নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেয়ার জন্য উৎসর্গীকৃত ব্লগ।

দানবিক রাক্ষস

অন্ধদের রাজ্যতে এক চোখা মানুষটি রাজা এবং আমি সেই রাজা। না ঈশ্বর, না পিশাচ—আমি তৃতীয় বিশ্বাস।

দানবিক রাক্ষস › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেয়া: প্রেম ও শিকড়ের সন্ধানে

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৮



স্কুল জীবন থেকেই আমার মনে হতো—আমি যেন এক অদৃশ্য কারাগারে বন্দী।
একই রুটিন: বাসা থেকে স্কুল, কলেজ থেকে বাসা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসা, আর এখন অফিস থেকে বাসা।
এই প্রতিযোগিতার দৌড়—অবিরাম রেট রেস —আমাকে ক্লান্ত করে ফেলেছিল।
টাকার মোহ, চাকরির চাপ, যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল—সবকিছুকেই ঘৃণা করতাম আমি।
একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম—সব ছেড়ে দেব।
পরদিন অফিসে গিয়ে ম্যানেজারের হাতে পদত্যাগপত্র দিয়ে এলাম।
অফিস শেষে বাইকে উঠে গেলাম ফুয়েল স্টেশনে, ফুল ট্যাঙ্ক ভরে নিলাম।
ভাবলাম, শহর ছেড়ে চলে যাবো, যেখানে রাস্তা নিয়ে যাবে—কোনো অচেনা গ্রাম, সেই অজানা প্রকৃতির মাঝে।
বাইক ছুটিয়ে যেতে যেতে মনে পড়লো—স্কুল জীবনে একবার গিয়েছিলাম সিলেট।
ওই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাকে মোহিত করেছিল।
মনে হলো—সেখানেই যাওয়া উচিত।
আট ঘণ্টা নিরন্তর বাইক চালিয়ে অবশেষে সিলেট পৌঁছালাম।
একটা সস্তা হোটেলে রুম ভাড়া নিলাম, শরীরটা এলিয়ে দিলাম।
সন্ধ্যায় হোটেলের বারান্দায় সিগারেট ধরালাম।
ধোঁয়া ভেসে গেল রাতের আকাশে, আর মনে হলো—এবার কোথায় যাবো?
হঠাৎ মনে হলো—চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল!
পরদিন সকালে বাইক নিয়ে রওনা দিলাম শ্রীমঙ্গলের পথে।
ঘণ্টাখানেকের কিছু বেশি সময় পর সবুজের এক অদ্ভুত জগতে প্রবেশ করলাম।
চারদিকে ঢেউ খেলানো চা-বাগান, গাঢ় সবুজে মোড়া পাহাড়ি ঢাল, ছোট ছোট খালের টলমলে পানি—
যেন শ্বাস নিচ্ছি না, বরং অক্সিজেন আমাকে ভেতর থেকে ধুয়ে দিচ্ছে।
মাটির গন্ধ, শিশিরভেজা ঘাসের স্পর্শ, আর বাতাসে মিশে থাকা চা পাতার সুগন্ধে বুক ভরে গেল।
তবে কোথায় থাকবো ঠিক করিনি।
প্রায় দুই ঘণ্টা বাইক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরছিলাম।
অবশেষে এক ছোট্ট গ্রামে ঢুকে পড়লাম।
গ্রামের মানুষগুলো যেন একেবারেই আলাদা।
তাদের চোখে কৌতূহল, ঠোঁটে সরল হাসি।
সবাই আমাকে দেখে ফিসফিস করে কথা বলছিল।
একটা ছোট দোকানে বাইক থামালাম।
এক কাপ চা খেলাম, সিগারেট ধরালাম।
দোকানদার ছিলেন দারুণ উদার।
আমার সাথে আলাপ জমালেন, নানান গল্প করলেন,
আমি তাকে প্রশ্ন করলাম “ভাই, এখানে হোটেল আছে, আমি একটা রুম ভাড়া নিব।“
তিনি বললেন,
