![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ । আকিদা বিষয়ক, তাওহীদের অন্যতম অংশ । বিষয়টা কেন গুরুত্বপূর্ণ তা নিম্নে পেশ করা হাদিস ও চার ইমামের বক্তব্য পড়লেই বুঝতে পারবেন । এই পোস্টে কুর’আন আয়াত নাম্বার, তাফসির গ্রন্থ, হাদিস গ্রন্থ এবং চার ইমামের বক্তব্যও পেশ করা হল । তাই পোস্টটি পুরটা পড়ুন এবং বুঝুন তারপরে মন্তব্য করুন ।
আল্লাহ্ কোথায় ??? এই উত্তরে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই বলবে আল্লাহ্ সর্বত্র বিরাজমান । আসলে কি তাই ? তহলে কি আল্লাহ্ টয়লেট, হিন্দুদের দেব-দেবীর মধ্যেও বিরাজমান ? (নাউযুবিল্লাহ) যারা বলে আল্লাহ্ সর্বত্র বিরাজমান তারা কুর’আন থেকে সূরা বাকারার ১১৫ আয়াত কে দলিল পেশ করে, সেখানে আল্লাহ্ বলেনঃ “আল্লাহ্ জন্যে পূর্ব ও পশ্চিম; অতএব তোমরা যে দিকেই মুখ ফিরাও সে দিকেই আল্লাহর মুখ; কেননা আল্লাহ্ (সর্বদিক) পরিবেষ্টনকারী পূর্ণ জ্ঞানবান ।”(সূরা বাকারা ১১৫) আসুন দেখি তাফসির দেখি এই আয়াতের তাফসির ইবনে কাসিরে, ‘আল্লাহ্ তা’আলা হতে কোন জায়গা শূন্য নেই’ এর ভাবার্থ যদি আল্লাহ্ তা’আলার ‘ইলম’ বা অবগতি হয় তবে তো অর্থ সঠিক হবে যে, ‘কোন স্থানই আল্লাহ্ পাকের ইলম হতে শূন্য নেই ।’ আর যদি এর ভাবার্থ হয় ‘আল্লাহ্ তা’আলার সত্তা’ তবে এটা সঠিক হবে না ।’ (তাফসির ইবনে কাসির প্রথম খন্ড ৩৭২-৩৭৩ পৃষ্ঠা)
সুতরাং আল্লাহ্ সর্বত্রবিরাজমান এই কথা সঠিক নয় । কারণ আল্লাহ্ কুর’আনের ৭ টির মত জায়গায় ঘোষণা করেছেন আল্লাহ্ আরশে আছেন । আয়াতগুলো পেশ করা হল মিলিয়ে নিন ।
(১) আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক হচ্ছেন সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন’ (আ‘রাফ ৭/৫৪)।
(২) ‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন’ (ইউনুস ১০/৩)।
(৩) ‘আল্লাহই ঊর্ধ্বদেশে আকাশমন্ডলী স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত- তোমরা এটা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হ’লেন’ (রা‘দ ১৩/২)।
(৪) ‘দয়াময় (আল্লাহ) আরশে সমাসীন’ (ত্ব-হা ২০/৫)।
(৫) ‘তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনিই রহমান, তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞেস করে দেখ’ (ফুরক্বান ২৫/৫৯)।
(৬) ‘আল্লাহ তিনি, যিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন’ (সাজদাহ ৩২/৪)।
(৭) ‘তিনিই ছয় দিনে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন’ (হাদীদ ৫৭/৪)।
এ থেকে প্রমাণিত যে, আল্লাহ্ আরশে সমাসীন, সর্বত্র তাঁর সত্তা বিরাজমান নয় । বরং তাঁর ক্ষমতা সর্বত্র বিরাজমান । এ প্রসঙ্গে রাসূল (সাঃ) এর অনেক সহিহ সনদে হাদিস রয়েছে ।তার মধ্যে একটি হচ্ছে,
বিদায় হজ্জের ভাষণে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) সাহাবীগণকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, “তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, তখন কি বলবে ? ঐ সময় উপস্থিত সাহাবিগণ বলেছিলেন, আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করেছেন । এ কথা শুনার পর আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাঁর হাতের আঙ্গুল আসমানের দিকে উত্তোলন করে বলেছিলেন, হে আল্লাহ্ ! তাদের কথার উপর সাক্ষি থাকি ।” (সহীহ মুসলিম হা/১২১৮ ‘হজ্জ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৯)
