![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাই, আমি হাবিব। আমি একজন ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র। আপনাকে আমার ব্লগ এ স্বাগতম।
গল্প: বিসিএস ক্যাডার
আদি আর মেঘা দুজন এবছর এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ করেছে। তারা দুজন খুব ভালো বন্ধু। সেই ক্লাস সিক্স থেকেই তাদের পরিচয়। মেঘা সব সময় ক্লাসে প্রথম হতো, আর আদি দ্বিতীয়। তাই বলে মেঘার মধ্যে কোন অহংকার ছিলো না। কিন্তু আদি কখনোই এটা মেনে নিতে পারতো না। আদি সবসময় চাইতো মেঘাকে পিছনে ফেলে প্রথম হতে। কিন্তু তা সে কখনোই পেরে উঠতো না। মেঘা মধ্যবিত্ত পরিবারের। কিন্তু আদিদের আর্থিক অবস্থা অনেক খারাপ। আদির বাবা নেই। আছে তার মা, আর ছোট একটা বোন। তাদের পরিবারের খরচ তার মামা বহন করে। আদির ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন সে বিসিএস ক্যাডার হবে। মেঘার তেমন কোন স্বপ্ন ছিলো না। তাদের এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলো। রেজাল্ট হলো। দুজনেই জিপিএ ৫ পেল। আদি এবার খুব খুশি। এট লিস্ট সে আর মেঘা একই রেসাল্ট করেছে। কলেজে ভর্তি হবার পালা। মেঘা ভর্তি হয়ে গেছে। কিন্তু আদি ভর্তি হতে পারছে না। তার মামা বলে দিয়েছে। তাকে আর পড়ালেখা করাবে না। সংসার এর হাল এবার আদিকে ধরতে হবে। আদির মামা তাকে একটা কাজ শিখাবে, তারপর থেকে তাকে সেই কাজই করতে হবে। আদি এমনটা চায় না। সে বিসিএস ক্যাডার হতে চায়। তবে কি তার স্বপ্ন পূরন হবে না? ওইদিকে মেঘা তার বন্ধুদের কাছে খোজ নিয়ে জানতে পারে আদির সমস্যার কথা। বুকের ভিতর কেমন জানি একটা যন্ত্রণা অনুভব করতে লাগলো মেঘা। সে যে সেই ক্লাস নাইন থেকে সর্বনাশ করে বসে আছে। সে তখন থেকে আদি কে প্রচন্ড রকমের ভালোবাসে। কিন্তু আদিকে তা কখনোই বুঝতে দেয় নি। নিজের সখের মোবাইলটা বেচে দিলো মেঘা। সেই সাথে নিজের কিছু জমানো টাকা যোগ করে সে আদিদের বাসায় গেল। আদি প্রথমে রাজি না হলেও মেঘার অনেক রিকোয়েস্টের কাছে হার মানতে হলো তাকে। মেঘার দেওয়া টাকা দিয়ে আদি মেঘাদের কলেজেই ভর্তি হয়ে গেলো আর প্রয়োজনীয় বইগুলো কিনে নিল। চলতে থাকলো তাদের কলেজ লাইফ। আদির মাসিক বেতন থেকে শুরু করে পড়ালেখার যাবতীয় খরচের উৎস ছিল, মেঘার হাত খরচ থেকে বাচানো টাকা। মেঘা একদিন আদিকে তার মনের কথা জানিয়ে দিল। আদিও সেদিন রাজি হয়ে গেলো। খুব ভালোই চলছিলো তাদের। এইচএসসির ফর্ম ফিল আপের সময় এসে গেল। কিন্তু মেঘা আদির টাকাটা জোগাড় করতে পারলো না। তাই সে বাধ্য হয়ে তার বাবার ড্রয়ার থেকে টাকাটা চুরি করে নিল। পরে অবশ্য ধরা খেয়ে অনেক মারও খেতে হয়েছে মেঘাকে। তবুও সে খুশি। সে আদির ফর্ম ফিল আপের ব্যবস্থা করতে পেরেছে। আদি এবং মেঘার একটা ক্লাসমেট ছিলো রনি। সে ছিল মেঘার কাজিন। রনি ওদের পুরো ব্যাপারটা জানতো। মেঘা কত কষ্ট করে আদির জন্য টাকা জোগাড় করছে, তার সবই রনি জানে। কিন্তু মেঘা নিষেধ করায়, রনি কাউকে কিছু বলে নি। তাদের এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলো। রেসাল্টও পাব্লিশ হলো। এবারও আদি জিপিএ ৫ পেয়েছে। কিন্তু মেঘার আল্পের জন্য এ প্লাস মিস হয়েছে। আজ তারা দুজনেই খুব খুশি। আদি খুশি, কারন সে পেরেছে। সে মেঘাকে পিছনে ফেলতে পেরেছে। আর মেঘা খুশি, কারন আদি জিপিএ ৫ পেয়েছে। মেঘা জানতে পেরেছে, আদি বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। সেই থেকে মেঘা আদির স্বপ্নকে নিজের করে নিয়েছে। সে মনপ্রান দিয়ে চায় আদির স্বপ্ন পূরন হোক। ভার্সিটি ভর্তি কোচিং এ ভর্তি হওয়ার সময় হয়েছে। কিন্তু মেঘা পারলো না, আদির জন্য টাকা টা ব্যবস্থা করতে। তাই সে নিজের ভর্তি হওয়ার টাকাটা আদিকে দিয়ে দিলো। সেই টাকা দিয়ে আদি কোচিং করতে লাগলো। কিন্তু মেঘা প্রতিদিন ক্লাসের সময়টুকু বাড়ি থেকে বের হয়ে কোন এক ফ্রেন্ড এর বাসায় সনয়টুকু কাটিয়ে বাড়ি ফিরে। ভর্তি পরীক্ষা শেষ হলো। আদি পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে