নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কথক

আমার খুব কষ্ট হয়, যখন RAJAKAR বানানটা বাংলা বর্ণমালায় লিখা হয়। এটা বর্ণমালার জন্য অপমান।

কথক পলাশ

পোশাক আর মননের গেঁয়ো ভাবটা এখনো যায়নি। তাল মেলাতে গেলেই খেই হারিয়ে ফেলি।

কথক পলাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি মরূভূমির মৃত্যু

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৩২

কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেও মনে হয় এতোটা উল্লসিত হননি-যতটা না আমরা হয়েছিলাম। কোন এক শীতের ছুটির সকালে ক্যাম্পাসে সূর্যটা উঠেছিলো আগের চেয়ে বেশি আলো নিয়ে। সে এক বিরাট ইতিহাস! হ্যাঁ, প্রসঙ্গের অবতারণা করার আগে সামান্য ইতিহাসের ক্লাস নেবার প্রয়োজন বৈকি!

বিকেল পাঁচটার পর কিংবা ছুটির দিনে সে সময় শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস মরুভূমি হয়ে যেতো। সে সময় আমরা গুটিকয়েক বখে যাওয়া বাপে খেদানো, মায়ে তাড়ানো (পড়ুন, ডিপার্টমেন্টের হেড খেদানো, সিজিপিএ তাড়ানো) প্রজাতি ছাড়া সবাই ছিলো বাস-নির্ভর জনগোষ্ঠি। সুতরাং মরুভূমিটা মাথায় ভেঙ্গে পড়তো আমাদেরই। ক্যাম্পাসের সবেধন নীলমণি 'স্টুডেন্টস ক্যান্টিন' (সে সময় গোলচত্ত্বরের দক্ষিণ পাশে একটা টিনের চৌচালা ঘরে গাদাগাদি করে ব্যাংক, পোস্ট অফিস ও স্টুডেন্টস ক্যান্টিন নামে তিনটা উদ্ভট বস্তু ছিলো) বিকেল পাঁচটার পর 'আউট অব অর্ডার' হয়ে যেতো। এবং ঠিক তখনই সিগারেটের তেষ্টাটা সবার একসঙ্গে চাগিয়ে উঠতো-মরুভূমিতে যেমন পায়। ভরসা তখন ক্যাম্পাস গেট কিংবা নিউ মার্কেট (পড়ুন নয়া বাজার)। সুতরাং ছুটির দিনের অবস্থা এর থেকেই আঁচ করা যায়! মাসের পর মাস চা ছাড়া শুকনো মুখে রিহার্সাল করতে করতে আমাদের শিল্পচর্চা তখন হুমকি'র সম্মুখীন। সিগারেট তবু পকেটে করে আনা যেতো এবং নিমাই স্টাইলে সবাই মিলে খাওয়া যেতো-কিন্তু চা? বিরস বদনে যেতাম গেটে। চায়ের দাম ৩ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াতো-৭ টাকায় (চা-৩ টাকা+রিক্সাভাড়া ২+২=৪ টাকা)। বোধ করি দূর্মূল্যের বাজারও এর চেয়ে সস্তা ছিলো!

এবার মূল প্রসঙ্গে আসি।

সেদিন সকালে রিহার্সালের ব্রেকটাইমে পকেট চাপড়ে আবিষ্কার করলাম পকেটে সিগারেট নেই! টেবুলেশন শিটে নিজের রোলনাম্বার খুঁজে না পেয়েও এতোটা বজ্রাহত হইনি! নাদিম ভাই ব্যাপারটা জানার পর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন 'তুই তো মানুষের পর্যায়েই পরস না। আমরাও একসময় জুনিয়র ছিলাম'। এই কথা বলে তিনি উদাস হয়ে গেলেন। যাইহোক, ভাইকে ম্যানেজ করে বললাম, চলেন এই মিষ্টি রোদে নয়াবাজার ঘুরে আসি। কটমট করে তাকিয়ে কোন কথা না বলে ভাই আমার নিরবে হাঁটা শুরু করলেন। 'টিচার্স ক্যান্টিন' ছাড়িয়ে সি-বিল্ডিং এর কোণায় গেলাম-সেখানে তখন ই-বিল্ডিং এর ফাউন্ডেশনের কাজ শুরু হয়েছে। উদ্দেশ্য শর্টকাট মারবো। হঠাৎ একটা ঝুপড়ি ঘরের দিকে নজর গেলো। দেখলাম সেখান থেকে একটা বড় থার্মোফ্লাস্কের মাথা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। আমাদের চোখে তখন আবিষ্কারের নেশা আর মরিচিকার বেদিশা! মরুযাত্রীর মতো দুজনেই এগিয়ে গেলাম। দেখি ছোট্ট ৬ বাই ৪ ফুট ঘরে কয়েকজন লেবার বসে চা খাচ্ছে। ইউরেকা বলে আমাদের ধেই ধেই করে নাচার পালা! (বিদ্রঃ আমাদের পরনে কাপড় ছিলো)। চা থাকলে সিগারেট থাকবে এটা ধ্রুব সত্য। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে সিগারেট চাইলাম, দোকানের মালিক (মামার নামটা মনে নেই, তবে তিনি সি বিল্ডিং আর এ বিল্ডিং এর সুইপার ছিলেন)- লজ্জিত ভঙ্গিতে বললেন ৫৫ ব্র্যান্ড ছাড়া আর কিছু নেই। (জ্বি ঠিকই পড়েছেন ৫৫ ব্র্যান্ড-সিলেটের লোকাল 'বিগারেট' মানে বিড়ি আর সিগারেটের শংকর)। মামাকে উদাস গলায় বললাম, তাই দিন!

