![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
আমেরিকা প্রবাসী আমার বড় বোনের প্রথম সন্তান হবে। এই ধরাধামে আমাদের পরের জেনারেশানের প্রথম সদস্যের আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে, আব্বা-আম্মা প্রথমবারের মতো নানা-নানী হতে যাচ্ছেন……...সবাই তুমুল উত্তেজিত। উনারা সিদ্ধান্ত নিলেন মেয়ের পাশে থাকার। মাস তিনেকের জন্য সেখানে যাবেন; শুনে আমি ডাবল উত্তেজিত। কারন আর কিছুই না। প্রথমবারের মতো লম্বা সময়ের জন্য অবাধ স্বাধীনতার সুগন্ধ পাচ্ছি। যখন খুশী বাসায় ফিরবো, যখন খুশী ঘুমাবো আর ঘুম থেকে উঠবো, যা ইচ্ছা তাই করবো……...বলার, শাসন করার কেউ থাকবে না।
আব্বা-আম্মা চলে যাওয়ার পরের প্রথম দুই সপ্তাহ কিভাবে কেটে গেল, উদ্দামতায় টেরই পেলাম না। তৃতীয় সপ্তাহ থেকে কেমন যেন লাগা শুরু হলো। এক মাস পার হওয়ার পর মন খারাপ করা শুরু হলো। আম্মার উপস্থিতি, রান্না, কথা……..এক কথায় সব কিছু মিস করতে লাগলাম। শুরু করলাম ঘ্যান ঘ্যান। টেলিফোনে যখনই কথা বলি, ইনিয়ে বিনিয়ে ঘুরে-ফিরে একটাই কথা, চলে আসেন। আমার বোন আমার উপরে ভয়ানক ক্ষেপে গেল। ও আম্মাকে আরো কিছুদিন থাকার জন্য রাজি করিয়ে ফেলেছিল, আমার অত্যাচারে আম্মা সেটা বাতিল করে দেশে ফিরলেন। আর সেবারই প্রথমবারের মতো আমার উপলব্ধি হলো, আম্মার অনুপস্থিতিতে আমার এই আপাতঃ অবাধ স্বাধীনতা একেবারেই রুপ-রস-বর্ণহীন, বিস্বাদ!
আম্মার অবস্থান আমার জীবনে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, এটা বলে বোঝানো যাবে না। তাই সেই চেষ্টা বাদ দিলাম। ''মায়ের আচল-ধরা ছেলে'' বলতে যা বোঝায়; বলতে দ্বিধা নাই, আমি ছিলাম অনেকটা তাই। শুধুমাত্র এই কারনেই প্রচুর সুযোগ থাকার পরেও বিদেশে স্থায়ী হওয়ার ইচ্ছা আমার কোন কালেই ছিল না। তাছাড়া দেশ ছেড়ে, প্রাণের শহর ঢাকাকে ছেড়ে অন্য কোথাও চিরদিনের জন্য স্থায়ী হবো, এটা আমি স্বপ্নেও ভাবতাম না কখনও। কিন্তু কথায় আছে না….মানুষ ভাবে একটা, ঘটনা ঘটে আরেকটা! বিয়ে, চাকুরী সবকিছু নিয়ে গুছিয়ে বসার পরেও জীবনের একটা পর্যায়ে এসে বিবিধ কারনে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হলাম। আমার আমেরিকা-কানাডাতে প্রচুর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব আছে, তুলনায় ইংল্যান্ডে বলতে গেলে তেমন কেউ নাই। তারপরেও ইংল্যান্ডে স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে সবচেয়ে বড় কারন ছিল.........দুরত্ব। প্রতি বছর আমাকে যে একবার দেশে আসতেই হবে!
২০১৬ এর দিকে আম্মার পার্কিনসন্স অসুখটা ধরা পড়লো। সম্ভবতঃ তার হাত ধরেই আস্তে আস্তে এগিয়ে এলো আলঝেইমার্স! আমি আম্মাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য বেশীরভাগ সময়ে না জানিয়েই দেশে উপস্থিত হতাম। ২০১৮তে দেশে গেলাম। আলঝেইমার্স আম্মাকে কতোটা ছোবল মেরেছে তার বাস্তবতা বুঝি নাই তখনও। আম্মার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। আমাকে পুরাই ভড়কে দিয়ে উনি বললেন, আস-সালামু আলাইকুম। কেমন আছেন? আপনারে তো চিনলাম না ঠিকমতো! আমি বললাম, আম্মা, আমি আপনের বড় ছেলে। চিনেন নাই? আমার কথা শুনে আম্মা মাথার ঘোমটা আরো খানিকটা টেনে নিয়ে কাছেই দাড়ানো কাজের মেয়েটাকে বললেন, দাড়ায়া আছিস কেন? বাসায় মেহমান আসছে। চা-নাস্তা দিতে হবে না!!! বসে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে হঠাৎ মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, তুই তো দেখি শুকায়ে গেছিস। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করিস না? বুঝতে পারলাম, উনার কগনিটিভ ফাংশান হঠাৎই এক্টিভ হয়েছে। এমনই অন-অফ পরিস্থিতি চলমান ছিল তখন।
দিনে দিনে আম্মার অবস্থার অবনতি হতেই থাকলো। ২০২০ এর জানুয়ারীতে আমরা সবাই দেশে জড়ো হলাম। আম্মার শরীর তখন বেশ খারাপ, কাউকেই চিনতে পারছেন না আর। এমনকি উনার সার্বক্ষণিক পরিচর্যার জন্য যে নার্স ছিল, তাকেও চিনতে পারছেন না। শরীর একদম শুকিয়ে কাঠ! একদিন রাত একটার দিকে বারান্দায় একা বসে আছি। আকাশ-পাতাল ভাবছি; ভাবছি, আম্মা কি আর কখনও আমাকে চিনতে পারবেন না! হঠাৎ কি হলো……..ভিতর থেকে অগ্নুৎপাতের মতো দলা পাকানো কান্না ছিটকে বেড়িয়ে এলো। থামানোর কোন সুযোগই পেলাম না। আমাকে শব্দ করে কাদতে শুনে আমার বউ পাশে এসে দাড়ালো। আমি কিছুটা লজ্জা পেয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলাম। দেখি, ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার কান্না বা চোখে পানি দেখা ওর জন্য একটা অচিন্তনীয় ব্যাপার! আসলে অবাক তো হওয়ারই কথা! কুমীর প্রজাতীর কারো চোখে পানি কে কবে দেখেছে!!!
