব্যাসিলিকার প্রবেশপথ



পুরো ব্যাসিলিকা কমপ্লেক্স। আমার পক্ষে তো এই ছবি তোলা সম্ভব না, তাই নেট থেকে দিলাম। আসলে পুরো কমপ্লেক্স এভাবে না দেখলে এর নান্দনিক সৌন্দর্য পুরাপুরি বোঝা যায় না।



ব্যাসিলিকার মূল ভবন



কন্সট্যান্টাইন (ডানদিকের উইং এর নাম)। বাম উইং এর নাম শার্লেমেন (দুর থেকে দেখতে একই রকম, তাই আর ছবি দিলাম না)।



এই স্মারক স্তম্ভটি (ওবেলিস্ক) প্রস্তুত করা হয় মিশরে আর স্থাপন করা হয় কায়রোর কাছে হেলিওপোলিস এ যীশুখ্রীষ্টের জন্মেরও ২,৫০০ বছর আগে ফারাওদের আমলে। ৩০ খৃষ্টপূর্বাব্দে সম্রাট অগাষ্টাস এটিকে আলেক্সান্দ্রিয়ায় স্থানান্তর করেন। ৩৭ খৃষ্টাব্দে সম্রাট ক্যালিগুলা এটাকে রোমে নিয়ে আসেন। বহু ঘটনার পর ১৫৮৬ সালে পোপ ৫ম সিক্সটাস এটিকে বর্তমান স্থানে অধিষ্ঠিত করেন। এটিকে সেইন্ট পিটার এবং খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের আত্মত্যাগের স্মারক হিসাবে দেখা হয়।

প্রসঙ্গতঃ বলি, পিরামিড যুগের অতি প্রাচীন মিশরীয় সংস্কৃতির একটা অংশ ছিল এই স্মারক স্তম্ভ বা ওবেলিস্ক। বর্তমানে পৃথিবীতে মাত্র ২৮ টা ওবেলিস্ক দাড়িয়ে আছে যার মধ্যে ৬টা আছে মূলভূমি মিশরে। বাকী ২২ টার মধ্যে ১৩ টা রোমে এবং বাকিগুলি দাড়ানো লন্ডন, প্যারিস, নিউইয়র্ক এবং ইস্তান্বুলে। একটা দেশের প্রত্নতাত্বিক সম্পদ চুরি বা পাচারের এটা একটা অতি উজ্জল দৃষ্টান্ত!!!

মূল ভবনে ঢোকার জন্য এখানেও লম্বা লাইন। তবে ঘন্টা দেড়েক লাইনে দাড়িয়ে অবশেষে ঢুকতে পেরেছিলাম।



মূল ভবনের প্রবেশপথ। বর্শা হাতে প্রহরী (মেশিনগানের যুগে!!!) দাড়ানো।


ভিতরের ছবিগুলোর বর্ণনা আর দিলাম না। জাকজমকপূর্ণ কারুকাজ আর চাকচিক্যই মূল বিষয়!














তথ্য কিছু গুগলের, কিছু ওখানকার পরিচিতিমূলক পুস্তিকা এবং বোর্ডের, ছবি দু’টা নেট থেকে, বাকিগুলো আমার ক্যামেরা এবং ফোনের।

চলবে.........

স্বপ্নযাত্রা: ইটালী - ৬

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৪

যাযাবর চখা বলেছেন: ছবি, বর্ননা দুইটাই ভালো লাগলো। পরের পর্বের অপেখ্খায় থাকলাম।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৬

ভুয়া মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন।

২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৯

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: ভ্রমণ বিষয়ক পোস্ট সবসময়ই ভাল লাগে। সুন্দর বর্ণনায় আর ছবিতে প্লাস।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪১

ভুয়া মফিজ বলেছেন: আমার নেশা হলো ভ্রমন করা, কিন্তু পোষ্ট দেয়া কষ্টকর। বিশেষ করে ছবি আপলোড করা.... :(। তারপর যখন আপনাদের ভালো লাগে তখন পরের পোষ্ট দেয়ার উৎসাহ পাই।
ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন।

৩| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:১৪

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: আমি একদম উপরে উঠেছিলাম এটার ভিউর ছবি তুলতে।

আমরা ট্যুর কোম্পানির গাইডের সাথে গিয়েছিলাম তাই লাইন ধরতে হইনি।

এটার উপর একটা পোস্ট দিবো আমিও।

আপনি অনেক তথ্য দিয়ে লিখেন। আমি ফাঁকিবাজি করি।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫১