“ না ভাই এখানে কোনো হোটেল নেই, কিন্তু চাইলে আমার বাসার এক খালি ঘরে থাকতে পারেন। ভাড়া দিতে হবে না। খাওয়া-দাওয়া নিয়েও ভাববেন না।”
আমি যেন স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
এমন উদারতা শহরে দেখা যায় না।
আমি রাজি হয়ে গেলাম।
ওনার সাথে গেলাম বাড়িতে। তার পরিবারের সাথে পরিচিত হলাম, সবাই অনেক ভালো, মিশুক।
ছোট্ট, অথচ সুন্দর একটি ঘর দেখালো আমাকে, আমি খুব খুশী হলাম ।
বাড়ির পাশে একটি টলমলে ছোট হ্রদ / খাল, পানিটা এত ঠান্ডা আর স্বচ্ছ যে সেখানে স্নান করতেই শরীর-মনে অদ্ভুত এক শক্তি এলো।
তারপর বাইকে চেপে গ্রামটা ঘুরতে বের হলাম।
যত বেশি ঘুরছিলাম, তত বেশি অবাক হচ্ছিলাম।
চারপাশের প্রকৃতি যেন আমাকে আলিঙ্গন করে নিচ্ছে।
চা-বাগানের সরু পথ ধরে যখন বাইক চালাচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিল—আমি যেন কোনো কবিতার ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি।
শিশুরা খালি পায়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে, নারীরা মাথায় ঝুড়ি নিয়ে মাঠ থেকে ফিরছে, দূরে কারো বাঁশির সুর ভেসে আসছে।
পাহাড়ের গায়ে লাল সূর্য ঢলে পড়ছে, আর তার আলোয় সবুজ পাহাড় সোনালি হয়ে উঠছে।
আমি মনে মনে ভাবলাম—
“এই কি তবে মুক্তি? এই কি তবে প্রেম?
যে প্রেম শহরের ভিড়ে পাইনি, তা কি প্রকৃতির সবুজ বুকেই লুকানো?”
বিকেলের শেষ আলো।
আমি একা বসে আছি পাহাড়ি টিলার মাথায়।
হাতে সিগারেট, চোখে সূর্যাস্তের রঙ।
মনে হচ্ছিল—এটাই হয়তো জীবনের সবচেয়ে শান্ত মুহূর্ত।
হঠাৎই চোখ আটকে গেল এক নারীর দিকে।
সে অন্যরকম, গ্রামের বাকি নারীদের মতো নয়।
ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের সাথে গল্প করছে, হাসছে।
তার সেই হাসি—যেন স্নিগ্ধ হাওয়ার মতো আমাকে ছুঁয়ে গেল।
তার চোখে তাকিয়ে মনে হলো আমি এক অচেনা সবুজ রাজ্যে প্রবেশ করেছি।
তার চুল যেন ঝরনার ধারা, তার ঠোঁটের হাসি যেন প্রকৃতির নিঃশব্দ কবিতা।
সূর্য ডুবে গেল, আকাশ অন্ধকার হলো,
কিন্তু আমার চোখে তখনো সে —
প্রকৃতির মুকুট, আমার নিঃশ্বাসের নতুন ছন্দ।
রাতে ফিরে গেলাম ঘরে।
দোকানদারের ছোট মেয়েটা আমার সাথে গল্প করছিল।
ওকে পড়াশোনার কিছু টিপস দিচ্ছিলাম।
হঠাৎ সে বললো—
“আজ বিকেলে কেয়া আপুও আমাকে একই পরামর্শ দিলেন।”
চমকে গেলাম।
তাহলে ওই নারীই—কেয়া।
গ্রামের সবচেয়ে শিক্ষিত, উদার, আর সবার কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ।
পরদিন বিকেলে আবার গেলাম সেই টিলায়।
কেয়াকে পাবো ভেবেছিলাম।
কিন্তু চারপাশে শুধু শুনশান প্রকৃতি।
মনটা খারাপ হয়ে গেল।
ঠিক তখনই এক গ্রামীণ লোক এসে আলাপ জমাল।
গল্প করতে করতে হঠাৎ হাতে ধরিয়ে দিলেন এক ধরনের হাতে বানানো সিগারেট।
প্রথমে বুঝিনি, পরে টের পেলাম—এটা গাঁজা। আমি মনে মনে খুশী হলাম কিন্তু তাকে বুঝতে দেই নি বরং সেই লোকের সাথে কথা চালিয়ে গেলাম ।
