নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Bangladesh my home

বীরেনদ্র

Nothing much to say about

বীরেনদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

সক্রেটিসের দেশে ( চতুর্থ পর্ব) ।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩১

এক্রোপলিসঃ- Acropolis শব্দের অর্থ হলো উচু নগরী (akron, "highest point, extremity") and πόλις (polis, "city")।যীশুখৃস্টের জন্মের হাজার বছরেরও বেশী আগ থেকে এথেন্স নগরী গড়ে ওঠে প্রায় পাঁচশ' ফুট উচু পাহাড়কে ঘিরে।পাহাড়ের চুড়া সমতল এবং এর আয়তন প্রায় সাত একর। নব্য প্রস্তর যুগ তথা খৃস্টপূর্ব ৪০০০ বছর আগে Acropolisএ মানুষের বসবাসের চিহ্ন পাওয়া যায়। খ্রিস্টপূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মাইসেনিয়ান রাজারা এক্রোপলিসের চারপাশ ঘিরে প্রতিরক্ষা দেওয়াল নির্মান করেন।
প্রাচীন এথেন্স নগরীর প্রানকেন্দ্র ছিল এক্রোপলিস। খৃস্টপূর্বকালে গ্রীস নামে কোনো দেশ ছিলো না, ছিলো অনেকগুলো স্বাধীন নগর রাস্ট্র যার মধ্যে এথেন্স,স্পার্টা, আরগোস, মোগারা এবং কোরিন্থ ছিল অন্যতম।এই নগর রাস্ট্রগুলো অধিকাংশ গড়ে উঠেছিল উচু পাহাড়কে ঘিরে।প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে তারা শহর গড়ে তুলেছিলো কেন্দ্রের উচু পাহাড়ের উপর। অনান্য নগর রাস্ট্রগুলোতেও উচু শহর বা এক্রোপোলিস থাকলেও এক্রোপলিস বলতে এথেন্স এক্রোপোলিসকেই বোঝায়। এথেন্স এক্রোপলিস ছিলো নগররক্ষা কর্তা দেবী এথেনার উপাসনাস্থল।এথেন্সবাসীরা বিশ্বাস করত যে বহিঃশত্রুর আক্রমন থেকে তাদের নগরী রক্ষাকারী দেবী হলেন এথেনা। ৪৯০ খৃস্টপূর্বাব্দে ম্যারাথনের যুদ্ধে এথেনীয়ানরা আক্রমনকারী পারসীয়ান রাজা দারিয়ুসের বিশাল বাহিনীকে পরাজিত করার পর দেবী এথেনার উপর এথেনীয়ানদের আস্থা বহুগুন বেড়ে যায়। এর ঠিক দশ বছর পর ৪৮০ খৃস্টপূর্বাব্দে দারিয়ুসপুত্র জেরেক্সেস এথেন্সের এক্রোপোলিস দখল করে সমস্ত স্থাপনা গুড়িয়ে দেন। পারসীয়ানরা এক্রোপলিস দখল করে নিলেও তা ছিল স্বল্পস্থায়ী। দ্বিতীয় যুদ্ধেও পারসীয়ানরা পরাজিত হয় এবং তারা বিপূল ক্ষতি স্বীকার করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পারসীয়ানদের দখল করা এলাকা উদ্ধার করার জন্য ৪৭৮ খৃস্টপূর্বাব্দে নগর রাস্ট্রগুলো এক চুক্তিতে সাক্ষর করেন যা ডেলিয়ান লীগ বা এথেনিয়ান লীগ হিসেবে পরিচিত। খৃস্টপূর্বাব্দ ৪৩২ সালের পেলোপনেসিয়ান যুদ্ধ পর্যন্ত এ লীগ টিকে ছিলো। এর পর গ্রীক সেনাপতি পেরিক্লিস ক্ষমতায় আরোহন করেন। পেরিক্লিসের শাসনামল ছিল এথেন্সের স্বর্নযুগ বা Classical period of Athens (৪৬০ থেকে ৪৩০ খৃস্টপূর্বাব্দ। পেরিক্লিসের সময়ে গড়ে উঠে এক্রোপলিসের গুরুত্বপূর্ন মন্দির এবং অনান্য স্থাপনা যেমন পারথেনন, ইরেকথিয়ন ইত্যাদি। এথেন্সকে বলা হয় ডেমোক্রাসি বা গনতন্ত্রের সুতিকাগার এই সময়ে এথেন্সের পুরুষ নাগরিকেরা এক্রোপোলিসের পাদদেশের আগোরায় সমবেত হয়ে গুরুত্বপূর্ন রাজনৈতিক প্রশ্নে মতামত বা ভোট দিতে পারতেন। "ডেমোস" এবং "ক্রাটোস" এই দুটো গ্রীক শব্দ থেকে আধুনিক ডেমোক্রাসি শব্দের উৎপত্তি। ডেমোস মানে হল জনগন এবং ক্রাটোস মানে ক্ষমতা অর্থাৎ ডেমোক্রাসি মানে হল জনগনের ক্ষমতা। