![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও সুশীল সমাজ
আবদুল্লাহ আল আমিন
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ যখন সংঘটিত হচ্ছে, তখন বিশ্ব রাজনীতি এক জটিল দ্বন্দ্বে উন্মত্ত, অস্থির এবং পীড়িত। পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন পাকিস্তান প্রেমে বিভোর। মাও জে দং এর সমাজতান্ত্রিক চীনও আদর্শ, তত্ত্ব-দর্শন ভুলে মার্কিনীদের সাথে একাট্টা হয়েছে। আর তৃতীয়বিশ্বের সদ্যস্বাধীন দেশগুলো ছিল পশ্চিমা পরাশক্তির প্রভাববলয়ে বন্দী এবং অনেকক্ষেত্রেই পঙ্গু , অর্থনৈতিকভাবে অসহায়। তাদের পক্ষে সংকীর্তনের আসরের দোহারের ভূমিকা পালন করা ছাড়া গত্যান্তর ছিল না। আরব দুনিয়ার মুসলিম বেরাদাররা তো ইসলামি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ববাংলার অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক শক্তির অভ্যুত্থানে ভীষণ বেজার। এই যখন বিশ্ব রাজনীতির পরিস্থিতি, তখন পূর্ববাংলার জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের সংগ্রামে গণতান্ত্রিক রায় নিয়ে ত্রাতারূপে আবির্ভূত হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে রক্তগঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে চাইলেন ইয়াহিয়া-ভুট্টো-টিক্কা খানরা। কিন্তু কোনো কিছুতেই জেগে ওঠা বাঙালির প্রাণের জোয়ারকে ঠেকানো গেল না। চরম বৈরী ও বিরূপ পটভূমিকায় রক্তসমুদ্র মন্থন করে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হল। এমন বিরূপ বিরুদ্ধ পরিবেশে কী করে বাংলাদেশের উজ্জ্বল অভ্যুদয় সম্ভব হল? কী করে ভেতো,ভীতু, অলস, কর্মবিমুখ যুদ্ধবিদ্যায় অনভিজ্ঞ হিসেবে পরিচিত এই বাঙালি মাত্র নয় মাসে যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী, পরাক্রান্ত পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করল? উত্তর হলÑ স্বাধীনতার জন্য একটি জাতির আবেগ যখন দুর্দমনীয় হয়ে ওঠে, তখন সব মারণাস্ত্রের ব্যবহারই তার কাছে তুচ্ছ হয়ে যায়। বাঙালির দুর্দমনীয় আবেগের কাছে সেদিন তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানিদের সব মারণাস্ত্র, ভেস্তে গিয়েছিল নিক্সন কিসিঞ্জারদের সব গোপন কূট চাল। বাঙালির একাত্তরের আবেগের সঙ্গে সেদিন সংহতি জ্ঞাপন করেছিল দেশ বিদেশের কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ বিশ্বের সংবেদনশীল,মানবতাবাদী,অগ্রসরচিন্তার বিপুল অংশের মানুষ। সেই সব মানুষের সমর্থন উত্তালতরঙ্গের মত আছড়ে পড়েছিল জনতার মিছিলে। লক্ষ জনতার উথাল পাথাল করা মিছিলের অভিঘাত থেকে একের পর এক সৃষ্টি হচ্ছিল কত গান-কবিতা,শিল্প আরও কত কী! একাত্তরে বিশ্বজুড়ে কবি- শিল্পী- সাহিত্যিক- বুদ্ধিজীবী, চিন্তক, ভাবুকরা তো মূলতঃ প্রতিরোধের আগুনে জ্বলে ওঠা বাংলাদেশের বন্দনায় মুখর ছিলেন নানাভাবে। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে আমেরিকার ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে প-িত রবিশঙ্কর ও জর্জ হ্যারিসনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় কনসার্ট ফর বাংলাদেশ, যার ঐতিহাসিক প্রভাব রয়েছে আজও। সেদিনের সাড়াজাগানো কনসার্টে হ্যারিসন যে গানটি গেয়ে সবচেয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সেটি মাহবুব কামালের অনুবাদে বলা যায়:
