নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নবীন আনন্দ

আবদুল্লাহ আল আমিন

আবদুল্লাহ আল আমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাগু দেওয়ান এর দরগাহ

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৭

বাগু দেওয়ান এর দরগাহ
হিন্দু লোকমানসে দক্ষিণ রায়ের যে-স্থান, মুসলিম লোকমানসে গাজীপীরের সেই স্থান। দক্ষিণ রায় ও গাজীপীরকে বাঘের দেবতা হিসেবে মান্য করে বিভিন্ন আচার পালন করা হয় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ময়মনসিংহ অঞ্চলে বাঘের অধিপতি হিসেবে বাঘাই পীরকে মানা হয় এবং তার নামে পৌষ মাসে শিরনি দেওয়া হয়। আর মেহেরপুরে বাঘের পীর বা অধিপতি বাঘুয়াল পীর যিনি বাগু দেওয়ান হিসেবে পরিচিত । এই পীরের নামে মেহেরপুর জেলার ভৈরব তীরবর্তী যাদবপুর-গোভীপুর পাকারাস্তার মাঝামাঝি বর্তমান বুড়িপোতা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের নিকটে একটি মাজার ও দরগাহ আছে। জনশ্রুতি আছে, দরবেশ মেহের আলির এর সমসাময়িক বাগু দেওয়ান সতের শতকের প্রারম্ভে বাগদাদ থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে দিল্লিতে আসেন। পরবর্তীকালে মেহেরপুরে এসে ভৈরবের তীরে যাদবপুর-গোভীপুরের মাঝামাঝি স্থানে আস্তানা গড়ে তোলেন। এই আস্তানা থেকে তিনি রাজশাহী ও যশোর অঞ্চলে ইসলাম ধমের্র প্রচার ও প্রসারে কাজ করতেন। হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও অনন্যসাধারণ দৃষ্টিান্ত স্থাপন করে গেছেন তিনি। তার দরগার পাশে একটি মন্দির ছিল, যেখানে হিন্দুরা পূজা অর্চনা করত। সম্ভবত এসব কারণে, তিনি যশোরে ‘কুলই দেওয়ান’ নামে পরিচিত। ‘কুলই দেওয়ান’ অনেকটা ঢাকা-বরিশাল জেলার বাঘের অধিপতি ‘কুলই ঠাকুর’ এর অনুরূপ ছিলেন। এ অঞ্চলের মানুষের বিশ্বাস, বাগু দেওয়ান বাঘের পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াতেন। তিনি পশুপাখির অধিপতি ছিলেন। তিনি যে-বাঘাটিতে চড়ে ঘুরতেন সেই বাঘটি ছিল জটাধারী। জঙ্গলী পীর, বনবিবি প্রভৃতি লৌকিক পীর পীরানীর মতো ‘বাগু পীর’ ছিলেন জঙ্গলেরও মালিক বা অধিকর্তা। কিংবদন্তি চালু আছে,গরু-ছাগল, বাঘ-শিয়াল, কীট পতঙ্গ এমন কি ভূত-প্রেতেরও রক্ষক ছিলেন তিনি। তাঁর আস্তানার আশে পাশে এক প্রাণী অপর প্রাণীকে হত্যা বা আঘাত করতো না। কথিত আছে, তিনি যখন ধ্যান মগ্ন হতেন, তখন পশুপাখি তাকে পাহারা দিত। বাগু দেওয়ানের অনুসারী এবং মাজারের খাদেম আলম মাস্তান (৩৫) বলেন, ‘বাগু দেওয়ান একদিন বাঘের পিঠে চড়ে জমিদার গৃহে গমন করেন। এতে জমিদারসহ মহলের ষভাসদবর্গ দারুণভাবে বিসি¥ত হয়। পরবর্তীতে বাগুপীরের অন্যান্য কেরামতি দেখে তৎকালীন জমিদার তার খাজনা মওকুফ করে দেন।’ বাগু দেওয়নের জন্ম ও মৃত্যু তারিখ সম্পর্কে কোন প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ৫-ফালগুন বাগু দেওয়নের দরগাহ প্রাঙ্গণে প্রতিবছর ওরস হয়। অনুসারীদের দাবি, তিরোধানের পর তাঁকে এখানেই সমাহিত করা হয়। এক সময়, জাঁকজমকের সাথে এখানে ওরস ও মহরম আশুরা পালিত হতো। কিন্তু ১৯৮০’র দশকে স্থানীয় একদল প্রভাবশালী ব্যক্তি মসজিদের দোহাই দিয়ে দরগা’র জমি দখল করে নিলে মানত, ওরস ও মহরম আশুরা বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে এলাকার আউল-বাউল, সাঁই-দরবেশ, চিশতিয়াপন্থী সাধকরা একত্রিত হয়ে দরগাহ ও মাজার-এর জমি পুনরুদ্ধার করে।
বাগুদেওয়ান বদরপীর, মাদারপীর, গাজীপীরের মতো ঐতিহাসিক পীর হোন, কিংবা মানিকপীর, সোনাপীর, ঠুনকাপীর, ঘোড়াপীরের মতো লৌকিকপীর হোন না কেন; তিনি মেহেরপুরের লোকমানসে পরম শ্রদ্ধার প্রতীক, অলৌকিকশক্তির প্রতিভূ হিসেবে প্রাধান্য বিস্তার করে আছেন। এ অঞ্চলের লোকজ সংস্কৃতির সাথে বাগু দেওয়ানের নাম নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। নতুন ভাবে পরিকল্পনা করে বাগু দেওয়ানের মাজার শরিফ তৈরি করা হচ্ছে। সূফিবাদী মাজারপন্থী সাধকদের প্রত্যাশা, সরকারি,বেসরকারি ও এলাকাবাসীর মিলিত প্রচেষ্টায় অতি শিঘ্রই এখানে একটি মসজিদ, খানকাহ শরিফ, হুজরাখানা নির্মাণ করা হবে।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.