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এটিই গনতন্ত্রের প্রাচীনতম উদাহরন। খৃস্টপূর্ব ৪৪৭ খৃস্টাব্দে প্যানএথেনিয়ান উৎসবের দিনে রাজা পেরিক্লিস দেবী এথেনার মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। Athena Parthenos বা কুমারী এথেনার মন্দির হিসেবে এ মন্দিরের নাম হয় পার্থেনন। এক্রোপলিসের মন্দির এবং অনান্য স্থাপনা নির্মানের জন্য কাজ করেন সে সময়ের বিখ্যাত স্থপতি,ইকটেনাস, এবং ক্যালিক্রাটিস এবং সে সময়ের খ্যাতি মান ভাস্কর ফিডিয়াস । ফিডিয়াস ছিলেন প্রাচীনযুগের সপ্তম আশ্চর্য্যের অন্যতম অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তির নির্মাতা। পার্থেনন মন্দিরের নির্মানে সময় লাগে নয় বছর(৪৪৭ খৃস্টাব্দ থেকে ৪৩৮ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত)। ৪৩৭ খৃস্টপূর্বাব্দে প্রোপাইলিয়া বা প্রবেশদ্বারের নির্মান শুরু হয় এবং শেষ হয় ৪০৬ খৃস্টপূর্বাব্দে। এক্রোপলিসের অপর বড় আকারের মন্দির ইরেকথিয়নের নির্মান শুরু হয় ৪২১ খৃস্টপূর্বাব্দে এবং শেষ হয় ৪০৬ খৃস্টপূর্বাব্দে। প্রাচীন যুগের অলিম্পিয়ান দেবতাদের উপাসনাস্থলগুলো স্থাপিত হয়েছিল এক্রোপলিসের দক্ষিন দিকে এবং পরবর্তী কালের দেবী এথেনার মন্দির গুলো স্থাপিত হয়েছিল এক্রোপলিসের উত্তর দিকে।৪০৪ খৃস্টপূর্বাব্দ থেকে খৃস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী পর্যন্ত আর কোনো উল্লেখযোগ্য স্থাপনা গড়ে ওঠেনি এক্রোপলিসে। রোমানরা গ্রীস দখল করে নেওয়ার পর রোমান সম্রাট অক্টাভিয়া অগাস্টাসের ছোট একটি মন্দির স্থাপনা করা হয়েছিল এক্রোপলিসে পার্থেননের পূর্বদিকে।
ষষ্ঠ শতাব্দীতে খৃস্টান ধর্মের প্রসারের পর এক্রোপলিসের মন্দিরগুলোকে গির্জা বানানো হয়। এথেনা পার্থেনোসের মন্দির বা পার্থেনন হয় কুমারী মেরি মাতার মন্দির বা Panagia Athiniotissa (Virgin of Athens) এবং ইরেকথিয়নকে উৎসর্গ করা হয় Sotirasএর উদ্দেশ্যে। ত্রয়োদশ শতাব্দিতে ক্রুসেডাররা লুটপাট করে এক্রোপলিসের মন্দিরগুলো এবং প্রোপলিয়া হয় ফ্রাঙ্ক গ্যারিসন কমান্ডারের বাসভবন। অটোম্যান তুর্কিদের আমলে পার্থেননকে মসজিদ বানানো হয় এবং পাশের ইরেকথিয়ন হয় তূর্কী গভর্নরের হেরেমখানা। ১৬৮৭ সালের ভেনিসীয় সেনাপতি এক্রোপলিস অবরোধ করেন। সেই সময় কামানের গোলা সরাসরি আঘাত হানে এখানকার গোলাবারুদের ভান্ডারে।ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রিস্থ হয় পার্থেনন। ১৭৯৯ থেকে ১৮১০ সাল পর্যন্ত বৃটেনের লর্ড এলগিন এক্রোপলিসের স্থাপনাগুলোর এক বিরাট অংশ কিনে (লুটপাট করে) নিয়ে যান লন্ডনে যা আজও বৃটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।১৮৩২ সালে স্বাধীনতার পর গ্রীক সরকারের তত্বাবধানে আসে এক্রোপলিস। ১৯৭৫ সালে এক্রোপলিসের সংরক্ষন ও পুনর্বাসন কাজ শুরু হয় যা আজও চলছে।
