নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফিরে যেতে এসেছি, হারিয়ে যেতে নয়।

বিপ্লবী বেদুঈন

সত্যের সাথে থেকে - সুন্দর কে পাশে রেখে নতুন কিছু করে যেতে চাই! দেশ, জনগন ও পৃথিবীর জন্যে!

বিপ্লবী বেদুঈন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইরানের ইসলামী বিপ্লব; কারন ও ফলাফল

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৪৯

১৯৭৯ সালে ঘটা একটি যুগান্তকারী বিপ্লব যেটা ইরানকে শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলাভীর একনায়কতন্ত্র থেকে আয়াতুল্লাহ খামেনেইর ইসলামিক গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত করে। একে বলা হয় ফরাসি এবং বলশেভিক বিপ্লবের পর ইতিহাসের তৃতীয় মহান বিপ্লব।



প্রাথমিক অবস্থা:

ইরানের শেষ সম্রাট মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভী। দুনিয়ার সবচেয়ে পুরোনো, ঐতিহ্যবাহী আর প্রভাবশালী শাহী রক্তের ধারক ছিলেন তিনি। তার বংশ গত আড়াই

হাজার বছর ধরে সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলো। শুরুটা করেছিলেন তারই পূর্বপুরুষ মহান কুরুশ আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে। সেই বংশের শেষ সম্রাট ১৯৭৯ সালের ১৬ জানুয়ারি বিপ্লবী দেশবাসীর কাছে পরাজিত হয়ে মিশর পলায়ন করে। কিছু দশক আগে রেজা শাহ পাহ্লবী ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান। সর্বময় ক্ষমতা ছিলো পার্লামেন্টের হাতে এবং নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সেই ক্ষমতা ভোগ করতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরই ইরানে ব্যাপক আকারে তেল ক্ষেত্র আবিস্কৃত হয় যার মালিক ছিলো ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো। ঠিক এই সময়টিতে মোসাদ্দেক নামক জনপ্রিয় এক রাজনৈতিক নেতা দেশের সব তেল সম্পদ জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। ব্রিটেনে তখন উইনস্টন চার্চিল ক্ষমতায় আর যুক্তরাষ্ট্রে হেনরি ট্রুম্যান। মোসাদ্দেকের জয়লাভের ফলে দুই ক্ষমতাশালীর মাথায় বাজ পড়লো। শুরু হলো মুসাদ্দেককে ক্ষমতাচ্যুত করার নীল নকশা।



দুই ক্ষমতাশীলের চক্রান্ত:

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘ সিআইএ’ এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা ‘এসআইএস’- লন্ডনে বসে যৌথ পরিকল্পনা করলো। প্রেসিডেন্ট থিউডর রুজভেল্টের নাতি কার্মিট রুজভেল্ট তখন সিআইএ প্রধান। তিনি উড়ে এলেন লন্ডনে। প্রণীত হলো অপারেশন ‘এ্যাজাক্স’ এর নীল নকশা।



পরিকল্পনা মতে ইরানী সেনাবাহিনী তে ঘটানো হলো অভ্যুত্থান। প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ মুসাদ্দেক পদচ্যুত হলেন। তার স্থানে আজ্ঞাবহ জেনারেল ফজলুল্লাহ জাহেদীকে নিয়োগ দেয়া হলো। কিন্তু মূল ক্ষমতা রাখা হলো ইঙ্গো মার্কিন সাম্রাজ্যের অনুগত শাহ মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভীর নিকট। এই ঘটনার একদিনের মাথায় সেনাবাহিনীতে একটি কাউন্টার অভ্যুত্থান হলো। অভ্যুত্থানকারীরা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেককে উদ্ধার করলেন। অন্যদিকে শাহ পালিয়ে গেল বাগদাদে এবং তারপর ইতালিতে। কিন্তু এর দুই দিন পর আরো একটি রক্তাক্ত পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটানো হয় সেনাবাহিনীতে। ফলে মার্কিন-বৃটেনের নীল নকশা অপারেশন এ্যাজাক্স সফল হয় শতভাগ। পরবর্তী শাহ ইরানে ফিরে আসে চটজলদি।



এসব ঘটনা ঘটেছিল ১৯৫৩ সালে। পতনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৭৯ সালের ১৬ ই জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের নিরষ্কুশ সর্বময় ক্ষমতা ছিলো শাহের হাতে। তার ইঙ্গো- মার্কিন মদদ দাতারা অনবরত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিলেন তাকে। ফলে তার পুলিশ ও সেনাবাহিনী প্রতিদিন রাজপথে শত শত মানুষকে গুলি করে মারছিলো।



বিপ্লবের কারন:

