নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রযুক্তি নিয়ে শঙ্কা, বিজ্ঞানের প্রতি ভরসা

০১ লা জুন, ২০১৩ সকাল ৯:৩০

প্রযুক্তি নিয়ে শঙ্কা, বিজ্ঞানের প্রতি ভরসা

ফকির ইলিয়াস

=============================================

একটি সংবাদ তোলপাড় তুলেছে মার্কিনি মহলে। সম্প্রতি মার্কিনি গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই চাইনিজ বংশোদ্ভূত একজন নাসা বিজ্ঞানীকে গ্রেপ্তার করেছে। তার অপরাধ তিনি মার্কিনি বেশ কিছু স্পেস বিষয়ক গোপন তথ্য চায়নার বিজ্ঞানীদের কাছে পাচার করতে চেয়েছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত এই বিজ্ঞানীর নাম- বো জিয়াং। যুক্তরাষ্ট্রের লেঙলে রিসার্চ সেন্টারে কর্মরত ছিলেন এই বিজ্ঞানী। তিনি চীনে ফ্লাই করার প্রাক্কালে বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি এমন কিছু তথ্যে বিদেশী গোয়েন্দাদের প্রবেশাধিকার দিয়েছেন, যা আমেরিকার জন্য হুমকির কারণ হতে পারে।



নাসার ইন্সপেক্টর জেনারেল পল মার্টিন বলেছেন, তার কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে বো জিয়াং কমপক্ষে দুশ জন চাইনিজ গবেষককে বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করেছেন, যা মার্কিন মুল্লুকের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। এর আগে ২০০৯ সালে একজন বোয়িং ইঞ্জিনিয়ার মিঃ ডুংফান গ্রেগ চাং, চীনের কাছে মার্কিনি ‘স্পেস শাটল সিক্রেটস’ পাচারের অভিযিগে দ-িত হয়েছিলেন। তিনিও ছিলেন চাইনিজ বংশোদ্ভূত। একটি বিষয় দেখা যাচ্ছে স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রও সাইবার অ্যাটাক নিয়ে বেশ চিন্তিত। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক ভাষণে বলেছেন, আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা অচল করে দিয়ে যদি কোনো আক্রমণ করা হয়, তা কিভাবে প্রতিহত করতে হবে- তার জোর প্রস্তুতি আমাদের রাখতে হবে।



আরেকটি ভয়ঙ্কর সংবাদের দিকে আমরা নজর দিতে পারি। পল হিনক্লে নামের ৬৯ বছর বয়স্ক এক মার্কিনিকে গোয়েন্দারা গুরুতর অপরাধের দায়ে গ্রেপ্তার করেছিল কয়েক বছর আগে। তার অপরাধ সে ইন্টারনেটে চ্যাটিং করে কেসি নামে ১১ বছরের এক বালিকা এবং ওই বালিকার ২৯ বছর বয়স্ক মা শেরিলের সঙ্গে অবৈধ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে চেয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে জানানো হয়ছিল, ‘সল্টিঅল্ড সেইলর ২০০২৬৯’ এই স্ক্রিন নামে পল হিনক্লে কেসি ও শেরিলের সঙ্গে ইন্টারনেটে আলাপ করে আসছিল। মূলত ১১ বছরের বালিকা কেসি ও তার মা শেরিলের ছদ্ম নামে চ্যাটিং করেছিল দুজন মহিলা গোয়েন্দা।



পল হিনক্লে নিউইয়র্কের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্ট বিজনেস ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা ও ধনকুবের। তার কোম্পানির নাম জেএমজে এন্টারপ্রাইজেস। ৬৯ বছরের বৃদ্ধ পল এক পর্যায়ে ১১ বছরের বালিকা ও তার মায়ের সঙ্গে ফোনালাপেও রত হয়। গোয়েন্দারা সব ফোনালাপ রেকর্ড করে। মা ও মেয়েকে নিউইয়র্কে আসার আমন্ত্রণ জানায় পল। ছদ্মবেশী গোয়েন্দারা মা ও মেয়ে সেজে জানায়, তারা কলরাডো অঙ্গরাজ্য থেকে নির্দিষ্ট দিনে এসে নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের নিউইয়র্ক এয়ারপোর্টে অবতরণ করবে। বৃদ্ধ পল জানায়, সে হোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছে। এবং সেই ‘গ্লোরিয়াস নাইট’-এর জন্য অপেক্ষা আর সইছে না।



