নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Bangladesh my home

বীরেনদ্র

Nothing much to say about

বীরেনদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিউটি এবং দানব।

২৮ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:০৭


অনেক অনেক দিন আগের কথা।এক দেশে বাস করতো এক ধনী সওদাগর। তার ছিল তিন ছেলে আর তিন মেয়ে। তিন মেয়েই ছিল সুন্দরী কিন্তু ছোট মেয়ে ছিল রুপে গুনে সবার সেরা। অসামান্য সুন্দরী এবং গুনবতী ছোট মেয়েকে সবাই ডাকত বিউটি নামে। বড় হলেও তার নাম বিউটিই রইলো। ছোট বোন বিউটির রুপ এবং গুনের সুখ্যাতিতে হিংসেয় জ্বলে পুড়ে মরতো বড় দুই বোন। অহঙ্কারী এবং স্বার্থপর বড় দুই বোন নাচ গান, থিয়েটার ,খানাপিনা এবং আমোদ ফূর্তিতে ব্যাস্ত থাকতো। অন্য দিকে বিউটি ছিল সহজ সরল দয়ালু এবং তার অধিকাংশ সময় কাটত ভাল ভাল বই পড়ে। বড় দুই বোন আড়ালে আবডালে বিউটিকে নিয়ে হাসাহাসি করতো এবং বিউটির সাথে ব্যবহার করতো চাকরানীর মত । বড় বোনদের সব খারাপ আচরন মুখ বুজে সহ্য করতো বিউটি।
সওদাগরের ব্যাবসায় একদিন ধ্বস নামল, সামুদ্রিক ঝড়ে নিখোজ হয়ে গেল তার সমস্ত জাহাজ। ধার দেনায় ডুবে শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিলেন তিনি। গ্রামের বাড়ীতে সমস্ত কাজ নিজেদের করতে হত। প্রথম প্রথম অসুবিধে হলেও আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নিল বিউটি কিন্তু বড় দুই বোন কোন কাজই করত না। দুঃখে কস্টে তাদের দিন কাটছিলো। হঠাত একদিন সওদাগর খবর পেলেন যে তার হারিয়ে যাওয়া জাহাজগুলোর মধ্যে একটি বন্দরে ফিরে এসেছে। আশায় বুক বাঁধলেন তিনি, ভাবলেন নতুন করে ব্যবসা শুরু করে সংসারের হাল ফেরাবেন। শহরে রওয়ানা দেওয়ার আগে ছেলেমেয়েদের ডেকে সওদাগর জিজ্ঞেস করলেন তাদের কার কি চাই? ছেলেরা চাইলো ঘোড়া আর তরবারি, বড় দুই মেয়ে চাইল দামী পোষাক এবং গয়না। বিউটি চাইলো শুধুমাত্র একটা গোলাপ ফুল ,কারন তাদের গ্রামে গোলাপ ফুল ছিল না।
শহরে গিয়ে নিরাশ হলেন সওদাগর। জাহাজ ঠিকই ফিরে এসেছে কিন্তু আদালতের হুকুমে সেটি এখন পাওনাদারদের দখলে। ছেলেমেয়েদের উপহার কেনার জন্য তার কাছে কোনো টাকা নেই। দুঃখ ভারাক্রান্ত সওদাগর বাড়ীর দিকে ফিরে চললেন। বাড়ি থেকে ত্রিশ মাইল দূরের গভীর বনের মধ্যে সন্ধ্যার কিছুক্ষন আগে পথ হারিয়ে ফেললেন তিনি। চারদিক অন্ধকার হয়ে শুরু হল তুষার ঝড়। বাতাসের ঝাপটায় বার দুয়েক ঘোড়া থেকে ছিটকে পড়লেন তিনি। গভীর বনের মধ্যে অন্ধকারে ঠান্ডায় জমে মরতে হবে অথবা বনের নেকড়েরা তাকে ছিড়ভুড়ে খাবে- ভাবতে থাকলেন সওদাগর। হঠাৎ সওদাগরের চোখে পড়ল দূর থেকে ভেসে আসছে ক্ষীন আলোর রেখা। একটু এগিয়ে গিয়ে তিনি দেখতে পেলেন আলোয় ঝলমলে চমৎকার এক রাজপ্রাসাদ। ঘোড়াকে আস্তাবলে বেঁধে রেখে প্রাসাদের বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে রাতের মত আশ্রয় চাইলেন তিনি। আপনা আপনি খুলে গেল দরোজা। ভেতরে ঢুকে অবাক হলেন সওদাগর; কোথাও কেউ নেই। বার বার ডেকেও কারো কোনো সাড়া পেলেন না। ডাইনিং হলে গিয়ে দেখলেন টেবিলের উপর থরে থরে সাজানো উৎকৃস্ট রাজকীয় খাবার। খাওয়াদাওয়া শেষ করে চমৎকার উষ্ণ বিছানায় রাত কাটালেন তিনি। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেও কাউকে খুজে পেলেন না । ডাইনিং টেবিলে গত দিনের মত সাজানো উৎকৃস্ট খাবার দিয়ে প্রাতঃরাশ সারলেন। আয়োজনের কোথাও কোনো ত্রুটি নেই, অথচ কেউই নেই সে প্রাসাদে। প্রাসাদ থেকে বেরোতেই চোখে পড়ল চমৎকার ফুলের বাগান। অজস্র গোলাপ ফুল ফুটে আছে সে বাগানে। বিউটির আবদার মনে পড়ায় একটি গোলাপ ফুল ছিড়লেন সওদাগর।
