নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৃজন পথিক

খুব ভাল

ইশারা খালী

খুব ভাল

ইশারা খালী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বায়ন ও সংস্কৃতি ঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪২



তরুলতা পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী । একটি অজ পাড়া গাঁয়ের বাসিন্দা। গ্রামের প্রকৃতি দেখতে বেশ সুন্দর। প্রকৃতি তাদের আচরনকে বেশ প্রভাবিত করেছে। তার বাবা স্থানীয় মসজিদের ইমাম। বাবা ধর্মভীরু হওয়ার কারণে তাদের পরিবারের চালচলন গ্রামের অন্যান্য পরিবারের চেয়ে রক্ষনশীল। তরুলতা বোরকা পরে বিদ্যালয়ে যায়। শিক্ষকমন্ডলী ও মুরব্বদের খুবই সম্মান করে। তার আচরণ তাকে তার পরিবার ও প্রতিবেশীদে নিকট প্রিয়পাত্রী করে তুলে।

পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ চুকিয়ে সে ষষ্ঠ শ্রেণীতে উর্ত্তীণ হয়। তার বাবা তাকে শহরে চাচার বাসায় রেখে পড়াশোনা করাতে মনস্থির করে।

যথারীতি সে শহরের একটি নামকরা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। চাচার বাসায় থাকে।

কিন্তু শহরে এসে সে নতুন এক পরিবেশের সম্মুখীন হয়। এই পরিবেশ তার ফেলে আসা গ্রামের পরিবেশ থেকে ভিন্ন।

বিদ্যালয়ে এসে সে দেখে অধিকাংশ মেয়ে বোরখা ছাড়াই চলাফেরা করে।মুষ্টিমেয় কয়েকজন হিজাব পালন করে। বিষয়টি তার কাছে অদ্ভুত মনে হয়।

অন্যদিকে সে চাচার বাসায়ও দেখতে পায় অদ্ভুত পরিবেশ। তার চাচা-চাচী, চাচাতো ভাই-বোন সবাই মিলে একসাথে সিনেমা, নাটক দেখে। পরিবারের সবাই মিলে টিভি দেখাতো দূরের কথা সে নিজেও কোনদিন টেলিভিশন দেখেনি। তাই সে বিস্মিত না হয়ে পারেনা। শহুরে জীবনের এরকম আরো অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে সে প্রথমদিকে একটু হোঁচট খায়।

সময়ের পরিক্রমায় সেও আস্তে আস্তে এসব অদ্ভুত ঘটনার সাথে খাপ খেয়ে নিতে শুরু করে। সে এখন টেলিভিশনের নিয়মিত দর্শক। হিন্দি সিরিয়ালগুলো তার খুবই প্রিয়। কোন চ্যানেলে কি দেখায় তার একটি তালিকা তার মুখস্থ। ইদানিং সে আর বোরখা পরে বিদ্যালয়ে যায়না। জিন্স প্যান্ট পরে বাইরে ঘুরে বেড়ায়। কথাবার্তায় বাংলা-ইংরেজি সংমিশ্রিত ভাব লক্ষ্য করা যায়।

এভাবে তার দিন যায়। যে উদ্দেশ্যে সে শহরে প্রত্যাবর্তন করেছিল সে উদ্দেশ্য চার আনা পূর্ণ হতে হিমশিম খায়।

একদিন সে তার নাড়ির টানে গ্রামে যায়। গ্রাম তরুলতাকে যে বেশে শহরে পাঠিয়েছিল তরুলতা সে বেশ খুলে নতুন এক বেশে গ্রামে ফেরে।



উপরোক্ত গল্পটি আমাদের বর্তমান গতিশীল সমাজের একটি প্রতিচ্ছবি। সমাজে নিয়ত পরিবর্তন ঘটছে। এই পরিবর্তন কিছুক্ষেত্রে ইতিবাচক কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নেতিবাচক।

এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ‘বিশ্বায়ন’ একটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। বিশ্বায়ন এর মূল কথা হচ্ছে বিনিময়। একাধিক অঞ্চলের মধ্যে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিনিময়ই হচ্ছে বিশ্বায়ন। কিন্তু আমাদের দেশে কি সাংস্কৃতিক বিনিময় ঘটছে? যেহেতু বিনিময় এর অর্থ হচ্ছে গ্রহণ ও প্রদান আমরা শুধু গ্রহণ করেছি, প্রদান করিনি। আমাদের এই উপমহাদেশের সামাজিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে আমরা কি পরিমাণ সাংস্কৃতিক উপাদান গ্রহণ করেছি এবং কি পরিমাণ প্রদান করেছি।

‘সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন’ এর মাধ্যমে আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে জলাঞ্জলি দিচ্ছি অনায়াসে। একটি জাতির ‘নিজস্ব সংস্কৃতি’ কে বিশ্ব দরবারে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেয়। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে সেভাবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছি। ‘সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন’ এর মাধ্যমে আমরা আমাদের ‘তরুলতা’র মত বিসর্জন দিচ্ছি যা একটি জাতি হিসেবে লজ্জাজনক।

সত্তর আশির দশকে একটা ব্যাপার লক্ষণীয় ছিল, তা হল, এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা শাড়ী পরত। কিন্তু নব্বই দশক এর পর থেকে তা আস্তে আস্তে হ্রাস পেতে লাগল। বর্তমানে অবস্থা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন আমাদেরকে শাড়ি দেখতে যাদুঘরে যেতে হবে। সেদিনকার প্রজন্ম বিস্ময় প্রকাশ করে বলবে “একদা একসময় এদেশে শাড়ির প্রচলন ছিল” যেমনি করে আমরা বর্তমানে জামদানী শাড়ির কথা বলি। এতো গেলো পরিধেয় বস্ত্রের কথা। অন্যদিকে, আকাশ সংস্কৃতি আমাদের সমাজের বহুদিনের লালিত মূল্যবোধ ও রীতিনীতি ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিদেশি সিরিয়াল বিশেয় করে হিন্দি চ্যানেলের সিরিয়ালগুলো আমাদের সমাজব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যেহেতু পারিবারিক দ্বন্দ্বই এই সিরিয়ালগুলো মূল উপজীব্য বিষয় সেহেতু এসমস্ত সিরিয়ালের নেতিবাচক দিকগুলো আমরা আমাদের মনের অজান্তেই গ্রহণ করছি। যার ফলাফল আমরা বর্তমান সমাজে দেখতে পাচ্ছি। ইভটিজিং এর প্রতিবাদ করায় বখাটে ছাত্র তার শিক্ষককে হত্যা করতে দ্বিধা করছেনা। মেয়ের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় মাকে হত্যা করা হচ্ছে। দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক নষ্ট করায় প্রেমিক তার প্রেমিকাকে খুন করছে।

এ সমস্ত ঘটনা আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ ও রীতিনীতির ভেঙ্গে পড়ার ফল। কোন ধরণের বাছবিচার না করেই বিদেশী সংস্কৃতির নেতিবাচক দিকগুলো আমরা সহজে গ্রহণ করছি। অথচ বিদেশী সংস্কৃতির ইতিবাচক দিকগুলো আমরা গ্রহণ করতে দ্বিধা করি। যার কারণে আমরা জাতি হিসেবে ‘অবনমিত’ মস্তকে দাঁড়িয়ে আছি। জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর মূল হাতিয়ার ‘নিজস্ব সংস্কৃতি’ আমরা হারাতে বসেছি।

তাই এই অবস্থা থেকে মুক্ত হতে হলে সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন অপরিহার্য। বিদেশী সংস্কৃতির প্রীতি বাদ দিয়ে দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা বৃদ্ধি জরুরী। তবেই জাতি হিসেবে আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব।

(সংকলিত)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:০৯

wrongbaaz বলেছেন: ইহাই সাংস্কৃতিক আগ্রাসন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.