![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
ইন্টারনেটে লেখালেখি ও ধর্মীয় মূল্যবোধ
ফকির ইলিয়াস
===========================================
শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বে ইন্টারনেটে লেখালেখিকে সময়ের একটি স্রোত বলে বিবেচনা করা হয়। নামিদামি অনেকেই ইন্টারনেটে লিখছেন। ব্লগিং করা একটি ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। ব্লগকে একটি শক্তিশালী মিডিয়া হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে এ সময়ে। বাংলাদেশে ব্লগিংয়ের ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়। বড়জোর ছয়-সাত বছরের। এ সময়ে ব্লগ একটি জোরালো ভূমিকা রাখতে পেরেছে লেখালেখির জগতে।
বলে রাখি, আমি নিজেও একজন ব্লগার। লেখালেখি করি ব্লগ-ইন্টারনেটে প্রায় এক দশক থেকে। ব্লগ-ইন্টারনেটে লেখালেখির আলাদা আনন্দ হচ্ছে, এটি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। অনেকে পড়তে পারেন। সাইটে রেজিস্ট্রেশন থাকলে মন্তব্য করতে পারেন। লেখক তার নিজ পাঠকের সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারেন।
ইন্টারনেট ও ব্লগ এখন তাদের দরজা আরও অবারিত করে দিয়েছে। ফেসবুক এখন বাঙালির আড্ডার অন্যতম মাধ্যম। শাহবাগকে ঘিরে বাংলাদেশে যে আন্দোলন চলছে, তা ইন্টারনেটের মাধ্যমেই যাত্রা শুরু করেছে। তাহরির স্কয়ার ও আরব বসন্তের কথাও আমাদের জানা আছে, যা এখন বিশ্বে একটি বড় উদাহরণ।
আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি, ইন্টারনেট দিয়ে মানুষকে সংগঠিত করা যায়। এই সংগঠিত করার প্রয়াসটি হওয়া দরকার কল্যাণের লক্ষ্যে। কিন্তু আমরা দেখছি, ইন্টারনেটের এ অগ্রযাত্রাকে কাজে লাগিয়ে একটি মহল ধর্মের প্রতি বিষোদগার করে অথবা ধর্মের নামে ঘোলাজলে মাছ শিকার করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে, যা গোটা বিশ্বের জন্যই মানবতাবিরোধী।
আগেই বলেছি, ব্লগ লেখা এখন একটি মামুলি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ব্লগস্পট, গুগল, ওয়ার্ডপ্রেস প্রভৃতি সাইট সম্পূর্ণ বিনামূল্যে লেখালেখির সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলা ইউনিকোডে লেখার সুযোগে তা এখন ছড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী। এখানে যে বিষয়টি বলা দরকার তা হচ্ছে, যে কোন ধর্মকে আঘাত করে লেখালেখি করা সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার একটি সহজ উপায়। এই কাজ অতীতেও অনেকে করেছেন, এখনও করছেন, ভবিষ্যতেও করবেন। একটি উদাহরণ দেয়া যাক। কারও হাতে যদি একটি মোবাইল ফোন থাকে আর সেই ফোন থেকে যা ইচ্ছা খুশি লিখে যদি দু’হাজার মানুষকে একযোগে এসএমএস করা যায়, ওই দু’হাজার যদি জনপ্রতি আরও পাঁচজনকে এই এসএমএসটি ছড়িয়ে দেন তবে আরও দশ হাজার যোগ হচ্ছে। এভাবে একই দিনে লাখো এসএমএস ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব। আর ব্লগ খোলা যায় একটি ই-মেইল আইডি থাকলেই। দেখেছি যারা ব্লগিং করে, তারা ৯০ শতাংশই করে বেনামে। ফলে যা খুশি তাই লেখা যায়। লেখার কোন দায়িত্ব থাকে না। কারও কারও ফেক আইডি থাকে ১৫-২০টি!
