নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফিজিওথেরাপি বিষয়ক যেকোন পরামর্শের জন্য কল করতে পারেন - ০১৭৮৭১৫২৮৭২ কিংবা সরাসরি ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টারে ( হাউজ ২৩, লেক ড্রাইভ রোড, সেক্টর ৭,উত্তরা, ঢাকা) আসতে পারেন ।

ডাঃ সাইফুল

ফিজিওথেরাপি প্র্যাক্টিশনার এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক ব্লগ লেখক ।

ডাঃ সাইফুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সব রোগে ওষধ নয়

১১ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:৪১

আমি পেশায় যেহেতু একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক।তাই বাধ্য হয়ে কিংবা মানবিক আর আর্থিক যেই কারনই বলেন, রোগীদের বাসায় মাঝে মাঝে যেতে হয়।

কিছুদিন আগে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক আমারে চেম্বারে এলেন। যথারিতি আমি তাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, আংকেল আপনার কি সমস্যা? উত্তরায় ৫০/৬০ উর্দ্ধ লোকজন কে আংকেল আর আন্টিই বলি, তবে চাচা চাচি বলতে পারলে ভাল লাগত, এই ডাক টার মাঝে আন্তরিকতা আছে ।

যাই হোক আংকেল বলল, ডা সাহেব সমস্যা আমার না, আমার স্ত্রীর। আমি আপনাকে ভিজিট দেব, যেহেতু আমি অ্যাপয়েনমেন্ট নিয়েছি। আমি বললাম, না না আংকেল, ওটা লাগবে না। আপনি বলেন।।।

আংকেল তার নিজের পরিচয় দিল, উনি একজন সাবেক হাইকমিশনার । উনার স্ত্রী আমার কাছে আসতে পারবেন না। হাটাচলা করতে পারে না। আমাকে বাসায় যেতে হবে।

আমি মনে মনে ভাবলাম চাচা মিয়া তুমি চাচিকে এত ডাক্তারের কাছে নিতে পারছ, আমার কাছে আনতে পারছ না! আমি গরীব ডা, আমার ডিগ্রি কম পাইয়া তুমি আমাকে বাসায় নিবার চাও। তুমি যত টাকাই দাও, আমি যাব না।

তাই আস্তে ধীরে চাচাকে বললাম, আংকেল আমি তো বাসায় যাই না! চাচিকে এখানে নিয়ে আসেন।

চাচা এবার বললেন, চাচিকে আমার এখানে ভর্তি করাবেন। এবার আমার বিপদ ।এবার আবারও আস্তে আস্তে বললাম, আংকেল এখানে তো ভর্তির ব্যবস্থা নাই। চাচা বললেন, তাহলে কি করবেন!

আমি আস্তে আস্তে বললাম, ঠিক আছে আমি একদিন যাব, তারপর ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন হলে আমাদের অন্য একজন ফিজিওথেরাপিস্ট গিয়ে ম্যানেজ করবে। আমাকে সেন্টারে সব সময় থাকতে হয়। তাই সব সময় আমার যাওয়া সম্ভব না। চাচা রাজি হলেন।

পরেরদিন দুপুর ২ টায় অ্যাপয়েনমেন্ট দিয়েও বিকাল ৩ টায় চাচার বাসায় আমি বান্দা হাজির । বিলাসবহুল বাড়ি, আমি গরীব, তাই ধনীর বাসায় যেতে লজ্জা করে। তবুও লজ্জাশরম গেইটে রেখে চাচার বাসায় হাজির। এক ঘন্টা দেরি করে গেলেও, চাচা হাসি মুখে ভিতরে নিলেন।

আন্টি আসসালামুলাইকুম, কেমন আছেন আন্টি? চাচি মাথা নাড়ালেন।

চাচির রুমে পশ্রাব পায়খানার গন্ধে আমার নিজেরই দম যায় আসে! চাচির কি অবস্থা একবার ভাবেন।

চাচা সাহেবের চার ছেলে মেয়ের মধ্যে ১ মেয়ে ছাড়া সবাই দেশের বাহিরে। মেয়েটা গুলশানে থাকে। নিজ কাজে সর্বদা ব্যস্ত।

বাড়িতে একজন খালা আছে। যাকে ধনী, হাফ ধনী আর তাদের বাচ্চা কাচ্চারা বুয়া বলে ডাকে। এই বুয়া ডাকটা আমার ভাল লাগে না। কেন যেন এই শব্দটা বাংলা অভিধানে আসল।

মার বোন খালা।আমি তাদের মাঝে মায়ের গুনই দেখি। তাই খালা ডাকি। খালার বয়স ৫০ এর উপর।তিনদিন যাবত খালার জ্বর। তাই চাচির রুমে এই গন্ধ।

যাইহোক চাচা চাচির সব কথা শুনলাম। অনেক আগে ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছিল। তারপর ভাল ছিল, গত ১ মাস যাবত বিছানায় আবন্ধ। অনেক ডা দেখিয়েছে। কিন্তু চাচির আর বিছানা থেকে উঠা হচ্ছে না। আমি সব রিপোর্ট আর চাচীর হাত পা সব দেখে অর্থাৎ শারিরীক পরীক্ষা ( physical examination) করে এমন কোন সমস্যা পেলাম না।যেটার জন্য চাচি বিছানা থেকে উঠতে পারছে না!

আন্টিকে বললাম, আন্টি বসে যান। আপনার কোন সমস্যা নাই। আন্টি বসে গেল। যদিও আমার সাপোর্ট ছিল। তবে আমার সাহস বেড়ে গেল।

আমি ৭ দিন গিয়েছিলাম এই বাসায়। আন্টি স্টিক দিয়ে হাটা চলা করতে পারত ৪/৫ দিন পর থেকেই।

চাচীর সমস্যা ওই রকম কিছুই ছিল না, ছেলে মেয়ে না থাকাতে আত্নবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল। আমি শুধু উনাকে আত্নবিশ্বাসটা ফিরিয়ে দিয়েছলাম। উনাকে বসিয়ে, দাঁড় করিয়ে, হাটিয়ে। উনার ছেলে মেয়েরা থাকলে এই সমস্যাটা কখনই হত না।

যারা বাবা মা কে ছেড়ে দূরে আছেন, একবার ভাবেন। তাদের কি অবস্থা। তাদেরকে কার কাছে রেখে আসছেন। কারন আমরাও একদিন বাবা মা হব!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:৫০

খোরশেদ আলম সৈকত বলেছেন: ভাল লাগল

১২ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:২৮

ডাঃ সাইফুল বলেছেন: ভাইয়া , আমারও ভাল লাগল । আপনার কথা শুনে .।।

২| ১১ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: যারা বাবা মা কে ছেড়ে দূরে আছেন, একবার ভাবেন। তাদের কি অবস্থা। তাদেরকে কার কাছে রেখে আসছেন। কারন আমরাও একদিন বাবা মা হব!

ডাক্তার সাহেব, এই কথাটাই কারো মনে থাকে না। আপনার পেশেন্ট সেই ধনী আঙ্কেল অান্টিদেরও হয়তো জোয়ান বয়সে মনে ছিল না।
ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ।

১২ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৩০

ডাঃ সাইফুল বলেছেন: জি । আপনার মুল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.