মাথার ভেতর অদ্ভুত এক নেশা নেমে এলো,
মনে হচ্ছিল কেয়া এখানেই, বাতাসে ভাসছে তার উপস্থিতি।
কিন্তু বাস্তবে চারপাশে শুধু অন্ধকার।
পরদিন সকালে গ্রাম্য সরু পথ ধরে হাঁটছিলাম।
হঠাৎই দেখলাম কেয়া।
সে একা হেঁটে যাচ্ছে।
আমার বুক ধুকপুক করছে, কী বলবো বুঝতে পারছি না।
কেয়া এগিয়ে এসে হেসে বলল—
“হাই, আমি কেয়া। আপনি আমাদের গ্রামের লোক নন, তাই না? শুনেছি দোকানদারের বাড়িতে থাকছেন। আপনি কি কোনো এনজিও থেকে এসেছেন, নাকি চা-বাগান নিয়ে কাজ করতে?”
আমি তো স্তব্ধ!
সত্যি বলতে ইচ্ছে হলো—আমি জীবনের বোঝা ফেলে পালিয়ে এসেছি এখানে , একটুকরো শান্তির খোজে।
কিন্তু সেটা বলা গেল না।
তাই হেসে বললাম—
“না, আমি জেমস বন্ড। একটা সিক্রেট মিশনে এসেছি।”
কেয়া হেসে উঠলেন।
হাসিটা যেন আমার মনের গভীরতা ভেঙে আলো ঢেলে দিল।
কিছুক্ষণ গল্প হলো, তারপর সে বিদায় নিল।
কিন্তু আমার ভেতর তখন অদ্ভুত ঝড়।
বিকেলে ছোট লেকের ধারে বসেছিলাম।
হঠাৎই কেয়া এল কয়েকজন গ্রামের ছোট মেয়েকে নিয়ে।
ওদের পড়াচ্ছিল, জীবনের শিক্ষা দিচ্ছিল।
ছোট মেয়েরা চলে যাওয়ার পর কেয়া আমার কাছে এগিয়ে এলো ।
“একলা বসে আছেন কেন?” —মিষ্টি হেসে প্রশ্ন করল কেয়া।
আমি বললাম—
“আমি একা নই, শান্ত প্রকৃতির সঙ্গেই আছি।”
সে মৃদু হেসে বলল—
“তাহলে প্রকৃতির সঙ্গ উপভোগ করুন।”
আমি ফিসফিস করে বললাম—
“প্রকৃতির মুকুট যদি পাশে থাকে, তবে উপভোগ আরও গভীর হবে।”
কেয়া থেমে গেলেন।
“আপনি কী বললেন?”
আমি হেসে এড়িয়ে গেলাম।
বললাম, “এসেন, বসেন। প্রকৃতির সাথে গল্প করি।”
ভালো বালিকার মতন , কেয়া এসে বসল।
আমরা অনেকক্ষণ গল্প করলাম।
কেয়া জানালো—
স্নাতক শেষে আমেরিকায় পড়াশোনা আর চাকরি করেছেন।
ভালো জীবন পেয়েছিলেন, তবু ভেতরে ছিল অন্যরকম শূন্যতা।
মাটি, মানুষ, শেকড়ের টান তাকে ফিরিয়ে এনেছে।
তিনি চান গ্রামের ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হোক, ভালো জীবন পাক।
এটাই তার স্বপ্ন, এটাই তার ভালোবাসা।
আমি নির্বাক হয়ে শুনছিলাম।
একজন মানুষ এত বড় হতে পারে!
প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাঝেই দাঁড়িয়ে বুঝলাম—
প্রকৃতির আসল মুকুট হলো এই নারী, কেয়া।
সন্ধ্যা নেমে এলো।
কেয়া বিদায় নিয়ে চলে গেল।
আমি লেকের ধারে বসে রইলাম।
হঠাৎ কালকের সেই লোক এলো, আমার সাথে আবার গল্প জমিয়ে দিল,
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম আজ কি হাতে বানানো সিগারেট আছে?
লোকটি একটি সরল হাসি দিয়ে, জামার ভিতর থেকে হাতে বানানো সিগারেট (গাজা) বের করে দিলেন। আমি ওটা নিয়ে ধরিয়ে টান দিলাম,
আমি ধোঁয়া টানতে টানতে ভাবছিলাম—
কেয়ার চোখ, তার হাসি, তার শক্তি আর তার ভালোবাসা—
এসব কি কোনো নেশার থেকেও গভীর নয়?