প্রচন্ড রকমের মন খারাপ নিয়ে ফিরে এলাম ফেব্রুয়ারীতে। এরপরেই বিশ্বব্যাপী শুরু হয়ে গেল করোনা মহামারীর দাপট। বিশ্ব পরিস্থিতির অবণতির সাথে পাল্লা দিয়ে আম্মার শারীরিক অবস্থারও অবণতি ঘটতে থাকলো। এ'বছর দেশে আসার জন্য কয়েকবারই চেষ্টা করলাম। বাংলাদেশকে লাল তালিকায় রাখাসহ আরো কিছু কারনে বার বার পিছিয়ে গেলো আমার সে প্রচেষ্টা। অক্টোবরের ১৩ তারিখে খবর পেলাম, আম্মার শরীর খুবই খারাপ। দেশে আসার তোড়জোড়ের মধ্যেই খবর পেলাম, আম্মা আমাদেরকে ফেলে চিরদিনের জন্য চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে। মেজচাচা ফোন করে বললেন, তোমরা চাইলে তোমাদের না আসা পর্যন্ত আমরা দাফন পিছিয়ে দিতে পারি, তবে তাতে করে ভাবীর রুহ কষ্ট পাবে। সারাজীবন কতোভাবেই না আম্মাকে কষ্ট দিয়েছি; শেষবারের মতো আর দিতে মন চাইলো না। আমরা, ভাইবোনদের মিলিত সিদ্ধান্তে আর দেরী না করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
এই পোষ্টটা লেখার সময়ে মাথার মধ্যে মান্না দে'র ''কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই'' গানের ক'টা লাইন খুব যন্ত্রণা দিয়েছে।
একই সে বাগানে আজ
এসেছে নতুন কুড়ি;
শুধু সেই সেদিনের মালী নেই।
আমাদের ''পরিবার'' নামের বাগানটাতে নতুন কুড়ি অনেক এসেছে, কিন্তু বাগানের সৌন্দর্য বিকশিত করতো যেই মালী; হারিয়ে গিয়েছে চিরতরে। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা, আম্মার এই চিরনিদ্রা যেন শান্তির হয়। রাব্বির হাম-হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা: "হে আমার প্রতিপালক! আমার পিতা-মাতার প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।''
কিছু কথাঃ
দুই সপ্তাহের জন্য দেশ থেকে ঘুরে এসেছি। যেই উৎসাহ নিয়ে আগে দেশে যেতাম, সেটা আর নাই। দেশটা কেমন যেন ফাকা ফাকা। অন্য সময়ে দেশ থেকে ঘুরে এসে যেই উদ্দীপনার সাথে দৈনন্দিন জীবনে ঝাপিয়ে পড়তাম, সেটাও আর নাই। অফিসে যাই, বাসায় আসি; বেচে থাকার জন্য যতোটা করা দরকার, করি। এর বাইরে কিছু করতে মন চায় না। আমি যেন একটা রোবটে পরিণত হয়েছি। কোন কিছুতেই উৎসাহ পাই না। শরীরের কলকব্জাও কেমন যেন বিদ্রোহ করে আজকাল। আমার বউ আগে ব্লগিংয়ে সময় দিলে বাকাভাবে তাকাতো। সেই মানুষটাই আমাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়েছে, ব্লগে যা হোক কিছু একটা লিখে যেন পোষ্ট করি। কী-বোর্ডে হাত রাখতেই ইচ্ছা করে না এখন, তারপরেও সেই প্রতিজ্ঞা রাখতেই এই পোষ্ট। আপ্রাণ চেষ্টা করছি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার, তবে কবে নাগাদ সেটা সম্ভব হবে……….তাও জানি না।
আমার আম্মার জন্য দোয়া করবেন।
ছবিটা নেট থেকে নেয়া।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৫৫
ভুয়া মফিজ বলেছেন: ওটা কি ছানির অপারেশান ছিল? আপনার মা নিশ্চয়ই এখন ভালো আছেন। দোয়া করি উনি যেন সবসময়ে ভালো থাকেন।
আসলে প্রিয়জনদের যে কোনও সমস্যায় মন অস্থির হবেই। আর তিনি যদি মা হন তাহলে তো আর কোন কথাই নাই। আম্মাকে নিয়ে আমার কতোধরনের পরিকল্পনা যে ছিল........সেসব আর কোনদিন পূরন হবে না। অনেক ছোটখাটো ব্যাপারও এখন অনেক বড় মনে হয়। আমাদের সবার হাতেই আসলে সময় খুব কম। মা'কে নিয়ে আপনার মাথায় যখন যেটা আসবে, করে ফেলবেন। ছোটখাটো শখ গুলোও একসময়ে অনেক বড় হয়ে যায়।
২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৩০
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: পোস্ট পড়ে পড়বাম। আপনারে দেখে ভালো লাগলো। কতদিন পর আসলেন। ভালো থাকুন
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৫৫
ভুয়া মফিজ বলেছেন: ওকে।
৩| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৩১
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনাদের পরিবার সার্বিকভাবে সামর্থ পরিবার ছিলো, আপনার আম্মার জীবনটা সুখের ছিলো। উনার পারকিনসনস ধরা পড়ার পর, উনাকে লন্ডনে আপনার বাসায় রেখে, কিংবা আমেরিকায় বোনের বাসয় রেখে চিকিৎসা করার দরকার ছিলো।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৫৬
ভুয়া মফিজ বলেছেন: আপনার কিসে মনে হলো যে, আম্মার যেভাবে চিকিৎসা করা দরকার ছিল, তা করা হয়নি? ফর ইয়োর কাইন্ড ইনফরমেশান, আমার বড় বোন আমেরিকাতে একজন চিকিৎসক। আমার ৭ বছরের বড় যেহেতু, বুঝতেই পারছেন সে একজন সিনিয়র কনসালটেন্ট।
অগ্র-পশ্চাৎ না জেনে ফটাস করে একটা মন্তব্য করলেই হলো! পরিস্থিতি না বুঝেই একটা ইডিওটিক মন্তব্য করা কি খুব জরুরী?
৪| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৩২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মা ছাড়া জগৎ-সংসার বিরানভূমি।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৫৭
ভুয়া মফিজ বলেছেন: অত্যন্ত সত্যি কথা।
৫| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৩৩
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: বাবা মা হারানোর ক্ষত অপূরণীয়। কোনো কিছুতেই হাহাকার সর্বস্ব সে যন্ত্রণার নিরসন হওয়ার নয়। কাজেই সদ্য দেশে ঘুরে গিয়েও মনের মধ্যে বিরাজ করা সে যন্ত্রণার কারণে রোবটের মত হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। বিদেশ বিভূঁইয়ে থাকেন যতটা সম্ভব কাজের মধ্যে থাকার পরামর্শ দেব। ওনার জন্য দোয়া রইলো। ওনার মাগফিরাত কামনা করছি। দোয়া রইল পরিবারের বাকি সদস্যদের জন্যেও। এমপ্যাথিক্যালি সমবেদনা আপনার পরিবারের প্রতি।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৫৮
ভুয়া মফিজ বলেছেন: সব সময়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করছি। তারপরেও যখনই একা থাকি, আকাশ-পাতাল চিন্তা মাথায় ভর করে। মনকে এখনও গুছিয়ে উঠতে পারছি না। ভাবছি, আবার ব্লগিংয়ে সময় দেয়া শুরু করবো। তাতে যদি মনকে কিছুটা ডাইভার্ট করতে পারি! দেখি কতোটুকু হয়। যখনই সম্ভব হবে, আম্মার জন্য দোয়া করবেন।
পৃথিবীর সকল মায়েরা শান্তিতে থাকুন, যেখানেই থাকুন; এটাই কামনা।
৬| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৫৫
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: মা ছাড় আপনার পৃথিবীটা ধূসর হয়ে গেছে।
আল্লাহ ওনাকে বেহেশত নসিব করুন।
জানি এ কষ্ট বাড়বে বই কমবেনা কোন শান্তনায়। তবুও শোক কাটিয়ে উঠুক। ভাল থাকুন।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৪২
ভুয়া মফিজ বলেছেন: মা না থাকলে সন্তানের আর পৃথিবীতে কিই বা থাকে বলেন! সময়ের সাথে সাথে যে কোনও ক্ষতই আস্তে আস্তে সেরে উঠে, তবে কিছু ক্ষতের দাগ সারা জীবনই বহন করতে হয়।
আল্লাহ ওনাকে বেহেশত নসিব করুন। আমিন।
৭| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৩২
বাংলার এয়ানা বলেছেন: রাব্বিল হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৪২
ভুয়া মফিজ বলেছেন: রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা। আপনাকে ধন্যবাদ।
৮| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৪৫
ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: কি অবাক করা ভাবে সব কিছু মিলে যায়। আমিও দেশ ছাড়তে চাইনি। তবে ছেড়েছি। শেষ এক বুধবারে আম্মা কল দিলেন, কারণ তিনি শুনেছেন যে আমি নভেম্বরে দেশে যাবো। একেবারেই নতুন চাকরী, মাত্র ৩০দিন জয়েন করেছি; চাইলেইতো ছুটি নেওয়া যায় না।
ব্যস্ত ছিলাম প্রচন্ড, বাসায় ফিরে কথা বলবো ভেবেছিলাম। আমার ফ্রি হতে হতে দেশে অনেক রাত। পরদিনও চলে গেলো। ভাবলাম শুক্রবারে কথা হবে। আম্মা দেরী করে ঘুম থেকে উঠেন, তাই আর সকালে কল দেইনি। জুম্মার নামাজ পড়ে বাসায় ফিরে দেখি বাড়ি থেকে কয়েকটা কল এসেছে। কল ব্যাক করতেই জানলাম আম্মা নাই।
আম্মাকে কথা দিয়েছিলাম অনেক টাকা ইনকাম করে তাকে নিয়ে পুরো দেশ ঘুরে দেখাবো। সেই অনেক টাকা ইনকামের প্রথম ইনকামটা তার কাছে পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু আম্মা সেটা হাতে পাবার আগেই চলে গেলেন।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৪৩
ভুয়া মফিজ বলেছেন: সুখের বিষয়গুলো মিলে গেলে যেমন আনন্দ হয়; বেদনার বিষয়গুলো মিলে গেলে তেমনিভাবে বেদনা দীর্ঘায়িত হয়। আপনার আম্মাকে মহান রাব্বুল আলামীন বেহেশত নসীব করুন।
আপনার ইচ্ছা পূরণ হয়নি, এটার দুঃখ আপনাকে সারাজীবনই কষ্ট দিবে। আমারও কিছু শখ ছিল, যা পূরণ করতে পারি নাই। আসলে কিছু অপূর্ণতা জীবনে থাকবেই। এটাকে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ধরে নেয়া ছাড়া আর কিছুই করার নাই আমাদের।
৯| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৫৫
ঢাবিয়ান বলেছেন: রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা। মহান আল্লাহ এই শোক কাটিয়ে উঠার শক্তি দিক , এই দোয়াই রইল।
এই মহামারী যে আমাদের কত রকমের শিক্ষাই দিল। আমি কখনো ব্লগে শেয়ার করিনি । তবে আমিও আমার প্রানপ্রিয় পিতাকে এই মহামারীতে হারিয়েছি । করোনায় নয় উনার মৃত্যূ হয়েছে স্ট্রোকে। বর্ডার পুরোপুরি ক্লোজ থাকায় তখন দেশে যেতে পারিনি। প্রচন্ড কষ্ট বুকে পাথরের মত জমে আছে। এই নভেম্বরে বর্ডার ওপেন করেছে এখানকার সরকার। এখন যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। যে আনন্দ নিয়ে আগে দেশে যেতাম, সেটা একেবারেই আর নেই।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৪৪
ভুয়া মফিজ বলেছেন: পিতা-মাতা হচ্ছে আল্লাহর তরফ থেকে সবচেয়ে বড় নেয়ামত। আব্বাকে হারিয়েছি ২০১২ সালে। এবার আম্মাকে হারিয়ে একেবারেই এতিম হয়ে গেলাম। আসলে এটা তো অবশ্যম্ভাবী একটা ব্যাপার, তারপরেও মেনে নেয়া খুবই কষ্টকর। আল্লাহ'র এমনটাই সিদ্ধান্ত, আমাদের তো কিছু করার নাই। দেশে যাওয়ার আনন্দ এখন দীর্ঘশ্বাস হয়ে গিয়েছে।
আপনার আব্বাকে মহান রাব্বুল আলামীন বেহেশত নসীব করুন।
১০| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৫
ইসিয়াক বলেছেন:
কিছুই বলার নেই। কি বলবো কোন ভাষা পাচ্ছি না যে।
আপনাকে বেশ অনেকদিন ব্লগে না দেখে কেন যেন মনে হচ্ছিল কোন সমস্যা হয়নি তো!
#অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আপনার মায়ের জন্য দোয়া রইলো প্রিয় ব্লগার । আল্লাহ আপনার মা"কে জান্নাত নসীব করুন এই কামনা করি।
রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানী সাগীরা।
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৪৫
ভুয়া মফিজ বলেছেন: চেষ্টা করছি আবার ব্লগিংটা শুরু করতে। দেখা যাক, মনকে সুস্থির করে কতোদূর পারি।
আল্লাহ আপনার মা'কে জান্নাত নসীব করুন এই কামনা করি। আমীন।
১১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৬
জুল ভার্ন বলেছেন: রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা।
আমার জীবনে সব চাইতে দুর্বলতা হচ্ছে মা! আমার জন্ম দিন মানেই আমার মায়ের মৃত্যু দিবস। সন্তান হিসেবে এই গ্লানি আমাকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছেএবং আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।
২২ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৫
ভুয়া মফিজ বলেছেন: আপনার মন্তব্য পড়ে খুবই ব্যথিত হলাম ভাইজান। প্রতিটা মানুষের জীবনেই কমবেশী কিছু কিছু কষ্টকর ব্যাপার থাকে, যার বিপরীতে কোন সান্তনামূলক কথাই যথেষ্ট না।
১২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৩৪
নেওয়াজ আলি বলেছেন: মায়ের মত আপন কেউ নেই এই জগত সংসারে। সন্তানদের এত ভালোবাসার জিনিস আল্লাহ অবশ্যই ভালো রাখবেন
২২ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৬
ভুয়া মফিজ বলেছেন: সন্তানদের এত ভালোবাসার জিনিস আল্লাহ অবশ্যই ভালো রাখবেন আমীন।
১৩| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি পড়ে ব্যত্থিত হলাম।
ভালো থাকুন। শুভ কামনা।
২২ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৭
ভুয়া মফিজ বলেছেন: সহমর্মিতার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
১৪| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:১৩
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
সংবাদটি শুনে ব্যথিত হলাম ।
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা।
মহান আল্লাহ এই শোক কাটিয়ে উঠার শক্তি দিন,
পরিবারের সকলের প্রতি রইর সহমর্মিতা ।
২২ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৭
ভুয়া মফিজ বলেছেন: সহমর্মিতার জন্য ধন্যবাদ আলীভাই। সময়ের সাথে সাথে পাহাড়সমান শোকও একসময়ে ফিকে হয়ে যায়, তবে মাঝের এই সময়টুকু পার করাই কষ্টকর। দোয়া করবেন।
১৫| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:২০
কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: অনেক কষ্ট লাগলো ভাইয়া। যেভাবে লিখেছো তাতে বুঝাই যাচ্ছে এই কষ্ট সহ্য করা কতখানি কষ্টের ছিলো তোমার কাছে।
মা ভালো থাকুন না ফেরার দেশে। নিশ্চয় ভালো আছেন। উনার জন্য অন্তর থেকে থেকে দোয়া রইলো।
২২ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৮
ভুয়া মফিজ বলেছেন: এই কষ্ট সহ্য করা খুবই কঠিন। তারপরেও সময় একটা বড় ফ্যাক্টর। আমি জানি, আমিও একসময়ে স্বাভাবিক হয়ে যাবো আবার আগের মতোই! তারপরেও যতোদিন বেচে থাকবো, কিছু কিছু বিশেষ দিনে, বিশেষ সময়ে এই কষ্ট আমার পিছু ছাড়বে না।
আম্মা ভালো থাকুন ওপারে। দোয়া ছাড়া এখান থেকে পাঠানোর মতো আর কিছুই বাকী নাই এখন।
১৬| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৭:২২
সোহানী বলেছেন: মনটা খারাপ হয়ে গেল।
যে কোন বিষয়ই আমি সহজেই লিখতে পারি কিন্তু মা'কে নিয়ে কোনভাবেই লিখতে পারি না। অনেকভাবে চেস্টা করেছি কিন্তু কিছুদূর লিখার পর আর এগোতে পারি না। আমার মা আমার কাছে কি ছিল তা বলে বোঝাতে পারবো না। এখনো আমি প্রতি মূহুর্তে তাঁকে অনুভব করি।
আমিও পারিনি শেষ সময়ে যেতে এমনই দূর্ভাগ্য আমার। মা'কে দেখতে যাবো বলে তাড়াতাড়ি পার্সপোট রিনিউ করতে দিলাম। কিন্তু সে পার্সপোস্ট আসতে আসতেই সব শেষ।
মা'রা সবসময়ই ভালো থাকুক. এপারে কিংবা ওপারে।
২২ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:১৭
ভুয়া মফিজ বলেছেন: প্রিয়জনদেরকে নিয়ে কষ্টের কথা লেখা সহজ কোন ব্যাপার না। আমি কিভাবে কোন রকমের মানসিক প্রস্তুতি ছাড়া এটা লিখলাম.....নিজেও জানি না। শুনেছি প্রিয়জনদের সাথে আনন্দ শেয়ার করলে বাড়ে, কষ্ট শেয়ার করলে কমে; সম্ভবতঃ সেখান থেকেই আমার এই প্রয়াস। সামু আর এর সদস্যদেরকে আমি আমারই আরেকটা বৃহৎ পরিবার বলে মনে করি।
আপনার মাকে আল্লাহ জান্নাত নসীব করুন।
মা'রা সবসময়ই ভালো থাকুক. এপারে কিংবা ওপারে। সকল মায়েদের জন্য দোয়া রইলো।
১৭| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৭:৪২
স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: আপনার মায়ের মাগফিরাত কামনা করছি।
আপনার মতোই আমার অবস্থা হয়েছিল আমার বাবাকে নিয়ে। আমার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেও তাকে প্রবাসে নিয়ে আসতে পারি নি ইমিগ্রেশনের নানান জটিলতার কারণে। আমার সে সময়ে সেই যোগ্যতা ছিল না। আপনার মায়ের ইন্তেকালের পর যেমন আপনার মেজো চাচা রুহের কষ্টের উল্লেখ করে তাড়াতাড়ি দাফনের জন্য বলেছিলেন ঠিক একইভাবে আমার বাবার মৃত্যুর পর আমার চাচাতো ভাই ঠিক একই কথা বলে আমার সম্মতি নিয়ে বাবাকে দাফন করে। আমরা প্রবাসে কত অসহায় সেটা এই ধরণের সংকটের সময়েই খুব অনুভব করতে পারি।
দোয়া করি আমাদের সকলেরই প্রয়াত আমাদের পিতামাতারা ভালো থাকুক - ওপারে।
২২ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:১৮
ভুয়া মফিজ বলেছেন: মহান আল্লাহ আপনার বাবাকে ওপাড়ে শান্তিতে রাখুন, এই দোয়াই করি।
প্রবাসে আমাদের নানারকমের সমস্যা থাকে, এটা ঠিক। তবে আল্লাহ না চাইলে দেশে থেকেও বাবা-মায়ের পাশে শেষ মূহুর্তে অনেকের পক্ষে উপস্থিত থাকা সম্ভব হয়ে উঠে না। এটাই বাস্তবতা।
১৮| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৪৪
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা
আল্লাহ আপনার আম্মাকে জান্নাতে স্থান দিন। আর আপনাকে শোক সইবার তৌফিক দান করুন।
ভালো থাকুন ফি আমানিল্লাহ
২২ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:১৯
ভুয়া মফিজ বলেছেন: আল্লাহ আপনার আম্মাকে জান্নাতে স্থান দিন। আর আপনাকে শোক সইবার তৌফিক দান করুন। আমীন।
১৯| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:১৩
নীল আকাশ বলেছেন: রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা। আল্লাহ উনাকে বেহেস্ত নসীব করুন।
বাবা মা মারা যাবার পর সন্তানদের আরো কিছু দায়িত্ব রয়ে যায়। আশা করছি সেই পরবর্তি দায়িত্বগুলিও আপনারা যথাযথভাবে পালন করবেন।
কেউ মারা যাবার পর বেশিক্ষণ জানাজা না দেয়া কিংবা কবর না দেয়ার বিধান ইসলামে নেই। আপনার মেঝচাচা সঠিক কথা বলেছেন এবং আপনারাও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ধন্যবাদ।
২২ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:১৯
ভুয়া মফিজ বলেছেন: আল্লাহ উনাকে বেহেস্ত নসীব করুন। আমীন।
কনভেনশনাল দায়িত্বগুলোর বাইরেও আমার কিছু পরিকল্পনা আছে। আল্লাহ সহায় থাকলে সেগুলো সময় সুযোগ মতো বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা আছে। দেখা যাক, কতোটুকু তৌফিক আল্লাহ দেন।
২০| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৩৯
আহমেদ জী এস বলেছেন: ভুয়া মফিজ ,
আলোচিত ব্লগের তালিকায় আপনার নামটি দেখে স্বস্তির সাথে লগইন করলুম। কিন্তু আপনার মা'য়ের তিরোধানের খবরটি সে স্বস্তিকে মুছে দিয়ে মনটাকে ভারাক্রান্ত করে গেলো। আপনার এমন কষ্টের সমব্যথী।
