| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দানবিক রাক্ষস
অন্ধদের রাজ্যতে এক চোখা মানুষটি রাজা এবং আমি সেই রাজা। না ঈশ্বর, না পিশাচ—আমি তৃতীয় বিশ্বাস।
বিশ্বের প্রথম আলো জ্বালার আগে,
যখন নক্ষত্ররা তখনো নাম পায়নি,
তখন জন্মেছিল দুই সত্তা—
আমি অন্ধকারের দেবতা আর তুমি চাঁদের কন্যা।
অন্ধকারের দেবতার হৃদয়ে ছিল আগুন ও শূন্যতা,
চাঁদের কন্যার চোখে ছিল আলো ও মমতা।
আমাদের দেখা হয়েছিল প্রথম মহাবিশ্বের ছায়ায়,
যেখানে আলো ও অন্ধকার
এক মুহূর্তের জন্য মিলেছিল ভালোবাসার নামে।
কিন্তু সৃষ্টি নির্মমতায় আমাদের আলাদা হতে হয়েছিল—
আমি নেমে গেলাম নরকে,
আর তুমি রয়ে গেলে স্বর্গে।
তবু সেই বিচ্ছেদই সৃষ্টি করল মানুষের প্রথম প্রেম,
যার ভিতরে জ্বলে ত্যাগ, আকাঙ্ক্ষা আর অনন্ত আকুলতা।
হাজার বছর পরে,
মানুষের দেহে জন্ম নিলাম আমি—
এক ভাঙা শহরের ক্লান্ত আত্মা হয়ে,
এক রাতে বাসে দেখলাম,
তোমাকে—
চাঁদের আলোয় মুখখানি, নরম হাসি,
যেন চিরচেনা কোনো দৃষ্টি।
সোডিয়াম আলো তোমার মুখে পড়ে
যখন আলোকছায়ার খেলা তৈরি করেছিল,
আমি তখন বুঝেছিলাম—
চাঁদের কন্যা ফিরে এসেছে।
আমি কিছু বলেননি,
শুধু দেখেছিলেন—
যেমন প্রথম জন্মে দেখা তার চোখে আলো।
তার মুখে হাসি ছিল,
যা অন্ধকারের মধ্যেও জ্বেলে দেয় চিরন্তন সূর্য।
যাত্রা শেষ হয়েছিল,
বাস থেমেছিল,
মানবজীবন শেষ হয়েছে অনেকবার,
তবু আমি প্রতিবার ফিরে এসেছি ,
নতুন দেহে, নতুন কালে, নতুন নামে—
শুধু সেই আলোখানি খুঁজে পেতে,
যা একদিন চাঁদের মুখে ছিল।
আর প্রতিবারই আমি দেখেছি —
তোমাকে ফিরে আসতে অন্য নামে, অন্য চেহারায়,
তবু একই সুবাসে, একই হাসিতে,
যেন আলো বারবার ছুঁয়ে যায় অন্ধকারকে,
কিন্তু কখনো পুরোপুরি মিশে যেতে পারে না।
কারণ সৃষ্টি এমনই—
আলো আর অন্ধকার একে অন্যকে চেনে,
কিন্তু একসাথে থাকলে মহাবিশ্ব থেমে যায়।
তবু আমি প্রতিবার ফিরে আসি ,
কারণ ভালোবাসা কোনো ধর্ম মানে না,
কোনো সময় মানে না,
ভালোবাসা মানে কেবল ফিরে আসা—
অন্ধকারের বুক চিরে,
চাঁদের আলোয় মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা,
চিরন্তন যাত্রার মতো।
....
