নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগে আপনাকে সু.স্বা.গ.ত.ম

ইরফান আহমেদ ইমন

ইরফান আহমেদ ইমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ মধ্যবিত্তের ঈদ

১৫ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৯:৪০


.
.
এবার ঈদে আমার শপিং বাজেট ২হাজার টাকা। এই টাকাগুলোও খুব কষ্টে যোগার করেছি। আজ বিকালে ছাত্রীকে পড়ানো শেষে বললাম, - নীলা তোমার আম্মুকে বলবা এইমাসের টাকাটা এখন দিয়ে দিতে...?
- আচ্ছা স্যার আপনি একটু বসুন।
.
কিছুক্ষন পর নীলা টাকা হাতে ফিরে আসলো!টাকাগুলো পেয়ে খুব ভালো লাগছে। হাঁটতে হাঁটতে গাঙ্গিনাপাড় শপিংমলের দিকে গেলাম। Lotto শো-রুমে ডুকে একটা প্যান্ট পছন্দ করলাম, দাম ১৪৯০টাকা।
হঠাৎ করে মনে পড়লো, মায়ের কথা। গতমাসে বাড়ি থেকে আসার সময়! মা বলছিলো, - "বাবারে কবে তুই একটা চাকরি পাবি?! আমার ভালো একটা কাপড় পর্যন্ত নাই।"
.
আমি এতো বড় হইছি, অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি কিন্তু আজ পর্যন্ত আমার মাকে আমি কিছুই কিনে দিতে পারিনি। হঠাৎ করে মায়ের কথা মনে হওয়ায়, শো-রুম থেকে বের হয়ে অন্য একটা শপ-এ গেলাম। মায়ের জন্য সুন্দর একটা শাড়ি, বাবার জন্য সাদা একটা পান্জাবি।
অবশেষে হাতে টাকা আছে দুই'শ।
.
২শ টাকা দিয়ে ছোটভাইয়ের জন্য একটা টিশার্ট কিনে বাসায় চলে আসলাম। আগামী সপ্তাহে বাড়িতে যাব। আমার ছোটভাইটাকে টিশার্ট পরলে অনেক সুন্দর লাগে এই রঙটা মানাবেও ভালো। "ঘি কালার"।
.
পরেরদিন টিউশনিতে যাওয়ার পর, আমার ছাত্রী নীলা বললো, -- "স্যার গতকাল কি শপিং করলেন?"
আমি থ্রেট দিয়ে বললাম,
- তোমার জেনে কি হবে? তুমি এখন মন দিয়ে পড়।
মেয়েটা ভয় না পেয়ে ঢং করে বললো,
- "বলেননা স্যার...! বলুন। তারপর আমি মন দিয়ে পড়বো।"
- তাহলে শুনো, মায়ের জন্য একটা শাড়ি, বাবার জন্য একটা পান্জাবি আর ছোটভাইয়ের জন্য টিশার্ট!
-- স্যার ২হাজার টাকা দিয়ে আপনি এতোকিছু কিনে ফেললেন?!!! অথচ আজকে আমাদের বাসায় ৩০হাজার টাকার শপিং করা হয়েছে কিন্তু এখনো অনেক বাকি।
- মধ্যবিত্ত ঘরের বড় ছেলেরা পারে।
.
কিছুক্ষন পর মেয়েটা বলে উঠলো, -- স্যার নিজের জন্য কিছু কিনবেন না?
- কিনব। ঈদের পরে।
.
দেখতে দেখতে একসপ্তাহ সময় চলে গেলো। আজকে আমি বাড়িতে যাচ্ছি। হাওর এক্সপ্রেসে উঠে দুপুরের দিকে বাড়িতে পৌছালাম।
বাড়িতে এসে শপিংব্যাগ থেকে কাপড়টা বের করে যখন আম্মুর হাতে দিলাম তখন লক্ষ করলাম, আম্মুর চোখে জল চলে এসেছে।
কাপড়টা হাতে নিয়েই বললো, - "তুই এতো টাকা পেলি কোথ্থেকে?"
- "টিউশনি করিয়ে!"
- "টিউশনি করিয়ে যে টাকা পাস তাতে তো নিজেরই চলে না। কি দরকার ছিলো এতো টাকা খরচ করে এটা আনার?! তারচেয়ে বরং নিজের জন্য ভালো একটা শার্ট কিনতি!"
.
আম্মুর মনে অসম্ভব আবেগ কাজ করছে। তাও তিনি এসব বলছেন। মায়েদের বলতে হয়। বাবারা কিছু বলতে পারেনা তবে আড়াল থেকে খুব প্রাউড ফিল করে। ছোটভাইটা আনন্দে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।
.
.
[নিজের শপিং বাজেট থেকে সম্পূর্ন না পারেন, একটু সেক্রিফাইস করে আপনজনের জন্য একটা ছোট্ট উপহার কিনুন।
দেখবেন, অসম্ভব ভালো লাগা বেক পাবেন। যা কোটি টাকা দিয়েও কেনা সম্ভব না।]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.