সময় ভুলিয়ে দিক আপনার সব কষ্ট!
সৃষ্টিকর্তা আপনার মা'কে জান্নাতবাসী করুন, এই প্রার্থনা রইলো।
২২ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:২০
ভুয়া মফিজ বলেছেন: চিরায়ত নিয়মেই প্রকৃতি এক সময়ে সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয় জী এস ভাই, কিন্তু আসলেই কি পুরোপুরি পারে? আমরা স্বাভাবিক আচরণ করি ঠিকই, কিন্তু মনের কোনে একটা কষ্টের আবহ রয়েই যায়; বহন করতে হয় আজীবন।
সৃষ্টিকর্তা আপনার মা'কে জান্নাতবাসী করুন, এই প্রার্থনা রইলো। আমীন।
২১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৮
জাদিদ বলেছেন: প্রিয় ভাই, আল্লাহ খালাম্মাকে জান্নাত নসীব করুন, আমীন। মা হারানোর ব্যাথায় আমি কিভাবে সান্তনা দিবো আমার জানা নেই। আমিও অক্টোবর মাসের ২২ তারিখে বাবাকে হারিয়েছি। ২১ তারিখ রাতেও বাবার সাথে কথা হয়েছে, দুস্টামি হয়েছে। এমন কি তিনি মারা যাওয়ার ১০ মিনিট আগেও আমাদের সাথে খুনসুটি করেছেন। তারপর সব শেষ। আমি প্রচন্ড মানসিক ট্রমায় আছি। কিন্তু ব্যাপারটা প্রকাশযোগ্য না।
আল্লাহ আপনার পরিবারের সবাইকে হেফাজতে রাখুক।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৩৭
ভুয়া মফিজ বলেছেন: লেখক বলেছেন: মা আর বাবা.......প্রতিটা সন্তানের জন্য দু'টা পরম আশ্রয়স্থল জাদিদভাই। আপনি আমাকে আর কি সান্তনা দিবেন, আমি আপনাকে কি বলে সান্তনা দিব সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না। ''সময়'' ছাড়া এই দুই আশ্রয়স্থল হারানোর ব্যথা উপশমের আর কোনও উপায় আমার জানা নাই। সময়ই আপনাকে, আমাকে এই ট্রমা থেকে মুক্তি দেয়ার ক্ষমতা রাখে।
পৃথিবীর সকল বাবা-মা ওপারে শান্তিতে থাকুক, এটাই আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।
২২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:০৩
নতুন নকিব বলেছেন:
প্রিয় ভাই,
অনেক দিন পরে আপনার পোস্ট দেখে প্রথমে আনন্দ নিয়েই লগ ইন করেছিলাম কিন্তু পোস্টটি পাঠ করে ব্যথিত হলাম। অশ্রুস্কিত হলাম। নিজের সাথে কিছু স্মৃতি মিলে যাওয়ায় হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো আবার যেন হাতড়ে এলাম।
إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ
পিতা মাতার জন্য বিশেষ একটি দোয়া-
رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
উচ্চারণ : ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’
অর্থ : (হে আমাদের) পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর; যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন।’ -সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৪
ক্ষনিকের এই পৃথিবীতে স্থায়ী আমরা কেউ নই। প্রতিটি মানুষ এবং প্রাণি নির্ধারিত সময়ে স্বল্পক্ষণের এ দুনিয়াকে বিদায় জানায়। প্রতিটি জীবর জন্ম হওয়া মানে, মৃত্যু তার সামনে অবধারিত। কবি সুন্দর বলেছেন, ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে’। এটাই প্রতিটি প্রাণির অনিবার্য নিয়তি ও অমোঘ পরিণতি। চিরঞ্জীব ও চিরন্তন কেবল মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা। বাকি সবকিছুই ধ্বংসশীল। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,
وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّن قَبْلِكَ الْخُلْدَ ۖ أَفَإِن مِّتَّ فَهُمُ الْخَالِدُونَ كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَنَبْلُوكُم بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً ۖ وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ
‘তোমার পূর্বেও কোনো মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে? প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং তোমরা আমার কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে’ -সূরা আম্বিয়া : আয়াত ৩৪-৩৫
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۖ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ ۗ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ
‘প্রত্যেক প্রাণিকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর কেয়ামতের দিন তোমাদের পরিপূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে। তারপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়।’ -সুরা আল ইমরান, আয়াত : ১৮৫
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ ۗ وَإِن تُصِبْهُمْ حَسَنَةٌ يَقُولُوا هَـٰذِهِ مِنْ عِندِ اللَّهِ ۖ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَقُولُوا هَـٰذِهِ مِنْ عِندِكَ ۚ قُلْ كُلٌّ مِّنْ عِندِ اللَّهِ ۖ فَمَالِ هَـٰؤُلَاءِ الْقَوْمِ لَا يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ حَدِيثًا
তোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও। বস্তুতঃ তাদের কোন কল্যাণ সাধিত হলে তারা বলে যে, এটা সাধিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যদি তাদের কোন অকল্যাণ হয়, তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে, বলে দাও, এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। পক্ষান্তরে তাদের পরিণতি কি হবে, যারা কখনও কোন কথা বুঝতে চেষ্টা করে না। -সুরা আন নিসা, আয়াত : ৭৮
মৃতদের জন্য দোয়া-মাগফিরাত করা আমাদের করণীয়:
আত্মীয়-স্বজন, আপনজন কিংবা কাছের ও পরিচিত যে কারও মৃত্যু হতে পারে। আর এসব অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই হৃদয় মন ভারাক্রান্ত থাকে। বিচ্ছেদ-কষ্টে ব্যথাতুর হয় অন্তর। তাদের জন্য উত্তম ও কল্যাণকর কিছু করার প্রবল ইচ্ছা জন্ম নেয় মনে। এমন অবস্থায় আমাদের উচিত তাদের জন্য অধিক পরিমানে দোয়া ও মাগফিরাত কামনা করা।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহর নবী ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দোয়া বর্ণিত হয়েছে,
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
‘হে আমার প্রতিপালক! যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সব ঈমানদারকে ক্ষমা করুন।’ -সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪১
অন্য জায়গায় নূহ আলাইহিস সালামের এ দুআ বর্ণিত হয়েছে,
رَّبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلَّا تَبَارًا
‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার পিতা-মাতাকেও এবং যে ঈমান অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে আর সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকেও।’ -সুরা নুহ, আয়াত : ২৮
সূরা হাশরে বর্ণিত হয়েছে-
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
‘রাব্বানাগফিরলানা ওয়া লি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা ছাবকুনা বিল ইমানি ওয়া লা তাঝআল ফি কুলুবিনা গিল্লাল লিল্লাজিনা আমানু রাব্বানা ইন্নাকা রাউফুর রাহিম।’ -সুরা হাশর : আয়াত ১০
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা কর এবং আমাদের সেসব ভাইকেও ক্ষমা কর যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে আর মুমিনদের প্রতি আমাদের হৃদয়ে কোনো বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় তুমি অতি স্নেহশীল ও পরম করুণাময়।’
আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةِ أَشْيَاءَ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ ” .