পরের ঘটনার ব্যাপ্তি দীর্ঘ কিন্তু বর্ণনা সংক্ষিপ্ত।
আমাদের উদ্যোগে সেদিন থেকে মামার ছাপড়া ঘরে কিছু ভদ্র ব্র্যান্ডের সিগারেট উঠলো, কিছু বিস্কিট-পাউরুটি উঠলো। রিহার্সাল রুমে নিয়ম করে ফ্লাস্ক ভর্তি চা-বিস্কিট-সিগারেট আসতে লাগলো। ক্যাম্পাস গেটের অপরিহার্য আড্ডাটা রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসেই স্থানান্তরিত হলো। তারও কিছুদিন পর বর্তমান ক্যাফেটেরিয়া যেখানে-তার সামনে বঠাল গাছের (কাঁঠাল গাছের মত কান্ড+ বট গাছের মত পাতা) সামনে একটা চৌচাকা গাড়িতে চা-সিগারেট-বিস্কিট-পাউরুটি বিক্রি শুরু হলো। বঠাল গাছের কান্ডে আমাদের সবার ক্লাসরুটিন লেমিনেটিং করে পিন দিয়ে লাগানো হলো। কাপের সংখ্যা ৬ থেকে বেড়ে ৩০ হলো। টং এর সংখ্যা ১-২-৩ করে বাড়তে লাগলো... পুরো মরুভূমিটাই একসময় মরে গিয়ে মরূদ্যান হয়ে গেলো।

বাকী ভূত-বর্তমান-ভবিষ্যত সবাই জানে।

ছবিসূত্রঃ আন্তর্জাল

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৭

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: আমাদের টংজীবন দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। একটা প্রাক খাদ্য আদালত পর্ব (ফুড কোর্টের বাংলা জানি না ;) ) অন্যটি খাদ্য আদালত পরবর্তী পর্যায়। প্রাক যুগে এ বিল্ডিঙের সামনে মাসুক মামার টং এবং বি বিল্ডিঙের ডানে বাচ্চু মামার টঙে দিন কাটত। আর পরের পর্বে ই বিল্ডিঙের সামনে কবির রে ধনী বানাইছি। অন্যগুলোতে পায়ের ধুলো দিতাম তবে সংখ্যায় কম। কত সকাল দুপুরে, দুপুর বিকেলে, বিকেল সন্ধ্যায়, সন্ধ্যা .........


স্মৃতি কাতর করে দিলেন পলাশ ভাই। আপনি এত্তগুলা পচা :( :(

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:০৬

কথক পলাশ বলেছেন: আমাদের সময়ে ক্যাম্পাস গেটে ২টা টং, একটা ফার্মেসি, একটা মুদির দোকান আর একটা হোটেল ছিলো। এছাড়া মদিনা মার্কেট থেকে আখালিয়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ছিলো ধুধু মরুভূমি। সুরমা আবাসিকে থাকার কথা কল্পনাও করা যেতোনা-কারণ বর্ষাকালে সেখানে ব্যাঙ ডাকতো।

২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫

রঙ তুলি ক্যানভাস বলেছেন: অনেকদিন পর আপনার পোস্ট পলাশ ভাইয়া,

ক্যাম্পাসের স্মৃতিচারণে ভাললাগা রইল :)
নামকরন গুলো মজার ,বিগারেট ,বঠাল গাছ :P
কিন্তু রিকশা ভাড়া ২টাকা!!! কোন আমলের সেটা!! :-*

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:০৪

কথক পলাশ বলেছেন: হা হা হা! এটা ২০০২-২০০৩ সালের ঘটনা।

৩| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৪০

নীরব 009 বলেছেন: আহা ...

