![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হৃদয়ে দেশপ্রেমের নেশা নিয়ে স্বপ্নের পেশা সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলাম আমরা, একদিন।
এই পেশা থেকে অকালীন প্রস্থান কাম্য ছিলোনা, কারোরই, কোনদিন।
স্বল্পকালীন চাকুরীর পর অবসরে আসা (হোক সেটা স্বেচ্ছায় কিংবা বাধ্যতামূলক) অধিকাংশ কনিষ্ঠ কর্মকর্তাই হয়েছিলো বৈষম্যমূলক পরিস্থিতির স্বীকার। নৈতিক স্খলন ও শৃঙ্খলা বিষয়ক অবসরগুলোকে বাদ দিলে সর্বাগ্রে আসে রাজনৈতিক বৈষম্য, যার সুরাহা জ্যেষ্ঠরা (আন্তরিক থাকলে) কনিষ্ঠদের অস্বাভাবিক প্রস্থানের আগেই করে ফেলতে পারতেন। এতে কনিষ্ঠ মেধাবী কর্মকর্তাদের অসময়ে স্বেচ্ছায় প্রস্থান হ্রাস পেতো, অনেকটাই।
বর্ণ বৈষম্যের মতো কোর বা আর্মস বৈষম্য, ক্যাডেট কলেজ ও সিভিল কলেজ বৈষম্য আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে, অবশ্যই। সবাই মানুন বা না মানুন, বাস্তবতার চোখ কাউকে ফাঁকি দেবেনা, অন্ততঃ।
চাকুরীরত সময়ে এ জাতীয় ছোট ছোট বিষয়গুলোতে আমাদের শ্রদ্ধাভাজন জ্যেষ্ঠরা একটু মনোযোগী থাকলে, অবসরে আসার পর নীচের ঘটনার মতো অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সহসা অবতারণা হতোনা, আমি নিশ্চিত;
সময়ঃ শেষ সপ্তাহ, জানুয়ারী ২০১৫।
স্থানঃ রূপসা টাওয়ার, কামাল আতাতূর্ক এভিনিউ, বনানী, ঢাকা।
মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতির পর আমার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এসেছিলেন আমার অফিসে, স্বাসের পর একটু প্রস্বাস ফেলতে।
তাঁকে অফিস থেকে বিদায় জানাতে গিয়ে লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
১৬ তলা থেকে লিফটটা নীচে নামতে গিয়ে একটু বেশীই সময় নিলো, মনে হয়।
আমাদের ফ্লোরে এসে লিফটের দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে গেলে ভিতরে মাত্র একজন বয়স্ক আরোহীকে দেখতে পেলাম।
আমি এবং আমার জ্যেষ্ঠ লিফটে উঠতেই ঐ বয়স্ক আরোহীর মুখটা কেমন যেনো ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।
চরম একটা ভয় ছাপিয়ে গেলো তাঁর চোখে মুখে, সারাদেহে!
আমার জ্যেষ্ঠের দেহেও কেমন যেনো একটা উত্তেজনা বয়ে গেলো!
তিনজন আরোহীর কেউ কোন কথা বলছিলামনা।
আমি আমার জ্যেষ্ঠকে একটা প্রশ্ন করতে চাইলে তিনি আমাকে হাত তুলে থামিয়ে দিলেন, অনেকটা রাগতঃ ভঙ্গিতে, হিন্দু দেবতা শিব কিংবা বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারক গৌতম বুদ্ধের শক্তিধর হাতের মতো।
মিনিট কয়েকের জন্যে হলেও লিফটের ভিতরে কেমন একটা গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে, আমি টের পেলাম, নিশ্চিত হয়েছিতো বটেই!
লিফট থেমে গেলো, বেরিয়ে গেলাম সবাই, আমরা।
“কি ব্যাপার স্যার?” জ্যেষ্ঠকে প্রশ্ন করলাম অস্ফুটে, একটা অধরা আবেদনে।
“এই ... ...’র জন্যে খামোখাই আমার চাকুরীটা হারিয়েছি”, জ্যেষ্ঠের খেদোক্তি মেশানো উত্তর।
এই উত্তরে আমি নই শুধু, আমার উত্তর দেবার বা পাল্টা প্রশ্ন করার শব্দগুলো কেমন যেন কুঞ্চিত হয়ে গেলো, অবলীলায়।
আমি একটা ‘পলমল’ আর আমার জ্যেষ্ঠ একটা ‘বেনসন’ শেষ করে পরস্পর বিপরীতমুখী হলাম, যার যার গন্তব্যে।
ফিরছিলাম লিফটের গোঁড়ার দিকে, উপরে যাবার উদ্দেশ্যে।
+২ পাওয়ারের রিডিং গ্লাসের উপর দিয়ে আমার চোখ পড়লো গ্যারেজের কোনায়, একটা টুলের দিকে, যেটায় সাধারনতঃ গার্ডরা বসে, বিরতির উল্লাসে।
ওটার উপর বসে আছেন লিফটের ঐ ৩য় আরোহী, বেশ অসুস্থ বোধহয়, ঘামছেন তিনি।
“আপনি একটু আগে আমার সাথে লিফটে নেমেছিলেন না?” আমার কৌতূহল।
“হ্যাঁ...। তুমি কে?” তাঁর কষ্টমাখা প্রশ্ন, সরাসরি আমাকে।
“আমি মেজর .... রিটায়ার্ড। আপনি কে স্যার?”, উনাকে জ্যেষ্ঠ ভাবতে আমার দেরী হলোনা, একটুও।
“আমি ...। আমার বাসা ডিওএইচএস বারিধারায়। তুমি কি আমাকে একটু বাসায় পৌঁছে দিতে পার?” অসহায়ত্ব থাকলেও তাঁর অনুরোধের ভঙ্গিই প্রকাশ করে দিলো তিনি আমার জ্যেষ্ঠ, নিঃসন্দেহে।
“চলুন স্যার, আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিই। নাকি সিএমএইচে নিয়ে যাব আপনাকে?”
“না...। বাসায় চলো...।” আমার উপর নির্ভর করা তাঁর নির্ভার জবাব।
একটা সিএনজি অটোয় বনানী থেকে ডিওএইচএস বারিধারা পৌঁছুতে ১০ থেকে ১২ মিঃ লাগলো।
তাঁর বাসায় তড়িৎ কিন্তু সাধারণ শুশ্রুসায়ই উনি সুস্থ বোধ করলেন, আমাকে জানালেন কৃতজ্ঞতা, অকপটে, আমার প্রস্থান লগ্নে।
ফিরছি একটা রিকশায়, বনানী, আমার অফিসের দিকে।
হাজারো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে, ৩০ মিনিটের সারাটা পথ, ব্যর্থ আমার চৈতন্য, অদ্যাবধি, নিরবধি...।
[পুনশ্চঃ ঘটনাচক্রের ২ জনই আমার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। সেনা নয়, নৌ বা বিমান বাহিনীর। চাকুরীজীবনে তাঁদের মধ্যে কি ঘটেছিলো তা সবারই অনুমেয়, সহজেই, বিস্তৃতিতে গেলামনা আর। সঙ্গত কারনে তাঁদের পরিচয় প্রকাশ করলামনা। কেউ তাঁদের পরিচয় সম্পর্কে ধারনা করলেও নাম প্রকাশ করবেননা, প্লীজ। পৃথিবী ধ্বংসের পরেও আমার সকল জ্যেষ্ঠ শ্রদ্ধাভাজন জ্যেষ্ঠই থাকবেন, আমাকে ক্ষমা করবেন]
©somewhere in net ltd.