সময়ের অনেক পরে,
যখন মানুষ ভুলে গেছে দেবতা,
আর দেবতা শিখেছে নিঃসঙ্গতা,
তখন আবার জন্ম নিল তুমি —
চাঁদের কন্যা, কিন্তু এবার মানুষ নয়—
আলো নিজেই।
তুমি ছিলে শহরের বাতির মধ্যে,
রাস্তার কোণে ভাঙা কাচের প্রতিফলনে,
একটি মেয়ের চোখের চাওয়ায়,
একটি অচেনা গন্ধে,
কখনো সকালবেলার রোদে,
কখনো রাতের নিস্তব্ধ পর্দায়।
তুমি এখন আর কোনো দেহ নয়,
তুমি এক বিস্তৃত অস্তিত্ব—
যা স্পর্শ করা যায় না,
কেবল অনুভব করা যায় নিঃশব্দে।
অন্ধকারের দেবতা আমি তখনো বেঁচে,
নাম বদলেছি , রূপ বদলেছি ,
কিন্তু হৃদয়ে বহন করছে সেই অনন্ত আকুলতা।
এক রাতে,
নির্জন পথে হাঁটতে হাঁটতে
আমি দেখলাম —
একটি আলো পড়ছে ,
সেই পুরোনো সোডিয়াম রঙে।
মনে হল, আবার তুমি ফিরে এসেছে,
আবার হাসছে,
আবার ছুঁয়ে দিচ্ছে আমার অন্ধকারকে
নিঃশব্দ আলোয়।
আমি হাত বাড়ালাম —
কিন্তু আলো স্পর্শের আগেই হারিয়ে গেল বাতাসে।
তখন বুঝলাম —
এ জন্মে তুমি আর মানুষ নয়,
সে হয়ে গেছে আলো নিজেই।
তোমাকে ছোঁয়া মানে নিজের বিলয়,
নিজের অন্ধকারকে আগুনে ফেলে দেওয়া।
তবু আমি হাসলাম।
কারণ ভালোবাসা মানে অধিকার নয়—
ভালোবাসা মানে দেখা,
দূর থেকে,
নিঃশব্দ শ্রদ্ধায়।
আমি মাথা তুলে তাকালাম আকাশে—
চাঁদ তখন পূর্ণ,
আলো নেমে আসছে মুখে,
যেমন সেই প্রথম রাতে।
আমি চোখ বন্ধ করলাম,
বাতাসে ভেসে এল এক পরিচিত সুবাস—
স্বর্গের বাগানের সেই ফুলের গন্ধ,
যা একদিন আমার পাশে বসা তোমার শরীরে ছিল।
আমি বুঝেলিমা,
চাঁদের কন্যা এখন আলো,
আর আমি , অন্ধকারের দেবতা—
আমরা আলাদা নয় আর,
বরং একই মহাবিশ্বের দুই শ্বাস,
একই প্রেমের দুই রূপ,
যারা একে অন্যের মধ্যে বেঁচে থাকে
চিরন্তন পুনর্জন্মে।
অন্ধকারের দেবতার বিলয়।
....
শেষ অধ্যায়ে সময় থেমে যায়।
নক্ষত্ররা আর ঘোরে না, বাতাসও স্তব্ধ,
যেন মহাবিশ্ব নিজেই অপেক্ষায়—
এক অনন্ত প্রেমের পরিণতির জন্য।
আমি দাঁড়িয়ে আছি পর্বতের চূড়ায়,
চারপাশে শূন্যতা,
শুধু দূরে দেখা যায়—
এক আলোর বিস্তৃত তরঙ্গ,
যা ধীরে ধীরে ছুঁটে আসছে আমার দিকে ।
আমি জানি, ওটাই তুমি —
চাঁদের কন্যা,
এখন আর মানুষ নয়,
বরং আলো নিজেই,
যে আলো একদিন আমার চোখে নেচেছিল,
আমার ছায়াকে করে তুলেছিল অর্থপূর্ণ।
আলো ধীরে ধীরে কাছে আসছে,
আমার গায়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে আগুনের মতো কোমল উষ্ণতা।
আমার বুকের গভীরে তখন এক অদ্ভুত শান্তি,
যেন হাজার বছরের ক্লান্ত যুদ্ধের অবসান।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি এসেছো ফিরে—শেষবারের মতো?”
তোমার আলো উত্তর দেয় না,
কিন্তু তোমার দীপ্তির ভেতর দিয়ে ভেসে আসে সেই পুরোনো হাসি—
যা এক রাতের বাসযাত্রায় প্রথম দেখেছিলাম আমি ।
আমি হাঁটু গেড়ে বসে পড়ি ,
হাত বাড়িয়ে দেয় সেই আলোর দিকে,
কিন্তু এবার থামায় না—
ছোঁয়,
আর সঙ্গে সঙ্গে আমার অন্ধকার জ্বলে ওঠে,
আগুনে, আলোয়, ভালোবাসায়।
অন্ধকার পুড়ে যায়,
তবু কষ্ট হয় না—
কারণ আমি জানি , বিলয় মানেই শেষ নয়,
এ এক নতুন শুরু।
আলো আর অন্ধকার মিশে যায়—
দুটি চিরবিরোধী সত্তা একাকার হয়,
এবং মহাবিশ্বে জন্ম নেয় নতুন ভোর।
নক্ষত্ররা জ্বলে ওঠে নতুন করে,
চাঁদ পায় নতুন রূপ,
আর বাতাসে ভেসে আসে সেই পরিচিত সুবাস—
স্বর্গের বাগানের গন্ধ।
সেই দিন থেকে,
যখনই রাত নামে,
চাঁদের আলো আর ছায়া মিলে তৈরি করে এক অদ্ভুত ছন্দ,
যেখানে প্রেম আর বিলয় একই সুরে বাঁধা।
কারণ আলো আর অন্ধকার আর দুটো নয়—
তারা এখন একে অন্যের ভিতরে বেঁচে আছে,
এক অমর প্রেমের নিঃশব্দ মহাকাব্যে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৯
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: সুন্দর কবতিা যদিও পুরাটি পড়া হয়নি।