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:০৫

কথক পলাশ বলেছেন: কি অবস্থা ভাইডি?

৪| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৩৯

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাই যখন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার মাত্রই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দিয়েছে একদফা। রাস্তার পাশে সব কঙ্কাল পড়ে আছে। পরীক্ষা দিয়ে মনে মনে বলি এটা কেমন ন্যাড়া ক্যাম্পাস??

কে জানত সেই ক্যাম্পাস, সেই শহর ছাড়তে এতো এতো কষ্ট হবে ?? :( :(

১৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ২:০৯

কথক পলাশ বলেছেন: এই ক্যাম্পাসটা মাথার ভেতর সারাক্ষণ ঢুকে বসে থাকে।

৫| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১৫

বাঘ মামা বলেছেন: তোমার পোস্ট এই মুহুর্তে পড়তে আসাটাই ভুল ছিলো পলাশ,এই মুহুর্তে সিগারেট বিগারেট কিছুই নেই, বাইরে আবহাওয়া খুব একটা ভালো নয়,সিগারেট আনতে হলে আমাকে কয়েকটা ব্লক হাটা লাগবে।

অনেক সুন্দর স্মৃতিচারণ পড়লাম, সময় গুলো আসলেই জীবনের নিঃষ্পাপ অধ্যায় যা কখনোই ভোলার নয়।

শুভ কামনা সব সময় পলাশ

১৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ২:১০

কথক পলাশ বলেছেন: হা হা হা! আপাতত স্মৃতি পুড়িয়ে খেতে পারেন বাঘমামা। অথবা ক্রিকেটে যে কোন প্রতিপক্ষ।

৬| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:০৯

অন্তরন্তর বলেছেন:
পলাশ ভাই অনেকদিন পর। আশা করি ভাল আছেন। ইউনি স্মৃতি অনেক ভাল লাগল।
আপনার সিগারেট স্মৃতিতে আমার একটা স্মৃতি মনে পরছে। ১৯৮৪ সালে আমার কিছু
বন্ধুদের কাছে গিয়েছিলাম ঢাকা থেকে ময়মনসিং এগ্রি ইউনি তে। তো রাতে অনেক
আড্ডা দেবার পর সিগারেট শেষ। রাত ৩টার দিকে ৬/৭ জন মিলে হেটে ময়মনসিং সদরে
গিয়ে সিগারেট আনি, দোকান এত রাতে খোলা থাকতো না তখনকার সময়।
হায়রে সেই সোনার দিনগুলো। কত শত স্মৃতি সেই ঢাকা ইউনি ক্যাম্পাস।
শুভ কামনা।

১৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ২:১৪

কথক পলাশ বলেছেন: মানুষের সবসময় কাছে থাকে তার স্কুলের বন্ধুরা। তারা কখনো পর হয় না।
আর আনন্দআশ্রম থাকে তার ক্যাম্পাস। এই আশ্রয় তাকে কখনো তাড়িয়ে দেয়না।

৭| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০১

বাঘ মামা বলেছেন: ঈদ মোবারক পলাশ :)

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৪১

কথক পলাশ বলেছেন: ঈদ মোবারক

৮| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৬

ক্রন্দসী বলেছেন: রাত গভীর হবার সাথে সাথে শেয়ালের বিদ্রুপ মাখা হাসি আর চীৎকার শুরু হতো(শেয়ালের ডাক শুনলে মনে হয় কেউ বিদ্রুপ করে হাসি দিচ্ছে)ক্যাম্পাসে এরকম নির্জনতা কে পুঁজি করে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মিল্কি শেয়ালের চাষ করতে চাইছিলো। কোথা থেকে জেনেছিল দক্ষিন কোরিয়ার শেয়ালের চামড়ার জ্যাকেটের চল আছে । এস্তেক গোস্তভি খান ওনারা।ক্যাম্পাসে উৎপাদিত শেয়ালের চামড়া দিয়ে টুকের বাজারে জ্যাকেটের কারখানা করে ,সিংহ ভাগ গোস্ত দক্ষিন কোরিয়ায় রপ্তানী করে অল্প গোস্ত হাপাণি রোগিদের কাছে বিক্রি করে কিছু বৈদিশিক মুদ্রা আয় করার প্ল্যান করেছিল

০৩ রা মে, ২০১৮ দুপুর ১:৩০

কথক পলাশ বলেছেন: হোটেল ইন ল'

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.