নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যই সুন্দর ।।। সবার উপরে মানুস সত্য, তাহার উপর নাই

নাহিদ হাসান সরকার

উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আবাসঃ শহীদুল্লাহ হল। উৎপত্তিঃ জামালপুর সদর, ঢাকা, বাংলাদেশ

নাহিদ হাসান সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদ্ভুত শুটিং

২৬ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৮:৪৬

স্বনামধন্য একটি আবাসিক হলের (যেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের জন্য বরাদ্দ) সম্মুখভাগ দিয়ে পদব্রজে ভাবুক বেশে বইয়ের স্বর্গ হিসেবে পরিচিত নীলক্ষেতের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিচ্ছিলুম। সব ঠিক ছিল, এইতো পৌছে যাচ্ছি আমার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে, এমনই ভাবনা হচ্ছিল তখন, নতুন বইয়ের নেশায় তখন উন্মত্ত আমি, মনে দখিনা হাওয়া বইতেছিল। ঠিক তখনই হঠাৎ আমার সমগ্র পৃথিবী কয়েক মিনিটের জন্য থমকে গেল। আমি অবাক হয়ে নির্বাক চাহনীতে একটি অদ্ভুত শুটিং দেখতে আরম্ভ করলুম। দেখলেম একটা জুটি শুটিং এ ব্যস্ত, তবে এই শুটিংএ কোন ক্যামেরা ম্যান নেই তাই ক্যামেরা, লাইট, এ্যাকশান, কাট ,রিলাক্স জাতীয় কোন শব্দের আনাগোনাও নেই। তবে এটাও যে একধরনের শুটিং তাতে কোন সন্দেহ নেই, কারন এই শুটিংএ যে সেই শুটিং এর ’প্রাণ’ নায়ক-নায়িকা বহাল তবিয়তে এ্যাকটিংএ মগ্ন আছেন। যাহোক কেমন ছিলো এই শুটিং তা স্ববিস্তারে মনের মাধুরী মিশিয়ে বর্ণনা না করলে পাঠক সমাজ মজা পাইবেনা আর আমার আত্মাও শান্তি পাইবেনা । তাই অগত্যা পরের আত্মার মজা আর আমার আত্মার শান্তি নিশ্চিতকল্পেই বর্ণনা করছি।



একটা জুটি গল্প করছে একটু অস্বাভাবিক ঢংএ দাঁড়িয়ে, দাঁড়িয়ে এবং তাদের উভয়ের চাহনীতে কেমন একটা হতাশা আর মরা,মরা ভাব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে । ঠিক কি ধরনের আলোচনা হচ্ছিলো তা খুব ফরসা বুঝতে পারলুমনা, এমনকি একটি শব্দও পরিস্কার ঠাহর করতে পারলুমনা। এরই মধ্যে সবাইকে অবাক করে দিয়ে নায়িকা তার ঢেঁড়সমার্কা আঙুল উঁচিয়ে নায়কের নাকের ডগা স্পর্শ করে তারস্মরে বলে উঠল ”তুই একটা......... অনেক শ্রাব্য-অশ্রাব্য শব্দ, যে শব্দগুলো বাংলার গালিসম্ভারকে আবহমানকাল ধরে সমৃদ্ধ করেছে। পথচারীরা এতদশ্রবণে কর্ণে অঙ্গুলি প্রবেশ করাল কেউ’বা গালির ভয়াবহ প্রবল বর্ষণে নিজ সম্মান রক্ষার্থে দিল ছুট। কিন্তু আমার অত্যুৎসাহী অবচেতন মন আমাকে একটু নিজকে গোপন করে কি ঘটে সেটা অবলোকন করতে উদ্বুদ্ধ করল তাই আমি নীলক্ষেত গমনের প্রবল বাসনা ত্যাগ করে নীরবে, নিভৃতে একটা আম গাছের আশ্রয়ে তারই আড়ালে দাঁড়িয়ে রইলাম।



এবার উত্তেজিত এই নায়িকা নায়কের উদরে, বুকে, মুখে,মাথায় ইত্যাদি আরও তার অন্যান্য স্পর্শকাতর উত্তমাঙ্গে কিংবা অধমাঙ্গে ইচ্ছামত কিল-ঘুষি দিয়ে একধরনের নির্মম আপ্যায়ণ করতে আরম্ভ করল । জানিনা এটা ক্যাম্পাস প্রেমের নব্য-সংস্করণ কিনা ? যাহোক সেই সাথে নায়িকার অদ্ভুত-অপরিচিত গালি আর চিল্লানি তো ফ্রি শো হিসেবে আমার মতো অত্যুৎসাহী আরও অনেকেই উপভোগ করল। বেচারি নায়ক’তো এরকম হঠাৎ আকষ্মিক আক্রমণে একেবারেই হতভম্ব হয়ে গেল। সে বারংবার জানার চেষ্টা করতে লাগল আসলে তার অপরাধটা কোথায় ? কিন্তু একেবারেই নিষ্ফল , ব্যর্থ হল তার এই আবেদন। কে শোনে কার কথা ! উপর্যুপরি মার,হরদম মার ,আবার মার, তারপর মার, এবং মার অতপর মার শুধুই মার আর মার... ... এভাবে অগত্যা অগণিত কিলঘুষি হজম করল বেচারি নায়ক।