পরদিন ভোর থেকে সারাদিন গ্রাম ঘুরে বেড়ালাম।
মনের ভেতরে একটাই খোঁজ—কেয়া।
কিন্তু কোথাও তার দেখা পেলাম না।
সন্ধ্যায় হঠাৎ দেখলাম—
টিলার মাথায় একা বসে আছেন সে।
নীরব আকাশ, লাল সূর্যের শেষ আলো, আর তার চারপাশে প্রকৃতির গভীর নীরবতা।
আমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম—
“আপনি এখানে একা কেন?”
সে ধীরে ধীরে উত্তর দিল—
“আমি জীবন নিয়ে ভাবছিলাম। আমার গ্রাম নিয়ে ভাবছিলাম।
আমেরিকা ছেড়ে ফিরেছি এদের জন্য।
আমি চাই গ্রামের ছেলেমেয়েরা সুশিক্ষা পাক, ভালো ভবিষ্যৎ পাক।
কিন্তু যতই করি, মনে হয় যথেষ্ট হচ্ছে না।
আমি আরও কিছু করতে চাই, আর এটা নিয়ে ভাবছিলাম আর প্লান করছিলাম।”
আমি নিরব হয়ে গেলাম।
সে বলতে লাগলেন—
“যখন জীবনের জন্য একটা প্যাশন খুঁজে পাবে, তখন কষ্ট বলে কিছু থাকবে না।
তখন প্রতিটি বাধাই তোমার কাছে হবে একেকটা এডভেঞ্চার।
তখন ক্লান্তি আসবে না, একঘেয়েমি আসবে না।
কারণ প্যাশনই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।”
আমি কিছুই বলতে পারলাম না।
শুধু তাকিয়ে রইলাম।
অন্ধকার নেমে এলো, আর হঠাৎ চারপাশে জোনাকি উড়তে শুরু করল।
সেই মুহূর্তে মনে হলো—কেয়া কোনো সাধারণ নারী নন।
তিনি যেন প্রকৃতির দেবী, এক অমর অনুপ্রেরণা।
আমি গভীরভাবে বুঝলাম—
জীবন মানে শুধু পালিয়ে যাওয়া নয়।
জীবন মানে শেকড়ে ফেরা।
জীবন মানে এক প্যাশনের জন্য জ্বলে ওঠা।
পরদিন সকালে কেয়ার সাথে দেখা হলো।
তাকে ধন্যবাদ জানালাম—তার সময়ের জন্য, তার শিক্ষা আর তার আলো ছড়ানো কথার জন্য।
দোকানদার আর তার পরিবারের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানালাম।
তারপর বাইক স্টার্ট করলাম।
রাস্তা ধরে ছুটতে ছুটতে মনে হচ্ছিল—
আমি খালি হাতে ফিরছি না।
আমি ফিরছি নতুন আলো, নতুন দর্শন আর এক অসাধারণ নারীর থেকে শেখা এক মহামূল্যবান পাঠ নিয়ে।
ঢাকার পথে যেতে যেতে মনে হচ্ছিল—
“আমি হয়তো প্রেম পেলাম না,
কিন্তু প্রেমের থেকেও গভীর কিছু পেলাম—
জীবনের প্রতি এক অটল ভালোবাসা।”
***
ছ’মাস কেটে গেছে ঢাকায়।
কিন্তু প্রতিটি দিনই আমার কাছে যেন মরে যাওয়া সময়।
অফিসের চেয়ার, কাগজের ফাইল আর মানুষের মুখোশ মুখে কেবল শূন্যতা।
চোখে আলো নেই, মনের ভেতর কোনো আগুন নেই।
শুধু একটাই অনুভূতি বারবার তাড়া করে—
আমার রুট কোথায়?
উত্তর সবসময় একই জায়গায় এসে থামে—
কেয়া।
শহরের ভিড়ে, টাকার দৌড়ে, কোলাহলের ভেতর আমি কিছুই খুঁজে পাই না।
কিন্তু কেয়ার চোখে, তার হাসিতে, তার কথায় আমি খুঁজে পেয়েছিলাম প্রকৃতির আসল স্পন্দন।
আর থাকতে পারলাম না।
অফিসে পদত্যাগপত্র দিলাম।
আবারও বাইক স্টার্ট করলাম।
রাত-দিন পাড়ি দিয়ে ফিরলাম শ্রীমঙ্গলের সেই গ্রামে।
দোকানদার এবারও হাসিমুখে আমাকে নিজের ঘরে জায়গা দিলেন।
আমি এবার শুধু নিজের জন্য আসিনি, সঙ্গে নিয়ে এসেছি তার সন্তানদের আর স্ত্রীর জন্য উপহার।