‘যখন মানুষ মারা যায় তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমলের ফায়দা ভোগ করে—সদকায়ে জারিয়া; এমন জ্ঞান, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং ওই সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। ’ -মুসলিম, হাদিস নং : ১৬৩১
মৃত ব্যক্তির জন্য রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে দোয়া করতেন:
রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে দোয়া করতেন, তার কয়েকটি দোয়া এখানে উল্লেখ করছি। কবরস্থ ব্যক্তির জন্য নিম্নোক্ত দোয়াটি করা বিধেয়-
اللهُـمِّ اغْفِـرْ لَهُ وَارْحَمْـه، وَعافِهِ وَاعْفُ عَنْـه ، وَأَكْـرِمْ نُزُلَـه ، وَوَسِّـعْ مُدْخَـلَه ، وَاغْسِلْـهُ بِالْمـاءِ وَالثَّـلْجِ وَالْبَـرَدْ ، وَنَقِّـهِ مِنَ الْخطـايا كَما نَـقّيْتَ الـثَّوْبُ الأَبْيَـضُ مِنَ الدَّنَـسْ ، وَأَبْـدِلْهُ داراً خَـيْراً مِنْ دارِه ، وَأَهْلاً خَـيْراً مِنْ أَهْلِـه ، وَزَوْجَـاً خَـيْراً مِنْ زَوْجِه، وَأَدْخِـلْهُ الْجَـنَّة ، وَأَعِـذْهُ مِنْ عَذابِ القَـبْر وَعَذابِ النّـار
উচ্চারণ : আল্লাহহুম্মাগ ফিরলাহু ওয়ারহামহু, ওয়া আফিহি ওয়া ফু আনহু; ওয়া আকরিম নুযুলাহু, ওয়া ওয়াসসি মাদখালাহু; ওয়াগসিলহু বিল মায়ি ওয়াস সালজি ওয়াল বারাদি, ওয়ানাক্কিহি মিনাল খাতা-ইয়া কামা ইউননাককাস সাওবুল আব ইয়াযু মিনাদদানাসি; ওয়াবদিলহু দা-রান খায়রান মিন দারিহি, ওয়া আহলান খাইরান মিন আহলিহি; ওয়া যাওজান খাইরান মিন যাওজিহি। ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা, ওয়া আইজহু মিন আযাবিল কাবরি ওয়ামিন আযাবিন নার।
অর্থ : হে আল্লাহ্, তাকে ক্ষমা করুন এবং তাকে দয়া করুন। শান্তিতে রাখুন এবং তার থাকার স্থানটিকে মর্যাদাশীল করুন। তার কবর প্রশস্থ করে দিন। বরফ ও তুষারের শুভ্রতা দিয়ে, তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিচ্ছন্ন করে দিন— যেমন ময়লা থেকে সাদা কাপড় পরিষ্কার হয়। তাকে দুনিয়ার বাসস্থানের চেয়ে উত্তম বাসস্থান, পরিবার ও সঙ্গী দান করুন, হে মাবুদ, তাকে জান্নাতে দাখিল করুন, তাকে কবর আর দোজখের আজাব থেকে রক্ষা করুণ। -মুসলিম, হাদিস : ২/৬৩৪
প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবি আওফ বিন ইবন মালিক (রা.) বলেন, আমি রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মৃত ব্যক্তির জন্য এমন দোয়া করতে দেখে— আকাঙ্ক্ষা করেছিলাম যে, যদি সেই মৃত ব্যক্তিটি আমি হতাম।’
রাসুলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবর জিয়ারত করে এভাবে দোয়া করতেন বলে হাদিসে এসেছে—
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالْأَثَرِ
উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর, ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম; আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আসারি।
অর্থ : হে কবরস্থানের বাসিন্দাগণ, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। আমরাও আপনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করব/আপনাদের সঙ্গে মিলিত হব।’ -মুসলিম, হাদিস : ৯৭৪; মুসলিম, মিশকাত হাদিস : ১৭৬৭
পরিশেষে আপনার আম্মার জন্য দোয়া করছি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাকে জান্নাতবাসী হিসেবে কবুল করুন। আপনাদের পরিবারের আপনজন সকলকে উত্তম সবর এখতিয়ার করার তাওফিক প্রদান করুন।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৩৮
ভুয়া মফিজ বলেছেন: আপনার বিস্তারিত মন্তব্যটা খুবই ভালো লাগলো নকিবভাই। এমন একটা কিছুই মনে মনে খুজছিলাম। কৃতজ্ঞতা জানবেন।
পরিশেষে আপনার আম্মার জন্য দোয়া করছি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাকে জান্নাতবাসী হিসেবে কবুল করুন। আপনাদের পরিবারের আপনজন সকলকে উত্তম সবর এখতিয়ার করার তাওফিক প্রদান করুন। আমীন।
২৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:১০
মরুর পথে বলেছেন: ভাইয়া আপনার লেখাটা পড়ে কেঁদে ফেললাম। আমার মাও আমাকে মাঝে মাঝে চিনতে পারেন না। উনিও অসুস্থ্য। আল্লাহ আপনার মাকে জান্নাত দান করেন, আমিন।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৩৯
ভুয়া মফিজ বলেছেন: মা যখন সন্তানকে অসুস্থতার কারনে চিনতে পারেন না, সন্তানের জন্য এটা একটা চরম কষ্টের সময়। আপনার মায়ের জন্য দোয়া রইলো। মহান আল্লাহ উনাকে সুস্থতা দান করুন। উনি যেন আবার আগের পর্যায়ে ফিরে আসেন কায়মনোবাক্যে সেই দোয়াই করছি আল্লাহর দরবারে।
২৪| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫০
কল্পদ্রুম বলেছেন: আলঝেইমার্সের অংশটা পড়ে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। বড় একটা স্থায়ী শূন্যতা তৈরি হয়ে গেলো আপনার জীবনে।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৪০
ভুয়া মফিজ বলেছেন: সব শুন্যতাই প্রকৃতি এক সময়ে ভরাট করে দেয়। আসলেই কি দেয়? কি জানি! দোয়া করবেন।
২৫| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৩১
সাজিদ! বলেছেন: খুবই খারাপ লাগলো। আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুন। আমিন।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৪০
ভুয়া মফিজ বলেছেন: এটাই এখন একমাত্র চাওয়া।
২৬| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:০০
মিরোরডডল বলেছেন:
শিরোনাম দেখে আর প্রথম প্যারা পড়েই বুঝতে পেরেছি ।
প্রিয়জন হারানো, তাও আবার মাকে হারানো এটা অসহনীয় কষ্ট ।
আমার প্রিয় ভুম, হাসিখুশি প্রাণবন্ত ভুমের বুকের ভেতর যে কি ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,
এটা ভাবতেই আমার অনেক খারাপ লাগছে ।
প্রিয় মানুষদের কষ্ট নিতে পারিনা ।
আই ক্যান ফিল ইউ ভুম ।
একসময় মনে হতো মানুষ কি করে বেঁচে থাকে, কাছের প্রিয় মানুষ যখন চিরতরে চলে যায় ।
যখন জীবন থেকে এক এক করে কাছের মানুষগুলো চলে গেলো, তখন বুঝেছি এ কষ্ট কেমন !
দীর্ঘদিন ট্রমার মাঝে ছিলাম । ভ্যালিয়ামের ওপরেই থাকতাম । সেটাও একসময় কাজ হচ্ছিলো না ।
ডক্টর মরফিন দিলো, সেটাতেও কাজ হয়না । কি দুঃসহ কষ্ট রাতের পর রাত !
But you know what ? time.
