![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
কবিতার গ্রহপথে হেঁটে যায় মৌন কাব্যকার
ফকির ইলিয়াস
======================================
কবিতা কেন লিখতে হয়, কথাটি আমার কাছে জানতে চেয়েছিল যে মেয়েটি, আমার সাথে তার বয়সের ফারাক তিরিশ বছরের। আমি বলি, কবিতা আমি লিখি না। কবিতা আমাকেই লিখে নেয়। কীভাবে লিখে ! সে জানতে চায়। আমি হাসি। বলি- দুই সত্তা যখন এক হয়ে যায়, তখন আর কারো কোনো নিজস্ব পরিচয় থাকে না। তাহলে আমার পরিচয় কি ? কবিতা - না কবিপিতা !
কেউ কেউ বলেন- 'কবিতাকার'। কে কি বলেন তা এখন আর আমার কাছে মুখ্য
কিছু মনে হয় না। আমি কবিতার জন্য অনেক পথ হাঁটি। অনেক বয়স বিনিয়োগ
করি। এই কদিন আগে ৫০টি বছর অতিক্রম করে এসেছি আমি। কিন্তু মনে হয়, এইতো সেদিন ! তিন দশকেরও বেশি সময় পেরিয়েছি কাব্যসংসার নিয়ে।
আমার ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে 'জলভূমি' ওয়েব ম্যাগাজিন একটি বিশেষ আয়োজন করেছিল। তিনদিন ব্যাপি ওয়েব স্পেস তারা দিয়েছেন আমাকে। আমার কাছে মনে হয়েছে- এটা এক বিরল সম্মান।
'জলভূমি' যারা চালান- তাদের কয়েকজনকে আমি ওয়েব ভুবনেই চিনি। শিফাত
সালমান, শিবানি মিত্রসেন, বোরহান বীজান্ত। আরও কয়েকজন আছে তাদের টীমে। তারা এই যে কবিতাকে ভালোবাসেন- এর পেছনে কী স্বার্থ আছে ? কিংবা
কোনো প্রত্যন্ত এলাকা থেকে যারা ছোটকাগজ বের করেন ! মূলতঃ এরাই সাহিত্যের প্রাণশক্তি।
আমার জন্মদিনে কবি শিবানি মিত্রসেন একটি নিবেদিত কবিতা লিখেছেন। কবিতাটি আমি অনেকবার পাঠ করেছি। পড়া যাক তার কবিতাটি।
'' কিছু জল ছিটিয়ে যাই। কিছু বৃষ্টি রাখি জমা - এই নীরব নিঃশ্বাসে
উড়ে যাওয়া নদীর বিত্ত, তোমাকে স্পর্শ করে কবি, আর তুমি
ধ্যানী ঋষির মতো এঁকে যাও ফুলের পাহাড়।
আমাদের ভরাট নদীগুলো দেখে বার বার কাঁদে এই পাখিদের দল।
যে পুষ্পবিতানে একদিন মানুষের আনাগোনা ছিল,
সেখানে এখন বাস করে বিষধর সাপ।
বাদুড়েরা ঝুলে থাকে শোষকের মুখোশ পরে
আর নদীওয়ালা একাকী বাউল ভাঙা দোতরার তার
ঠিক করতে করতে অতিক্রম করে পথের প্রদেশ।
আমরাও অতিক্রম করতে চাই কবি, পঞ্চাশ সহস্র বছর
এই কবিতালয়ে, আকাশে, মগ্ন অনুপ্রাসে।''
[ নদীওয়ালা / শিবানি মিত্রসেন ]
এই যে অতিক্রম করে যাওয়ার স্বপ্ন, তা কবিই দেখতে পারেন। অনেকেই বলেন,
রাজনৈতিক মুক্তি না এলে সমাজ বদলায় না। তারা আরও বলেন, সমাজকে,
রাষ্ট্রকে নতুন জীবন রাজনীতিকরাই দেন। কথাটা হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে সত্য। কিন্তু আমি তো কোনো কবিকে যুদ্ধের হুকুম দিতে দেখিনি। আমিতো কোনো
কবিকে গণহত্যার সাথী হতে দেখিনি। বরং কবিরাই সমস্বরে বলেছেন-' স্টপ জেনোসাইড'।
কবিরা স্বপ্ন ফেরি করেন। অথবা দুপুর বিক্রি করে যোগান দেন প্রেমিকার চুলের লালফিতার মূল্য। কবি আবু হাসান প্রেমিকের প্রতিদ্বন্ধী হতে চেয়েছিলেন। তা আমরা তার কবিতায়ই পড়েছি।
''অতো বড় চোখ নিয়ে, অতো বড় খোঁপা নিয়ে
অতো বড় দীর্ঘশ্বাস বুকের নিশ্বাস নিয়ে
যতো তুমি মেলে দাও কোমরের কোমল সারশ
যতো তুমি খুলে দাও ঘরের পাহারা
যতো আনো ও-আঙ্গুলে অবৈধ ইশারা
যতো না জাগাও তুমি ফুলের সুরভী
আঁচলে আগলা করো কোমলতা, অন্ধকার
মাটি থেকে মৌনতার ময়ূর নাচাও কোন
আমি ফিরব না আর, আমি কোনদিন
কারো প্রেমিক হবো না; প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী চাই আজ
আমি সব প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হবো ''
[ প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী / আবুল হাসান ]
না , কবিতা কোনো দ্বন্ধ রেখে যায় না। যা রেখে যায়, তা অনুভবের অনুসৃতি। কেউ সেই ভাবনায় নিজেকে মিলিয়ে নিতেই পারে, যদি চায়। আর না চাইলেও
কবির কিছুই করার থাকে না।
কবিতার বিবর্তন কামনা করে যে কবি পুরো রাত চাঁদের সাথে কথোপকথনে কাটিয়ে দেন, তার এর চেয়ে বেশি কিছুই চাওয়ার থাকে না। তিনি মনে করেন,
আমি যে চাঁদ দেখছি- তা গোটা বিশ্বালোকের মানবসমাজই দেখছে। তাহলে চাঁদের
জ্যোতিরেখা নিয়ে আমার দেখর বিশেষত্ব কি ?