এয়ারপোর্টে অপেক্ষারত অবস্থায়ই গোয়েন্দারা পলকে গ্রেপ্তার করে। পলের গাড়ি থেকে রশি, মাদকদ্রব্য, কনডম ও ভায়াগ্রা উদ্ধার করা হয়। পলের বক্তব্য থেকে জানা যায়, সে ১১ বছর বয়সী বালিকার প্রতি এতোই আসক্ত হয়ে পড়েছিল যে, যৌনাচারের প্রয়োজনে রশি ব্যবহারের জন্য সে তা গাড়িতে রেখেছিল। তার পরিকল্পনা ছিল প্রয়োজনে রশি দিয়ে বালিকাটির হাত-পা বেঁধে ফেলবে। ইউএস অ্যাটর্নির দপ্তর থেকে বলা হয়েছিল এই জঘন্য, হীন মানসিকতা পোষণ এবং নাবালিকার প্রতি এমন আচরণের প্রস্তুতির জন্য পলের সর্বনিম্ন ৩০ বছর জেল হতে পারে। সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদ-। তার জামিন নামঞ্জুর করে আদালত ইতোমধ্যেই তাকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। আমরা জানি প্রযুক্তিপ্রিয়, সভ্য বিশ্বের জন্য, পরিশীলিত মানব সমাজের জন্য এসব সংবাদ বেদনাদায়ক অবশ্যই। প্রযুক্তির দরজা যখন উন্মুক্ত হয়ে মানবকুলকে সৃজনের পথে আহ্বান জানাচ্ছে তখন পাশাপাশি এই ভাবনাও আসছে, প্রযুক্তির নেগেটিভ দিকগুলো কী কী? এগুলো থেকে মানব সমাজকে কিভাবে বাঁচানো যায়।



ইন্টারনেট প্রযুক্তিটি পুরোদমে চালু হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনগত কঠোরতা বেড়েছে। হ্যাকিং করে অন্যের ব্যাংকের অর্থ, বিভিন্ন তথ্যসহ বায়োডাটা কিংবা অন্যান্য জরুরি ডাটা চুরির প্রবণতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে গোটা বিশ্বে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ, খুনখারাবি, ছিনতাই, রাহাজানি, ধর্ষণ, ব্যভিচার, সন্ত্রাসসহ নানা চরম, হীন কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে তো বটেই, প্রাচ্যের ভারত, ফিলিপিন্স, শ্রীলঙ্কায়ও সাইবার অপরাধ দমনে বিভিন্ন ধরনের শক্তিশালী ‘অপরাধ দমন স্কোয়াড’ গঠন করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করে গড়ে তুলতে নানা কর্মশালা পরিচালিত হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে একটি সামাজিক সচেতনতার বিজ্ঞাপন জনমনে খুবই নাড়া দেয়। রাত এখন ৯টা। ‘আপনি জানেন কি আপনার সন্তান এখন কোথায়? আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আপনার হাতে।’



এই বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি এখন যুক্ত হয়েছে নতুন একটি সামাজিক বিজ্ঞাপন। ‘আপনার সন্তান ইন্টারনেট জগতে ঢোকার আগে, আপনি সে জগৎ ভালো করে রপ্ত করে নিন।’ ‘প্যারেন্টাল কন্ট্রোল’ ধাপগুলো ভালো করে জানুন । লক্ষ্য রাখুন, ইন্টারনেটে আপনার সন্তান কী করছে। এক সময় ছিল যখন ইউরোপ-আমেরিকা অভিবাসী অভিভাবকরা গর্ব করে বলতেন, আমার ছেলেমেয়ে খুব ভালো ইংরেজি জানে। অথচ তারা ভুলে যেতেন একটি প্রজন্ম ইংরেজিভাষী দেশে বেড়ে উঠলে ইংরেজি তো তার প্রথম ভাষা হবেই। এতে অহঙ্কার করার তেমন কী! সেই মনমানসিকতার দ্রুত পরিবর্তন হয়েছে, যা অভিবাসী প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক দিক। এখন অভিবাসী অভিভাবকরা প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। কার সন্তান কতো ভালো বাংলা ভাষা জানবে, শিখবে বাংলা সভ্যতা-সংস্কৃতি। রেওয়াজ করবে সৃজনশীল তাহজিব-তমদ্দুন। ধর্মীয় শিক্ষাসহ এ যুক্তরাষ্ট্রেও এখন গড়ে উঠেছে বাংলা ভাষা, গান, নাচের অনেক স্কুল। এসব শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষকরা বেশ গর্বিত তাদের ছাত্রছাত্রী নিয়ে। শিকড়ের সন্ধানে নিজ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সাহিত্য শেখার এবং জানার বিকল্প আর কী হতে পারে?



