![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইংরেজীতে বহুল প্রচলিত একটি Phrase হল "Million Dollars' question" বা দশ লক্ষ ডলার মূল্যমানের প্রশ্ন। এ Phraseটি দিয়ে বোঝানো হয় এমন কোনো প্রশ্নকে যার উত্তর দেওয়া্ প্রায় অসম্ভব, কিন্তু প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। Phraseটির উৎপত্তি ১৯৫০ এর দশকে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে। কোনো এক গেম শো'র শেষ প্রশ্নটির মূল্যমান ছিল ৬৪,০০০ ডলারের। ধরে নেওয়া হয় এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সম্ভাবনা নেই, কিন্তু দৈবক্রমে অংশগ্রহনকারী সঠিক উত্তর দিতে সক্ষম হন। আজকের প্রশ্নটি হল ৬৪ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যমানের। ৬৪ সংখ্যাটিকে ঠিক রেখে এখানে হাজারের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে ট্রিলিয়ন শব্দটি। প্রশ্নটি হল " পৃথিবীর বাইরে মহাবিশ্বের অন্য কোথাও প্রানের অস্তিত্ব আছে কিনা, যদি থেকে থাকে তাহলে মানুষের পক্ষে কিভাবে এবং কতদিনে সেখানে পৌছানো সম্ভব?
মহাবিশ্বঃ- মহাবিশ্বের ব্যাপ্তি কতটা তা সঠিক ভাবে বলা মুশকিল কারন প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আবিস্কারের ফলে এর পরিধি ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে। প্রথমে আসি মাপের এককে। পৃথিবীতে প্রচলিত দুরত্বের একক মাইল বা কিলোমিটার দিয়ে মহাবিশ্বের দুরত্ব মাপা অসম্ভব। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের দুরত্ব মাপতে যে একক ব্যবহার করেন তা হল এস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট( AU )। পৃথিবী থেকে সূর্য্য পর্যন্ত দূরত্ব বা ১৫ কোটি কিলোমিটা্র হল এক এস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট। পরিমাপের অপর একক হলো আলোক বর্ষ। আলোর গতি সেকেন্ডে প্রায় তিন লক্ষ কিলোমিটার ধরে নিয়ে এক বছরে আলো যতদুর যেতে পারে সেটি হলো আলোক বর্ষ।
কতবড় আমাদের সৌরজগত? সৌরজগতের সবচে' বাইরে রয়েছে বরফের মেঘ বা Oort Cloud যা পৃথিবী থেকে ১ লক্ষ এস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট বা ১.৮৭ আলোক বর্ষ দূরে। একটা ছোট উদাহরন দিলে সৌরজগতের ব্যাপ্তি সম্পর্কে অনুমান করা যেতে পারে। ১৯৭৭ সালে সৌরজগতের দুরতম গ্রহগুলোর তথ্য সংগ্রহের জন্য NASA "স্পেস প্রোব" ভয়েজার এক এবং দুই পাঠায় যা আজও প্রায় চল্লিশ বছর ধরে পৃথিবীতে তথ্য পাঠাচ্ছে। ভয়েজার-১ হল পৃথিবী থেকে সবচে' দূরে থাকা মনুষ্য নির্মিত মহাকাশযান যেটি ২০১৬ সালের জুন মাসে অবস্থিত ছিল পৃথিবী থেকে ১৩৫ AU বা ২০২৫ কোটি কিলোমিটার দূরে। ১৪,০০০ থেকে ১৮,০০০ বছর পর ভয়েজার- ১, সৌরজগতের শেষ সীমা বা Oort Cloud অতিক্রম করবে। ভয়েজার-১ এর গতিবেগ ২০১৪ সালে্র ডিসেম্বর মাসে ছিল ঘন্টায় ৫৫,০০০ কিলোমিটার। সূর্য্যের মত কোটি কোটি নক্ষত্র রয়েছে একটি গ্যালাক্সিতে আর এমনি কোটি কোটি গ্যালাক্সি নিয়ে তৈরী হল বিশ্বব্রহ্মান্ড। যে গালাক্সীতে সূর্য্যের অবস্থান অর্থাৎ আমরা যে গ্যালাক্সীতে আছি তার নাম হল মিল্কিওয়ে।
