![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
একবার মিনহাজের মায়ের গল্প আপনাদের বলেছিলাম।
জানি কিছুই আপনাদের মনে নেই। অবশ্য গল্প পুরোটা বলিনি। অর্ধেক বলেছিলাম। আজ বাকিটুকু বলিব। প্রচন্ড দুঃখের গল্প। এক বুক ভরা হাহাকারের গল্প। বর্তমান সমাজে একজনের দু:খ-কষ্ট, অন্যজনকে স্পর্শ করে না। যে যার নিজের সুখ দুখ কষ্ট নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু মানুষের দুখ কষ্ট আমাকে স্পর্শ করে। আমাকে ভাবায়। আমাকে কষ্ট দেয়। দুখ-কষ্ট কি করে ভুলে থাকা যায় আমি জানি না।
মিনহাজের মা আমাদের বাসায় কাজ করে।
সুরভিকে ঘরের কাজে সহযোগিতা করে। মিনহাজের মা অন্যসব বুয়াদের মতোন না। উনি প্রতিদিন আসেন। সব কাজ করেন। কখনো বলেন না, আজ এত কাপড় কেন? বেতন বাড়াতে হবে। আমাকে নতুন জামা দিতে হবে। এমনকি কাজ করতে এসে নিজের অভাবের কথা ইনিয়ে বিনিয়ে বলেন না। শুধু বলেন, মাসে একদিন তার পুরো পরিবারকে দাওয়াত করে খাওয়াতে। সুরভি সেদিন পোলাও, রোস্ট, সবজি, রেজালা রান্না করে। সন্ধ্যার পর মিনহাজ, মিনহাজের বড় বোন শেফা এবং মিনহাজের মা সেজেগুজে চলে আসে। এবং যাওয়ার সময় মিনহাজের বাবার জন্য খাবার নিয়ে যায়।
মিনহাজের বাবা ড্রাইভার।
মিনহাজের মা অনেক গুলো বাসায় কাজ করেন। মিনহাজরা এক ভাই এক বোন। মিনহাজ ছোট। মিনহাজের বোন শেফা মাদ্রাসায় পড়ে। মোটামুটি সুখের সংসার। মিনহাজের বাবা যার গাড়ি চালান, সেই লোকটা ভালো না। কথায় কথায় গালি দেয়। ছুটি দেয় না। এমনকি বেতনের টাকাও ভেঙে ভেঙে দেয়। মিনহাজের মায়ের স্বপ্ন একটাই। সে তার স্বামীকে বিদেশ পাঠাবে। মিনহাজের মায়ের ধারণা একবার মিনহাজের বাবা বিদেশ গেলেই তাদের জীবন বদলে যাবে। সংসারে কোনো অভাব থাকবে না। গ্রামের বাড়িটা পাকা হবে। এক খন্ড ধানিজমিও হবে।
খেয়ে না খেয়ে মিনহাজের মা টাকা জমায়।
বছর পর বছর। কেউ কেউ অসাধ্য সাধন করিতে পারে। একদিন সত্যি সত্যি মিনহাজের মা তার স্বামীকে মালোশিয়া পাঠিয়ে দেয়। মালোশিয়া থেকে মিনহাজের বাবা প্রতিদিন ফোন করে স্ত্রী পুত্র কন্যার খোজ খবর নেয়। প্রথম মাসের বেতন পেয়ে স্ত্রীর কাছে পাঠায়। পরের মাসে দামী মোবাইল পাঠায়। ছেলেমেয়েদের জন্য চকলেট পাঠায়। রাতে আনন্দে মিনহাজের মায়ের চোখ ভিজে যায়। আল্লাহ একেএকে তার মনের সকল আশা পূরণ করেছেন।
মিনহাজের মা আমাদের বললেন,
ছয় মাস পর সে কাজ ছেড়ে দিবে। গ্রামে ফিরে যাবে। ঘরের কাজ ধরবে। মিনহাজের মায়ের অবস্থা বদলে গেছে। আমরা সবাই খুশি হলাম। সুরভি বলল, তোমরা গ্রাম যাওয়ার আগে আমি তোমাদের সকলকে শপিং করে দিবো। মিনহাজের মা তখন বলল, মিনহাজের বাবার জন্য শপিং করতে হবে। মিনহাজের মায়ের কথা শুনে আমরা হাসি। আমাদের সাথে মিনহাজের মা-ও হাসে।
গত চার মাস ধরে মিনহাজের বাবার কোনো খোজ খবর নেই।
ফোন বন্ধ। মিনহাজের মা কি করবে? হঠাৎ একদিন মিনহাজের বাবা ফোন করে বলে, আমাকে টাকা পাঠাও। বিপদে আছি। ধারদেনা করে মিনহাজের মা বিশ হাজার টাকা পাঠায়। এরপর ছয় মাস মিনহাজের বাবার কোনো খোজ খবর নেই। মিনহাজের মায়ের দিশেহারা অবস্থা। সে প্রায় পাগল পাগল। কাজে আসে না। ফোন দিলে ধরে না। কি হতে পারে মিনহাজের বাবার? পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে? একসিডেন্ট করেছে? স্ট্রোক করেছে? মিনহাজের মা শুধু কান্না। এই কান্না আওয়ামী লীগ, বিএনপি কাউকে স্পর্শ করবে না। করার কথাও না। কিন্তু আমার প্রচন্ড খারাপ লাগে।
মিনহাজের বাবা মালোশিয়াতে বিয়ে করেছে। নতুন বাসা ভাড়া নিয়েছে। মিনহাজের মাকে ফোন করে স্পষ্ট বলেছে, আমি আর কোনোদিন বাংলাদেশে ফিরবো না। আমাকে ভুলে যাও। আর কোনোদিন যোগাযোগ হবে না। দেখাসাক্ষাৎ হবে না। আমি ভালো থাকবো। তোমরাও ভালো থেকো। মিনহাজের মায়ের গল্প এইটুকুই। কিন্তু যেদিন আমি জানতে পারি, মিনহাজের মায়ের স্বপ্ন স্বামীকে বিদেশ পাঠানো। সেদিনই আমার মনে হয়েছিল, স্বামীকে বিদেশ পাঠালে মিনহাজের মা স্বামীকে হারাবে। মিনহাজের বাবাকে আমি দেখেছি, দুই দিন কথাও বলেছি। লোকটাকে আমার ভালো মনে হয়নি। আমি যেটা ধারণা করেছিলাম, সেটাই হলো।
২| ১২ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১১:৫৮
কামাল১৮ বলেছেন:
“ আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে মোরা পরের তরে ”
কামিনী রায়
এই কবিতা এখন আর পড়ানো হয় না।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১১:৪৮
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: মিনহাজের মা এখন কি করবে ? বাসায় কাজ করবে । মিনহাজ কি পড়ালেখা করে বড়ো চাকুরি করতে পারবে ?