‘ সেদিন এলো বন্ধু আমার/ দুই চোখ তার ভরা বেদনায়/ আজ কিছু চাই সহায়তা তার/ দেশে মৃত্যুর মত যন্ত্রণা/ শুধু বুঝি কিছু করা প্রয়োজন/ এর বেশি কিছু জানতে চাই না/ সবাইকে বলি বাঁচাও জীবন/ সহায়তা চাই সকল জনার/ ও বাংলাদেশ..ও বাংলাদেশ। ’
হ্যারিসনের লিরিকে নেই কোন জমজমাট বিবরণ, মানবিক সংবেদন- সহমর্মিতাই সব। জোয়ান বায়াজের ‘ সঙ অব বাংলাদেশ’ কিন্তু ভিন্ন ধরনের ছিল; গোটা মানবসভ্যতাকে প্রশ্ন করে বায়াজ লিখেছিলেন: ‘দ্য স্টোরি অব বাংলাদেশ’। পাকিস্তানি নরপশুদের কাছে আশরাফুল মাখলুকাত মানুষের চেয়ে মাটির মূল্য বেশি, জোয়ান বায়াজও তার গানের আখ্যানে তাই লিখেছেন।
বব ডিলানও সেই কনসার্টে দীর্ঘদিনের নিভৃতি ঘুচিয়ে গেয়েছিলেন, ‘ ধেয়ে আসছে দারুণ বৃষ্টি’ যা আধুনিক গানের ভুবনে মাইলফলক হয়ে আছে। এছাড়াও আসর মাতাতে নেমেছিলেন এরিক ক্ল্যাপটন; দক্ষিণ আফ্রিকায় নির্বাসিত কৃষ্ণকায় গায়ক বিলি প্রেস্টনের স্টেজ পারফরম্যান্স ছিল মন্ত্রমুগ্ধ করার মত।
দেখা যায় যে, পশ্চিমা রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রশাসন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও, পশ্চিমা নবজাগ্রত তরুণ সমাজ ছিল মুক্তিকামী জনতার পক্ষে। আর তাই, বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ভিন্নমাত্রিক ব্যঞ্জনা লাভ করেছিল বিশ্বজনের কাছে, হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিল সমর্থনের ডালা নিয়ে। আমেরিকার বিট জেনেরেশনের অন্যতম প্রধান কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ পশ্চিমবঙ্গের কবি, ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তের শরণার্থী শিবিরগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন। বেদনাপীড়িত শরণার্থীদের বেদনায় কাতর কবি যা লেখেন, তা অকালপ্রয়াত অনুবাদক খান মোহাম্মদ ফারাবী থেকে পাঠ নিলে জানা যায়:
‘ লক্ষ শিশু দেখছে আকাশ অন্ধকার/ উদর স্ফীত বিষাদমাখা চোখের ধার/ যশোর রোডÑ বিষণœ সব বাঁশের ঘর / ধুঁকছে শুধু কঠিন মাটি নিরুত্তর।/ লক্ষ পিতা ভিজছে হিমেল বৃষ্টিতে/ লক্ষ মাতা দুঃখ দেখে দৃষ্টিতে/ লক্ষ ভাইয়ের হৃদয় শুধু যন্ত্রণা/ লক্ষ বোনের নেইকো ঘরের সান্ত¦না।’
বিশ্বের মানববাদী কবি, শিল্পী ,বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ভেতর বিপুল পরিমাণ মানবিকতা, ন্যায্যতার উপাদান দেখেছিলেন বলেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়ে উঠেছিল সবার, বিশ্বজনের।
২.
