নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যে কোন মূর্খের পক্ষেই সমালোচনা, নিন্দা বা অভিযোগ জানানো সহজ কাজ- বেশিরভাগ মূর্খই তাই করে। কিন্তু অপরকে বুঝতে পারা আর ক্ষমাশীলতা পেতে গেলে দরকার চারিত্রিক দৃঢ়তা আর আত্ম-সংযম।কোন মহান মানুষের মহত্বের প্রকাশ ঘটে তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেন ত

নীলা(Nila)

নিজের মনে যা ঠিক বলে মনে হয় তাই করি-কারণ আমার সমালোচনা করা হবেই।কাজ করলেও লোকে আমার সমালোচনা করবে-আবার না করলেও তাই।

নীলা(Nila) › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতিবেশীর হক

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩১

মানুষ সামাজিক জীবন। সমাজ জীবনে প্রত্যেক মানুষই তার পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্প্রীতি ও সদ্ভাব বজায় রাখা ও তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকা আবশ্যক। আত্মীয়-স্বজন সাধারণত কাছে থাকে না, প্রতিবেশীরাই বিপদাপদে, দুঃখ- দুর্দশায় প্রথমে এগিয়ে আসে। বিপদের সময় এ প্রতিবেশীরাই খোঁজ-খবর নেয় এবং সেবাযত্ন করে থাকে। পবিত্র কুরআন কারিমে সব ধরনের প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী এবং সঙ্গী-সাথীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে।" (সুরা নিসা: ৩৬)
তাই প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া একজন মুসলমানের ইমানের পরিপন্থী কাজ। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। (মিশকাত)

মহানবী (সা.) বলেন, "আশপাশে চল্লিশ বাড়ি পর্যন্ত সকলেই প্রতিবেশি।" এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম যুহরী বলেন: "নিজ ঘরের সামনে-পেছনে, ডান ও বাম দিকের চল্লিশ বাড়ি পর্যন্ত প্রতিবেশি বলে বিবেচিত হবে।" স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে পাশাপাশি বসবাসকারী কিংবা সাময়িকভাবে আশপাশে অবস্থানকারী তথা চলার পথের সহযাত্রীরাও প্রতিবেশি বলে গণ্য হবে। যেমন, যারা একত্রে লেখাপড়া করে, চাকরি করে, বাস-রিক্সা, জাহাজ-লঞ্চ, স্টিমার, বিমান, রেলওয়েতে যাতায়াতের সময় পাশাপাশি অবস্থান করে, যারা যে কোন উপায়ে একই সঙ্গে পথ চলে, একত্রে ব্যবসা-বাণিজ্য করে, একই মিল-কারখানায় কিংবা প্রতিষ্ঠানে পাশাপাশি কাজ করে, তারা সকলেই একে অপরের প্রতিবেশী। ইসলামি সমাজ দর্শনে তাই প্রতিবেশির ব্যাপকতা বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত।

→ ইসলামের আলোকে প্রতিবেশীর অধিকার :

১. সদাচরণ পাওয়ার অধিকার: প্রতিবেশির সাথে সদাচরণ ও ভাল ব্যবহার করা একজন মুসলিমের অন্যতম কর্তব্য। কখনও প্রতিবেশির মনে আঘাত বা কোন প্রকার কষ্ট দেয়া যাবে না। ইসলামে পিতামাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরেই প্রতিবেশির এ হব।। মহান আল্লাহর ঘোষণা :

‎‫وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ‬‎ ‎‫لجدنبِ ودابْنِ السدّبِيلِ‬‎
অর্থাৎ, “তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কোন শিরক না।পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, অনাথ-দরিদ্র, প্রতিবেশি, অনাত্মীয় প্রতিবেশি ও পার্শ্ববর্তী সহচরদের সাথে সদাচরণ কর। "(সূরা নিসা: ৩৬)