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, ভুয়া নাম দিয়ে লেখা কোন ব্লগ, এসএমএসের সূত্র ধরেই আন্দোলন-সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ভাবখানা এমনÑ ‘চিলে কান নিয়ে গেছে’! এই হুজুগে ছুটছে মানুষ। রাসূলে করিমের (সা.) বিরুদ্ধে কথা বলা হয়েছেÑ এমন হুজুগ সৃষ্টি করে মানুষকে উগ্র করে তোলা হচ্ছে, যাদের অধিকাংশই জানে না কোথায়, কীভাবে মহানবীকে (সা.) কটাক্ষ করা হয়েছে। নিজেরাই আল কোরআন পুড়িয়ে মানুষকে উসকাচ্ছে। এমন উসকে দেয়া কোন সভ্য রাষ্ট্রে চলতে পারে না। কারোই উচিত নয় কোন ধর্ম বিষয়ে কটাক্ষ করে লেখালেখি করা কিংবা বক্তব্য দেয়া। তারপরও যদি কেউ তা করে, কোন মিডিয়ার উচিত নয় তা প্রকাশ করে দেশে উš§াদনা সৃষ্টি করা। অথচ গেল ক’দিনে বাংলাদেশে তেমনটিই হয়েছে, যা খুবই দুঃখজনক।
একটি লেখা একজন লেখক সম্পাদক বরাবরে পাঠান। লেখাটি ছাপার উপযুক্ত কি-না, কোন মানবগোষ্ঠীকে আঘাত করছে কি-না, কোন রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুণœ করছে কি-নাÑ এসব দেখবেন সম্পাদক। নাকি তা না দেখেই তিনি ছাপিয়ে দেবেন? না, তা উচিত নয়। তারপরও আমরা দেখছি, কেউ কেউ একটি মৌলবাদী পক্ষের দোসর হয়ে সেরকম কাজটি করছেন। এটা তারা করছেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে।
ধর্ম নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করবে, এটি মেনে নেয়া যায় না। কারণ ধর্ম একটা মীমাংসিত বিষয়। কেউ আস্তিক হবে, কেউ নাস্তিক হবে। তা হতেই পারে। কিন্তু কেউ কারও বিশ্বাস বা অনুভূতিতে আঘাত দেবে না, কাউকে আক্রমণ করবে নাÑ এর নামই মানবতা। মানুষের প্রতি মানুষের দায়। বাংলাদেশে তা মানা হচ্ছে না। দেশে আইন রয়েছে। সেই আইনের মাধ্যমেই সব বিধিবিধান মেনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে। রায় হচ্ছে। সেই রায়কে অমান্য করে দেশজুড়ে তাণ্ডব চালানোর হেতু কী? সবচেয়ে ভয়ানক ঘটনা, আবারও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে সম্পূর্ণ বিনা কারণে। মাত্র ক’দিনে শতাধিক হিন্দুর ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। শুধু নোয়াখালীতেই ৭৬টি পরিবারকে আগুনের লেলিহান শিখায় ভিটেছাড়া করা হয়েছে। এর কারণ কী?
এ দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-আদিবাসী সবার সমান অংশগ্রহণ ছিল। আজ কোন গোষ্ঠীকে আক্রমণ কেন করা হচ্ছে? তবে কি আবার সেই ঘৃণ্য ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব’ মাথাছাড়া দিয়ে উঠছে? এদের প্রকৃত মতলব কী?
আজ গ্রাম থেকে উঠে আসা সাধারণ মানুষ জানেও না মৌলবাদীরা ওদের হীন স্বার্থে ব্যবহার করছে। এদেশে হাক্কানি আলেম সমাজ সবসময়ই মওদুদীবাদী তত্ত্বকে ‘বাতিল’ বলে গণ্য করেছেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, পাক-ভারত উপমহাদেশে ১৯৪৭ ও এর পরবর্তী সময়ে এই মওদুদীবাদীরাই সবচেয়ে বেশি ধর্মীয় উš§াদনা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। জামায়াত-বিএনপি আজ সহিংসতায় নিহত হওয়াকে ‘গণহত্যা’ বলছে। তাদের শাসনামলে যখন ২১ আগস্টের নারকীয় বোমা হামলা হয়েছিল, বিচারকদের উপর হামলা হয়েছিল, শাহ কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করা হয়েছিল- সেগুলোকে তাহলে কী বলা হবে?
না, কোন হত্যাকাণ্ডকেই মানা যায় না। দেশে একটি চিহ্নিত মহল, একাত্তরের পরাজিত শক্তি যে দাপট দেখাতে চাচ্ছে, তা রুখে দিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কেউ যেন ধর্মের নামে কুমতলব হাসিলের সুযোগ না পায়। প্রতিটি ব্লগের মডারেটরদের উচিত উসকানিমূলক লেখা প্রচারের আগেই তা ডিলিট করে দেয়া। ওই ব্লগ-লেখককে আইপিসহ নিষিদ্ধ করে দেয়া। আর বিদেশনির্ভর কোন ব্লগে (ফেসবুক, ব্লগস্পট, ওয়ার্ডপ্রেস) এমন উসকানিমূলক কোন লেখা কারও নজরে এলে উচিত হবে সঙ্গে সঙ্গেই তা রিপোর্ট করা।
আমরা এমন একটি সময় পার করছি, যখন দেখতে পাচ্ছি আমাদের ফেসবুকের হাজার হাজার বন্ধু তালিকার কতজন মৌলবাদী উন্মাদনামুখর, আর কতজন যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি নিয়ে শান্তির পক্ষে। এদের চিহ্নিত করেই এগিয়ে যেতে হবে। সময় এখন কন্টকাকীর্ণ। তাই পা ফেলতে হবে খুব হিসাব করে। সম্পাদক বন্ধুদের আবারও অনুরোধ করি, দেশের স্বার্থ রক্ষা করুন। কোন উন্মাদনা সৃষ্টিকারীকে উসকে দেয়া কোন সভ্য মানুষের কাজ হতে পারে না।
------------------------------------------------
দৈনিক যুগান্তর / ঢাকা ॥ ৭ মার্চ ২০১৩ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৫৫
আজমান আন্দালিব বলেছেন: ধন্যবাদ একটি সুন্দর লেখা উপহার দেওয়ার জন্য।