বাংলাদেশের মুক্তিুদ্ধের পক্ষে দেশে প্রবাসে অবস্থান করে কতজন কত বিচিত্রভাবেই না ভূমিকা পালন করেছেন,যার বিবরণ দেয়ার জন্যএকটি পুরো গ্রন্থ লিখে ফেলা যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার ‘পূর্ব পশ্চিম’ উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের অবদান সম্পর্কে লিখছেন:
‘সেখান ( ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি) থেকে ওরা (উপন্যাসের দ্্ুই চরিত্র অলি ও বিশাখা) দুজনে চলে এল ট্রাফালগার স্কয়ারে। লন্ডন শহরে যে কত বাঙালি থাকে, তার কিছুটা আন্দাজ পাওয়া গেল এখানে এসে। আজ এখানে শুধু বাংলা কথা শোনা যাচ্ছে। চতুর্দিকে বাঙালি মুখ। বাংলাদেশের বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে আজ এখানে এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের বিশ্বদূত। তিনি নিপীড়িত, মুক্তিকামী পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের দাবির সমর্থনে দেশে দেশে প্রচার চালাচ্ছেন। ’
সেদিনের সেই সমাবেশে প্রায় চার পাঁচহাজার বাঙালি জড়ো হয়। প্রথমে ১৫০ জন ব্রিটিশ এমপি’র স্বাক্ষরিত আবেনপত্র পাঠ করা হয়, তাতে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি করা হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা, বর্বরতা, নৃশংসতা, ধর্ষণ ও অমানষিক নির্যাতনের কাহিনীও সেখানে তুলে ধরা হয়। সভায় যখন বক্তৃতা চলছে তখন হঠাৎ এক আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। লন্ডনের পাকিস্তান হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব মহিউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে পদত্যাগ করছেন জেনে হাজার হাজার মানুষ জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে চিৎকার করে উঠলো।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধটা সূচনা থেকেই গণযুদ্ধে রূপ নিয়েছিল, যে কারণে দেশে বিদেশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন গড়ে উঠতে থাকে। সব শ্রেণির মানুষ, সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা কর্মচারী, কূটনীতিক, শিক্ষক ছাত্র,শ্রমিক কৃষক, সাংবাদিক সবাই তো মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। যুদ্ধ চলেছে নগরে-বন্দরে,গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে,কূটনৈতিক ফ্রন্টে। মুক্তিযুদ্ধ চলেছে কালিতে-কলমে, বর্ণে-বর্ণনায়, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে, খেলার মাঠে,স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে, হোটেল-রেস্তোঁরায়,কলকাতার কফি হাউসে।
মুক্তিদ্ধের সময় বাঙালি কূটনীতিকরা একটি কূটনৈতিক ফ্রন্ট খুলেছিল। এই কূটনৈতিক ফ্রন্টের নেতৃত্বে ছিলেন দিল্লির পাকিস্তান হাইকমিশনের তরুণ কূটনীতিবিদ, সেকেন্ড সেক্রেটারি কে এম শিহাবউদ্দিন এবং এসিস্ট্যান্ট প্রেস এটাচি আমজাদুল হক। এই তরুণ দুই বাঙালি কূটনীতিবিদ ১৯৭১ এর ২৫মার্চের রাতেই পাকিস্তানি গণহত্যার বিরুদ্ধেতীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং সংবাদ সম্মেলন করে পাকিস্তানের সামরিক সরকারকে কাঁপিয়ে দেন। মুজিবনগর সরকার গঠনের আগেই কূটনৈতিক ফ্রন্ট খোলা হয়, ১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলা আ¤্রকাননে যখন মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভা শপথ নেয়, তখন হোসেন আলীর নেতৃত্বে কূটনৈতিক ফ্রন্টে প্রবলভাবে যোগ দেন কলকাতার পাকিস্তান ডেপুটি হাইকমিশনের সব বাঙালি কর্মকর্তা কর্মচারী। ১৮ এপ্রিল, মুজিবনগর সরকারের শপথের পরের দিন বাঙালি কর্মকর্তা কর্মচারীরা কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনের ভবনটি দখল করে নেয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় নিউইয়র্কেও একটি কূটনৈতিক ফ্রন্ট কাজ করেছে। তখনকার কনস্যুলেট জেনারেলের ভাইস কনসাল বাংলাদেশের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ২৬ এপ্রিল পদত্যাগ করেন। ওয়াশিংটনের পাকিস্তান এম্বাসিতে ইকোনোমিক কাউন্সেলর আজকের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পদত্যাগ করলেন ৩০জুন। আর এনায়েত করিম এবং এস এ এম এস কিবরিয়া পদত্যাগ করলেন ৪ আগস্ট। পরে আরও অনেক অফিসার গণহত্যাকারী পাকিস্তানি সরকারের চাকরি ছেড়ে দিয়ে কূটনৈতিক ফ্রন্টে যোগ দেন। একাত্তরে আমাদের দেশপ্রেমী রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিবিদদের দুনিয়া কাঁপানো সাহসী ভূমিকা স্বাধীনতাযুদ্ধের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করেছে। তাদের অসমসাহসিক ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধকে সারা বিশ্বের মুক্তিকামী জনতার যুদ্ধে পরিণত করে তোলে। বিশ্বজুড়ে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল বলে মাত্র ন’ মাসে বিজয়লোকের সূর্য ছোয়া সম্ভব হয়েছে।
৩.
