নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

Limon Ahamed

Blogger-Content Writer-Digital Marketer

Limon Ahamed › বিস্তারিত পোস্টঃ

জো বাইডেন এবং তার পররাষ্ট্রনীতি: সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলো আগামী চার বছরে

০৮ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১৬


জো বাইডেন ইতিমধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে গিয়েছেন। আগামী দুই মাসের মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোম ক্ষমতা হস্তান্তর করে হোয়াইট হাউস ছাড়তে হবে। ক্ষমতার পালাবদলে সবচেয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে কেমন হবে, নতুন প্রেসিডেন্ট এর পররাষ্ট্র নীতি?

জো বাইডেন এর আগে বারাক ওবামার শাসন আমলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই তার আগামীদিনের পররাষ্ট্র নীতি কেমন হবে সেটা কিছুটা হলেও আগে থেকেই আন্দাজ করা যাচ্ছে। সম্ভাব্য সেসব পরিবর্তন সম্পর্কে আজকে আলোচনা করার চেষ্টা করব।

কাশ্মীর প্রসঙ্গ:
ডেমোক্রেটদের একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার। কাশ্মীর ইস্যুতে জো বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং তাকে তীব্র প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে।

সামনের দিনগুলোতে ভারতে বাড়তে থাকা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ব্যাপারে হয়তো আগামী মার্কিন সরকার বেশ কঠোর অবস্থান নিবেন। যেটা কিছুটা হলেও হয়তো ভারতকে বিব্রত করবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভারতের বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এবছর ডোনাল্ড ট্রাম্প যেদিন গুজরাটে বক্তিতা দিচ্ছিলেন, সেদিন দিল্লিতে ব্যাপক দাঙ্গা এবং মুসলিম নির্যাতন হয়। এ ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা হলে, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে পাশ কাটিয়ে যান।

আফগনিস্তান যুদ্ধ:
মার্কিন নির্বাচনে কিছুদিন আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প কাতারে তালেবানদের সাথে খুব তড়িঘড়ি করে একটি শান্তি চুক্তি সম্পন্ন করে। যার মাধ্যমে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যায়ক্রমে তাদের সেনাবাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগ করতে পারে।

আফগানিস্তান থেকে সৈন্য ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে ডেমোক্রেটদের তীব্র আপত্তি রয়েছে। তাদের ধারণা ওই অঞ্চল থেকে মার্কিন সেনাবাহিনী চলে আসলে সেখানে সহিংসতার মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে।

হয়তো ডেমোক্রেটদের নেতৃত্বে মার্কিন সরকারের এই নিয়ে বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।

ইরাক- সিরিয়া যুদ্ধ:
ইরাক সিরিয়াতে যুদ্ধ বাঁধানো এবং আইসিস সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৈরি হবার পেছনে তৎকালীন বারাক ওবামা প্রশাসনের হাত রয়েছে আছে জনশ্রুতি রয়েছে। আর এই যুদ্ধ পরিস্থিতি অন্যতম কুশীলব ছিলেন এই জো বাইডেন।

তাই খুব সহজে বলা যায়, ইরাক এবং সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্রবাহিনী কে উঠিয়ে নিয়ে এসে রাশিয়া এবং তুরস্ককে ওই অঞ্চলের ফ্রী এক্সিট দেয়াতে জো বাইডেনের তীব্র আপত্তি রয়েছে। তিনি যে কোনো মূল্যে এই পরিস্থিতি পাল্টানোর চেষ্টা করবেন।

ওয়াশিংটন এবং আঙ্কারা সম্পর্ক: আগামী দিনগুলো তে তুরস্ক এবং আঙ্কারা সম্পর্ক শীতল থেকে শীতলতম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা রিসেপ তাইপ এরদোগান কে পসিবল হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেন।

তাই তারা যে কোনো মূল্যে চাইবে, রিসেপ তাইপ এরদোগান কে ক্ষমতাচ্যুত করতে, এবং আমেরিকান মিত্র কুর্দি বাহিনীর উপর হামলার কিছুটা হলেও প্রতিশোধ নিতে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশের বাইরে কি হল না হল, সে সব ব্যাপারে তার তেমন মাথা ব্যাথা ছিল না। তাই মার্কিন সিনেটে অনেকবার তুরস্কের উপর কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলা হলেও, তিনি তার তেমন কর্ণপাত করেননি।

মার্কিন ইরান পরমাণু চুক্তি:
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার একরোখা নীতির কারণে প্রায় একতরফাভাবেই মার্কিন ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছিল। যে চুক্তি হয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে।

তাই ধারণা করা হচ্ছে, জো বাইডেন পুনরায় সেই চুক্তি বহাল করার চেষ্টা করবেন। সেইসাথে ইরানের সাথে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ করার ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাবে।

হরমুজ প্রণালীতে মার্কিন আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। পূর্ববর্তী সরকারগুলোর মত এখানেও তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ করার সম্ভাবনা নেই।

রাশিয়া মার্কিন সম্পর্ক:
রাশিয়া সম্পর্কে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন অনেক বেশি কঠোর। রাশিয়াকে যতপ্রকার অবরোধ এবং নিষেধাজ্ঞা দেয়া যায় সেগুলো তিনি চেষ্টা করবেন।

