![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও বর্তমান প্রজন্মের প্রত্যয়
ফ কি র ই লি য়া স
======================================
চারদিকে একাত্তরের পরাজিত শক্তির উদ্যত ফণা! ওরা দেশজুড়ে পুলিশের ওপর হামলে পড়েছে। খবর বেরিয়েছে, মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিকরা তাদের টার্গেট। দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় দেয়া শুরু হয়েছে। এমন সময়ে এসব মৌলবাদী দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে তৎপর হয়েছে। আর তাদের মদদ দিচ্ছে কিছু রাজনীতিক, যারা নিজেদের ‘মুক্তিযুদ্ধপন্থী দল’ মনে করে।
বস্তিতে বস্তিতে কিংবা গ্রাম-গ্রামান্তরে মৌলবাদ ছড়িয়ে দেয়ার যে প্রবণতা তা বাংলাদেশে নতুন নয়, আগেও হয়েছে। মানুষ তখন ততটা সচেতন ছিল না। ধর্মের দোহাই দিয়ে কারা সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে, তা সবারই জানা। ‘বিবি তালাকে’র ফতোয়া আনার জন্য কয়েক মাইল পথও হেঁটেছে আগেকার দিনে কেউ কেউ। ধর্মীয় তমদ্দুনের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে এক ধরনের ‘সামাজিক ব্যবসা’ও করেছে সেসব তালাকপত্র লেখক ফতোয়াবাজ। তারা মানুষের কাছ থেকে টাকাকড়িও নিয়েছে। ‘বিবি তালাক হয়ে গেছে’ এ মর্মে আড়াইশ’ টাকা ফি নিয়ে ফতোয়া দিয়েছেন একজন। ‘না, বিবি তালাক হয়নি’ এমন মর্মে লিখিত ফতোয়া দিয়েছেন অন্যজন পাঁচশ’ টাকা ফি গ্রহণ করে। সবই ছিল টাকার খেলা।
আমার মাতামহী একটি প্রবাদ প্রায়ই বলতেন। তা হচ্ছে, ‘মিয়ায় যদি মিছা কয়, সবাই বলে অয় অয়, অমাবস্যায় দেখিয়াছি চাঁন।’ অর্থাৎ প্রবল পরাক্রমশালী গ্রামের ‘মিয়া’ যদি বলেন অমাবস্যায়ও চাঁদ দেখেছেন, তার সঙ্গে সবাই ‘হ্যাঁ হুজুর, হ্যাঁ হুজুর’ করত।
এটা হচ্ছে সামন্তবাদের আদি স্বরূপ। তা কি এখন নেই? হ্যাঁ, আছে। এবং বহাল তবিয়তেই রয়েছে নতুন রূপে, নতুন আঙ্গিকে। এর প্রবক্তা কারা? প্রবক্তা তারাই, যারা এখনও সেই মৌলবাদের দোর্দণ্ড প্রতাপ খাটাতে চায় সমাজের চারপাশে।
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ছাতকছড়া গ্রামের নুরজাহানকে দোররা মেরে হত্যার ঘটনা খুব বেশিদিন আগের নয়। এমন ঘটনা এখনও ঘটছে। ভাবতে খুবই অবাক লাগে, এই ফতোয়াবাজদের সমূলে প্রতিহত করা যাচ্ছে না। কেন যাচ্ছে না, তা ভেবে বারবার কেবল হতাশই হতে হয়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেই দিয়েছেন, ২০১৩ সালে জামায়াত-শিবিরের এসব নগ্ন হামলা প্রমাণ করছে, দেশ থেকে মৌলবাদী জঙ্গিরা এখনও নির্মূল হয়নি। বাংলাদেশের মানুষের হাতে হাতে এখন মুঠোফোন। অথচ কোন গ্রামে যখন কোন ভণ্ড ফতোয়াবাজ এ সমাজের নারী-পুরুষকে দংশন করতে তৎপর হচ্ছে, তখন এসব মুঠোফোন একসঙ্গে বেজে উঠছে না। তারা মোবাইল ফোনে একসঙ্গে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না। তারা পারস্পরিক বোঝাপড়া করে মোকাবেলা করছে না অপরাধীদের। কেন তা হচ্ছে না?