গেলো। কিন্তু মেঘা কোন পাব্লিকে চান্স পেল না। আদি পাবলিকেই ভর্তি হলো, আর মেঘা ন্যাশনালে। এইদিকে মেঘার বাড়ি থেকে চাপ আসছে মেঘার জন্য। কিন্তু সে কোনভাবেই রাজি না। সে বাসায় বলে দিয়েছে, পড়ালেখা শেষ করেই সে বিয়ে করবে, তার আগে যেন তাকে জোর করা না হয়। তাহলে সে খারাপ কিছু করে ফেলবে। তার পরিবার ভয়ে পিছিয়ে গেলো। আর তাকে জোর করা হলো না, বিয়ের জন্য। ভার্সিটির প্রথম বছরেও মেঘা আদিকে টাকা পাঠিয়েছে। কিন্তু এক বছর যেতেই আদি কেমন জানি পরিবর্তন হওয়া শুরু করলো। মেঘার সাথে ঠিক মতো দেখা করছে না, ঠিক মতো কথা বলছে না। মেঘা ফোন দিলেই এই ব্যস্ততা, সেই ব্যস্ততা, ক্লাস, পড়ালেখা, টিউশনি বিভিন্নি কারন দেখিয়ে কল কেটে দিতো। প্রথম দিকে মেঘা এটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিলেও, দিন দিন এই ব্যস্ততার মাত্রা বাড়তে লাগলো। এখন আর মেঘা কল দিয়ে আদিকে পায় না। কল দেয়, ম্যাসেজ করে। কিন্তু রেস্পন্স পায় ৭/৮ দিন পর। এখন আর মেঘা এটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারলো না। সে বুঝতে পারলো, আদি তাকে অবহেলা করছে। এই ভেবে মেঘা খুব কষ্ট পেতে লাগলো। তারপরও সে আদিকে কন্টিনিউ ফোন দিতো। কিন্তু এক পর্যায়ে আদি ফোন রিসিভ করে, মেঘার সাথে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করলো। মেঘা কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না। কান্না করা ছাড়া সে আর কিছুই করতে পারলো না। এভাবে চলতে চলতে আদির অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো। সে মেঘার কাছে এসে সব কিছুর জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলো। মেঘাও সব ভুলে তাকে ক্ষমা করব দিলো।
#কয়েক বছর পর:
আদি এখন একজন বিসিএস ক্যাডার। আর মেঘা মাস্টার্স শেষ করে একটি কোম্পানিতে জব করছে। আদি মেঘার কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর থেকে ১ বছরের মতো সবকিছু ভালোই চলছিলো। কিন্তু এক বছর পর আদি আবার আগের মতো শুরু করে দিলো। এখন তাদের যোগাযোগ শুধুমাত্র হাই হ্যালো তেই সীমাবদ্ধ। মেঘা প্রান খুলে যে আদির সাথে একটু কথা বলবে সেই সময় আদি তাকে দেয় না। মেঘা আদির কোন এক ফ্রেন্ড থেকে জানতে পারলো, আদি বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজছে। এই কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো মেঘা। সে এতোদিন সব কিছু মেনে নিলেও এটা মেনে নিতে পারলো না। সে আদি কে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছে। তা এভাবে ভেঙে যাবে? না এ হতে দেওয়া যায় না। একপ্রকার জোরপূর্বক সে আদির সাথে দেখা করলো।
- এসব কি আদি? আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না??
- নাহ বাসি না। কখনোই বাসি নি।
-তাহলে এতোদিন? কি ছিল সেটা?
- আমি এতো বোকা না মেঘা। আমি সেদিন রাজি না হলে তুমি আমার খরচ বহন করতে না। তাই আমি রাজি হয়েছি।
-কি বলছো এসব? আমি তোমাকে নিয়ে কতো স্বপ্ন দেখেছি। এখন এসব কি বলছো তুমি?
- আমাকে নিয়ে এখন অনেকেই স্বপ্ন দেখে। তাই বলে সবাইকে তো আর আমি বিয়ে করতে পারি না। আমি একজন বিসিএস ক্যাডার, আর তুমি? নিজের অবস্থান টা কোথায় জান?
-( চুপচাপ দাঁড়িয়ে মেঘা, আদির কথা শুনে তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে, দুচোখ দিয়ে যেন ঝর্ণা বইছে)
সেদিন আর কিছু বলতে পারে নি মেঘা। চলে আসে সে। সেদিন পরাজয় মেঘার হয় নি। পরাজয় হয়েছে। মানবতার। পরাজয় হয়েছে বিবেকের।
কয়েকদিন পর:
আজ আদির বিয়ে। নিজের লেভেলের কাউকে খুজে নিয়েছে সে। অপরদিকে, তার স্বপ্ন যে মেয়েটি পূরন করেছে, সে আজ সাদা কাফনে আবৃত। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে সে আর থাকতে পারলো না। আজ আদি সুখী। কিন্তু এই সুখ কতোদিন? অভিশাপ বলে যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে কি সেই অভিশাপে আদিকে গ্রেফতার হতে হবে না? তার বিবেক কি কখনো জাগ্রত হবে না?
Writer: MD Habibur Rahman
©somewhere in net ltd.