সমাজ বিকাশের বিভিন্ন স্তরে প্রগতিশীল ও সৃষ্টিশীল বুদ্ধিজীবীরা পালন করে অতুলনীয় ভূমিকা। বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের ভাবসত্তা বিনির্মাণ, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রশাসন পরিচালনা এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে এদেশের বুদ্ধিজীবীরা পালন করেন অসমান্য ভূমিকা, যা আমাদের গৌরবদীপ্ত ইতিহাসের অত্যুজ্জ্বল অংশ। গত শতকের ষাটের দশকে মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, রেহমান সোবহান, আনিসুর রহমান, আখলাকুর রহমানের মত রাষ্ট্রচিন্তক,অর্থনীতিবিদরা বঙ্গবন্ধুর ছয়-দফা ভিত্তিক স্বাধীকার আন্দোলনে নানাভাবে প্রেরণা জুগিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে, আর এর পরিসমাপ্তি ঘটে বিজয়ের প্রাক্কালে দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবদের হত্যার মধ্য দিয়ে। বাংলাপিডিয়ায় স্বাধীনতাযুদ্ধে ১১১১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর হিসাব রয়েছে। এদের মধ্যে ৯৯১ জন শিক্ষক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী, ১৩জন সাংবাদিক, ১৬জন শিল্পী সাহিত্যিক প্রকৌশলী। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে গোবিন্দচন্দ্র দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, মোফাজ্জেল হায়দার চৌধুরী, মুনীর চৌধুরী, আনোয়ার পাশা,রশীদুল হাসান, হবিবুর রহমান, গিয়াসউদ্দিন আহমদের মত প্রাতঃস্মরণীয় শিক্ষক, ফজলে রাব্বির মত খ্যাতিমান চিকিৎসক, শহীদুল্লাহ কায়সারের মত বিপ্লবী সাংবাদিক, জহির রায়হানের মত নন্দিত চলচ্চিত্রকারের নাম উল্লেখযোগ্য। গোবিন্দচন্দ্র দেব ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই দার্শনিক, সত্য-সুন্দর মানবতার উপাসক। মোফাজ্জেল হায়দার চৌধুরী ছিলেন রবীন্দ্র দর্শনে নিমগ্ন আপাদমস্তক শিক্ষক। শহীদুল্লাহ কায়সার সাংবাদিক ছিলেন বটে; তবে তার জীবনচেতনার মর্মমূলটি ছিল সামগ্রিকভাবে রাজনীতি দ্বারা পরিব্যাপ্ত। এই রাজনীতির মূল কথা ছিল ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্রের মুক্তিসাধন। মুনীর চৌধুরী আমাদের নাট্যসাহিত্যে কেবল আধুনিকতার প্রবর্তন করেননি, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বুনিয়াদকে সুদৃঢ় করতেও তার শিল্পম-িত নাটক কাজ করেছে অসাধারণভাবে। জাতিরাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া থেকে বাংলাদেশের অভ্যুদয়, তার গতিপথ যখন নানাভাবে বিঘিœত ও বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তখন নৃতাত্ত্বিক পথে নির্দিষ্ট ভূখ-কে আশ্রয় করে এর রাজনৈতিক অভিযাত্রাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা কাজ করেছেন বলিষ্ঠভাবে। তবে এক্ষেত্রে তারা বাঙালির রাজনৈতিক অভিজ্ঞানকেও সাথে নিয়েছেন। শহীদ আনোয়ার পাশার সাহিত্যকর্মের মধ্যে বাঙালির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অভিযাত্রার পথরেখাটি খুঁজে পাওয়া যায় সুষ্পষ্টভাবে। ১৯৭১ এর ১৪ ডিসেম্বর আনোয়ার পাশা ঘাতক দালালদের হাতে ধৃত ও নিহত হন, তিনি তার মৃত্যুর সাড়ে তিন মাস আগে লেখা ‘ সূর্য সুনীথ’ কবিতায় লেখেন:
‘ সেই কঙ্কালের আত্মচরিত্র শোনো, শোনাবে তা কাক/ শকুন কিংবা কুকুর ও চিলÑ/ তার প্রতি পাতায় পাবে/ গুলি, বোমা, বারুদ/ রক্তশোষকের কুটিল, ঈর্ষা, লোভ/ আজ জিঘাংসার উন্মত্ত বিস্ফোরণ।’