ভুয়া মফিজ বলেছেন: আসলে সময়ের অভাবে অনেককিছুই দেখা হয়নি, আর সব দেখা সম্ভবও না। ডোম থেকে ছবি তুললে শুধু উইং দুটা একসাথে ফোকাসে আসে, কিন্তু মূল ভবন বাদ পড়ে যায়। গাইড নেয়ার অনেক ভালো দিক আছে কিন্তু আমার এদের পিছনে পিছনে হাটতে ভালো লাগে না।
ফাঁকিবাজি না করে একটা তথ্যবহুল পোস্ট দেন, আমি নিশ্চিত দারুন পোস্ট হবে একটা। অপেক্ষায় থাকলাম। আর হ্যা, অনেক ধন্যবাদ।

৪| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:০১

সামিয়া বলেছেন: দারুন!! দারুন!!! অসাধারণ!!

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৫

ভুয়া মফিজ বলেছেন: আপনার মন্তব্য ছোট, কিন্তু দারুন উৎসাহ দেয়। অনেক ভালো থাকুন।

৫| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৬

নাঈম ০০৯ বলেছেন: ালো লাগল। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৩

ভুয়া মফিজ বলেছেন: বেশী দেরি হবে না আশা রাখি। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

৬| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:০৮

জুন বলেছেন: বহু পরিচিত তিবুরতিনার নাম শুনে মনটা কেমন করে উঠলো ভুয়া মফিজ । সারাদিন ধরে ঘুরে ঘুরে দেখে আসা ভ্যাটিক্যান আবার দেখে নিলাম । অপেক্ষায় রইলাম সিস্টিন চ্যাপেলের বর্ননা আর ছবি দেখার জন্য । তবে সেখানে আমাদের ছবি তুলতে দেয় নি :(
ভালোলাগা রইলো আপনার পোষ্টে ।
+

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:২৮

ভুয়া মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ আপা। আপনি যে কষ্ট করে আমার লেখা পড়েন....অনেক উৎসাহ পাই। সিস্টিন চ্যাপেলের ছবি দেখেছি কিন্তু যাওয়া হয়নি। সময়ের বড়ই অভাব ছিল.... :(

৭| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৪৭

ফয়সাল রকি বলেছেন: চমৎকার, চালিয়ে যান।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৪১

ভুয়া মফিজ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, আপনি কিন্তু সাথে সাথেই থাকবেন...... :)

৮| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩৩

কালীদাস বলেছেন: আহ ভ্যাটিকান সিটি! লম্বা লাইন থাকে মিউজিয়ামের টিকেটের জন্য সারাবছরই মনে হয়। অবশ্য টাকা থাকলে বাংলাদেশি ভাইবেরাদররা ঠিকই প্যাকেজের ব্যবস্হা করে দেয় B-)

শুধু ভ্যাটিকান দেখার জন্যও আসলে পুরা ১দিন কম হয়ে যায়। আমি যখন যাই তখন সেইন্ট পিটার ব্যাসিলিকার এক অংশে কাজ চলছিল, পুরোটা দেখতে পারিনি। যতদূর মনে পড়ে সিসটিন চ্যাপেলের ভেতরে ছবি তোলা নিষেধ, গার্ডরা কড়া পাহাড়াও দেয়। ট্যুরিস্টরা অবশ্য ঠিকই চুরি করে ছবি তুলছিল।

আপনি ছাদগুলোর ছবি তুলেছেন দেখে ভাল লাগল। আসলে জায়গাটার প্রত্যেকটা ইঞ্চি এতটাই আকর্ষণীয় যে ছাদের দিকে অনেকেই খেয়াল করে না। ছাদগুলো আসলেই ইন্টারেস্টিং।

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৪১

ভুয়া মফিজ বলেছেন: আমার সময় খুব কম ছিল........ :( । রোম দেখার জন্য পরিপূর্ণ তিনটা দিন। এই জন্য ভ্যাটিকান সিটিতে বেশী সময় দেইনি। আবার যাওয়ার ইচ্ছা আছে।
আমার দেখা বেস্ট্ ছাদচিত্র হচ্ছে প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামের, দেখেছেন নিশ্চয়ই! এতো সুন্দর আমি এখন পর্যন্ত আর কোথাও দেখিনি।
অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.