নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখী মানুষ।

বনী জয়সোয়াল পান্ডে

সুখী মানুষ।

বনী জয়সোয়াল পান্ডে › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বর্গরাজ্য শিমলার পথের খবর

২৮ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:০২

চোখ বন্ধ করে ভাবুন এমন একটা শহরের কথা, যেখানে প্রকৃতি আর মানুষ সৃষ্টকৃত্তি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ভারতের হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শিমলা’য় পা রাখার পর এমনটাই মনে হবে আপনার। প্রতি বছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজারো দর্শনার্থী ভিড় করেন এই লীলাভুমে। সবুজের অরণ্য আর হিম বরফের রাজ্য শিমলার ঋতুবৈচিত্র্য বছর জুড়েই নান্দনিক রূপ ধারণ করে। এ যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেভরা এক নৈস্বর্গরাজ্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাহাড়ি এলাকা, বিখ্যাত স্থাপনা ও ঐতিহাসিক চার্চ নিয়ে শিমলা তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বহু বছর ধরে। হিমালয়ের নিচেই অবস্থিত শিমলার ইতিহাস অনেক বেশি আকর্ষনীয়। শিমলা শব্দের আগমন ঘটেছে 'শ্যামলা দেবী' থেকে, যার আরেকটি নাম হিন্দুধর্মের দেবী কালী। ইংরেজদের শাসনামলে 'গ্রীষ্মকালীন রাজধানী' ছিলো শিমলা । ১৮৬৪ সাল থেকে শিমলা ভারতের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হয়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর শিমলা প্রাথমিকভাবে পাঞ্জাবের রাজধানী ছিল, এবং তারপর ১৯৬৬ সালে, ভারতের হিমাচল প্রদেশের রাজধানীতে পরিণত হয়। শিমলা, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,২০৫ মিটার (৭,২৩৪ ফিট)উচ্চতায় অবস্থান করছে।


কেন যাবেন : শীতকালীন রাজধানী হিসেবে আখ্যা পেয়েছে শিমলা। কারণ বছরের পুরোটা সময় জুড়েই ঠাণ্ডা থাকে। শিমলা শুধু বিখ্যাত শৈলশহরের জন্য। আবার গ্রীষ্মকালীন শিমলা যেন সবুজের সমারোহে পুরোপুরি সবুজ এক শিমলা। পাহাড়-পর্বত সবকিছুতেই সবুজের জয়-জয়কার। বরফে ঢাকা শিমলাকে দেখলে মনে হবে বরফের এক টুকরো রাজ্য। পাহাড়ের উপরের ঘর-বাড়িগুলোয় মেঘ ভেসে বেড়ায়। ঘরের জানালা ভেদ করে মেঘ চলে যাওয়ার অপরূপ দৃশ্য কেবল শিমলাতেই দেখা মিলে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ, প্রাচুর্যে ভরা, পশুপাখি, অপরূপ পাহাড়ি অঞ্চল আর পুঞ্জীভূত মেঘের কণা ভেদ করে আঁকাবাঁকা পথ নিয়ে শিমলা যেন পৃথিবীর বুকে এক টুকরো স্বর্গ। কখন যাবেন: শিমলা মূলত অল ওয়েদার ট্যুরিস্ট এরিয়া। বিভিন্ন সময় শিমলার রূপ থাকে বিভিন্ন। যেমন, সামারে সবুজে ঘেরা, আর শীতে বরফের চাদরে মোরানো। তবে, ভরা মৌসুম হলো এপ্রিল-মে, ডিসেম্বর-জানুয়ারি। তবে সারা বছর জুড়েই ট্যুরিস্টে ভরপুর থাকে শিমলা।
কীভাবে যাবেন : ভারতের ভিসা পাওয়া একটি চ্যালেঞ্জ। পার্শ্ববর্তী দেশ হওয়া সত্ত্বেও বিনা ভিসায় ভারত ভ্রমণ করা যায় না। হাতে অনেক সময় থাকলে আর খরচ কম করতে চাইলে বাই রোডে কোলকাতা যান। কোলকাতা থেকে ট্রেনে প্রায় ১৮/১৯ ঘন্টার জার্নি করে পৌছে যান ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লীতে। দিল্লী থেকে বাই রোড/ রেল পথে শিমলা যেতে পারবেন। অনেকে কোলকাতা থেকে চান্ডিগার হয়েও শিমলা যান। রুট চয়েস আপনার নিজের হাতে। আর যাদের খরচ নিয়ে চিন্তা নেই, কিন্তু হাতে সময় একেবারেই কম তারা শিমলা অনেক দূরে বলে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। তারাও শিমলার অপরূপ সৌন্দর্য চাইলেই দেখতে পারেন, যাওয়ার মাধ্যম যদি হয় বিমান। তবে, শিমলা শহর থেকে বিমানবন্দর ২২ কি.মি দূরে। এখানেও চিন্তার কিছু নেই, বিমানবন্দরে নেমে ট্যাক্সি ভাড়া করে শহরে চলে আসুন। হোটেল বুকিংটা আগেই করুন। এতে আপনারই সুবিধা হবে।



থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা : পৃথিবীর বুকে পর্যটনের সেরা নগরী হিসেবে শিমলার জুড়ি নেই। ভারতের শিমলাতে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে দারুণ সু-ব্যবস্থা। অনলাইনে বসে আপনি আপনার পছন্দমতো হোটেল বা রিসোর্ট বুকিং করতে পারবেন। পরিচ্ছন্ন শিমলাতে মেঘের কণা ভেদ করা আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে রয়েছে অসংখ্য আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। মহামায়া, রিজেন্সি, হোটেল অ্যাম্বার, হোটেল ডালজিল, হোটেল পানভিউ, হোটেল হিমদেভ, হোটেল ভিক্টরি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব ট্যুরিজম হোটেলে প্রতিদিনের থাকা-খাওয়ার জন্য জনপ্রতি খরচ পড়বে প্রায় ৫০০-৪০০০ টাকা।
কী কী দেখবেন : ভারতের শিমলার রূপবৈচিত্র্য কেবল স্থাপনায় নয়, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময় শিমলা অনন্যও বটে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী শিমলার পর্বত যেন আকাশছোঁয়া এক একটি হিমালয়। প্রতিটি পাহাড়ের উপরের বাড়ি-ঘর ও হোটেলগুলোয় যেন মেঘ খেলা করে। এককথায় বলা যায় গগনচুম্বী পর্বত ও রূপবৈচিত্র্যে অনন্য ভারতের শিমলা । শিমলার পাহাড়ের দৃশ্য অপরূপ সুন্দর। দেখতে দেখতে মনের মাঝে এক আনন্দের পরশ বুলিয়ে যায়। ভালো লাগার মতো প্রাকৃতিক পরিবেশ রয়েছে শিমলার পরতে পরতে। তুষার এবং সবুজের এমন নিবিড় সম্পর্ক ভারতের অন্যত্র বড়ই দুর্লভ। এখানে সবুজের মগ্নতায় যতটা মিশে আছে আরণ্যক গাছপালা, ততটাই আছে ফলদায়ী গাছের সমাবেশ। আপেলের চাষ এখানে বেশি হয় বলে শিমলার আরেক নাম আপেলের রাজ্য।
পাহাড়ি পথ বেয়ে গড়ে তোলা ঐতিহাসিক ক্রিস্ট চার্চ। খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের জন্য উপাসনালয়। চার্চের পাশেই একটি লাইব্রেরি। বেশ খাড়া এই রাস্তায় চলার পথে এক ইংরেজ বাগানবাড়ি। বেশ সুন্দর গ্রিন হাউস এটি। দিনের আলোয় সিমলা মল আর রিজ। ইন্দিরা গান্ধী যেখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন, এক বুড়া চাচা সেখানে হিমাচল প্রদেশীয় পোশাক পরা মূর্তি। শীতকালে এখানে স্কিইং হয় বরফে। আর গ্রীষ্ম ও বর্ষায় কাদাময় রাস্তায় ঘোড়ায় চড়ে যাওয়ার মজাই অন্যরকম। মেঘে ঢাকা থাকায় সামনের কিছু দেখা যায় না সহজে। একটি সুন্দর ভিউ দেখা যায় পাহাড়ের উপর থেকে। ভারতের অনেক জায়গার মন্দির অনন্য স্থাপত্যের নিদর্শন তেমনি একটি নিদর্শন বাজিনাথ মন্দির। শিমলার এই মন্দিরটি অনেক প্রাচীন আর ভারতের বিখ্যাত একটি প্রাচীন স্থাপনা। পাহাড় বেয়ে উঠে যেতে হয় এই মন্দিরে। পাহাড়ের গায়ে পাহাড়কে রেসপেক্ট না করে তৈরি করা বহুতল ভবন দেখে। বরফ ঢাকা শিমলা নয়, যেন এক পুরোপুরি বরফের শিমলা।

কেউ ছোট-খাটো অ্যাডভেঞ্চার কিছু করতে চাইলে, যেতে পারেন শিমলা শহর থেকে খুব কাছেই কুরফি। সেখানে Hip Hip Hurray Amusement Park আছে। মূল্য দিয়ে বিভিন্ন রাইডে চরতে পারেন। শিমলা শহর থেকে কুরফির পথেই দেখে নিতে পারেন, গ্রীন ভ্যালী। পাহাড়, সবুজ ও বরফের মেলবন্ধন পাবেন শীতকালে। অন্যসময় সবই থাকবে, তবে বরফটা থাকবেনা।




সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময় শিমলা যেন পৃথিবীর বুকে এক টুকরো স্বর্গ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.