নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Bangladesh my home

বীরেনদ্র

Nothing much to say about

বীরেনদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

সক্রেটিস- ( প্রথম পর্ব) ।

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:৩৮

প্রায় আডাই হাজার বছর আগের এথেন্স নগরী। বেটে খাটো একজন মানুষ দিনরাত বসে থাকেন এথেন্সের প্রধান বাজার বা "আগোরা"য়। মাথায় তার উশখো খুশকো চুল, মুখে লম্বা গোফ দাড়ি, থ্যাবড়ানো নাক এবং গোল বড় বড় চোখ। এ মানুষটিকে দেখে অনেকে ভাবেন লোকটা পাগল, আবার অনেকের কাছে তিনি নমস্য ব্যাক্তি। নোঙ্গরা দুর্গন্ধযুক্ত চাদর গায়ে দিয়ে এথেন্সের প্রচন্ড শীতের মধ্যে তিনি খালি পায়ে চলে ফিরে বেড়ান এবং কাজকর্ম তেমন কিছু তিনি করেন না। ছেলেমেয়েরা কিছু খেয়েছে কিনা, সংসার কিভাবে চলছে ইত্যাদি কোনো কিছুতেই তার ভ্রুক্ষেপ নেই । তার একমাত্র কাজ হলো যাকে ইচ্ছে যা খুশী তাই প্রশ্ন করা। পবিত্র ধর্ম এবং দেব দেবীরাও বাদ যায় না তার হাত থেকে। তার প্রশ্ন গুলো প্রচলিত ধ্যান ধারনার পরিপন্থী এবং উত্তর দেওয়াও কঠিন যেমন - দেবরাজ জিউসই যদি বৃস্টি দেন তাহলে আকাশে মেঘ হলেই শুধু বৃস্টি হয় কেন, পরিস্কার আকাশ থেকে কেন বৃস্টি হয় না? তার আরো প্রশ্ন হল পূন্য কি? বিচার কি? মানুষের জীবন কেমন হওয়া উচিত? মানুষ কেন অপরাধ করে- ইত্যাদি ইত্যাদি । প্রখ্যাত নাট্যকার এরিস্টোফেনিস তো তার “ক্লাউড” নাটকে এ লোককে ভাড় হিসেবেই উপস্থাপন করেছেন ।
তার প্রশ্ন শুনে শুনে অনেকেই তার উপর বিরক্ত। যুবক ছেলেমেয়েরা অনেকেই তার প্রশ্ন শুনে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে, অনেকে ভাবে - তাইতো এ মানুষটির বক্তব্য পাগলের প্রলাপ মনে হলেও কথাগুলো তো সত্যি। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাস, জীবনের মৌলিক গূনাবলী এবং উপাদান নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করে। এ ভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে তো দেশ উচ্ছন্নে যাবে, যুব সমাজ উচ্ছন্নে যাবে! বিরক্ত এথেন্স বাসীরা পাগলের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিল এবং তাকে আটক করে জেলে পোরা হল। বিচারে মানুষটি দোষী সাব্যস্ত হলেন এবং রায় হল - হেমলক বিষ পান করে তাকে মরতে হবে । কে এই মানুষটি? ইনিই হলেন পাশ্চাত্য দর্শনের স্থপতি - সক্রেটিস।
গ্রীক শব্দ Philem (ভালবাসা) এবং Sophia (জ্ঞান) থেকে দর্শন শাস্ত্র বা Philosophy'র উৎপত্তি যার আভিধানিক অর্থ হল জ্ঞানের জন্য ভালবাসা। Sophia'র সূত্র ধরেই প্রাচীন এথেন্সে জ্ঞানী ব্যাক্তিদের বলা হত Sophist।সক্রেটিস ছিলেন খৃস্টপূর্ব যুগের এথেন্সের সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক। দর্শনশাস্ত্রে তার প্রভাব এত বেশী গভীর যে অধিকাংশ দার্শনিক সক্রেটিসকে দর্শনশাস্ত্রের প্রথম মাইল ফলক হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। তারা সক্রেটিসের আগের দার্শনিকদেরকে অভিহিত করে থাকেন Pre-Socratic এবং পরবর্তীকালের দার্শনিকদের অভিহিত করেন Post Socratic হিসেবে । তার সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি কারন তিনি নিজে কিছুই লিখে যাননি; আমরা তার সম্পর্কে যতটুকু জানতে পারি তা হল তার ছাত্র -বিশেষ করে প্লেটো এবং জেনোফোনের লেখা “Dialogue”, “Apology”, “Symposium”প্রভৃতি বই, থেকে।