তাদের মুখে হাসি দেখে মনে হলো আমি ফিরে পেয়েছি সেই হারানো শান্তি।
পরদিন সকালে সরু মাটির পথে হাঁটছিলাম।
হঠাৎই সামনে থেকে এলো কেয়া।
আমাকে দেখে প্রথমে বিস্ময়, তারপর সেই চিরচেনা হাসি।
“কেমন আছেন? আবার এখানে কেন? জীবনের প্যাশন কি খুঁজে পেয়েছেন?”
আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম—
“আমি ভালো আছি। কিন্তু আমি ফিরেছি আমার রুটে।”
কেয়া অবাক হয়ে বললেন—
“আপনার রুট তো ঢাকায়। এখানে নয়।”
আমি ধীরে ধীরে উত্তর দিলাম—
“না কেয়া, আমার রুট এখানে।
আর তুমি-ই আমার রুট।
তুমি-ই আমার জীবনের প্যাশন।”
কেয়া চুপ করে গেল।
আমি যেন বুক খুলে সব কথা উজাড় করে দিলাম—
“কেয়া, আমি পুরো মহাবিশ্বে খুঁজেছি শান্তি,
কিন্তু শুধু তোমার কাছেই পেয়েছি সেই শান্তি।
আমি পুরো মহাবিশ্বে খুঁজেছি প্যাশন,
কিন্তু শুধু তোমার ভেতরেই খুঁজে পেয়েছি সেই প্যাশন।
আমি পুরো মহাবিশ্ব ঘুরেছি,
কিন্তু আমার মাধ্যাকর্ষণ কেবল তোমার দিকেই।”
আমার কণ্ঠে কাঁপন, চোখ ভিজে আসছে।
শেষে শুধু বলতে পারলাম—
“কেয়া, আমাকে তোমার সাথে হাঁটতে দাও।
তোমার সঙ্গ আমি ভীষণভাবে দরকার, আমি জীবনের মানে তোমার মাঝেই খুজে পেয়েছি।”
কেয়া একটু থেমে মৃদু হেসে বললেন—
“আচ্ছা, দেখা যাক কতদূর তুমি আমার সাথে হাঁটতে পারো।
এখন আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে। বাই।”
কেয়া চলে গেল।
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম টিলার বাতাসে, বুক ভরে তার উপস্থিতি অনুভব করতে করতে।
বিকেলে আবার টিলায় বসলাম।
অপেক্ষা করলাম কেয়ার জন্য।
কিন্তু সে এলেন না।
বরং সেই পরিচিত লোক এসে দাঁড়াল, যে সব সময় আমাকে হাতে বানানো সিগারেট (গাজা) দেয়। আজ আমি তার কাছে থেকে চেয়ে নিলাম আর
আমি আবার ধোঁয়া টানতে টানতে ভাবতে লাগলাম—
কেয়া কি আমার সাথে কখনো হাঁটবে?
নাকি আমি চিরকাল রুটহীন থেকে যাব?
রাতের আকাশে এক অদ্ভুত অন্ধকার নেমে এলো।
জোনাকির আলোও যেন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ল।
মনে হচ্ছিল—
আমি কি প্রেম খুঁজছি, নাকি শেকড়ের সন্ধানে হেঁটে চলেছি?

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১২

বিজন রয় বলেছেন: সুন্দর!

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩১

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: ভালো লাগল।

৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৫২

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ভালো লাগলো।

৪| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫

সাইফুলসাইফসাই বলেছেন: চমৎকার লাগলো

৫| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৯

অপ্‌সরা বলেছেন: কবিতা পড়ে মনে পড়ে গেলো আরেক কবিতা

আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.