Time heals everything.
আমারও করেছে, ভুমেরও করবে ।
সময়ের সাথে বুকের ওপর থেকে এই চাপা কষ্টের ভার একসময় নেমে যাবে ।
সবাইকে চলে যেতে হয় । এটাই নির্মম বাস্তবতা ।
মায়ের জন্য অনেক শ্রদ্ধা ।
আর প্রিয় ভুমের জন্য অনেক ভালোবাসা আর সহমর্মিতা ।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১৬
ভুয়া মফিজ বলেছেন: প্রিয়জন হারানোর কষ্ট একমাত্র যারা হারিয়েছে তারাই বুঝতে পারে, যেভাবে মিড বুঝতে পারছে।
সময় কি আসলেই সব ক্ষত সারিয়ে তোলে? আমার মনে হয় না। বাস্তবতার খাতিরে আমরা হয়তো স্বাভাবিক আচরণ করি, এক সময়ে আবার হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠি, কিন্তু মনের সঙ্গোপনে কষ্টটা রয়েই যায়। সময়ে সময়ে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বুকের ভিতরে আত্মগোপন করে থাকা সেই কষ্টের কোন ব্যাখ্যা এই পৃথিবীতে নাই। পৃথিবীর গভীরতম স্থানেও আছে কিনা, আমার জানা নাই।
অন্যসময়ে এই ধরনের কোন মন্তব্য কিংবা প্রতি-মন্তব্য পড়লে আমি হয়তো হেসে ফেলতাম, ভাবতাম, আহা......কি আবেগময় লেখা! অথচ আজ আমার ভিতর থেকেই এই কথাগুলো বের হয়ে আসলো; কোন রকমের সংকোচ ছাড়াই। সময়-পরিস্থিতি মানুষকে কিভাবেই না বদলে দেয়! আশ্চর্য!!
আমিও প্রিয়জনদের কষ্ট দেখতে পারি না, আরও যেটা পারি না.........সেটা হলো কোন যথাযথ সান্তনার ভাষায় কথা বলা। আমার একান্তই ব্যর্থতা। সময় আমার এই কষ্ট দূর করে দিবে, নিশ্চয়ই দিবে। তখন হয়তো বা এই আমিই আবার কোন কোন সময়ে অনূশোচনায় ভুগবো যে, কিভাবে পারলাম সব ভুলে যেতে? তারপরেও আমাদেরকে স্বাভাবিকতার অভিনয় করতেই হবে। কারন এটাই আমাদের কাছে বাস্তবতা!!!
২৭| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৭
অর্ক বলেছেন: সাম্প্রতিক পুরনো লেখা ঘাঁটতে গিয়ে, চার পাঁচ বছর আগের আগের দুয়েকটা পোস্টে আপনার মন্তব্য দেখে কিঞ্চিৎ বিস্মিত হয়েছি। পরবর্তীতে যে কোনও কারণেই হোক আর মন্তব্য করেননি। যেমন আমার নিজেরও কখনও আপনার পোস্ট পড়া বা মন্তব্য করা হয়নি। সেটাই কারণ হয়ে থাকবে পরবর্তী মন্তব্যহীনতার। এটা অস্বাস্থ্যকর নয় কিছুতেই। আমি নিজেও এর বাইরে নই। এরপর আবার যখন তিন বছর বিরতি দিয়ে নতুন কিছু লিখলাম, সেখানেও আপনি মন্তব্য করেছেন। ছবি ব্লগ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহ দিয়েছেন। তখন থেকেই ভাবছিলাম যে, আপনার লেখায় একটা মন্তব্য করবোই করবো। মজার ব্যাপার হলো, ভাবতে ভাবতেও আর মন্তব্য করা হয়ে ওঠেনি। আপনার পোস্ট বেশ দীর্ঘ হয়। আমি এসময় মূলত কবিতা চর্চার কারণে দীর্ঘ গদ্য লেখা তেমন পড়ি না। সে যাই হোক এই প্রথম আপনার পুরো লেখা পড়লাম। এখন মন্তব্য করছি।
লেখাটি দুঃখদায়ক নিঃসন্দেহে। মৃত্যুর থেকেও বেশি আপনার মায়ের অসুখ ও অসুস্থতার সময়কার ঘটনাগুলো। ওরকম আপনজনের মৃত্যুর শূন্যতা আসলে কখনও পূরণ হয় না। একসময়ের দারুণ একজন জনপ্রিয় অভিনেতা খালেদ খানের একটি কথা মনে পড়ছে, “মানুষকে কোথাও না কোথাও থামতে হয়।” দীর্ঘদিন পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচেছিলেন। একবার এক সাক্ষাত্কারে সাংবাদিককে বলতে দেখেছিলাম যে, “আমি এখনও নিজের মাঝে ভীষণভাবে অনুভব করি যে, আমি এখনও পারবো, আবার আগের মতো অভিনয় করতে।” খালেদ খানকে একবার শিল্পকলা একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম, আশ্চর্য প্রাণ শক্তিতে ভরপুর সতেজ নির্মল একজন মানুষ।
শুভকামনা থাকলো। শোক কাটিয়ে শীঘ্রই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১২
ভুয়া মফিজ বলেছেন: আপনি যেমন দীর্ঘ গদ্য লেখা পড়েন না, আমিও তেমনি কবিতা পড়ি না। সম্ভবতঃ সেজন্যেই আমাদের মধ্যে ইন্টারএকশান কম হয়। কোন ব্যাপার না। খালেদ খান আমার অন্যতম প্রিয় অভিনেতা ছিলেন। একজন ভার্সেটাইল শক্তিমান অভিনেতাকে আমরা হারিয়েছি।
আপনজনের মৃত্যুর শূন্যতা আসলে কখনও পূরণ হয় না। সঠিক বলেছেন। এটাই বাস্তবতা।
শুভকামনা আর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
২৮| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৫৭
জটিল ভাই বলেছেন:
আল্লাহ্ সহায় হোন। (এর বেশি বলার ভাষা পাচ্ছি না)
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১৩
ভুয়া মফিজ বলেছেন: সহমর্মিতা প্রকাশের জন্য সব সময়ে ভাষার প্রয়োজন নাই।
২৯| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৪২
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১৪
ভুয়া মফিজ বলেছেন: নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।
৩০| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৩৪
মনিরা সুলতানা বলেছেন: ইন্নালিল্লাহে ও ইন্না ইলাইহে রাজিউন !
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা। মহান আল্লাহ এই শোক কাটিয়ে উঠার শক্তি দিক !
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১৪
ভুয়া মফিজ বলেছেন: রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা। মহান আল্লাহ এই শোক কাটিয়ে উঠার শক্তি দিক! আমীন।
৩১| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:২৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার আম্মাকে আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীন ক্ষমা করে দিন, তাঁকে বেহেশত নসীব করুন! ঢাবিয়ান ও জাদিদ এর প্রয়াত বাবা এবং জুল ভার্ন এর মা এর জন্যেও একই দু'আ রইলো। মাকে নিয়ে জুল ভার্ন এর মন্তব্যটা অত্যন্ত মর্মস্পর্শী!
মায়ের স্থান কেউ নিতে পারে না। মায়ের চিরপ্রস্থান মানুষের জীবনে একটি অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে রয়ে যায়।
মিরোরডডল এর সহমর্মী মন্তব্যটা খুব ভালো লাগল, মন ছুঁয়ে গেল!