মু’আবিয়া বিন আল-হাকাম আস-সুলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘আমার একজন দাসী ছিল । ওহুদ ও জাওয়ানিয়্যাহ (ওহুদের নিকটবর্তী একটি স্থান) নামক স্থানে সে আমার ছাগল চরাত । একদিন দেখি, নেকড়ে আমাদের একটি ছাগল ধরে নিয়ে গেছে । আমি একজন আদম সন্তান (সাধারণ মানুষ)। তারা যেভাবে ক্রুদ্ধ হয় আমিও সেভাবে ক্রুদ্ধ হই । কিন্তু আমি তাকে এক থাপ্পর মারি । অতঃপর রাসূল (সাঃ)-এর নিকট আসলে একে আমি সাংঘাতিক (অন্যায়) কাজ বলে গণ্য করি । তাই আমি বলি যে, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমি কি তাঁকে আযাদ করব না? তিনি বললেন, তাঁকে আমার কাছে নিয়ে আস ।আমি তাকে আল্লাহ্ রাসূল (সাঃ) কাছে নিয়ে আসলাম । রাসূল (সাঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ্ কোথায় ?সে বলল, আসমানে । তিনি(সাঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কে ? তখন সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) । তখন নবী (সাঃ) বললেন, তকে মুক্তি দিয়ে দাও, কারণ সে একজন ঈমানদার নারী’ । (সহীহ মুসলিম হা/৫৩৭ ‘মসজিদ সমূহ ও ছালাতের স্থানসমূহ’ অনুচ্ছেদ)
এখানেও সহীহ হাদিস থেকে প্রমাণ পেশ করা হল ।
আল্লাহ্ কোথায়??? এই প্রসঙ্গে চার ইমাম এর বক্তব্যঃ
১. ইমাম আবূ হানীফা(রহঃ) বলেনঃ ‘যে বলবে যে, আল্লাহ্ আসমানে আছেন, না যমীনে তা আমি জানি না, সে কুফুরি করবে । কেননা আল্লাহ্ বলেন, রহমান আরশে সমাসীন । আর তাঁর আরশ সপ্ত আকাশের উপর।’ ( ইজতিমাউল জুযুশিল ইসলামিয়্যাহ, পৃষ্ঠা ৯৯)
২. ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন, ‘আল্লাহ্ আকাশে উপর এবং তাঁর জ্ঞানের পরিধি সর্বব্যাপী বিস্তৃত । কোন স্থানই তাঁর জ্ঞানের আওতার বহির্ভূত নয়’ । (তদেব, পৃঃ ১০১)
৩. ইমাম শাফিঈ (রহঃ) বলেনঃ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ছাড়া কোন (হক্ক) উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল । আর আল্লাহ্ আকাশের উপর তাঁর আরশে সমাসীন । তিনি যেমন ইচ্ছা তাঁর সৃষ্টির নিকটবর্তী হন এবং যেমন ইচ্ছা তেমন নীচের আকাশে অবতরণ করেন’ । (তাদেব, পৃঃ ১২২)
৪. ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)-এর পুত্র আব্দুলাহ বলেন, ‘আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করা হল যে, আল্লাহ্ তাঁর সৃষ্টি থেকে দূরে সপ্তম আকাশের উপরে তাঁর আরশে সমাসীন । তাঁর ক্ষমতা ও জ্ঞানের পরিধি সর্বত্র বিস্তৃত । এর উত্তরে তিনি (ইমাম আহমাদ) বলেন, হ্যাঁ! তিনি (আল্লাহ্) আরশের উপর সমাসীন এবং তাঁর জ্ঞানের বহির্ভূত কিছুই নেই ।(তদেব, পৃঃ১৫২-১৫৩)।
সুতরাং, যারা মাযহাবের দোহাই দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে যে, আল্লাহ্ সর্বত্রবিরাজমান, তাদের কথা ভিত্তিহীন হিসেবে প্রমাণিত হল চার ইমামের বক্তব্যের কারণে ।
আল্লাহ্ আমাদের সকলকে সহীহ আকিদা গ্রহনের তাওফিক দান করুক যাতে আমাদের আমল আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্যতা লাভ করে, আমিন ।
©somewhere in net ltd.