![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাই, আমি হাবিব। আমি একজন ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র। আপনাকে আমার ব্লগ এ স্বাগতম।
"ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা" (পর্ব ৪)
শামীম ক্লাস রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো। ক্লাসের শেষ প্রান্তের জানালাটার পাশে তার মায়াবতী দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার জানালার বাহিরে। শামীম দরজা টা চাপিয়ে দিল। সেই শব্দে ফারজানা পিছনে ফিরিয়ে তার দিকে তাকালো। শামীমের দিকে তাকিয়ে ফারজানা ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।
শামীম ভাবছে সে কোথায় থেকে শুরু করবে? কীভাবে সে তাকে বলবে, কতটা ভালোবেসে ফেলেছে সে তাকে। যাকে দেখার জন্য এতগুলো দিন সে অস্থিরতায় কাটিয়েছে। আজ সেই মায়াবতী তার সামনে। কিন্তু সে আজ নীরব। তার মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না।
তাকে অবাক করে ফারজানা ই বলে ফেললো, আপনি ই শামীম?
হ্যা আমিই শামীম।
ফারজানার চোখের চাহনি যেন অন্য রকম। কিছু একটা খুজে পাওয়ার আনন্দ তার চোখে মুখে।
ফারজানাঃ আমি আপনাকে এর আগে দুইবার দেখেছি।
শামীমঃ দুইবার? কোথায়? কিভাবে?
ফারজানঃ আমার মায়ের গত বছর একটা সড়ক দূর্ঘটনা হয়। এই পৃথিবীতে আমার একমাত্র আপন আমার মা। খবর পেয়ে আমি আর আমার বাবা ছুটে যাই হসপিটালে। সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম, আপনি আমার মাকে এখানে নিয়ে এসেছেন এবং রক্তও দিয়েছেন। আমি সেদিন আপনাকে প্রথম দেখি। বাবা আপনার সাথে কথা বলেছিলো। বাবা কোন ছেলের সাথে কথা বলা একদম পছন্দ করেন না। তাই সেদিন আপনাকে আমি ধন্যবাদটুকু ও জানাতে পারি নি। জানতাম, আপনার ঋণ ধন্যবাদ দিয়ে আদায় হবে না। আপনি সেদিন আমাকে এতিম হওয়া থেকে বাঁচিয়েছেন। মা ছাড়া এই দুনিয়ায় আমার আর কেউ নেই।
শামীমঃ উনি এখন কেমন আছেন?
ফারজানাঃ আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ আছেন। তারপর আমি আপনাকে একদিন ব্যাডমিন্টন খেলতে দেখেছি। আমি আমার খালামনির বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম রাতের বেলায় জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেখানে আপনাকে দেখলাম। ভেবেছি সেদিন আপনার সাথে কথা বলবো। সেদিনের ধন্যবাদ টা আজ দিবো। কিন্তু আমি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে আপনি সেখান থেকে চলে যান। আর দেওয়া হলো না আপনাকে ধন্যবাদ। আজ আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে। মনে মনে আপনাকে অনেক খুঁজেছি। আমার মা কে দেখলেই আপনার কথা মনে পড়ে। যেই মানুষটার জন্যে আজ আমার মা আমার সামনে দাঁড়িয়ে, যেই মানুষটার রক্ত আমার মার জীবন বাঁচিয়েছে। সেই মানুষটাকে একটা ধন্যবাদ ও না দিতে পারার কষ্ট আমি এতোদিন বয়ে বেড়িয়েছি।
শামীমঃ আরে আরে আপনি কান্না করবেন না। আমি ও আপনাকে এতোদিন খুঁজেছি। অনেক কষ্টে আপনার সামনে আসতে পেরেছি। আপনাকে আমি কিছু কথা বলতে চাই।
কিন্তু সেই কথাগুলো বলার জন্য এই সময় টা উপযুক্ত নয়। আমি আপনার সাথে অন্য কোথায় ও দেখা করতে চাই। পারবেন কি আমাকে আধা ঘন্টা সময় দিতে?
ফারজানাঃ ওকে আমি কাল এগার টায় স্কুলের পিছনের পার্ক টায় আপনার জন্য আমি অপেক্ষা করবো।
শামীমঃ আজ তাহলে আমি আসি। কাল দেখা হবে। আপনি ভালো থাকবেন।
কথাটি বলে শামীম উত্তরের অপেক্ষা করলো না। পিছু ফিরে হাটতে শুরু করলো। সে আজ এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ। ফারজানা অপলক দৃষ্টিতে তার চলে যাওয়া দেখছে...
শামীম বের হয়ে আসার সাথে সাথে তার দিকে তার ফ্রেন্ডস রা একগাদা প্রশ্ন ছুড়ে দিলে। "চল যেতে যেতে বলছি" - এতটুকু বলে সে হাটতে লাগলো। বাসায় আসতে আসতে সে সবাইকে সব খুলে বললো।
রাত ৯.৩০-
ফারজানা তার মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। তার মাকে তার বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু মা বেপার টা কিভাবে নিবে। মা যদি বাবার ভয়ে কাল দেখা করতে নিষেধ করে দেয়? না না, দেখা আমাকে করতেই হবে। দেখা করবো এই কথা মাকে বলা যাবে না।
ফারজানা: মা, যেই ছেলেটা তোমাকে রক্ত দিয়েছে। আজ সেই ছেলেটার সাথে আমার দেখা হয়েছে।
মাঃ কি বলিস। কোথায়? ছেলেটাকে বাসায় নিয়ে আসলি না কেন? আমি ছেলেটাকে একটু দেখতাম।
ফারজানাঃ স্কুলের প্রোগ্রামে দেখেছি। বাবার ভয়ে আনি নি। বাবা বেপার টা কিভাবে নিবে কে জানে।
মাঃ হ্যা তা অবশ্য ঠিক। কোথায় থাকে ছেলেটা?
ফারজানাঃ তা তো জানি না। তবে মা, ছেলেটা খুব ভালো।
মাঃ তোর চোখে আমি অন্য কিছু দেখছি। দেখিস মা, তোর বাবা কে তো তুই চিনিস। মানুষ খুন করতেও তার হাত কাপে না। দেখিস এমন কিছু করিস না, যেন তোর বাবা ছেলেটার কোন ক্ষতি করে ফেলে।
ফারজানা আর কোন কথা বলতে পারলো না। সত্যিই তো তার বাবার কথা তো সে ভাবে নি। তার বাবার লোকজন তো সারা এলাকায় আছে। কেউ যদি তাদের একসাথে দেখে ফেলে, তাহলে তো শামীম এর....
নাহ আর ভাবতে পারছি না। আমার জন্য তার কোন ক্ষতি হোক তা আমি চাই না। তাহলে কি আমি যাবো না?? কিন্তু শামীম কে যে বলেছি? সে তো অপেক্ষা করবে। না যাওয়া কি ঠিক হবে? কিন্তু গেলে ও তো বিপদ। আর এতে শামীমের ই ক্ষতি হবে।
নাহ যাবো না আমি। আমি চাই না ওর কোন ক্ষতি হোক।
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো ফারজানা।
এইদিকে শামীম নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। সে ভাবছে কিভাবে ফারজানা কে তার মনের কথা বলবে। আচ্ছা সে কি রাজি হবে?
চলবে.......
©somewhere in net ltd.