সাথে সাথে বজ্র নিনাদ ভেসে এলো- “বিশ্বাসঘাতক, এবার তোকে মরতে হবে”। প্রাসাদ থেকে ভয়ংকর এক দানব বেরিয়ে এল ” আমি তোকে বিপদে আশ্রয় দিয়েছি, খাবার দিয়েছি, ঘুমানোর জায়গা দিয়েছি আর তুই আমার বিনা অনুমতিতে আমার শখের ফুল ছিড়েছো, তোর নিস্তার নেই” হুংকার ছাড়লো দানব।
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে প্রানভিক্ষা চাইলেন সওদাগর “ আমাকে মেরো না, আমি আমার ছোট মেয়ের সাধ পুরন করতেই এ কাজ করেছি। দয়া করে আমাকে যেতে দাও”।
-“ও তাহলে তোমার মেয়ে আছে। ঠিক আছে যাও ওদের সাথে দেখা করে এস। আমি তোমাকে এক সপ্তাহের জন্য বাড়ীতে ফেরার অনুমতি দিচ্ছি। কিন্তু মনে রেখ ঠিক এক সপ্তাহ পর তুমি অথবা তোমার মেয়েদের কাউকে এ প্রাসাদে ফিরে আসতে হবে। এর অন্যথা হলে তোমাদের কারো রক্ষা নেই।
মরার আগে ছেলেমেয়েদের অন্ততঃ দেখে যেতে পারবেন- এই ভেবে রাজী হলেন সওদাগর। দামী পোষাক, হীরের গয়না , টাকা পয়সা উপহার দিয়ে সওদাগরকে বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দিল দানব। সওদাগর বাড়িতে ফিরলে উপহার এবং টাকা পয়সা পেয়ে ছেলেমেয়েরা সবাই খুব খুশী। কিন্তু সওদাগরের মনে শান্তি নেই । বিউটির জেরার মুখে সত্যি ঘটনা স্বীকার করলেন সওদাগর। ছেলেরা যুদ্ধ করে দানবকে হত্যা করার অনুমতি চাইলে সওদাগর ছেলেদের জানালেন ভয়ংকর সে দানবের সাথের যুদ্ধে তাদের জেতার কোনো আশা নেই।এবার বিউটি তার বাবার কাছে দানবের প্রাসাদ দুর্গে যাওয়ার অনুমতি চাইলো। বিউটির পীড়াপিড়ীতে বাবা রাজী হলেন।
প্রাসাদ দুর্গে অত্যন্ত বিনীতভাবে বিউটিকে অভ্যর্থনা জানালো দানব। “এখন থেকেএ রাজপ্রাসাদ এবং সবকিছুর মালিক তুমি আর আমি তোমার ভৃত্য” জানালো দানব। বিউটিকে মূল্যবান পোষাক, হীরের গয়না এবং অন্যান্য উপহার দিল দানব। একসাথে খাওয়াদাওয়া ওঠাবসা করতে শুরু করলো দু'জনে। প্রতিরাতে খাবার টেবিলে বিউটিকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিত দানব কিন্তু বিউটি সব সময় তা প্রত্যাখ্যান করতো। বিউটি দানবকে জানাতো যে সে তার একজন ভালো বন্ধু মাত্র , এর চেয়ে বেশী কিছু নয়। মজার ব্যাপার হল প্রতিরাতেই বিউটি স্বপ্ন দেখতো সুদর্শন এক রাজকূমার তার পানি প্রার্থনা করছে। প্রতিদিন একই স্বপ্ন দেখায় বিউটির ধারনা জন্মালো যে এই প্রাসাদের কোথাও রাজকুমারকে লুকিয়ে রেখেছে এই দানব। কিন্তু সারা প্রাসাদ তন্ন তন্ন করে খুজেও রাজকুমারের কোন হদিস সে পেল না। বীভৎস ভয়ংকর চেহারার দানব একটিবারের জন্যও বিউটির সাথে কিন্তু খারাপ ব্যবহার করেনি। বরং বিউটির কাছে মনে হত এ দানব যে কোনো মানুষের চেয়ে দয়ালু, ভদ্র এবং মার্জিত। দানবের প্রাসাদের অফুরন্ত প্রাচূর্য্য এবং আতিশয্যের মধ্যে মহাসুখে কয়েক মাস কাটালো বিউটি। তারপর একদিন বাবা এবং পরিবারের অন্যান্যদের সাথে দেখা করার জন্য দানবের অনুমতি চাইলো। দানব শর্তসাপেক্ষে বিউটিকে বাবার কাছে যেতে দিতে রাজী হল। দানবের শর্ত হল- ঠিক এক সপ্তাহ পরে বিউটিকে দানবের কাছে ফিরে আসতে হবে। বিউটি যাওয়ার সময় দানব তাকে একটি যাদুর আয়না এবং একটি আংটি উপহার দিলো। এই আয়নাতে তাকালেই দানবকে দেখতে পাবে বিউটি, আর আংটি তিনবার ঘুরিয়ে মূহুর্তেই দানবের কাছে ফিরে আসতে পারবে।