যে সত্যটি সব অভিভাবককেই মনে রাখতে হবে তা হচ্ছে, তার সন্তান যেন সুষ্ঠু গাইডেন্স পেয়ে বড় হতে পারে। প্রযুক্তি মানব সমাজের জন্য আশীর্বাদ হলেও তা মানব জীবনের একমাত্র নিয়ন্ত্রক কিংবা নিয়ামক নয়। মনে রাখতে হবে, কম্পিউটারের ডাটাবেইসে যে তথ্য আপলোড করা হবে, তাই কিন্তু সার্চ করে পাওয়া যাবে। কম্পিউটার এমন কোনো শক্তি নয় যা অদৃশ্য, অস্পর্শ কিছু বলে দিতে পারে। এসব দিক বিবেচনা করে এবং বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশেও সাইবার নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা জরুরি। যাতে ইন্টারনেট প্রযুক্তির বিয়োগাত্মক দিকগুলো আমাদের প্রজন্মকে ধ্বংস করতে না পারে। মুক্তপ্রবাহের যুগে তথ্য নিয়ন্ত্রণ নয়, অসাধু তৎপরতা, অসামাজিক কর্মকা- যাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে হতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে নজর রাখতে হবে। প্রযুক্তির দরজা দ্রুত উন্মুক্ত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমরা যেন প্রমাদজনিত ভাইরাসে না ভুগি। কারণ, কোনো অপস্বাধীনতা মানব জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে না। আনতে পারে না। একটি রাষ্ট্রে সৃজনশীল বিবর্তন সবসময়ই কাম্য হয়। কারণ নান্দনিক পরিবর্তন, ভাঙচুরের মাধ্যমেই এগিয়ে যায় মানব সমাজ। গেলো এক যুগে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি ফিল্ডে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে বলা যায়। এর পাশাপাশি অবশ্য নানা শঙ্কা-সংকটও বেড়ে উঠেছে নানাভাবে। মনে পড়ছে প্রখ্যাত কথাশিল্পী শ্রদ্ধেয় শওকত ওসমান একটি সেমিনারে বলেছিলেন, সংস্কৃতির আবিষ্কার এবং আগ্রাসন দুটিই আছে। প্রজন্মকে ঠিক করতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কোনটা গ্রহণ করবেন। আর অভিভাবককে গাইড দিতে হবে সে আলোকেই, তারা তাদের সন্তানদের কী শেখাতে চান। বাংলাদেশে ধনীর দুলালদের বখাটেপনার বেশ কিছু খবর আমরা পত্রপত্রিকায় পড়ছি। এদের কেউ কেউ মাত্র ক’ হাজার টাকার একটি সেলফোনের জন্য মানুষ খুন করতে পর্যন্ত উদ্যত হচ্ছে। মোবাইল ফোনের বিল মেটাতে গিয়ে চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি করছে কিশোর-যুবকরা। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে প্রায় সাড়ে ছয় কোটির কাছাকাছি মোবাইল গ্রাহক রয়েছে। কোনো কোনো মধ্যবিত্ত একের অধিক মোবাইল বহন করেন। আর উচ্চবিত্তের কথা না হয় বাদই দিলাম।



একটি দেশে প্রযুক্তি শিল্পের প্রসার বাড়বে, তা আনন্দের সংবাদ বৈকি। কিন্তু এর পাশাপাশি জনস্বার্থ সংরক্ষণ আইনগুলো কি কঠোরতর করা হচ্ছে? না, হয়নি। হচ্ছে না। মোবাইল ফোনে সংকেত দিয়ে মানুষ খুন পর্যন্ত করা হচ্ছে। অথচ সে ফোন দ্রুত এবং সহজে খুঁজে বের করার ট্র্যাকিং সিস্টেম বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে শক্তিশালী এবং পর্যাপ্ত নয়। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষও খুব জোরালো ভূমিকা রাখছে না। একটি দেশে দুর্বৃত্তপনা ছড়িয়ে দেয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে, সে দেশের তরুণ প্রজন্মকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করা। আজ বাংলাদেশের রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে ফেনসিডিলের পর ‘ইয়াবা’ নামের নতুন মাদকদ্রব্য তৈরি, বাজারজাত করার খবর আমরা দেখছি। এদের নেপথ্য হোতা কারা, তাদের শিকড় কতোদূর পর্যন্ত বিস্তৃত, তা খতিয়ে দেখা দরকার, সরকারের।



