![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(১)
-প্রিয়তি... এই প্রিয়তি! আর কত ঘুমাবি? ওঠ...
-উফফ্! আম্মু... একটু শান্তিমত ঘুমাতে দাও না!
কি হয়েছে? বাসায় কি ডাকাত পড়েছে?
-আরে না... দেখতো,তোর নামে একটা পার্সেল এসেছে।
-কি!!! পার্সেল?!!! আমার নামে? কে পাঠালো?
-জানিনা তো! নাম-ধাম কিছুতো লেখা নেই!
-কিছু লেখা নেই তো নিয়ে এলে কেন? যদি বোমা-টোমা হয়?!!!
(এইবার আম্মু ভয় পেয়ে গেল।)
-ইয়ে মানে...ফেলে দিয়ে আসি।
-আরে ধূর...দেখি। রাখো,দেখি আগে কি জিনিস।
খুলে দেখলাম এক বক্স চকলেট। বিভিন্ন রকমের চকলেট। এবং কাকতালীয়ভাবে সবগুলোই আমার প্রিয়! কিন্তু চকলেটে আবার কিছু মেশানো নেই তো? এই ভয়ে একটাও খেতে পারছিনা। এই দুঃখ কই রাখি?
চিন্তায় পড়ে গেলাম...কে পাঠাতে পারে? ভুল করে পাঠালে তো আমার এক্সাক্ট নাম-ঠিকানা লেখা থাকতো না। আর যেই পাঠাক না কেন আমার প্রিয় চকোলেট কোনগুলো সে খবর জানলো কিভাবে? কি এক রহস্য!
যাই হোক,সেই এক বক্স চকলেট ফ্রিজে পড়ে থাকলো।
আর আমিও আস্তে আস্তে প্রতিদিনের কাজকর্মে চকোলেটের কথা ভুলে গেলাম।
(২)
প্রায় এক মাস পর...১৩ই এপ্রিল।
পহেলা বৈশাখের আগের দিন বাসায় আরেকটা পার্সেল এল।
ভাগ্যিস! বাসায় আম্মু ছিল না। থাকলে আমাকেই উল্টা সন্দেহ করে বসতো।
এইবার পার্সেল এর সাথে একটা চিঠিও ছিল।
পার্সেল খুলে তো আমি আকাশ থেকে পড়লাম! বেলী ফুলের মালা। এত সুন্দর সুবাস বেরুচ্ছে সেগুলো থেকে...মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
মনে হচ্ছে ফুলগুলো এইমাত্রই বক্সে ঢুকানো হয়েছে। দৌড়ে নিচে গেলাম।
নাহ...আশেপাশে কাউকেই দেখলাম না!
বেলীফুলগুলোর দিকে আবার চোখ পড়তেই মনে পড়লো যে এগুলো তো খোঁপায় লাগিয়ে বেরোতে পারব না। মাথায় তো স্কার্ফ পরি। কোন ছাগলে কি ভেবে যে পাঠিয়েছে আল্লাহই জানে! রুমে এসে চিঠিটা খুলে পড়া শুরু করলাম-
প্রিয়তি,
কেমন আছ? তোমাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। আমি জানি প্রিয়তি, তুমি চকলেটগুলো খাওনি। কারণ, তুমি তো আবার তিন গোয়েন্দার বিশাল ফ্যান! হা...হা...হা...
হ্যাঁ,ওগুলো আমিই পাঠিয়েছিলাম।
বেলী ফুলের মালা দেখে নিশ্চয়ই একচোট বকে নিয়েছ,তাইনা?
শোন,ফুলগুলো তুমি খোঁপায় পর আর না পর আমি তোমাকে মনের চোখ দিয়ে ঠিকই কল্পনা করে নেব। শাড়ির সাথে বেলী ফুলে তোমাকে খুব মানাবে।
ভালো থেকো।
চিঠি পড়ে আমি তো আক্কেল গুড়ুম! হায় আল্লাহ! এই ছেলে আমার সম্পর্কে এত কিছু জানে কিভাবে? কে এ? চিঠিতো ভালোই লিখতে পারে! কিন্তু আমাকেই কেন লিখলো? যেই লিখুক,যদি ফাজলামী করে থাকে তবে তার খবরই আছে!