এক্রোপলিস মিউজিয়ামকে বামে রেখে শ'দুয়েক গজ এগিয়ে গেলেই পড়ল এক্রোপলিসের গেট। গেট থেকে উপরে উঠে যাওয়ার রাস্তা হল Eastern Parados (passageway)। Eastern Parados গিয়ে মিশেছে পাহাড়ের ঠিক পাদদেশে অবস্থিত খৃস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে নির্মিত ডায়োনিসসের থিয়েটারে প্রবেশের প্রধান দ্বারে। গনতন্ত্রের মত মানব সভ্যতায় প্রাচীন গ্রীকদের অন্যতম অপর এক অবদান হল থিয়েটার এবং নাটক। এথেন্সের অধিবাসীরা ডায়ানিসস থিয়েটারে নাচ, গান, বাজনা,নাটক ইত্যাদির বাৎসরিক উৎসবের আয়োজন করতো। এ উৎসবে যোগ দিতেন খ্যাতিমান গ্রীক লেখক এবং অনান্য গন্যমান্য ব্যাক্তিরা।অভিনয় করতেন বিখ্যাত অভিনেতারা। সেই সময়ের বিখ্যাত অভিনেতা এবং লেখকদের পাথরের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল এই থিয়েটারের চারপাশকে ঘিরে।প্রাচীন এথেন্স নগরীর বিভিন্ন্ রাস্তা এসে মিশেছিল ডায়নিসস থিয়েটারের দক্ষিন পশ্চিম কোনায়।
ডাইয়োনিসসঃ- দেবতা Dionysos ছিলেন মদ ও উর্বরতার দেবতা। তিনি গ্রীকবাসীদের মদ তৈরী করার কৌশল শিক্ষা দেন। ডায়োনিসাস একাধারে ছিলেন আনন্দ সঞ্চারকারী এবং অন্যদিকে ভয়ঙ্কর রাগী দেবতা।তিনি ছিলেন দেবরাজ জিউস এবং সেমেলীর পূত্র। তিনিই হলেন একমাত্র দেবতা যার মা ছিলেন একজন মানুষ।
দেবরাজ জিউস মানুষের চোখকে ফাকি দিয়ে রাতের অন্ধকারে সেমেলী(Semele)কে প্রেম নিবেদন করেন। সেমেলী একজন দেবতার সঙ্গীনী হতে পেরে গর্ববোধ করেন যদিও তিনি দেবতার সঠিক পরিচয় জানতেন না। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাদের গোপন মিলনের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। জিউস পত্নী হেরা ছদ্মবেশে সেমেলীর কাছে গিয়ে তার কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা আদায় করেন যে সেমেলী তার প্রেমিক দেবতাকে সচক্ষে দেখতে চাইবেন। পরের বার জিউস সেমেলীর কাছে প্রতিজ্ঞা করেন যে তিনি সেমেলীর যে কোন একটি ইচ্ছে পুরন করবেন। সেমেলী তখন জিউসের রুপ দেখতে চান। জিউস স্বরুপে দেখা দেওয়ার পরিনাম জেনেও প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী আত্মপ্রকাশ করতে বাধ্য হন। জিউসের তেজে ভস্ম হয়ে যান সেমেলী। এই সময়ে সেমেলীর গর্ভের পূত্রকে উদ্ধার করে জিউস তাকে নিজের উরুর ভেতরে সেলাই করে রাখেন। ডায়োনিসস নির্দিস্ট সময়ে জিউসের উরু থেকে জন্মগ্রহন করেন এবং জিউস তাকে অমরত্ব দান করেন।
জিউস পত্নী হেরা ডায়ানিসসের প্রতি অসন্তুস্ট ছিলেন। তিনি ডায়োনিসসকে ধ্বংশ করে ফেলতে টাইটান দেবতাদের আহবান জানান। টাইটান দেবতারা ডায়োনিসাসকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলেন। কিন্তু দেবতা রিয়া টুকরোগুলোকে জোড়া দিয়ে ডায়োনিসসকে পুনরায় জীবন দান করেন। ডায়োনিসাসের নিরাপত্তার কথা ভেবে জিউস ডায়োনিসসকে পাহাড়ের পরী বা Nymph দের হাতে তুলে দেন। এরপর থেকে ডায়োনিসস হরিনের চামড়া পরা পাহাড়ী কন্যাদের সাথে পৃথিবী ভ্রমন করতে থাকেন। অনান্য দেবতাদের পুজার জন্য মন্দির থাকলেও ডয়োনিসসের পুজা করা হত বনজঙ্গলে। যে অল্প কয়েকজন দেবতা আত্মাকে পরলোক থেকে ইহলোকে ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা রাখতেন তাদের মধ্যে ডায়োনিসাস ছিলেন অন্যতম। তিনি মা সেমেলীকে পরলোক থেকে ফিরিয়ে এনে অলিম্পিয়াতে দেবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।(চলবে)