বাড়ীতে ফিরে এল বিউটি। দানবের দেওয়া দামী পোষাক এবং হীরে জহরতের গয়নায় বিউটিকে দেখাচ্ছিলো ঠিক রাজকুমারীর মত। বড় দুই বোন বিউটিকে দেখে অবাক হল কারন তারা ভেবেছিল এতদিন দানবের অত্যাচারে বিউটি হয়ত মারা গেছে অথবা এখন সে হতশ্রী। বিউটি তার দুই বোনকে দানবের দেওয়া বহুমূল্য পোষাক এবং গয়না উপহার দিলো। কিন্তু বোনেরা তা গায়ে দিতেই পোষাক পরিনত হল ছেড়া ন্যাকড়ায় আর হীরে জহরতগুলো পরিনত হল কালো পাথরে। বিউটকে জব্দ করার উপায় খুজতে থাকলো দুই বোন। তারা বিউটির সাথে খুব ভাল ব্যবহার করা শুরু করলো। বিউটির যাওয়ার দিন ঘনিয়ে এলে কান্নাকাটি শু্রু করলো দুই বোন। বার বার তারা অনুরোধ করতে থাকলো অন্ততঃ আরো একটা দিন বাড়িতে থেকে যাক বিউটি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিউটিকে দেরী করানো কারন তাতে দানবের দেওয়া শর্ত ভঙ্গ হবে এবং বিউটি ফিরলেই তাকে খুন করে ফেলবে দানব। বোনদের পীড়াপীড়িতে বিউটি প্রথম রাজী হল। কিন্তু পরক্ষনেই বিউটির মনে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের অপরাধবোধ কাজ করতে শুরু করল। যাদু আয়নায় তাকিয়ে আঁতকে উঠলো বিউটি। সে দেখল গোলাপ বাগানের বিউটির বাবার ছিড়ে নেওয়া গাছের পাশে অর্ধমৃত অবস্থায় পড়ে আছে দানব। আংটি তিনবার ঘুরিয়ে মুহুর্তের মধ্যে প্রাসাদ দুর্গে এসে উপস্থিত হল বিউটি। দানবের পাশে বসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো সে । বার বার বলতে লাগলো ”আমি তোমাকে ভালবাসি, আমি তোমাকে সত্যি সত্যি ভালবাসি” বিউটির চোখের জল গড়িয়ে পড়ল দানবের উপর। মুহুর্তের মধ্যে খসে পড়ল দানবের খোলস এবং ভেতর থেকে বেরিয়ে এল বিউটির স্বপ্নে দেখা রাজকুমার। রাজকুমার বিউটিকে জানালো যে সে ছিল এই রাজ্যের রাজকুমার। এক তুমুল ঝড়বৃস্টির রাতে তাদের প্রাসাদে এক পরীকে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করেছিলেন রাজকুমার। পরীর দেওয়া অভিশাপে রাজকুমার পরিনত হয়েছিলেন দানবে। পরী রাজকুমারকে জানিয়েছিল যদি দানবের কুৎসিত বীভৎস চেহারা দেখার পরও কেউ তাকে ভালবাসে তাহলেই রাজকুমার ফিরে পাবে তার আগের জীবন। রাজকুমার বিয়ে করল বিউটিকে এবং তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকলো।
বিঃদ্রঃ- গল্পটি ফরাসী শিশু সাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল সুজান বারবোর লেখা La belle et la bete ( Beauty and the beast) রুপকথার বাংলা অনুবাদ। সুজানের লেখা গল্পটি প্রকাশিত হয় ১৭৪০ সালে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সুজানের লেখা গল্পের ভিন্ন রুপ চোখে পড়ে যেমন Cupid and Psyche, The Golden Ass এবং The pig king। বাঙ্গলা শিশু সাহিত্যেও পরীর অভিশাপে অভিশপ্ত ব্যাঙ রুপী রাজকুমার এবং রাজকন্যার গল্প প্রচলিত আছে ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:২৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


La belle et la bete পৃথিবী বিখ্যাত রূপকথা

২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৫২

রফিকুলইসলাম বলেছেন: সুন্দর

৩| ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ ভোর ৪:২২

উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: দারুনতো...

আপনার ব্লগ গুলো পড়লে চেনাই যায় না আগে আপনার রূপ আগে ওমন ছিলো।

৩১ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৭:৪৩

বীরেনদ্র বলেছেন: আপনার বক্তব্য পরিস্কার ভাবে বলুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.