(৩)
বাসায় আমাকে বিয়ে দেওয়া নিয়ে অনেক তোড়-জোড় চলছে। আব্বু-আম্মু প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন পাত্রের ছবি,বায়োডাটা দেখছে। মনে হচ্ছে এই যাত্রায় আর নিস্তার নেই! কি দরকার বিয়ে করার? এইতো বেশ আছি।
নাহ...আমার কথা কি আর কেউ শুনে? দেখুক, যত ইচ্ছা পাত্র দেখুক। আমার কি? একজনের সাথে বিয়ে দিলেই হল!
পাঠক নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন এই ভেবে যে,আজকালকার যুগে এমন উদাসীন মেয়েও আছে নাকি? এরকম উদাসীন হয়তো ছিলাম না। স্বপ্ন দেখে কি লাভ যদি তা ভেঙ্গেই যায়?
আমিও একজনকে ভালোবেসেছিলাম। অর্ক তার নাম। সব গল্পের মত আমাদের গল্পের শুরুটাও অনেক সুন্দর ছিল। কিন্তু আর দশটা গল্পের মত গল্পের শেষটা সুন্দর ছিল না। দু’জন খুব ভালো বন্ধু ছিলাম ঠিকই কিন্তু ভালোবাসাটা একতরফা ছিল। দুইবছর অপেক্ষা করার পর যখন বুঝতে পারলাম নিজের অনুভূতিগুলোকে আর কষ্ট দেওয়া ঠিক হচ্ছেনা,তখন দূরে সরে আসলাম।
যদি বলি,অর্ককে ভুলে গেছি। এখন আর ভালোবাসিনা। তাহলে হয়তো ভুল হবে। হয়তোবা কখনোই ভুলতে পারবো না।
(৪)
সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছে। জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখছিলাম। এমন সময় ছোট বোন এসে হাতে একটা বক্স ধরিয়ে দিয়ে গেল। বক্স খুলে দেখি ভেতরে এক গুচ্ছ কদম ফুল আর একটা চিঠি। চিঠিতে লেখা-
‘‘দেখি তোমাকে আছো দাঁড়িয়ে,
আনমনে নীল শাড়িতে...
হাজার ভিঁড়ে সব ছাড়িয়ে
শুধু তুমি আমার চোখে...
পথের ভারে তোমার আশায়,ভালোবাসার ধূসর আলোতে
আছি দাঁড়িয়ে স্বপ্ন নিয়ে তোমার আকাশে সুর ঝরাতে
এক গুচ্ছ কদম হাতে ভিজতে চাই তোমার সাথে...’’
আমার প্রিয় একটা গানের কয়েকটা লাইন! যখনই আমি এই উদ্ভট রহস্যময় ছেলেটার কথা ভুলতে বসি,তখনই কোথা থেকে এসে যেন উদয় হয়! মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। হঠাৎ করেই অর্কের কথা খুব বেশি মনে পড়তে লাগলো। অর্ককে নিয়ে কত-ই না স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু কি হল?!
আর এই উদ্ভট পার্সেলওয়ালাটা কে? সামনেই বা কেন আসছে না?
(৫)
আজকে বিকেলে আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। বাসার সবাই খুবই উত্তেজিত। আর আমি? নির্লিপ্ত...
শুধু জানি,পাত্রের নাম শুভ্র। পাত্র নাকি অনেক কোয়ালিফাইড ইত্যাদি ইত্যাদি...
কোন একটা রেস্টুরেন্টে পাত্র-পাত্রী দেখাদেখি হবে।
সারাদিন বাসায় খুব তোড়-জোড় চলল। বিকেলে আম্মু আমাকে নিয়ে বের হল। রেস্টুরেন্টে ঢুকার কিছুক্ষণ পর আম্মু ‘আসছি’ বলে কোথায় যেন চলে গেল। আমি একা বসে রইলাম...