‘স্টপ জেনোসাইড’ এর নির্মাতা জহির রায়হানও ত্রিশ লক্ষ শহীদের মিছিলে হারিয়ে গেছেন। তিনি বাংলাদেশ বুদ্ধিজীবী মুক্তিসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ফরাসি দার্শনিক, দ্য গল মন্ত্রিসভার সদস্য অঁদ্রে মালরোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরবর্তীকালে মারলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সাড়া দেন এবং যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।
একাত্তরের পুরো ন’মাস বুদ্ধিজীবী নিধন চলেছে। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা বাঙালির বরেণ্য মেধাবী সন্তানদের হাতে-পায়ে বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যেসব বুদ্ধিজীবী প্রাণ বিসর্জন করেছেন, তারা সকলেই ছিলেন বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটির প্রাণ ও প্রধানপুরুষ। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর আয়ুব বিরোধী গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী নানামাত্রিক ভূমিকা পালন করে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন। মানুষকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে নানাভাবে নিগৃহীত হয়েছেন তারা, অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। যে ভাবুক-চিন্তক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরা এ ভূখ-ের মানুষের সামগ্রিক মুক্তির জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, নির্দ্বিধায় বলা যায়, তারা ছিলেন আমাদের সুশীল সমাজ তথা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের প্রাণÑ সুশীল সমাজের শিরোমণি।
৪.
কবি, শিল্পী, লেখক, ভাবুক,ইতিহাসবিদ-- সৃষ্টিশীল মানুষ মাত্রই সত্য-সুন্দরের উপাসক; মনুষ্যধর্মের সাধক। তারা সমাজ বিচ্ছিন্ন নন ; সমাজ ,রাষ্ট্র ,জীবন, পরিপার্শ্বকে সুন্দর-আনন্দময় করে তুলতে ;মানুষের ভেতরের স্বপ্নগুলোকে জাগিয়ে রাখতে; বাঁচিয়ে রাখতে তারা কাব্যরচনা করেন,ছবি আঁকেন, গান বাঁধেন। নিজের ভেতরের সত্তার অদম্য টানেই সব ধরনের বিভৎসতা, প্রতিকুলতার বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়ান,প্রতিবাদ করেন তারা। শান্তির সময়,সুখের সময় হয়তো শিল্পী, সাহিত্যিকরা সবকিছুকে উপেক্ষা করে নির্লিপ্ত থাকেন,কিন্তু যখন অশান্তির লেলিহান আগুন চারিদিকে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে, তখন তারা এগিয়ে আসেন সত্য সুন্দরের পক্ষে, ন্যায়-মানবিকতার পক্ষে। ফরাসি দার্শনিক অঁদ্রে মালরো এমন একজন মানবমন ও মুক্তির সাধক, অখ- মানবিকতার ধারক ও সংবেদনশীল ব্যক্তিত্ব যিনি স্বাধীনতাপ্রিয় বাঙালির অন্তর্জগতের মর্মবাণী উপলব্ধি করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় অবস্থান গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষের সংস্কৃতি সম্পর্কে আগে থেকেই তিনি উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। তিনি মনে করেছিলেন , ভারত ছাড়া বোধ হয় জগৎ বাঙালির নিঃসঙ্গ সংগ্রামের কথা বুঝতে পারেনি। ভারত বুঝে ছিল এজন্য যে, ভারত কোনকালে কোনযুগেই সর্বত্মকবাদী একনায়কের কবলে কবলিত হয়নি। তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন, স্তালিন নয়,হিটলার নয়, মাও নয়Ñগান্ধী কিংবা শেখ মুজিবুর রহমান হতে পারেন একালের রাজনীতির আইকন। মালরো একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করে গণমাধ্যমে দেয়া এক চিঠিতে লেখেন:
‘ বাংলাদেশ প্রয়োজনের দিক থেকে অহিংস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে নয়, সে শুধু সশস্ত্র প্রতিরোধের দেশ হতে পারে এবং তাই হওয়া উচিৎ। বাঙালিদের নেতৃত্বে গঠিত একটি ইউনিট পরিচালনার অধিকার আমি চাই। আমার কিছু সামরিক অভিজ্ঞতা আছে যা লেখকদের মধ্যে দুর্লভ..।’
