![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বি এস এস (অনার্স) এম এস এস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দেওবন্দ ও মওদুদীর দ্বন্বঃ
কংগ্রেসের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হলেও মুসলমানরা হিন্দুর গোলামই থেকে যাবে বলে শিক্ষিত মুসলিম সমাজ তিব্রভাবে অনুভব করল।পাকিস্তান আন্দোলন এ অনুভূতিরই সৃষ্টি। মিঃ মুহাম্মাদ আলী জিন্নার নেতৃত্বে মুসলিম লীগ দাবি করল মুসলমান সংখা গুরু এলাকায় মুসলমানদের পৃথক রাষ্ট্র হতে হবে।এ দাবি ইংরেজ ও হিন্দুর গোলামিতে পিষ্ট মুসলিম সমাজের নব জাগরনের সৃটি করল। মিঃ জিন্নাহ মুসলমানদের নিকট কায়েদ আজম (শ্রেষ্ট নেতা)হবার মর্যাদা পেলেন।
মুসলমানদের এ পৃথক আন্দোলনে বিচলিত হয়ে কংগ্রেস দাবী করল যে,ভারতে সব ধর্মের লোকই ভারতীয় জাতি হিসেবে এক জাতি। ধর্মের ভিত্তিতে এ মহান জাতিকে বিভক্ত করা কিছুতেই উচিত নয়। কংগ্রেসে এ ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদের বিরুদ্ধে মুসলিম লীগ দাবি করল যে,মুসলমানদের আদর্শ ইসলাম এবং ইসলাম শুধু ধর্ম নয়। তাই ইসলামী জীবন বিধানের ভিত্তিতে মুসলমানরা একটি ভিন্ন জাতি। সে হিসেবে ভারতে দুটো জাতি রয়েছে।ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী মুসলিম জাতি এ আদর্শে বিশ্বাসীদের সাথে মিলে এক জাতি হতে পারে না।এ মতবাদই দ্বিজাতি তত্ব বা “টুনেশান থিউরী” হিসেবে বিখ্যাত।
এ ভাবেই কংগ্রেসের এক জাতি তত্ব ও মুসলিম লিগের দ্বিজাতি তত্ব যখন বিরোধ বাধল তখন ওলামায়ে হিন্দ কংগ্রেসের পক্ষেই সমর্থন জানাল। উলামায়ে হিন্দ নেতা হযরত মাওলানা হুসাইল আহাম্মদ মাদানী (রঃ)এ বিষয়ে ১৯৩৮ সালে লাহোর শাহী মসজিদে যে বিক্ষাত বক্তৃতা করেন তাতে তিনি একজাতি তত্ব কে ইসলাম বিরোধী নয় বলে প্রমান করার চেষ্টা করলেন। তার এ বক্তৃতাটি মুত্তাহিদা কাওমিয়াত আওর ইসলাম (একজাতি তত্ব ও ইসলাম) নামে পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়।১৯৩৯ সালে এ বক্তৃতার সমস্ত যুক্তি খন্ডন করে কুরআন হাদীস ও ইসলামের প্রথম যুগের ইতিহাস থেকে বলিষ্ট যুক্তি দিয়ে ওলামা মওদুদি (রঃ) প্রমান করেন যে,কংগ্রেসের এক জাতি তত্ব ইসলামী জাতীয়তার সম্পূর্ন বিরোধী।তাঁর এ বইটি “মাসালায়ে কাওমিয়াত’ (জাতিয়তা সমস্যা)নামে প্রকাশিত হয় বাংলা ভাষায় এর অনুদিত বইটির নাম “ইসলাম ও জাতীয়তা বাদ”।
জাতীয়তা নিয়ে এ বিতর্কের ফলে ভারতকে অখন্ড রেখে স্বাধীন করার কংগ্রেসী আন্দোলন ও সুসলমানদের পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েমের মুসলিম লিগের আন্দোলন রাজনৈতিক ময়দানে চরম তিক্ততার সৃষ্টি করে।বিশেষ করে কংগ্রেস সমর্থক ওলামায়ে হিন্দের বিরুদ্ধে মুসলিম শিক্ষিত সমাজ অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।এর প্রতিক্রিয়া ওলামা সমাজেও দেখা দেয়। দেওবন্দের অধিকাংশ ওলামা কংগ্রেসের সাথে গেলেও মাওলানা সাব্বির আহামদ ওসমানী (রঃ)ও মাওলানা মুফতী মুহুম্মদ শফী (রঃ)-এর নেতৃত্ব অনেক ওলামা পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে ১৯৪৩ সালে জামিয়তে ওলামায়ে আসলাম নামে ওলামাদের একটি পালটা সংগঠন কায়েম করে মুসলিম লিগের সমর্থন করেন।মাওলানা জাফর আহমাদ ওসমানী (রঃ),মাওলানা সমসুল হক ফরিদপুরী (রঃ),মাওলানা মুফতী দ্বীন মুহাম্মাদ খান (রঃ), শর্ষিনার পীর সাহেব ও ফুরফুরার পীর সাহেব প্রমুখ অনেক ওলামা পাকিস্তান আন্দোলনকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন দেন। হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রঃ)-ও মুসলিম লীগের সমর্থন দেন।
এভাবে ওলামা কেরাম বিভক্ত হয়ে এক দল কংগ্রেসের অখন্ড ভারত মতবাদের সমর্থন করেন এবং অন্যদল ভারত বিভাগ করে পাকিস্তান কায়েমের পক্ষ অবলম্বন করেন।এতে যে তিক্ততার সৃষ্টি হয় তার ফলে মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে ওলামায়ে হিন্দের পক্ষ থেকে মুসলিম লীগকে স্বাধিনতার বিরোধী ও ইংরেজের দালাল আক্ষা দেয়া হয়॥
©somewhere in net ltd.