স্রষ্টার বিশেষ কৃপায় হয়তবা পুরুষ জাতির মহাসম্মান রক্ষার্থে নায়কের বোধোদয় হল, সে মনে,মনে ভাবল আচ্ছা এটাতো প্রকৃতপক্ষে কোন শুটিং স্পট নয় আর আমিও আসলে কোন নায়ক না, মার খেয়ে’তো একেবারে আলুর ভর্তা হয়ে গেলুম ! এ অবস্থা থেকে উত্তরণ চাই । যেই ভাবা সেই কাজ। তখন নায়ক তার সমগ্র শরীরের সকল পুরুষোচিত শক্তি কণ্ঠের অগ্রভাগে সঞ্চিত করে ক্ষিপ্রবেগে একটা ধমক দিয়ে নায়িকার উপর্যুপরি প্রহারের কবল থেকে নিজকে সাময়িক রক্ষা করল । এবার নায়িকা থতমত হয়ে ভয়ে থর,থর দন্তহীন বুড়ো দাদীর ন্যায় কাঁপতে আরম্ভ করল। হয়তোবা নায়িকা আনমনে ভাবল যদি এই বেটা আমাকে একটা কোষে চড় দেয় তো আমার কি অবস্থা হবে ! যাহোক প্রেমিকাধিকার লঙ্ঘনের ভয়ে নায়ক অতিউৎসাহী হয়ে সেকাজটি করলনা হয়ত মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজান স্যার তার দুঃসম্পর্কের কোন আত্মীয় হয়ে থাকবেন তাই প্রেমিকাধিকারের প্রতি তার এত অগাধ শ্রদ্ধা।



এখন নায়কের চিল্লানোর পালা, এবার সে চিল্লানো শুরু করল নায়িকার চেয়ে দ্বিগুন স্মরে এবং পরবর্তী কয়েক মিনিট অবধি চলল তার এই ষাঁড়ের ন্যায় হুংকার। নায়িকা এবার চুপ একেবারেই চুপ। আশপাশের অনেকেই তখন শ্যুটিং স্পটে আসন নিতে আরম্ভ করল । আমিও বেরিয়ে এলাম গোপন আস্তানা হতে, নায়ক-নায়িকা তখন উভয়েই আমাদের সামনে তাদের দীর্ঘ প্রেমময় জীবনের পাওয়া-নাপাওয়ার বেদনা স্ববিস্তারে বর্ণনা করতে লাগল।। যে বর্ণনার হুবহু ফটোকপি আমি আমার অবচেতন মনে ধরে রাখতে পারিনি। যাহোক তারপরও মোদ্দাকথা তাদের বেদনার সারাংশ এতটুকু বুঝলুম যে ”নায়িকার সম্ভ্রম বলে কিছু আর অবশিষ্ট নেই সবই এই নায়ক বদমাশটা ফুসলে ফাসলে বিভিন্ন প্রলোভনে লুণ্ঠন করেছে, তাই নায়িকার আকুল আবেদন..”তুই আমাকে বিয়া করবিনে কেন?” যাহোক আর ভিতরে যেতে চাইনা। হয়ত এটা ওদের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যপার ।



এবার দর্শক সারির সবাই স্পট ত্যাগ করতে শুরু করল আর আমি কৌতুহল মন নিয়ে আবারও একটু পাশে সরে গিয়ে পজিশন নিলেম।