হ্যাঁ, আমরা দেখতেই পারি এই পংক্তিগুলোর অমোঘ বিশালতা।
''সারাদিন পিঠের ওপর মাকড়শার জাল বুনে আজ তুমি
অতিশয় ক্লান্ত হয়েছ। চারিপাশে নগ্নহাঁস ও ময়ূরেরা
নতুন নতুন গৃহ নির্মাণ করছে। চারিপাশে আবার
সাপ ও জবা ফুলের শৃঙ্গারও শুরু হয়ে গেছে। তুমি,
একা তুমি, মাথা ফাঁক কোরে বিশ্বসংসারের খোঁপায়
স্বপ্ন বুনে দিতে গিয়ে, আজ বুঝেছ, গোধূলি কখনও
কারো আত্মীয় হয়না, তোমার ভাঙা হাতের উপর
চাঁদ এসে বার বার চন্দনা করে, তোমার ভাঙা
হাতের উপর হরিণীর কান্না এসে হরিণা করে,
তুমি, একা তুমি, খাঁচাভর্তি অন্ধকার নিয়ে
আজও দাঁড়িয়ে আছ, চারিদিকে জল চমকায়, ভাসমান
জল চমকায়, তোমার খাঁচা থেকে অন্ধকার ক্রমাগত
গড়িয়ে আসে ''
[ চাঁদ ও বন্দনা / জহর সেন মজুমদার ]
কবি মানেই একেকজন স্বৈরশাসক। কারণ একজন প্রকৃত কবি পুরো নগরবাসীকে
জানিয়ে একটি কবিতা লিখতে পারেন না। তাহলে কেউ বলতে পারেন, কবিতা কী তবে আরোপিত কোনো বস্তু কিংবা শক্তির নাম ?
কবিতার শিল্পলেখপর্ব সারার আগে কবি যার সাথে প্রথম বোঝাপড়া করেন সে হচ্ছে নিজ পাঁজর। একজন কবি প্রতিদিন যে নতুন সূর্যের ছবি আঁকেন তা , তার স্বনির্ভর আধুনিক চেতনারই ফসল।
আমি মনে করি, কবি নিজেই নির্মাণ করেন তার নিজ উপনিবেশ। তার কক্ষপথে
কোনো আঁধার দাঁড়িয়েই বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারে না।
পড়া যাক এই কবিতাটি ------
''জলরঙে এঁকেছিলে যে আগুন
সে আগুন আগুনই থেকে গেল শেষতক, জল হলোনা যে!
তোমার আঙ্গুলে যে রঙ লেগেছিল
তাও ছুঁয়ে গেল প্যাষ্টেলে নাকি আগুনে?
একদা জল ভেবে যে আগুন গলাধঃকরণ করেছিলে তুমি
তার তাপেই পুড়ে গেছে ঘরদোর
পুড়ে গেছে তৈজস, প্রেমপত্রগুলো
পুড়ে গেছে দীর্ঘ ভালোবাসা, চুম্বনের দাগ।
কতদূর গেলে আকণ্ঠ পান হবে, লভ্য হবে তৃষ্ণার জল
জলরঙ আগুন হবে প্রকৃতই জল
আগুন পেরোলেই নদী
তারপর স্থিত সরোবর,জল শুধু জল
কিংবা অবারিত, তীব্র খরতর। ''
[তোমার আঙ্গুলে যে রঙ লেগেছিল / তমিজ উদদীন লোদী ]
কবি মানেই নিঃসঙ্গ নাবিক। তার হাতে আঁকা আলোররেখা গুলো একসময় তিনি
অন্যের হাতে তুলে দেবার জন্য উদ্গ্রীব হন। এই 'অন্যপক্ষ' হচ্ছে তার পাঠক।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুব যথার্থই বলেছেন,
''কে লইবে মোর কার্য্য, কহে সন্ধ্যা রবি
শুনিয়া জগত রহে নিরুত্তর ছবি।
মাটির প্রদীপ ছিল, সে কহিল, স্বামী-
আমার যেটুকু সাধ্য করিবো তা আমি। ''
আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, আমি এই ধরণীতে মাটির প্রদীপ হতেই চেয়েছি।
একটু আলো জ্বেলে দিতে চেয়েছি। 'যুদ্ধ নয় শান্তি চাই' এই প্ল্যাকার্ড বুকে ঝুলিয়ে নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে দাঁড়িয়ে শত শত কবি যখন মৌন মিছিল করেছেন তখন আমার বার বার মনে হয়েছে, বিশ্ব একদিন শান্তির গ্রহপথ খুঁজে পাবেই। কোনো সামন্তবাদই কবি ও কবিতাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না
--------------------------------------------------------------
দৈনিক যায়যায়দিন ::সাহিত্য সাময়িকী ::/ ঢাকা / ৮ মার্চ ২০১৩ শুক্রবার
Click This Link
০৮ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৪৪
ফকির ইলিয়াস বলেছেন: আমার সাথে তার বয়সের ফারাক তিরিশ বছরের
২| ২১ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:১৯
হাবিব কবি বলেছেন: যারা অনেক হেঁটেছেন-
আমরা যদি বিবর্তন হই
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:০৯
বাক স্বাধীনতা বলেছেন: মেয়েটি আপনার চেয়ে তিরিশ বছরের বড় ছিল, না ছোট?