হ্যাঁ, বাংলাদেশের বস্তিতে বস্তিতে মৌলবাদের বীজ ছড়ানোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের ব্রেইন ওয়াশ করার জন্য মাঠে নামানো হয়েছে কিছু নারী কর্মীকে। তারা বিভিন্ন গ্রাম-গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়ে কোমলমতি স্কুল ছাত্রছাত্রীদের মনকে মৌলবাদী উন্মাদনায় সংক্রমিত করার চেষ্টা করছে। ধর্মকে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে তারা মানবতার বিকাশকে বাধা দিচ্ছে।
বাংলাদেশে এই যে মৌলবাদের ভয়ংকর চেহারা ক্রমেই বেরিয়ে পড়ছে, তা রুখতে মানুষ কতটা সাহস নিয়ে দাঁড়াচ্ছে, রাষ্ট্রই বা কতটুকু সচেতন? এসব প্রশ্নও বিভিন্ন কারণে মুক্তচিন্তার অধিকারী মানুষের মনকে বিদ্ধ করছে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র কিংবা এর সর্বোচ্চ জনপ্রতিনিধি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও যে হুমকি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না, তাও আমরা দেখছি। মৌলবাদীরা যত্রতত্র বলে বেড়াচ্ছে, তারা দেশ অচল করে দেবে।
এটা সবার জানা এবং বোঝা উচিত বাংলাদেশে মৌলবাদ যারা সমাজের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে, তাদের জীবনাচার এর বিপরীত। তাদের ছেলেমেয়েরা পড়ছে বিদেশের দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আর তারা বাংলাদেশে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে চাঁদা তুলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। একই অবস্থা মধ্যপ্রাচ্যের সেসব দেশে, যারা উপমহাদেশে তথা বাংলাদেশে মৌলবাদ প্রতিষ্ঠার বর্তমান কারিগর। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের আধুনিক মেয়েরাই এখন ‘হিজাব’ ছুড়ে ফেলে দিয়ে সমকালের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পোশাক পরছে। অফিস, আদালত, ব্যাংক-বীমা, দফতর চালাচ্ছে। আর সেই হিজাবকে আরোপ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বাংলাদেশে।
সিলেটে শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাস্কর্য নির্মাণে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে একাত্তরের পরাজিত শক্তিরাই। মুক্ত মত, মানবতার স্বপক্ষের রাজনীতিকদের নিঃশেষ করে উপমহাদেশে জঙ্গিবাদী থাবা বিস্তার করতে অত্যন্ত তৎপর একটি মহল। এরই মধ্যে প্রকাশিত মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক রিপোর্টে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে এই বলে যে, বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের উর্বর ভূমি বলে বিবেচনা করছে একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র।
ওয়েব মিডিয়ার কল্যাণে এখন যে কেউ ‘অনলাইন দৈনিক’ করার সুযোগ গ্রহণ করছে। তাতে তাৎক্ষণিক সংবাদ ছড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী। এ কায়দায় মৌলবাদীরাও ওয়েবকে তাদের সংগঠিত হওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
মৌলবাদের ভয়ংকর চেহারা হচ্ছে, সরাসরি পবিত্র কোরআন শরিফ নিয়ে রাস্তায় নেমে মানুষকে বিভ্রান্ত করা। যদি এ অর্ধশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টিকারীরা প্রকৃত শিক্ষিত হিসেবে গড়ে উঠত, তবে তারা এমন মানসিকতা ধারণ করতে পারত না।
আফগানিস্তানের বর্তমান ভয়াবহ পরিণতির কথা আমরা জানি। ধর্মীয় গোঁড়ামির সুযোগ নিয়েই সেখানে আল কায়দার মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র তাদের অন্যতম সদর দফতর সেখানে স্থাপন করতে পেরেছিল। এর পাশাপাশি পাকিস্তানের অসমতল পর্বত উপত্যকাকে বেছে নিয়েছে তাদের অভয়ারণ্য হিসেবে। সাকর্ভুক্ত দেশ আফগানিস্তানের নিকটবর্তী বাংলাদেশের জন্য তা অবশ্যই সুখকর সংবাদ নয়। কারণ নব্বইয়ের দশকে ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’- এ ধরনের স্লোগান যারা দিয়েছিল, তাদের চেহারা তো ভিডিও ফুটেজে বাংলাদেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে থাকার কথা।
বেশ শংকার কথা, হায়েনারা তাদের সেই দানবীয় চেহারা দেখানোর জন্য বেশ তৎপর হয়েছে। এর শিকড় উৎপাটনে দেশের প্রত্যেক সচেতন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার। জামায়াতিদের হরতাল দেখে আমরা জেনে গেছি, সারাদেশে তাদের সংখ্যা অত্যন্তই সীমিত। নজর রাখতে হবে সেসব নাটের গুরুদের প্রতিও, যারা মৌলবাদী চক্রকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন।
যারা রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে, তাদের আইনের মুখোমুখি করা হোক। তাদের বিচার করার জন্য সর্বাÍক ব্যবস্থা নেয়া হোক। তা না হলে আশকারা পেয়ে তারা দেশের ভবিষ্যৎ ক্রমেই অনিশ্চয়তার দিকেই ঠেলে দেবে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্নাত এ ভূখণ্ড কোন মৌলবাদী দানবতন্ত্রের লীলাক্ষেত্র হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই সব সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা করে এদেশের মানুষ।
এদেশের প্রধান শক্তি হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। তাদের প্রত্যয়ই এ দেশকে জঙ্গিবাদীদের চক্রান্ত থেকে রক্ষা করতে পারে।
---------------------------------------------------------------
দৈনিক যুগান্তর / ঢাকা / ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ বুধবার
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৫৪
এ.িট.এম. েমাসেলহ্ উিদ্দন জােবদ বলেছেন:
আপডেট দেখতে খোঁচা দিন।