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১৭
ভুয়া মফিজ বলেছেন: মায়ের স্থান কেউ নিতে পারে না। মায়ের চিরপ্রস্থান মানুষের জীবনে একটি অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে রয়ে যায়। অত্যন্ত সঠিক কথা। দোয়া করবেন খায়রুলভাই।
৩২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৩৭
মেহবুবা বলেছেন: গতকাল দেখেছি, কি লিখবো বুঝতে পারছিলাম না।৷
মায়ের তুলনা কেবল মা! ৷
বেশী বেশী দোয়া করবে আল্লাহর কাছে, চির শান্তি যেন উনি পান।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১৮
ভুয়া মফিজ বলেছেন: মায়ের তুলনা কেবল মা! সত্যিই তাই। দোয়া করা ছাড়া আর তো কিছু করার নাই এখন। আল্লাহর হেফাজতে আম্মা যেন শান্তিতে থাকেন।
৩৩| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫১
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: মা...... মাগো
কেন অমন করে যাওগো চলে,
একা ফেলে
সইতে যে পারিনা মাগো
নয়ন ভাসে চোখের জলে-
তোমার মতো আদর করে
মোছেনা কেউ চোখেরই জল মায়ার আঁচলে
মা...... মাগো
কেন অমন করে যাওগো চলে,
রাব্বির হামহুমা, কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা”
হে আল্লাহ, তুমি মাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করো। তাঁর আত্মাকে মুক্তি দান করো।
এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারকে শোক সইবার শক্তি দাও।
সেই ২০০৬ এর ১৭ ডিসেম্বর বারডেমের আইসিইউতে রচিত হয়েছিল আমার বেদনার মহাকাব্য।
অথচ আজো মনে হলেই চোখ ভরে আসে । তবে শান্তি একটাই মা’কে মাঝে মাঝে দেখতে পাই
স্বপ্নে আসেন। মনটা খুবই প্রশান্ত হয়ে যায়।
এ শোক প্রকাশের কোন ভাষা নেই
এ শোকে কোন সান্তনা নেই
কেবলই অনুভবের গভীরে অনুভব
হৃদয়ের গভীরে চোখের জলে মা’র স্মরণে
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১৮
ভুয়া মফিজ বলেছেন: ২০০৬ থেকে ২০২১! কতো দীর্ঘ সময়। সময় কি আপনাকে ভোলাতে পেরেছে সেই দিনের কথা! তারপরেও আমরা স্বাভাবিকতার অভিনয় করে যাই প্রতিনিয়ত। মনের কোণে কষ্টটা কিন্তু ঠিকই রয়ে যায়, আজীবনের জন্য। দোয়া করবেন। আপনার আম্মার জন্যও দোয়া রইলো। মহান প্রতিপালক যেন উনাকে শান্তিতে রাখেন।
রাব্বির হামহুমা, কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা।
৩৪| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:১৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
বোন চিকিৎসক, বাচ্চা হওয়ার সময় মাকে নিলেন, ভালো; মায়ের অসুস্হতার শুরুতে মাকে আমেরিকায় নিয়ে চিকিৎসা করানোর দরকার ছিলো।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৪১
ভুয়া মফিজ বলেছেন: আম্মার চিকিৎসার জন্য আমরা, ভাই-বোনেরা কি করেছি সেটা আপনাকে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন মনে করছি না। এই পয়েন্ট ধরে আপনি উজবুকের মতো লাফাতে থাকবেন এখন। এই নিয়ে আপনার সাথে কথা বলার রুচি নাই। আমার এই পোষ্টে আপনাকে যেন আর না দেখি। আশা করছি, পরিস্কার করতে পেরেছি।
৩৫| ৩১ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৫
আরোগ্য বলেছেন: এতো দীর্ঘ দিন পর এই পোস্টে আসার কারণ একটাই। irreparable loss এর কোন consolation হয় না। আর আমি sympathy দেখাতে পারি না কিংবা কেউ দেখালে তা পছন্দও করি ন। কিন্তু এখন বিষয়টা empathy এর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তাই আসা।
এই মাসের আট তারিখ রাতে আমাদের সন্তান তুল্য আম্মুকে হসপিটাল নিয়ে যাই। ভেবেছিলাম দুই এক দিনের ট্রিটমেন্টে বাসায় এসে পড়বে। আবারও একসাথে খাবার টেবিলে বসবো কিন্তু নয় দিন পর একবারেই চলে গেলেন। আর চাইলেও সেই চিত্ত প্রশান্তকারী মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবো না। নয় রাত নয় দিনের সকল ঝড় তুফান চিরতরে ক্ষান্ত করে দিয়ে গেছেন। জীবনের সেই পুরান স্পৃহা যেন আর পাচ্ছি না। শারীরিক মানসিক ভাবে এতটাই বিপর্যস্ত ছিলাম যে, কেবল ফরজ নামাজ আর রক্তে মাংসের দেহে খাবার পৌছানোর মাঝে জীবন সীমাবদ্ধ ছিল। এখন শরীর আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ হয়েছে অনেকটা। তাই লগইন করলাম। দশ বছর প্রায় আম্মুর লিভার সিরোসিস ধরা পড়েছে, একই রোগে আব্বু চব্বিশ বছর আগে চলে গেছেন, সেই পথে আম্মুও গেলেন। আব্বুর সময় আমার বয়স ছিল নয় বছর। তখন তো তেমন বুঝও ছিলো না, কিন্তু আম্মুর চলে যাওয়া এখনও পুরোপুরি মানতে পারছি না। ভাবি যদি একটা দুঃস্বপ্ন হয়ে যায়। কোন ভাবে যদি আম্মু আবার এসে পড়ে। একেক পর এক হসপিটাল পরিবর্তন করেছি কিন্তু সবার একই কথা। আমার খালাত বোন ডাক্তার, সব আত্মীয়কে যা বলার বলে দিয়েছিলো কিন্তু আমরা ভাইবোন অগাধ বিশ্বাস বেঁধে রেখেছিলাম, অনেক বড় আশা করেছিলাম। পর্যায়ক্রমে আম্মুর স্বাস্থ্যের অবনতি আর অসহ্য যন্ত্রণা আমার ঈমানের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলো। কোন দোয়া দাওয়াই তকদিরের লেখা অতিক্রম করার সাধ্য নেই। আট দিনের আইসিইউতে থাকার পর শেষ দিন কোমায় ছিলেন। কনশাস লেভেল সাত থেকে তিনে নেমে গিয়েছিল। লাইফ সাপোর্টে নিথর অবস্থায় দেখে বুঝতে পারছিলাম না আছে নাকি নেই। আর এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়ে অনুধাবন করলাম নেয়ামত দিয়ে যেমন আল্লাহ পরীক্ষা করেন তেমনি নেয়ামত থেকে বঞ্চিত করেও দেখেন। পৃথিবীর বুকে ঈমানের পর সবচেয়ে বড় ও মূল্যবান নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হয়ে গেলাম। আম্মু আমাদের জন্য আমাদের সন্তানের মত ছিলেন কারণ আমরা জন্মের পর থেকেই আম্মুকে অন্যরকম দেখি। আম্মুর multiple character disorder ছিলেন, সহজ ভাষায় সিজোফ্রেনিয়া। আমাদের কারো সবসময়ই আম্মুর সাথে থাকতে হতো। অনেক সময় ছোট বাচ্চাদের মতও আচরণ করতেন। অনেক সময় উত্তেজিত হয়ে হিট করতেন। তারপরও আমাদের প্রতি ছিলো অগাধ মমতা। ২০২৩ এর আগস্টে hepatic encephalopathy হয়। সেই থেকে ওষুধ, খাওয়া, ঘুম, প্রসাব পায়খানা সবকিছুর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হত, এতো চেষ্টা পরিশ্রম কিছুতেই আটকানো গেলো না। ব্লগে কেবল পদাতিক ভাইকে মেইল করেছিলাম কিন্তু তাও আম্মু শব্দটা মেইলে যায় নি। পরবর্তী মেইল পেয়েছে কি না জানি না। আত্মীয় স্বজন বাদে কেবল যে সকল শুভাকাঙ্ক্ষী একই ব্যথায় আক্রান্ত কেবল তাদের সাথেই বিষয়টা শেয়ার করেছি। তাই আজ আপনার এই পোস্টে আসা। আবেগতাড়িত হয়ে অতিরিক্ত কথা বলার জন্য দুঃখিত।
০১ লা জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:২১
ভুয়া মফিজ বলেছেন: কোন সান্তনা বাক্যই এই হারানোর ব্যথা কমানোর জন্য যথেষ্ট না। কাজেই সেসব কথা বলবো না। সেসব আমি তেমন একটা ভালো বলতেও পারি না। শুধু বলবো, আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন। আমার আম্মার কষ্ট আমি দেখেছি। আপনার আম্মা যেই কষ্টের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন, সেটাও কিছুটা অনুমান করতে পারি। তাই বলবো, আল্লাহ যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, উনার মঙ্গলের জন্যই নিয়েছেন। আজ অথবা কাল, আমাদের সবাইকেই যেতে হবে। কাজেই এটা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে মনে কষ্ট রাখা ঠিক না।