সূর্য্যের নিকটতম নক্ষত্র হল আলফা সেন্টোরাই, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ৪.৩৭ আলোক বর্ষ দূরে। আলফা সেন্টোরাই হলো ত্রয়ী নক্ষত্রের সমাহার এবং এর মধ্যে একটি হল প্রক্সিমা সেন্টোরাই।এই বছরই ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরা প্রক্সিমা সেন্টোরাই নক্ষত্রের এমন এক গ্রহ আবিস্কার করেছেন যার অবস্থান প্রানের বসবাস উপযোগী এলাকায়। বিজ্ঞানীরা এখানে তরল পানি তথা প্রানের অস্তিত্বের সম্পর্কে আশাবাদী। এটির অবস্থান থেকে এই গ্রহে প্রানের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী হলেও কিছু ব্যাপার এখনো অমিমাংসিত, যেমন এখানে বায়ুমন্ডল আছে কিনা। গ্রহটি নক্ষত্রের খুব কাছে এবং এর কক্ষপথও খুব ছোট। এটি মাত্র ১১ দিনে একবার নক্ষত্রের চারপাশ ঘুরে আসে। কাছাকাছি হওয়ায় সৌর বিকীরন এবং সৌর ঝড়ের প্রভাব এই গ্রহের উপর কতটা তা এখনো জানা যায় নি। এটি আমাদের পৃথিবীর মতো নিজের অক্ষের চারিপাশে ঘোরে না ফলে এখানে দিন বা রাত্রি নেই। এ গ্রহের একদিকে সবসময় দিন এবং অপর দিকে সবসময় রাত। গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে ১.৩ গুন বড়।
মহাবিশ্বে প্রানের অস্তিত্বঃ- মহা বিশ্বে কোথায় প্রানের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব? প্রশ্নটি বরং অন্যভাবে করা যেতে পারে কোথায় প্রানের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়? জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল সাগান বিশ্বাস করেন মহাবিশ্বে অন্ততঃ কয়েক হাজার গ্রহে প্রানের অস্তিত্ব আছে। অন্যান্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কার্ল সাগানের মত আশাবাদী না হলেও মহাবিশ্বে প্রানের অস্তিত্ব নিয়ে অধিকাংশ বিজ্ঞানী এখন আশাবাদী। মহাবিশ্বে নক্ষত্রের সংখ্যা এখন ৭০০,০০০্,০০্০, ০০০, ০০০, ০০০,০০০,০০ টি। প্রত্যেকটা নক্ষত্রের আবার পাঁচ/দশ বা ততোধিক গ্রহ রয়েছে। সুতরাং এটি বললে অত্যুক্তি হবে না যে পৃথিবীতে যত ধুলিকনা আছে মহাবিশ্বে থাকা গ্রহ নক্ষত্রের সংখ্যা তার চেয়েও বেশী। মহাবিশ্বের বিপুল সংখ্যক তারার প্রায় সবগুলোই কিন্তু নক্ষত্র। সৌরজগতের বাইরে গ্রহের উপস্থিতি আবিস্কৃত হয় সবেমাত্র ১৯৯৫ সালে। সৌরজগতের বাইরে আবিস্কৃত গ্রহদেরকে বলা হয় এক্সোপ্লানেট। এ পর্যন্ত আবিস্কৃত এক্সোপ্লানেটের সংখ্যা ১৭০০।
মহাকাশে প্রানের অস্তিত্বঃ- প্রানের অস্তিত্বের জন্য বেশ কিছু পদার্থ অত্যাবশ্যক। প্রথমতঃ অবস্থান- গ্রহের অবস্থান এমন হতে হবে যে গ্রহটি নক্ষত্র থেকে খুব বেশী দূরে অথাওবা কাছে নয়; অর্থাৎ এলাকাটি খুব বেশী গরম বা ঠান্ডা নয় । প্রানের বসবাস উপযোগী এই এলাকার নাম হল ‘Goldilocks’ zone। অনান্য দরকারী জিনিসগুলো হলো বায়ুমন্ডল, অক্সিজেন, কার্বন, হাইড্রোজেন, পানি, খাদ্য,সহনীয় বিকীরনমাত্রা ইত্যাদি।
মহাকাশ যাত্রাঃ- বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী এবং চলচ্চিত্রের বদৌলতে বিশ্বাস করা স্বাভাবিক যে এক গ্যালাক্সি থেকে আরেক গ্যালাক্সিতে ভ্রমন কঠিন কোনো ব্যাপার নয়। বাস্তবতা কিন্তু অনেক পিছিয়ে। ধরা যাক নিকটতম পৃথিবীর মত গ্রহ প্রক্সিমা বি'র কথা। বর্তমানের দ্রুততম রকেট দিয়ে প্রক্সিমা বি' তে যেতে হলে সময় লাগবে ১৮,০০০ বছর। মহাকাশে যদি প্রানের অস্তিত্ব থেকে থাকে তাহলে এই ১৮,০০০ বছরের মধ্যে তাদের কেউ না কেউ যে পৃথিবীতে পৌছাবে তা প্রায় অবধারিত। সম্প্রতি মহাকাশ ভ্রমনের জন্য গড়ে উঠেছে কিছু বেসরকারী সংস্থা যেমন Tau Zero Foundation, Project Icarus এবং Breakthrough Starshot। এরা আরো উন্নততর মহাকাশ যান উদ্ভাবন করে অন্যান্য সৌরজগতে পৌছানোর চেস্টা করছেন।