১৯৫৩ সালের পর থেকে ইরানে যে অকল্পনীয় উন্নতি হয়েছিলো তাতে জনগণের খুশি বা সন্তুষ্ট থাকার কথা ছিলো এবং তারা তা ছিলোনা। শাহের কতিপয় ব্যক্তিগত আচরণ, অভ্যাস আর পশ্চিমা সংস্কৃতির অবাধ প্রচলন দেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধীরে ধীরে বিক্ষুদ্ধ করে তোলে। এই বিক্ষোভই অগ্নিগর্ভে রূপ নেয় ১৯৭৭ সালের শেষ দিকে। তেহরান শহরে কোন পাবলিক বাসে কোন ধর্মীয় লেবাযধারী মানুষ উঠলেই কনট্রাকটর টিটকারী করে বলতো- আমরা আলেম আর বেশ্যাদের বাসে চড়াই না। রাস্তায় রাস্তায় গড়ে উঠেছিল মদের দোকান। শহর ও শহরতলীতে শত শত নাইটক্লাবে চলতো সারারাত ব্যাপী ডিস্কো পার্টির নামে মদ্যপান, জুয়া আর অবাধ যৌনাচার।



শাহ নিজেও ছিলেন পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত। তার স্ত্রী, সন্তানরাও পশ্চিমা ধাঁচে চলতেন। শাহ এবং তার স্ত্রী সকল রাজকীয় অনুষ্ঠান এবং দেশী বিদেশী সরকারী অনুষ্ঠান সমূহে পশ্চিমাদের পোশাক পড়তেন। এসব কারণে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ দিনকে দিন ফুঁসে উঠতে থাকেন।



বিপ্লব:

আয়াতুল্লাহ খামেনেইর ছিলেন একজন অপরিচিত ধর্মীয় ইমাম। মুসলমানদের এই মনের কষ্ট তিনি বুঝতে পেরে শিয়াদের ধর্মীয় শহর নাজাফে একটি জনসভা আহ্বান করেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে লক্ষ লক্ষ লোকের সমাবেশ হয় সেখানে।

শাহের সরকার প্রথমে এই বিশাল সমাবেশকে মোটেই গুরুত্ব দিলেন না। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকলো দ্রুত। তেহরানের রাস্তায় বিক্ষুদ্ধ মুসলমানেরা নেমে আসলো। সংখ্যায় ছিলো তারা অগণিত। সেদিন ছিলো শুক্রবার। প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ লোক তেহরানে জমায়েত হয়।



তারিখটি ছিলো ১৯৭৮ সালের ৮ ই সেপ্টেম্বর। শাহের বাহিনী বিশাল জনসমাবেশের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। আপাতত লোকজন ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় কিন্তু দিবসটিকে ইরানের ইতিহাসে কুখ্যাত 'ব্লাক ফ্রাইডে' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ব্লাক ফ্রাইডের পর তেহরানে মার্কিন দূতাবাসে কর্মরত সিআইএ এজেন্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে সিআইএ হেড কোয়াটারে রিপোর্ট করেন যে- ৮ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর শাহের শাসন ক্ষমতা এতোটাই সূদৃঢ় হয়েছে যে- আগামি ১০ বছরে বিরোধী পক্ষ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। অথচ এর মাত্র ৩ মাসের কিছু সময় পর অর্থ্যাৎ ১৬ ই জানুয়ারি ১৯৭৯ সালে মাত্র একদিনের গণ অভ্যূত্থানে শাহের পতন হয়।



শাহের যাযাবর জীবন এবং মৃত্যু :

পরিবার পরিজন নিয়ে শাহ দেশ থেকে পালিয়ে যান। তার দীর্ঘদিনের মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন তাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করে।



তিনি প্রথমে ইটালি যান। কিন্তু ইতালি তাকে অসম্মান জনকভাবে বিদেয় করে দেয়। এরপর তার বিমান উড়াল দিলো পানামায়। সেখানকার সরকারও গ্রহণ করলো না। অনেক দেন দরবার এবং অনুনয় বিনয় করার পর মিশর তাকে সাময়িকভাবে সেই দেশে ঢোকার অনুমতি দিয়েছিলো একটি কারণে, প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে বোঝানো হলো যে-শাহের প্রথম স্ত্রী ফৌজিয়া ছিলেন মিশরের প্রয়াত এবং ক্ষমতাচ্যুত বাদশা ফারুকের বোন। এই রাজপরিবারের প্রতি তখনো মিশরের জনগণের বেশ সহানুভুতি অবশিষ্ট ছিলো। কাজেই মিশরের রাজকণ্যার স্বামী ভিক্ষুকের মতো দেশে দেশে ঘুরে বেড়াবে সেটা মিশরবাসীর জন্য হয়তো অস্বস্তিকর হয়েছিল। শাহ ফিরে এলেন কায়রোতে।



