![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
প্রজম্মের বাতিঘর
ফকির ইলিয়াস
=========================
না, গণজাগরণ থেমে যাবে না। দেশজুড়ে যে আলোর জ্যোতি আমরা দেখছি, তা বিকিরণ ছড়াচ্ছে বিদেশেও। হাজার হাজার অভিবাসী প্রজন্ম গুগল সার্চ দিয়ে দেখে নিচ্ছে বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস। জানতে চাইছে রাজাকার কী? ওরা একাত্তরে কী করেছিল? শাহবাগ থেকে যে ছয় দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে, তা খুবই যৌক্তিক। কারণ এভাবে দায় নিয়ে কোন প্রজন্ম চলতে পারে না।
প্রজন্মের এই জাগরণ আমাকে অনেক কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। ১৯৯২ সাল। আমার জীবনের একটি স্মরণীয় বছর। সাপ্তাহিক বিচিত্রা নিয়মিত নিউইয়র্কে আসে। আমি এর একনিষ্ঠ পাঠক। হঠাৎ চোখে পড়ে একটি আহ্বান। ডাক দিয়েছেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। সরদার ফজলুল করিমের ‘রুমীর আম্মা ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ বইটি আমার পড়া ছিল। তার ডাকে সাড়া দিতে মন চায়। সঙ্গে সঙ্গে বিচিত্রায় প্রকাশিত ফোন নম্বর দেখে ঢাকায় ফোন করি। কথা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) কাজী নুরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি জানান, জাতীয়ভাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সম্বয় কমিটি’ গঠিত হচ্ছে। আমরা যেন বিদেশেও সেই আন্দোলন ছড়িয়ে দিই। এরপরে কয়েক দফা শহীদ জননীর সঙ্গে আমার কথা হয়। তিনি আমাকে যুক্তরাষ্ট্রে কমিটির শাখা করার অনুমতি দেন।
কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আমরা কমিটি গঠন করি। বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী ও কাজী জাকারিয়াকে যৌথ আহ্বায়ক, ফরাসত আলীকে (বর্তমানে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান) সদস্য সচিব এবং আমাকে সহকারী সদস্য সচিবের দায়িত্ব দিয়ে জাতীয় সমন্বয় কমিটি যুক্তরাষ্ট্র শাখা গঠন করা হয়।
আমরা কাজ করতে থাকি পুরোদমে। এ সময়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিতে নিউইয়র্কে আসেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার গাড়ির বহর প্লাজা হোটেলের সামনে আটকে দেয় অভিবাসী বাঙালি সমাজ। দাবি একটাইÑ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে। জাতীয় সমন্বয় কমিটি ২৬ মার্চ ঢাকার গণআদালতে একজন মার্কিন আইনজীবী পাঠায়। বিশিষ্ট আইনজীবী টমাস কিটিং ঢাকার গণআদালতে উপস্থিত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে বিভিন্ন মহলে তার বক্তব্য তুলে ধরেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। শহীদ জননী তার শেষ বক্তব্যে বলেছিলেন, এ প্রজন্ম একদিন এ দাবি আদায় করবেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই ইনশাআল্লাহ।
২০১৩ সালে সেই গণজাগরণ আমরা দেখছি। আজ গোটা বাংলাদেশই যেন শাহবাগ। আন্দোলন চলছে লন্ডন, নিউইয়র্ক, টরেন্টো, টোকিও, প্যারিস, জেদ্দা, দুবাই, কুয়েত, কাতারÑ সবখানেই। এ আন্দোলনের ভিত্তি যিনি রচনা করেছিলেন, তার নাম জাহানারা ইমাম। প্রজš§ চত্বরে তার প্রতিকৃতি স্থাপন আমাদের আবারও শাণিত করেছে।
প্রজন্ম রাজপথে এই যে সংগ্রাম করছে, তা মূলধারায় যুক্ত হওয়ার সংগ্রাম। এ সংগ্রাম ‘জয় বাংলা’কে ধারণ করার সংগ্রাম। যা শুনলে এখনও আলবদর-রাজাকারদের গায়ে জ্বালা ধরে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বর্তমান প্রজন্ম এ সংগ্রামে জয়ী হবেই।
শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে কথা হচ্ছিল কবি শহীদ কাদরীর সঙ্গে। তিনি বললেন, শাহবাগ প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা আমাকে আবারও চমকে দিয়েছে। যেমনটি আমি একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালির মাঝে দেখেছিলাম। আমি ভেবে পাই না একাত্তর-পরবর্তী সময়েই কেন এসব ঘাতক-দালালকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়নি। আমরা জানি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল হয়। সেখানে নাৎসিদের কীভাবে বিচার করা হয়, তা আমরা জানি। বাঙালিরা একাত্তরের খুনি-ধর্ষকদের শাস্তি দিতে পারেনি বলেই আজ আমাদের এ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কবি বলেন, আমি আজকের এ প্রজন্মের কাছে ঋণ স্বীকার করে বলতে চাই, আমি খুব হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে, বাঙালি কি আর ঘুরে দাঁড়াবে না? আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকার মানুষ এককাতারে দাঁড়িয়েছে। আমি খুবই আশান্বিত। আমি সমাবেশে যেতে পারব না ঠিকই, কিন্তু আমার আত্মিক সমর্থন থাকছে এ আন্দোলনের সঙ্গে। আমি জানি, বাঙালির জয় সুনিশ্চিত।
হ্যাঁ, আলোর বাতি এখন প্রজন্মের হাতে। ফেসবুক-ব্লগ থেকে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে এই আলো পৌঁছে যাবেই। কারণ সত্য ইতিহাসকে কবর দেয়া যায় না। যেমনটি ১৯৭৫ সালে জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করেও তার নাম, তার আদর্শ মুছে দেয়া যায়নি।
আমরা দেখছি, ধর্মের দোহাই দিয়েই একটি মহল দেশে-বিদেশে বিষবাষ্প ছড়াতে চাইছে, যা কোন সভ্য সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে যারা আলবদর-রাজাকারদের বাঁচাতে চাইছে, সময় এসেছে তাদের চিহ্নিত করার।
-------------------------------------------------------------
দৈনিক যুগান্তর // ঢাকা // ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ প্রকাশিত
©somewhere in net ltd.