২. প্রতিবেশির অধিকার আমানতস্বরূপ: প্রতিবেশিদের পরস্পরের হক আমানতস্বরূপ। তারা এ আমানত রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করবে এবং কোন অবস্থাতেই কেউ কারো অনিষ্টের কারণ হবে না, বরং প্রাণপণে একে অপরের কল্যাণে আসবে এবং পরস্পরের আমানত হিফাযত করবে ।প্রতিবেশি যে কেউই হোক কিংবা যেমনই হোক জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণি নির্বিশেষে সকলেই প্রতিবেশির সমমর্যাদা পাবে এবং তাদের সাথে মানবিক ও ইসলাম আরোপিত কর্তব্য পালন করতে হবে।। কোন অবস্থাতেই কাউকে কোনরূপ উত্যক্ত করা, উৎপীড়ন বা কষ্ট দেয়া ইমানের পরিপন্থী কাজ। অর্থাৎ তাদের হক এ আমানত নষ্ট করা ইমান বিনষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবং যে প্রতিবেশির হক নষ্ট করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (মুসলিম)

৩. নিরাপত্তাদান: এক প্রতিবেশি অন্য প্রতিবেশির জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দান করবে। প্রতিবেশি যাতে সব সময় নিরাপদে ও নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারে, কোনরূপ কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ প্রসংগে মহানবি (সা.) ঘোষণা করেন: "যে ব্যক্তির প্রতিবেশি তার অন্যায় আচরণ ও অত্যাচার হতে নিরাপদ থাকে না, সে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না" (মুসলিম) মহানবি (সা.) তিনবার শপথ করে ঘোষণা দেন: "যে ব্যক্তির অত্যাচার হতে তার প্রতিবেশি নিরাপদ থাকে না সে মু'মিন নয়" (বুখারি ও মুসলিম)

৪. বিপদে-আপদে এগিয়ে আসা: প্রতিবেশির বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে, অভাব-অনটনে খোঁজ-খবর নেয়া এবং যথাসম্ভব তার প্রতিবিধান করা ইসলামের নির্দেশ। মহানবি (সা.) ঘোষণা করেন: "যে ব্যক্তি নিজে পেট পুরে খায় অথচ তার প্রতিবেশি তারই পাশে অভূক্ত থাকে, সে ব্যক্তি মুমিন নয়।" রাসূল (সা.) একদা আবু যার (রা.) কে এ বলে উপদেশ দিলেন যে, হে আবু যার! যখন তোমার ঘরে গোশত রান্না হয় তখন এতে পানি বাড়িয়ে দিবে এবং এর দ্বারা প্রতিবেশীর খোঁজখবর নিবে। " (মুসলিম)

৫. প্রতিবেশির প্রতি সামগ্রিক দায়িত্ব: প্রতিবেশিদের পারস্পরিক কী কী হক বা দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে তার ব্যাখ্যাও নবি করিম (সা.) দিয়েছেন বিভিন্ন হাদিসে । একটি হাদিসে তিনি বলেছেন: "প্রতিবেশি তার শুফাআ পাওয়ার অধিকারী ।" ‘শুফ্আ 'হলো কেউ যদি তার জমি-খেত বিক্রয় করার সিদ্ধান্ত করে, তা হলে তা ক্রয় করার ব্যাপারে তার প্রতিবেশিই তুলনামূলকভাবে বেশি অধিকারসম্পন্ন। কেননা, সে জমি কোন দূরবর্তী লোক ক্রয় করলে নিকট প্রতিবেশির জন্য তা অনেক কষ্টের কারণ হতে পারে। অপর এক হাদিসে প্রতিবেশির প্রতি সামগ্রিক কর্তব্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে নবী করিম (সা) বলেন: “প্রতিবেশির হক হল, সে যদি রোগাক্রান্ত হয় তাহলে তুমি তার সেবাযত্ন, সে মরে গেলে তার লাশের সঙ্গে কবরস্থান পর্যন্ত যাবে, কাফন-দাফনে অংশগ্রহণ করবে। সে যদি অর্থঅভাবে পড়ে, তাহলে তুমি তাকে ঋণ দেবে।সে যদি নগ্নতা উলংগতায় পড়ে, তাহলে তুমি তার লজ্জা আবৃত করবে। তার যদি কোন কল্যাণ হয় তাহলে তুমি তাকে মুবারকবাদ দেবে। সে যদি কোন বিপদে পতিত হয় তাহলে তুমি তার দুঃখের ভাগ নেবে, সহানুভূতি জানাবে । তোমার ঘর তার ঘর থেকে উঁচু বানিয়ে তাকে মুক্ত বায়ু থেকে বণ্টিত করবে না।তোমার রান্নার পাত্রের বাতাস দিয়েও তাকে কষ্ট দেবে না। যদি তেমন অবস্থা হয়-ই তাহলে তাকে এক চামচ খাবার পাঠিয়ে দেবে। " (তিবরানি) এমনকি প্রতিবেশিকে প্রথমে সালাম দেয়া এবং খানাপিনায় শরিক করাও প্রতিবেশির কর্তব্যের আওতাভুক্ত। পরস্পর পরস্পরকে উপহার উপঢৌকন দিয়ে পারস্পরিক হৃদ্যতা বাড়ানোর কথাও ইসলাম বলেছে। মুসলিম মহিলারাও প্রতিবেশির প্রতি কর্তব্য পালনে বাধ্য। মহিলাদের সম্বোধন করে বলা হয়েছে : “হে মুসলিম নারী সমাজ! কোন মেয়ে প্রতিবেশি যেন অপর মেয়ে প্রতিবেশিকে হীন ও নগণ্য মনে না করে, যেন ঘৃণা না করে। " (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