ইতিমধ্যে তার শরীরে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। ফলে কায়রোর একটি হোটেলে তিনি মারা যান ১৯৮০ সালের ২৭ শে জুলাই- যখন তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৬০ বছর। ক্ষমতার শেষ দিকে সম্রাট অতিমাত্রায় অহংকারী হয়ে পড়েছিল। নিজের বংশ আর রাজ রক্তের অহমিকায় তিনি লোকজনকে মানুষ বলেই মনে করতেন না। কথায় কথায় লোকজনকে অসম্মান করতো। দেশের সেনাবাহিনী বা বেসামরিক প্রশাসনের বড় বড় কর্মকর্তাগণের পরিবর্তে তিনি মার্কিন এবং বৃটিশ দূতাবাসের কুকুরকে বেশি মর্যাদা দিতেন। এভাবেই শাহ্ এর অধ্যায় শেষ হয়।



ফলাফল:

পরবর্তী কালে খমেনির নেতৃত্বে ইরান আধুনিক ইসলামিক শক্তিধর দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।



(উইকিপিডিয়া অবলবম্বনে)

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:০০

খেলাঘর বলেছেন:


রাজতন্ত্রের পতন ঘটানো সঠিক ছিল।

এখন গুহা মানব-তন্ত্র চালু করেছে।

তেল ছিল বলে বেঁচে আছে, না হয় মালয়েশিয়া বা চিটাগং আসতো ইমামতি করার জন্য

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:০৯

বিপ্লবী বেদুঈন বলেছেন: তেল না থাকলে হয়ত আমেরিকান কিংবা ব্রিটিশদের লোভাতুর দৃষ্টিও পড়ত না!!

২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:২৫

চলন বিল বলেছেন: খুব ভালো লাগল

পোস্টে +

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:২৭

বিপ্লবী বেদুঈন বলেছেন: উৎসাহ পেলাম! ধন্যবাদ!

৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৬

খেলাঘর বলেছেন:


আমেরিকানরা তেল কিনে; সেই তেলের উপর ব্যবসা করে ইরান, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া বা সৌদী থেকে বেশী লাভ করে; সেটা ফাইন্যন্স।

ইরান, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া বা সৌদীরা দুস্টরা তেল বেচে আমেরিকা বেড়াতে যায় ও আমেরিকায় ইনভেস্ট করে।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৬:৫৬

বিপ্লবী বেদুঈন বলেছেন: ব্যাবসা যে কারো সঙ্গে করা যেতে পারে, ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপার কিংবা ইনভেস্ট করার ব্যপারেও ঠিক একই কথা খাটে- কিন্তু কোনো দেশ কখনই চাইবে না তার মূল্যবান খনিজ সম্পদ অন্য কোনো দেশ নিয়ন্ত্রণ করুক!! চাই সে ইসলামিক কান্ট্রি হোক কিংবা অনৈসলামিক!!

৪| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৪৮

হেজাজের কাফেলা বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন

৫| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:২৫

বিপ্লবী বেদুঈন বলেছেন: ধন্যবাদ রইল!!

৬| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:২৯

রামন বলেছেন:
খেলাঘরের সাথে সহমত। লেখক মিশর, আলজেরিয়া যেতে হবে না, সামান্য ঘাড় ঘুরিয়ে ইয়ামেনের দিকে দেখুন, তাদের চাঁদিতে তেল নাই।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৩৪

বিপ্লবী বেদুঈন বলেছেন: কার চাঁদিতে তেল আছে আর কার চাঁদিতে নেই, সেটা আমি ধরছি না! আমি ধরছি, আমেরিকা আর ব্রিটিশদের দখলদারিত্ব নীতি আর ইরানের জনগনের সেখান থেকে নিজ প্রচেষ্টায় মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি- যে জিনিস টি এখনো অনেক দেশই করে উঠতে পারে নি!

৭| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:১৮

খেলাঘর বলেছেন:

" কার চাঁদিতে তেল আছে আর কার চাঁদিতে নেই, সেটা আমি ধরছি না! আমি ধরছি, আমেরিকা আর ব্রিটিশদের দখলদারিত্ব নীতি আর ইরানের জনগনের সেখান থেকে নিজ প্রচেষ্টায় মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি- যে জিনিস টি এখনো অনেক দেশই করে উঠতে পারে নি! "

-লিখছেন, লিখুন; কিন্তু আপনি যা লিখছেন উহা সঠিক এনালাইসিস নয়।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৬:৪৯

বিপ্লবী বেদুঈন বলেছেন: এনালাইসিস এর সমস্যা গুলো কোন জায়গায়, খুলে বললে উপকৃত হতাম!

৮| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


ইরানে বিপ্লব হয়ে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটায়েছে, ভালো।
এখন ইরানের গুহ মানবেরা ইরানকে পেছনের দিকে টানছে

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৫০

বিপ্লবী বেদুঈন বলেছেন: এখানে 'পেছন' এর দিক বলতে কোন দিক বুঝাচ্ছেন একটু খোলাসা করে বলে দিলে ভালো হয়!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.