ডায়োনিসসের থিয়েটার।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



আধুনিক সভ্যতার জন্মস্হান গ্রীস; এখনো পাথের যুগের ভাবনায় আটকা পড়ে আছে আরবেরা

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৯

বীরেনদ্র বলেছেন: The Athenians innovated so many ideas like philosophy, arts, democracy, Theater, History etc. It is very unfortunate to note that many of my learned Muslim friends are disinclined to accept it. They do neither accepet the contributions of the ancient people nor do they appreciate the subsequent generation of of scholars. For them the best scientists are Al-Zabir, Ibn Sinah etc.

২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১২

চাঁদগাজী বলেছেন:




মুসলমানেরা পাথরের যুগে বসবাস করতে চায়; কারণ, এ জীবন হলো ছলনা মাত্র, আসল জীবন শুরু হবে মরার পর।

৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৮

একটি পেন্সিল বলেছেন: পড়তে ভালই লাগল

৪| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:১২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভ্রমণ কাহিনীটাকে ইতিহাসের ভারে ভারাক্রান্ত করে ফেলেছেন

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৪

বীরেনদ্র বলেছেন: ইতিহাসের ভারে ভারাক্রান্ত, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। আমি ভ্রমনকাহিনীকে একজউন ট্যুরিস্ট গাইডের বর্ননা হিসেবে তুলে ধরার চেস্টা করেছি। মন যা জানেনা চোখে তা দেখে না। সুতরাং আমি বিশ্বাস করি এই সব এলাকা গুলো ঘোরার আগে কেউ যদি এই রচনাটি পড়েন তাহলে তারা নিঃসন্দেহে উপকৃত হবেন এবং পূরাকীর্তিগুলো দেখে ভ্রমনে বেশী করে আনন্দ পাবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.