মালরো স্বাধীনতাযুদ্ধে যোগ দিতে ভারতে আসতে চেয়েছিলেন এবং এ ব্যাপারে তিনি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন। একাত্তরের ১৮ সেপ্টেম্বর প্যারিসে ইন্দিরা গান্ধীর উপস্থিতিতে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ‘ নব্বই লক্ষ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে উচ্ছেদ হয়ে দুর্দশার মধ্যে আছে। তাদের জন্য আমরা কী করেছি? কিছুই না! যদি প্রয়োজন হয় তবে অস্ত্র তুলে নেব এবং তাদের জন্য যুদ্ধ করবো।’ মালরো ফাঁকা বুলিতে বিশ্বাসী ছিলেন না, তা তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বারবার জানান দিয়েছেন এবং মুক্তিবাহিনীর অধীনে একটি ট্যাংক ইউনিট পরিচালনার ব্যাপারে ছিলেন অটল। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে বলেছিলেন,‘ তোমরা গেরিলা পদ্ধতিতে লড়াই চালিয়ে যাও, প্রথাগত যুদ্ধে তোমরা একটা পেশাদার বাহিনীর বিরূদ্ধে টিকবে না।’ মালরোর বক্তৃতা, বিবৃতি, দার্শনিক ভাবনা মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিক্ষরা রক্তঝরা দিনগুলিতে আমাদের মুক্তিকামী সংগ্রামী জনগণকে নবপ্রেরণায় উদ্দীপ্ত করেছিল। মানবমুক্তির প্রয়াসে তার মহাপ্রাণ অভিব্যক্তি বাঙালির স্মৃতিপটে আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে এবং অনাগতকালেও থাকবে ।
একাত্তরে বাঙালির মুক্তির জন্য মালরো যে দায়িত্ব পালন করেন বা করতে চেয়েছিলেন, তা ছিল একজন সত্যিকারের সৃষ্টিশীল মানববাদী বুদ্ধিজীবীর কাজ। আদর্শপ্রাণ মানুষ হিসেবে আমাদের বুদ্ধিজীবীরাও একাত্তরে সীমাহীন দুঃখযন্ত্রণার মধ্যে দেশের জন্য যা করেছেন তা বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। মালরোর মতো তারাও গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন, মৃত্যুভয়হীন একটি জাতির আত্মাকে কখনও পদদলিত করা যায় না। স্বৈরাচার যত নির্মম হোক না কেন, তার বেদীমূলে কোন অকুতোভয় জাতি মাথা নত করে না। বিশ্বমানবতা ও মানবমুক্তির দিশারী হিসেবে আমাদের সৃষ্টিশীল বুদ্ধিজীবী তথা সুশীল সমাজ জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ক্রান্তিকালে রাজনীতিকদের সাথে মিলেমিশে অভিন্ন শত্রুর মোকাবিলা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঘরে ফেরা বুদ্ধিজীবীরা শরণার্থী পুনর্বাসন ও যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে যুক্ত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিরূদ্ধে এদেশের সুশীল সমাজ তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলেও , এই নৃশংসতম হত্যাকা-ের বিরূদ্ধে জনমত গঠনে তারা কাজ করেছেন দেড় দশক ধরে। গত শতকের আশির দশকের শেষপ্রান্তে স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে এদেশের বুদ্ধিজীবীরা যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে তা সত্যিই বিরল। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিরূদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে কবি, শিল্পী, সাংবাদিক, শিক্ষক, আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তারা মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯২ এর ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কয়েক লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে যে গণআদালত বসে তার আয়োজকরা সবাই ছিলেন সুশীল সমাজের সদস্য। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য যে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ দেখি, তার পেছনে রয়েছে সুশীল সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের সাহসী সহযোগিতা।