Breakthrough Starshotঃ- এটি রুশ বিলিওনিয়ার Yuri এবং Julia Milner এর প্রকল্প। তাদের প্রচেস্টা হচ্ছে ক্ষুদ্র মনুষ্যবিহীন যানের পাল'কে পৃথিবী থেকে প্রেরিত লেজার রশ্মি দিয়ে আঘাত করে মহাকাশযানের গতিবেগ বাড়ানো। যদি মহাকাশযান যথেস্ট ক্ষুদ্র এবং হালকা হয় তাহলে এই পদ্ধতিতে মহাকাশযানের গতিবেগ বাড়িয়ে আলোর গতিবেগের এক পঞ্চমাংশ করা সম্ভব, অর্থাৎ এই মহাকাশযান দিয়ে বিশ বছরে প্রক্সিমা বি গ্রহে পৌছানো সম্ভব হবে। এই ক্ষুদ্র মহাকাশযা্নে মানুষ না থাকলেও প্রক্সিমা - বি থেকে পাঠানো তথ্য দিয়ে এ গ্রহে প্রানের উপস্থিতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ন তথ্য পাওয়া যাবে।
WARP DRIVEঃ- এটি হল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর চলচ্চিত্র যেমন স্টারট্রেক , ট্রান্সফরমার, ডার্ক ম্যাটার ইত্যাদিতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি যেখানে আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে ভ্রমন করে এক গ্যালাক্সি থেকে অন্য গাল্যাক্সিতে ভ্রমনের চিত্র দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হল- ফিজিক্সের সুত্রমতে আলোর চেয়ে বেশী গতিতে ভ্রমন করা অসম্ভব। আইনস্টাইনের সুত্র অনুযায়ী আলোর কনা বা ফোটনের চেয়ে বেশী ভরের কোনো পদার্থের পক্ষে আলোর সমান গতিতে ভ্রমন করা অসম্ভব। সম্প্রতি নাসা উদ্ভাবন করেছে Xenon Thruster প্রযুক্তি, যেখানে প্রচলিত জ্বালানীর ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ব্যবহার করে মহাকাশযানের গতিবেগ ঘন্টায় ১,৪৫,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। অবশ্য এই গতিবেগে কারো জীবদ্দশায় সৌরগতের বাইরে অন্য নক্ষত্রের কোনো গ্রহে যাওয়া সম্ভব নয়। যেহেতু এক নক্ষত্র থেকে অন্য লক্ষত্রে যাত্রা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার এই দীর্ঘ সময়ের জন্য যাত্রীর প্রয়োজনীয় খাবার, পানীয়,অক্সিজেন ইত্যাদির যোগান আসবে কোত্থেকে? মানুষকে ঠান্ডা করে ঘুম পাড়িয়ে নির্দিস্ট সময় পর জাগিয়ে তুলে হয়ত এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। ঠান্ডা করে ঘুম পাড়ানোর এই পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে Cryosleep। এখনো এই পদ্ধতির কোনো কার্য্যকরী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয় নি। অন্য এক সমাধানের কথা ভাবা হচ্ছে, যেখানে মানুষের Embryo কে পাঠানো হবে মহাশুন্যে, যা অন্য গ্রহে পৌছে পূর্নাঙ্গ মানুষ হিসেবে জন্ম নেবে। এ পদ্ধতিও এখনো তৃনমূল পর্যায়ে।
সত্যিই কি মানুষ গ্রহান্তরের প্রানীর সাথে যোগাযোগ করবে বা অন্য গ্রহে গিয়ে বসবাস করবে? সম্ভবতঃ আমাদের জীবদ্দশায় নয়। আজ থেকে পাঁচশ' বছর আগে মহাসমুদ্র পাড়ি দিয়ে অন্য মহাদেশে যাওয়া কত অনিশ্চিত এবং সময়সাধ্য ব্যাপার ছিল অথচ তা এখন অনেক সহজ। হয়ত এমন সময় আসবে যখন অন্য নক্ষত্রের কোনো গ্রহের প্রানীর কাছে পৌছানো বর্তমানের ভিন্ন মহাদেশ ভ্রমনের মত সহজ হয়ে যাবে।
২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪০
মার্কো পোলো বলেছেন:
তথ্যবহুল পোস্ট। নতুন কিছু জানা হলো।
৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:২৭
মাজহার সুমন বলেছেন: অনেক কিছু জানা হল। আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১২
মোঃ আক্তারুজ্জামান ভূঞা বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।