(৬)
-প্রিয়তি? আমি শুভ্র।
আমি আস্তে করে মাথাটা নাড়লাম।
এরকম পরিস্থিতিতে আজকেই প্রথম! লজ্জায় তাকাতেও পারছিনা। আম্মুটাও ইচ্ছে করেই এমন করলো! একবার শুধু পেয়ে নিই...
-আপনার সাথে কিছু কথা আছে।
-বলুন...
-আপনাকে আমি প্রথম দেখি আমার এক ফ্রেন্ডের বিয়েতে...আর ওই পার্সেলগুলো আপনাকে আমি-ই পাঠিয়েছিলাম।
-(আমি খুব অবাক দৃষ্টিতে একবার চোখ তুলে তাকালাম।)
-প্রিয়তি,আপনি কি রাগ করেছেন?
প্রিয়তি...আমি যদি বলি,আমার জীবনের বাকি বর্ষাগুলোতে আমি আপনার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে চাই,আপনি কি বলবেন?
আমি যদি বলি, আপনাকে ছাড়া আমার জ্যোৎনা দেখা বৃথা,আপনি কি বিশ্বাস করবেন?
আমি যদি বলি,আমার বাকিটা জীবন আপনার হাত ধরে পার করে দিতে চাই...
আপনি কি রাজি হবেন?
-(আমার সামনের সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে। দু’চোখ ফেটে কান্না পাচ্ছে। উফফ্...কী অসহ্য! কিছুতেই চোখের পানি আটকাতে পারছি না। কিছুতেই আজ ওরা বাঁধা মানছে না...)
-প্রিয়তি,আপনি কাঁদছেন? প্লীজ কাঁদবেন না...
প্রিয়তি আজ কাঁদবে। কাঁদুক। হয়তো আজকের পর শুভ্র প্রিয়তিকে আর কখনো কাঁদতে দিবে না...
হয়তো প্রিয়তির হৃদয় সারাজীবন ভালোবাসার যে প্রভাতের অপেক্ষায় ছিল তার সবটুকু শুভ্রতা নিয়ে আজ শুভ্র তার কাছে এসেছে...
পরিশিষ্টঃ সব অর্ক-প্রিয়তির গল্পের শেষটা সুখের হয়না। সব অর্ক, প্রিয়তিদের ভালোবাসা বোঝেনা। কিন্তু মানুষ না বুঝলেও যিনি সৃষ্টিকর্তা তিনি সবকিছু বোঝেন। তাইতো তিনি প্রিয়তিদের জীবনে শুভ্রদের পাঠান প্রিয়তিদের ভালোবাসা আরো শতগুণে ফিরিয়ে দিতে।
১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৫৯
দুঃখিনী রাজকন্যা বলেছেন: কোন বুদ্ধিটার কথা বলছেন?
২| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:০৭
ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
স্টার্টিং ভালৈ লাগতেসিলো, মাঝপথে এসে আর জমলোনা মনে হলো।
শুভকামনা ||
১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:১১
দুঃখিনী রাজকন্যা বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:২২
আমিনুর রহমান বলেছেন:
সুন্দর গল্প +++
১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:২৭
দুঃখিনী রাজকন্যা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ...
৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:০১
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: একতরফা হয়ে গেলনা, সব প্রিয়ন্তীরা কি অর্কদের ভাল বাসা বুঝে?
ভালাগা রইল।
১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৪
দুঃখিনী রাজকন্যা বলেছেন: না,সব প্রিয়তিরাও অর্কদের ভালোবাসা বোঝেনা...কিন্তু আমার গল্প টা যেহেতু প্রিয়তিকে নিয়ে তাই আমি প্রিয়তির প্রেক্ষিতে কথাটা বললাম।
ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৬
বোধহীন স্বপ্ন বলেছেন: ভালো বুদ্ধি তো!! একবার চেষ্টা করে দেখতে হবে কাজে লাগে কি না...