স্বাধীনতা পূর্বকালের বাঙালি সংস্কৃতি ও জাতীয়তাবাদের বিকাশে, স্বাধীকার আন্দোলনে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে,স্বাধীনতা উত্তরকালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ,বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে এবং দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে কাজ করেছেন সুশীল সমাজ। তবে সম্প্রতি সুশীল সমাজের সঙ্গে রাজনৈতিক সমাজের সম্পর্ক ক্রমশঃ বিদ্বেষপূর্ণ হয়ে উঠছে। অনেকেই আমার সাথে একমত হবেন যে, তাদের অনেকেই আর তেমন সৃষ্টিশীল নয় বরং অন্ধ নিস্ফলা, গোঁড়া। আমাদের সুশীল সমাজ এখন পার্টিতন্ত্রের পেটের ভেতর ঢুকে গেছেন। পার্টি কিংবা ক্ষমতার পেটের ভেতর পরজীবী হয়ে বসবাসরত সুশীল বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ আরামে খুদকুঁড়া খাচ্ছে, মোটাতাজা হচ্ছে, কিন্তু সমাজ,রাষ্ট্রের হয়ে কাজ করছে না। ভুলে গেলে চলবে না, বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে এদেশের বুদ্ধিজীবীরা বুদ্ধিবৃত্তিক চৈতন্যের দায় অনুভব করে কখনও দার্শনিক হয়ে; কখনও পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। অনেকে মনে করেন, গত শতকের নব্বই দশকের পর থেকে বাংলাদেশের সুশীল সমাজ তথা বুদ্ধিজীবীরা ক্রমশ মেরুদ-হীন, বাকসর্বস্ব,‘ রজতলোভী বৈশ্য’ হয়ে উঠেছে। তারা অনেকেই রাজনৈতিক দল ও শক্তিমানদের স্তুতি ও উপাসনায় এমনভাবে মগ্ন যে,তাদেরকে গ্রাম্য রাজনৈতিক কর্মী ছাড়া অন্য কিছু ভাবা যায় না। অথচ বাঙালি জাতিসত্তার উন্মেষলগ্নে এদের ভেতর থেকে জন্ম নিয়েছিলেন কাজী মোতাহার হোসেন- আবুল ফজল-আহমদ শরীফের মত ভাবুক; গোবিন্দচন্দ্র দেবের মত দার্শনিক; সিকান্দার আবু জাফর- শামসুর রাহমান-হাসান হাফিজুরের মত দ্রষ্টা কবি, মুনীর চৌধুরীর মত নাট্যকার, জহির রায়হানের মত চলচ্চিত্রকার; শহীদুল্লাহ কায়সার-আনোয়ার পাশার মত লেখক, মোজাফফর আহমদ চৌধুরী- খান সারওয়ার মুর্শিদ- এ আর মল্লিক- আনিসুজ্জামান-কবীর চৌধুরী- জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর মত শিক্ষাবিদ, রেহমান সোবহান-আনিসুর রহমান-স্বদেশ বসুর মত অর্থনীতিবিদ। মুক্তিযুদ্ধের পরও তারা সক্রিয় থেকেছেন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। ক্ষমতা, বিত্ত-বৈভব কোনো কিছুই তাদের সত্যধর্ম থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। এখন তাদের অনেকে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অশুভ সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে। সুশীল বুদ্ধিজীবীদের অনেকে ক্ষমতা আর বিষয়বুদ্ধির মোহে ধর্মান্ধ, মৌলবাদী,জঙ্গিবাদী শক্তির সঙ্গে গাটছড়া বেঁধেছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও উত্তরাধিকার ভুলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত ধারায় দেশকে নিয়ে যেতে চায়, তারা আর যা হোক, বুদ্ধিজীবী হতে পারে না। আত্মবিস্মৃত, আত্মঘাতী কবি- শিল্পী, দলীয় কলামিস্ট, সুবিধাবাদী বিবৃতিজীবীরা কোনোভাবেই সুশীলও নয়, বুদ্ধিজীবী তো নয়ই।
আবদুল্লাহ আল আমিন: সহযোগী অধ্যাপক, মেহেরপুর সরকারি কলেজ, মেহেরপুর।
সেল ফোন: ০১৮১৬-০৫৬৯৩৪
২| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৪০
রাকু হাসান বলেছেন:
এমন তথ্যের জন্য গুগল করতে করতে আপনার লেখাটি পেলাম । অনেক তথ্যবহুল লেখাটি । আমি উপকৃত হবো । লাইক ও প্রিয়তে নিলাম । খারাপ লাগছে । এত কম পাঠক ও মন্তব্য দেখে ।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১০
খালিদ১৪ বলেছেন: এখম মানুষ মুক্তিযুদ্ধকে নিজ দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের সম্মান কমে গেছে।