বাংলাদেশের রাজনৈতিক জীবন এবং সামাজিক জীবন দুটোই আজ এতোটা বিপন্ন যে, একটাকে বাদ দিয়ে অন্যটি নিয়ে ভাবলে লক্ষ্যবিন্দুতে পৌঁছা যাবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, যদি রাজনৈতিক দলগুলোর, ক্ষমতাসীন সরকার পক্ষের জবাবদিহিতা করার মতো প্লাটফর্ম অতীতে থাকত তবে হয়তো দেশ এতোটা লুটেরা বিপর্যয়ের মুখোমুখি পতিত হতো না। একাত্তরের পরাজিত রাজাকার শক্তি, দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের নানাভাবে আনুকূল্য পেয়ে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলাকে এরা চ্যালেঞ্জ করছে। এই যে সামাজিক আস্ফালন, তা তারা সম্ভব করতে পেরেছে শুধু প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর উদাসীনতার কারণে। ভূমি-মানুষ-সার্বভৌমত্ব-সমাজ রক্ষা এবং এর উন্নতি সাধন করাই একটি সরকারের প্রধান দায়িত্ব। এর প্রয়োজনে তাদের যতোটা দরকার জবাবদিহি করতে কারোরই কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। শেষ পর্যন্ত দেশে যেসব দল টিকে থাকবে এবং যারা ক্ষমতায় যাবে, তাদের সবারই এ চিন্তাটি মাথায় রাখার সুযোগ উন্মুক্ত হলে পাল্টে যেতে বাধ্য দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি।



প্রখ্যাত সাহিত্যিক ড. হুমায়ুন আজাদের একটি বিখ্যাত কবিতা আছে, ‘আমি বেঁচেছিলাম অন্যদের সময়ে’। হ্যাঁ, নিজ সত্তা নিয়ে অন্যদের সময়ে বেঁচে থাকা বড় দুঃখজনক এবং কঠিন কাজ। দেশে এখন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী হাওয়া বইছে। এই ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার খুবই দরকারি। আর তা কাজে লাগাতে হবে পজিটিভ পথে। আমাদের চারপাশে এখন ডিজিটাল মিডিয়ার কৃতিত্ব। বাংলাদেশেও এর সুষ্ঠু ব্যবহার প্রয়োজন।



বাঙালি জাতির এটা চরম দুর্ভাগ্য, একটি ভালো সিনেমার বদলে দলীয় পোষ্যদের নির্মিত চলচ্চিত্র, টেলিফিল্ম, নাটক বিভিন্ন চ্যানেলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে প্রায় গায়ের জোরে। ফলে সুস্থ, মেধাবী নির্মাতারা ক্রমেই মাঠ ছেড়েছেন। গ্রন্থ প্রকাশ এবং বিপণনেও দলীয় পক্ষপাত, পথে নামিয়েছে সৃজনশীল প্রকাশক-লেখকদের। অন্যদিকে নগদকড়ি কামানোর ধান্ধায় প্লট, ফ্ল্যাট, মোবাইল ব্যবসা, ইজারাদারিসহ বিভিন্ন ‘হট’ ব্যবসায় দেশের রক্ষকদের এজেন্টরা বসিয়েছে কমিশনের ভাগ। একটি দেশে যখন রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি প্রশ্রয় পায় তখন সবাই লুটপাটে উন্মত্ত হয়ে ওঠে, যা শতভাগই ঘটেছে বাংলাদেশের বেলায়। এই সুযোগে সব শ্রেণীর কালো শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মানুষকে অশিক্ষিত কিংবা অর্ধশিক্ষিত করে রাখার এই যে বনেদি প্রচেষ্টা তা বাস্তবায়িত হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। প্রাইভেট স্কুল-কলেজ বনাম সরকারি স্কুল-কলেজের দুটি শ্রেণী বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠলেও সামাজিক শান্তি দুপক্ষের কেউই পায়নি কিংবা পাচ্ছে না। প্রজন্মের পথচলায় সংস্কৃতির বিবর্তন অবশ্যই অপরিহার্য। কিন্তু সে পথে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা দান এবং সামাজিক আইনি নিরাপত্তা বিধানও জরুরি। কারণ, একটি অন্যটির পরিপূরক। শুরুতেই বলেছি, বিবর্তিত প্রাযুক্তিক ধারা নিয়ে বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো উদ্বিগ্ন। তারপরও বিজ্ঞানের অগ্রসরমান চেতনাই মানুষকে এগিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে চিকিৎসা, গবেষণা, আবিষ্কার, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিবেশ- এই ক্ষেত্রগুলোতে বিজ্ঞানকে পাশে রেখেই এগোচ্ছে মানুষ। বাংলাদেশকে, বাঙালি প্রজন্মকে বিষয়গুলো মনে রেখেই তাকাতে হবে আগামীর দিকে।

-----------------------------------------------------------------

দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ১ জুন ২০১৩

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.