কুরআন ও হাদিসের বর্ণনা থেকে ইসলামে প্রতিবেশীর প্রতি যে সকল অধিকার ও কর্তব্য বর্তায় তা হচ্ছে -
১. সালাম-কালাম করা ও কুশলাদি জানা ।

২. কোনঅবস্থাতেই প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়া।

৩. প্রতিবেশীর সাথে কোন প্রকার অন্যায় ব্যবহার না করা।
৪. যথাসম্ভব সদয় ব্যবহার করা।

৫. ।সাধ্যমত প্রয়োজনীয় সাহায্য -সহযোগিতা করা

৬. ধার চাইলে দেয়া।

৭. প্রয়োজনে গৃহস্থালীর ছোট-খাট জিনিস দেয়া ।

৮. বিরক্ত না করা।

৯. আর্থিক অনটনে সাহায্য করা।

১০. রোগাক্রান্ত হলে দেখতে যাওয়া, সেবা-শুশ্রুষা করা।

১১. প্রতিবেশীর দোষ-ত্রুটি যথাসম্ভব গোপন রাখা এবং তা সংশোধনের চেষ্টা করা।

১২. তার শুভ সংবাদে খুশি হওয়া এবং মুবারকবাদ দেয়া।

১৩. দুঃখে-বিপদে সান্তনা-সহানুভূতি প্রদর্শন করা।

১৪. প্রতিবেশীর আমানতের হিফাযত করা।

১৫. ফল, ফসল ও ভাল খাবার হলে সম্ভবমত দেয়া।
১৬. উচ্চস্বরে গান-বাজনা বা এ জাতীয় অন্য কোন কাজ করে তাকে উত্যক্ত না করা।

১৭. নালা-নর্দমায়, ময়লা, আবর্জনা ফেলে তাকে কষ্ট না দেয়া।

১৮. প্রতিবেশীর বাড়িতে অনুষ্ঠানে উপহার-উপঢৌকন দেয়া।

১৯. তাদের সন্তানদেরকে স্নেহ করা।

২০. প্রতিবেশীকে দাওয়াত দেয়া এবং তাদের দাওয়াত গ্রহণ করা।

২১. প্রতিবেশীর সাথে সহাস্য বদনে কথাবার্তা বলাও একটি পুণ্যের কাজ।
২২. প্রতিবেশীর মৃত্যু হলে জানাযায় শরীক হওয়া এবং কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা কর্তব্য।

২৩. প্রতিবেশীর মান-ইজ্জত ও জান-মালের হিফাযত করা।

২৪. প্রতিবেশীকে ঘৃণা না করা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:২৫

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন। উপকারী পোষ্ট।

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:১০

নীলা(Nila) বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো এবং সুস্থ থাকেন দোয়া করি।

২| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:২২

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: খুব ভালো লাগলো পোস্টটা। বিস্তারিত লিখেছেন প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে। কিন্তু এই যুগে আমরা প্রতিবেশীর হকের ব্যাপারে অনেকটাই উদাসীন।

ব্লগে স্বাগতম এবং এই ধরণের পোস্ট আরও আশা করি আপনার কাছ থেকে।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:২৪

নীলা(Nila) বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.