আমি বরং আমার কষ্ট কিভাবে হ্যান্ডেল করেছি, সেটা বলি।
আম্মার প্রচুর ছবি আর ভিডিও আছে। প্রথম প্রথম সেসব দেখতাম। প্রচন্ড কষ্ট হতো। গত এক বছর ধরে কিছুই দেখি না। আম্মা স্মৃতিতে যেভাবে রেখেছি, সেভাবেই আছেন। ধর্মীয় বিষয়গুলো আপনি আমার চাইতে ভালো জানেন। তাই সেইসব নিয়ে কিছু বলছি না।
আমি আরেকটা কাজ করি। আমাদের এখানে অনেক ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী চ্যারিটি অর্গানাইজেশান আছে। তাদেরকে বিভিন্ন দরিদ্র দেশে বিশুদ্ধ পানির টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য ডোনেট করা যায়। মসজিদ/মাদ্রাসা এমনিতেই অনেক দান পায়। আমি এই ধরনের চ্যারিটিতে টাকা দেয়া প্রেফার করি। আপনি তো জানেনই এশিয়া/আফ্রিকাতে অনেক মুসলিম দেশে বিশুদ্ধ পানির অভাবে অনেক শিশু মারা যায়। খাওয়ার মতো পানির জন্য তাদের এমনকি মাইলের পর মাইল হাটতে হয়। সেখানে আপনার আম্মার নামে দান করতে পারেন। তারা টিউবওয়েল স্থাপনের পরে ছবি পাঠায়, সেসব ছবি দেখে খুব ভালো লাগে। তারা চাইলে যার নামে দান করা হচ্ছে, তার নামে সেখানে সাইনবোর্ডও স্থাপন করে।
এছাড়াও তাদের ওয়েবসাইটে আরো বিভিন্ন কাজের লিস্ট আছে। সেগুলোও সিলেক্ট করতে পারেন। অথবা প্যালেস্টাইনের জন্য চিকিৎসা সরন্জাম কেনাতে দান করতে পারেন। আমার মতে, দেশে গরীবদেরকে একবেলা খাওয়ানোর চাইতে এইধরনের সাহায্যগুলো ভালো।
সব সময়ে আম্মাকে নিয়ে চিন্তা করে মন খারাপ না করে মনকে ডাইভার্ট করেন। আমার ক্ষেত্রে লেখালেখি আর ব্লগে সময় দেয়াটা বেশ কাজে দিয়েছিল। তাছাড়া পারলে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সময় কাটান। আপনি যেহেতু দেশে আছেন, আপনার জন্য এই সুযোগটা আছে।
আপনার এখন মন বিক্ষিপ্ত, তাই আর বেশী কিছু বলছি না। শোক কাটিয়ে উঠেন যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব। আপনার আম্মার জন্য অনেক অনেক দোয়া রইলো। আল্লাহ ভরসা।
৩৬| ০১ লা জুন, ২০২৫ রাত ৮:৪৬
আরোগ্য বলেছেন: আপনার উত্তর পড়ে ভালো লাগলো। কিছু কথা সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে। এই যেমন এটা তো সত্যি আল্লাহ যা করেন বান্দার ভালোর জন্যই করেন। যখন আম্মুর যন্ত্রণার কথা মনে পড়ে তখন মনে হয় কেন এতো কষ্ট দিলো। জানি এমন কথা ঠিক না। কিন্তু সন্তান তো তাই কষ্ট হয়, সময়ের সাথে সয়ে যাবো। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুক।
আমিও আম্মুর ছবি ভিডিও দেখি, আমার খুব ভালো লাগে। যদিও কষ্ট পাই তাও মুখটা দেখতে পারি কণ্ঠ শুনতে পাই। সত্যি কথা বলতে আমার আম্মুর স্মৃতিচারণ করতে ভালো লাগে, কারো সাথে কথা হলে মনে হয় যেন আম্মুর কথাই বলতে থাকি। জানি সময়ের সাথে সাথে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে তাও এই কষ্টটাও আমার কাছে অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশি প্রশান্তিময়।
চ্যারিটির বিষয়ে আপনার পরামর্শ খুব পছন্দ হয়েছে। আমার বোনের সাথে আলাপ হলো। আপনার বিশ্বস্ত লিংক শেয়ার করলে বিনা সংকোচে অগ্রসর হতে পারতাম।
খুব বেশি মাত্রায় বিক্ষিপ্ত ছিলাম। এক কথায় শরীর মন পুরো আচ্ছন্ন ছিলো। তখনই ক্লাসের এক সিনিয়র আপা বলেছিল লেখালেখিতে মনোযোগ দে। কিন্তু আমার কোনই এনার্জি ছিলো না। তাই বলেছিলো একটু সময় নে, তারপর শুরু কর। এখন ভালো আছি। আম্মুকে হসপিটাল নেয়ার আগে সেদিন একটা লেখা ধরেছিলাম সেটাই ঠিকঠাক করে দু এক দিনে পোস্ট করবো। কিন্তু সিরিজ পোস্ট লেখা সহজ নয় এখনো বই পড়ার মত মানসিকতা তৈরি হয় নি। আর কিছু সময় লাগবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের মৃত পিতামাতাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের ওয়ারিশ করুক। এবং আমাদের সে পথের পথিক হিসেবে পরিচালিত করুক। ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য। জাযাকাল্লাহ খাইরান।
০২ রা জুন, ২০২৫ দুপুর ১২:২২
ভুয়া মফিজ বলেছেন: যখন আম্মুর যন্ত্রণার কথা মনে পড়ে তখন মনে হয় কেন এতো কষ্ট দিলো। এই একই কথা আমার মাথায়ও ঘোরে; অন্য কথায় ''সবই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়''। এটা নিয়ে এতোটাই চিন্তা করেছি যে একটা পোষ্ট লেখার চিন্তাও করেছিলাম। যাকগে, সেটা অন্য আলোচনা। কোন একদিন নিশ্চয়ই করবো।
আমার সবচাইতে পছন্দের চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান হলো Muslim Global Relief। এটাতে ভিজিট করে দেখতে পারেন।
আমিও আম্মুর ছবি ভিডিও দেখি, আমার খুব ভালো লাগে। ভালো লাগলে অবশ্যই দেখবেন। সবাই তো এক রকমের না। প্রত্যেকের রিয়্যাকশানও ভিন্ন। যেটাতে মনে শান্তি পান, সেটাই করা উচিত।
আসলে যে কোনও কিছু নিয়ে এখন ব্যস্ত থাকাটাই সব চাইতে বড় ব্যাপার। এরপরে আস্তে আস্তে দুনিয়াদারীর কারনে এই ধরনের ক্ষত এমনিতেই শুকিয়ে আসে। অনেকের পুরাপুরি শুকায়, অনেকের বাইরে শুকায়, ভিতরে কাচাই থাকে। আসলে আমরা তো আর রোবট না যে, একটা প্রোডাকশান ব্যাচের সবাই একই রকমের হবে!!! আমরা প্রত্যেকেই ইউনিক। আল্লাহ আমাদের সেভাবেই তৈরী করেছে। জন্ম-মৃত্যু আল্লাহর হাতে, তবে এই দুই ব্যাপারে আমাদের প্রতিক্রিয়াও উনারই দেয়া; আমাদের মানসিক গঠনের কগনিটিভ ফাঙ্কশনিংয়ের জন্যই এমনটা হয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের মৃত পিতামাতাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের ওয়ারিশ করুক। এবং আমাদের সে পথের পথিক হিসেবে পরিচালিত করুক। আমীন।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৫১
অপু তানভীর বলেছেন: আপনার লেখা পড়তে গিয়ে আমার নিজের চোখ খানিকটা সিক্ত হয়ে উঠলো । সত্যই মায়ের অবস্থান আমরা তখনই উপলব্ধি করতে পারি যখন সে আমাদের থেকে দুরে যায় ।
আমি সারা জীবন ঘর কুনো মানুষ হলেও বাড়ির মানুষের সাথে আমার যোগাযোগ হয় কম । নিজের ঘরের ভেতরে থাকতাম, সবার সাথে যোগাযোগ হত কম । ঢাকাতে যখন প্রথমবার এলাম তখন আসলে বুঝতে পারলাম তারা আসলে কেমন মানুষ । তখন আমি তিন সপ্তাহে একবার বাড়ি যেতাম । বাড়ি গিয়ে সবার সাথে খুব কথা বলতাম তেমন টা না, কিন্তু এই যে বাড়িতে আছি, মায়ের কাছাকাছি আছি এটাই অনেক কিছু ।
গতমাসে মায়ের চোখের অপারেশন হয়েছে । মা কেবল বলেছিলো হবে কবে হবে সেটা বলেনি । সেদিন বাবা ফোন দিয়ে বলল যে তাড়াহুড়া করে আজই অপারেশন । নয়তো এই সামনে আর হবে না । মাকে তখন ওটিতে ঢুকিয়ে ফেলেছে । হঠাৎ কেমন যেন মনে হল । হাতের কাজ কর্ম আর হল না একদম । ঘুরে ফিরে সেই একই কথা মনে পড়ছিল । সেদিন কতবার বাসায় ফোন দিয়েছি আমি নিজেও জানি না ।
আপনার মায়ের জন্য দোয়া রইলো । তিনি নিশ্চয়ই ভাল থাকবেন !