ওদের ধস্তাধস্তি আবার শুরু হল, তবে আশ্চর্য্যের বিষয় হল এই যে, এই কুকুরের ন্যায় কামড়াকামড়িই ওদের খুব ভাল লাগছে, হয়তোবা ওরা এটাই এনজয় করছে ? কি অদ্ভুত কেউ কাউকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেনা । এক পা’ এগিয়ে যায় তো আর একপা পিছিয়ে আসে, এভাবে ঠিক ঐ স্পটেই রইল ওরা। অবশেষে পাশের বৃদ্ধ হল থেকে শ্রদ্ধেয় এক বড় ভাই অতিষ্ট হয়ে বেরিয়ে এলেন অতপর শুটিং স্পটে হাজির হয়ে এই নায়ক-নায়িকাকে খুবই নম্রস্মরে সম্বোধন করে বললেন ” ভাই আপনাদের হয়তোবা কোন মানসম্মান নেই কিন্ত আমাদের আছে, দয়া করে এখান থেকে অন্য কোথাও চলে যান , আমাদেরকে মাফ করেন।” কে শোনে কার কথা ? এই বড় ভাইয়ের কথায় কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়নি ওদের ভিতর, ওরা একটুও কর্ণপাত করলনা এই কথায়, নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে লাগল ওদের এই অদ্ভুত প্রেমময় ...।



এবার আমার মন একটা স্মৃতি রোমন্থন করতে লাগল, ঠিক আজ হতে দশ বছর আগে এই ধরনের একটা শুটিং দেখেছিলাম আমাদের বাড়ির সম্মুখে । সেই শুটিংয়ের নায়ক-নায়িকা ছিল প্রকৃতপক্ষে একজোড়া কুকুর । ওরা ঠিক এরকম কামড়াকামড়ি করছিল, তখন আমার আব্বু আমাকে বলেছিলেন “ খবরদার ওদিকে যাসনে কিন্তু, এখন কার্তিক মাস, কামড় দিবে” । ছোট্ট বাচ্চাদের মন এমনিতেই বিদ্রোহী থাকে, যাহোক তখন আমার মনে হয়েছিল “আব্বু যাহাই বলুক আর তাহাই বলুক কুকুর আর কুকুরণীকে শায়েস্তা করা চায়ই চায় ।” যেহেতু বাড়ির সবাই ওদের কামড়াকামড়ির বিকট শব্দে অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছিল তাই অগত্যা আমি কয়েকটা ইটের টুকরা নিয়ে ওদের উপর সাড়াশি আক্রমণ করলাম একেবারে মার্কিন ড্রোন হামলার স্টাইলে । গতিক বুঝে ওরা দৌড়ে পালাল আর আমি বীরের বেশে ফিরে এলুম ।



যাহোক এই শুটিং স্পটে আমার বারবার মনে হচ্ছিল যদি এদের উপর ওই রকম সাড়াশি আক্রমণ চালাতে পারতুম আজ তাহলে বোধকরি নিশ্চয়ই এরা এ স্থান ত্যাগ করত । সময়তো আর বসে থাকেনা, তাই আমাকে এই শুটিং স্পট ত্যাগ করতে হল, আমি রওনা দিলেম আমার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে । এইখানে পাঠক সমাজের উদ্দেশ্যে বলে রাখা শ্রেয় মনে করছি, আমি যখন আমার কাজ মিটিয়ে দীর্ঘ তিন ঘন্টা পর ফিরে আসছিলুম তখনও ঠিক ঐ শুটিং স্পটে এই দুই আজব প্রাণী মুখ গোমড়া করে সেই পূর্বতন স্টাইলের অদ্ভুত প্যাচাপ্যাচিতে মগ্ন ছিল যেটি দেখে পাশের গাছগুলো ঘৃণায় আর ক্ষোভে চোখের জল ফেলছিল । ওদের খুব কাছে একটি খেকি নেড়ি কুত্তা এই দৃশ্য অবলোকন করে হো,হো করে হাসছিল আর মনে মনে বলছিল “তোরা আমাদের চেয়েও একধাপ উপরে তাতে কোন সন্দেহ নেই, তোরা মানুষ, তোরা সব পারিস, ভাল কাজ করতে যেমন পারিস ঠিক তেমনই খারাপের শীর্ষ পর্যায়েও তোরা উঠতে পারিস নির্দ্ধিধায় । বুঝিনা একারণেই কি তোরা শ্রেষ্ঠ জীব ? আসলে বাস্তব সত্য হয়ত এরকম তোরা সবাই শ্রেষ্ঠ না তোদের মধ্যে যারা শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার অর্থাৎ যোগ্য তারা আসলেই শ্রেষ্ঠ আর তোরা যারা এরকম আচরণ করিস তারা নিশ্চয়ই আমাদের চেয়েও জঘণ্য তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই, হতে পারে এটি তোদের ডুয়েল আচরন, তবে নিকৃষ্ঠতারও একটা সীমা থাকা উচিত !”



মাঝে,মাঝে ঘুমের ঘোরে ঐ শুটিংটা উপভোগ করি আনমনে । উনারা শান্তিতে থাকুন এটাই আমার একান্ত কামনা । তবে এখনও জানতে পারিনি সেই নায়ক-নায়িকা কেমন আছেন ?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.