সক্রেটিসের জন্ম ৪৬৯ খৃস্টপূর্বাব্দে, এথেন্সে। বাবা সোফ্রোনিসকাস( Sophroniscus) ছিলে্ন রাজমিস্ত্রি এবং মা ফেনারেট (Phaenarete) ছিলেন ধাত্রী। অত্যন্ত সাধারন পরিবারে তার জন্ম হওয়ায় তিনি শুধুমাত্র মৌলিক শিক্ষা লাভের সুযোগ পান। প্লেটোর “Symposium” থেকে সক্রেটিসের শারীরিক অবয়বের বর্ননা মেলে। তিনি ছিলেন ছোটো, বেটেখাটো, তার মাথা ছিল অস্বাভাবিক মোটা, নাক ছিল থ্যাবড়ানো এবং চোখ দুটো ছিল ভেসে থাকা গোল গোল। ছোট বেলা থেকেই জ্ঞানের প্রতি ছিল তার অপরিসীম আগ্রহ। প্লেটোর লেখা থেকে জানা যায় যে তিনি প্রাচীন এথেন্সের শীর্ষ দার্শনিক Anaxagoras এর ভক্ত পাঠক ছিলেন এবং গ্রীসের স্বর্নযুগের সম্রাট পেরিক্লিসের বিদুষী স্ত্রী Aspasia এর কাছে অলঙ্কার বিদ্যা শেখেন। ছেলেবেলায় তিনি পাথর খোদাই এবং মূর্তি তৈরীর কাজ করেন। যুবক বয়সে তিনি সেই সময়কার প্রথা অনুযায়ী সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং পেলোপনেসিয়ান যুদ্ধে অংশ নেন। প্লেটো এবং জেনোফনের লেখা থেকে জানা যায় তিনি Amphipolis, Delium এবং Potidaea এর যুদ্ধে Hoplite ( বর্মে আচ্ছাদিত সৈন্য) হিসেবে অংশ নেন। বিখ্যাত এথেনীয়ান জেনারেল এবং রাস্ট্রনায়ক Alcibiades এর লেখা থেকে জানা যায় যে সক্রেটিস Potidaea এর যুদ্ধে এই জেনারেলের জীবন বাচিয়েছিলেন । সক্রেটিস তার বিচারের সময় তার যুদ্ধক্ষেত্রের উধৃতি দিয়ে জুরীদের প্রশ্ন করেন “ আপনাদের মধ্যে কেউ কি বিশ্বাস করেন যে যুদ্ধে প্রান হারাতে হতে পারে জেনে কোনো সৈনিকের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালানো উচিত?" সৈনিক জীবন শেষে তিনি দার্শনিকের জীবন বেছে নেন।
খৃস্টপূর্ব ৪৪৯-৪৩১ ছিল এথেন্সের স্বর্নযুগ। সেই সময়ে গ্রীস বিভক্ত ছিল বিভিন্ন নগর রাস্ট্রে। এথেন্সের প্রতিদ্বন্দী নগর রাস্ট্র ছিল স্পার্টা। খৃস্ট পূর্ব ৪৩১ সালে স্পার্টা'র সাথে এথেন্সের যুদ্ধ শুরু হয় যাকে বলা হয় পেলোপনেসিয়ান যুদ্ধ। স্পার্টার পদাতিক বাহিনী ছিল শক্তিশালী। অপর দিকে এথেন্সে নৌবাহিনী ছিল অপ্রতিদ্বন্দী। পেরিক্লিস নৌ পথে স্পার্টাকে আক্রমন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং প্রথমদিকে সাফল্যও লাভ করেন। এই সময়ে এথেন্সে মহামারী আকারে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে । সম্রাট পেরিক্লিস নিজেও প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পেলোপনেসিয়ান যুদ্ধ চলে খৃস্টপূর্ব ৪০৪ সাল অবধি যখন এথেন্স আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। যুদ্ধশেষে সর্বসান্ত এথেন্সের ক্ষমতায় বসে ত্রিশ জন কমিশনারের এক কাউন্সিল বা Thirty Tyrants । সেই সময়ে দুই ধরনের শাসন পদ্ধতি প্রচলিত ছিল ১) Democracy এবং ২) Oligarchy । Democracy ছিল সর্ব সাধারনের অংশগ্রহনের শাসনব্যাবস্থা অন্যদিকে Oligarchy ছিল মুস্টিমেয় কিছু লোকের শাসন। ত্রিশ জনের কাউন্সিল বা Thirty Tyrants এথেন্সে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা এথেন্সের ৫% লোককে হত্যা করে এবং অনেককে নির্বাসনে পাঠায়। তের মাস পর তারা গন বিদ্রোহে উৎখাত হয়। ত্রিশজন কমিশনারের মধ্যে Critias এবং Alcibiades ছিলেন সক্রেটিসের প্রাক্তন ছাত্র। সক্রেটিস Democracy 'র বিরোধিতা করেন এবং Oligarchy কে সমর্থন করেন, যদিও তিনি Thirty Tyrants এর অনেক আদেশ অমান্য করেন। (চলবে)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:২৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



মোটামুটি চলে; তবে, চাদরে গন্ধ মন্ধ ছিল, এগুলো লেখকের মুদ্রা দোষ। নিজের কাপড় চোপড় পরিস্কার রাখবেন।

২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:৫১

করুণাধারা বলেছেন:

স্কুলে থাকতে আমাদের একটা পাঠ্য ছিল সক্রেটিসকে নিয়ে, Wise men of the old.

মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ।

৩| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: খুব মন দিয়ে পড়লাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.