তার নির্বাচনী প্রচারণা তে বলেছিল, চায়না আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু নয়, রাশিয়া আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। তাই হয়তো আগামী দিনগুলোতে রাশিয়ার ওপর আরো নানা ধরনের অবরোধ আসতে পারেন।

অন্যদিকে, রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত অস্ত্র রপ্তানিতে কিছুটা হলেও ধাক্কা লাগতে পারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে। রাশিয়ান অস্ত কিনলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা অনেক দেশ হয়তো তাদের অস্ত্র ক্রয় আদেশ রাশিয়া থেকে স্থগিত করবেন।

চীন মার্কিন সম্পর্ক:
বিগত বছরগুলোতে সবচেয়ে উত্তপ্ত সম্পর্ক ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের। বাণিজ্য যুদ্ধ ছাড়াও দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলোর সাথে চীনের এক ধরনের সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছে।

যদিও সরকার পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ চীন সাগরের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির তেমন কোন পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ সীমিত হবার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরে ন্যাটো ভুক্ত দেশগুলোর সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক ধরনের শীতলতা তৈরি হয়। যা চীন কিংবা রাশিয়াকে এক ধরনের সুবিধা প্রদান করেন। অন্যদিকে জাপান দক্ষিণ কোরিয়া সহ চীনের পার্শ্ববর্তী মিত্রশক্তি গুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বের উপর সন্দেহ পোষণ করতে শুরু করেন।

জোবায়দার নিঃসন্দেহে ন্যাটো ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এবং তাদের মিত্র দেশগুলোর মধ্যে সামরিক সহযোগিতা আরো অনেক বেশি বৃদ্ধি করবেন। যেটা চীনকে দক্ষিণ চীন সাগরে কাউন্টার করতে বেশ সাহায্য করবে।

ইসরাইল ফিলিস্তিন সংঘাত:
ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে ফিলিস্তিনকে বঞ্চিত করে ইসরাইলের স্বার্থ সম্বলিত কাজ করে গেছেন। জেরুজালেমকে ইজরায়েলের শহর হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন, সেই সাথে গোলান মালভূমি মালিক হিসেবে এককভাবে ইজরায়েলের নাম বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, ইজরায়েলের স্বার্থ রক্ষার্থে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় সমস্ত রকম কাজ করেছেন। আরব দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইসরাইলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু হয়েছে। এরপর আরো একটি আরব দেশ বাহারান ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদান করে।

ইসরাইল-ফিলিস্তিনি প্রসঙ্গে জো বাইডেন কে কিছুটা নমনীয় চরিত্র দেখা যেতে পারে। ইসরাইলকে সরাসরি সাপোর্ট করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন পলিসির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেটিতে কোন রকম পরিবর্তন হবে বলে মনে হচ্ছে না, তবে আগামী ডেমোক্রেট সরকার কোনভাবেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো এতোটা প্র ইসরাইল হবে না।

মার্কিন লিবিয়া সম্পর্ক:
বারাক ওবামা প্রশাসনের অন্যতম ব্যর্থতা হিসেবে লিবিয়া আক্রমনকে গণ্য করা যেতে পারে। মোহাম্মদ গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আমেরিকা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। আজ এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও, সেখানে কোন ধর্মের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

জাতিসংঘ সমর্থিত সরকার লিবিয়াতে প্রতিষ্ঠিত থাকলেও, খলিফা হাফতার ক্ষমতার জন্য তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় জো বাইডেন হয়তো খলিফা হাফতার কে আন অফিসিয়ালি অস্ত্র এবং আর্থিক ভাবে সাহায্য করবে। যেটা আফ্রিকা অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু নৈতিকভাবে খলিফা হাফতার এর সমর্থন করে গিয়েছে, তবে কোনভাবেই যুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। সামনের দিনগুলোতে হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে লিবিয়া যুদ্ধ অগ্রগামী হিসেবে দেখা যেতে পারে।

অন্যান্য ছোট ব্যাপার গুলো:
আগামীতে ইমিগ্রেশন ল হয়তো কিছুটা নমনীয় হবে ইমিগ্র্যান্টদের জন্য। মুসলিমরা গত কিছু বছর ধরে যেসব হেইট ক্রাইম এবং বিভিন্ন উদ্ভট আইনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, এগুলোর অবসান হবে।

হোয়াইট সুপ্রিমেসি নামে আমেরিকাতে যে নিউ নাজি ধারণার উত্থান ঘটেছে, সেটা কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে জো বাইডেনের ক্ষমতায় যাওয়ার মাধ্যমে। রেসিজম, জেনোফোবিয়া, এবং ইসলামোফোবিয়া কিছুটা হলেও কমবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটা আশা করা যায়।

অনেক বিশ্লেষক ধারণা করছেন, জো বাইডেন হয়তো বাংলাদেশের ব্যাপারে কিছুটা কঠোর হবে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার তেমনটা মনটা মনে হয় না। চীনের প্রভাব বাংলাদেশে কমানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অলরেডি তাদের ফরেন পলিসিতে বাংলাদেশের ব্যাপারে বড়সড় রকমের পরিবর্তন এনেছে।

সেই কারণে, আমার মনে হয় না সরকার পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি একেবারে রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে যাবে। তবে এটা সত্যি, বর্তমান ক্ষমতাসীন দলকে ডেমোক্রেটরা কিছুটা অপছন্দ করে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.