![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
বাংলাদেশ যেভাবে ভালো থাকতে পারতো
ফকির ইলিয়াস
===========================================
একটা আঁধারের ছায়া ঘিরছে বাংলাদেশকে। এই আঁধার রাজনৈতিক। যারা ক্ষমতায়, তারা তা অনুধাবন করতে পারছেন বলে মনে হয় না। যদি পারতেন, তাহলে তাদের পোষ্য নেতাকর্মীরা এভাবে হানাহানি করে টেন্ডারবাজির বাটোয়ারা নিতে পারতো না। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের টেন্ডারে যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের একচ্ছত্র আধিপত্যে ভাগ বসাতে চেয়েছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা “িারুল আলম। কিন্তু আধিপত্য ধরে রাখতে অনড় অবস্থান নেয় বাবর গ্রুপ। যার ফলে গত দেড় বছরে কয়েক দফা হামলা, মারামারি, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে দুপক্ষে। এ অবস্থায় বাবর গ্রুপের আধিপত্যের কাছে টিকতে না পেরে সমঝোতার প্রস্তাব দেয় “িার।
রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার মধ্যস্থতায় তিনদিন আগে “িারের কয়েকজন অনুসারী সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে বাবরের কাছে যান। সেখানে কথা বলতে গিয়ে “িারের অনুসারী একজন সমঝোতার প্রসঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার নির্দেশের কথা তুললে ক্ষুব্ধ হন বাবর। এসময় “িারের অনুসারীদের অপমান করে বের করে দেন বাবর। এরপর “িারুল আলম তার অংশীদারী প্রতিষ্ঠান রয়েল এসোসিয়েটসের পক্ষে রেলওয়ের সর্বশেষ প্রকল্পে যে কোনোভাবে টেন্ডার জমাদানের সিদ্ধান্ত নেন। অন্যদিকে বাবর তাদের ঠেকানোর পক্ষে অনড় অবস্থান নেন।
দুপক্ষের এমন অনড় অবস্থানের কারণে সোমবার চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় সশস্ত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে যাতে প্রাণ গেছে আট বছরের শিশু আরমান এবং বাবরের অনুসারী সন্ত্রাসী সাজু পালিতের (২৮)। এটা হলো একটি খ-চিত্র। এভাবে শেষ সময়ে এসে দেশের সরকারপন্থীরা নিজেদের মাঝে কামড়া-কামড়ি শুরু করেছে। গাজীপুর নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে ‘নাটক’ গোটা দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ঠিক একইভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা দাঁড়াতে পারেন বিভিন্ন এলাকায়। এই চিত্র আমরা দেখতে শুরু করেছি। আর যে মহান জাতীয় সংসদে তারা যাবেনÑ সেই সংসদকে কিভাবে কলুষিত করা হচ্ছে, তা দেখে হতবাক হয়েছেন এদেশের আপামর মানুষ। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ থেকে বিদায় নিয়েছে শালীনতা। আলোচনার নামে চলছে নোংরা ভাষায় খিস্তিখেউড়। অশালীন, অমার্জনীয়, অসংসদীয় ও প্রকাশের অযোগ্য ভাষার ব্যবহার দেখে স্তম্ভিত দেশবাসী। এ কোন ভাষায় কথা বলছেন দেশের আইন প্রণেতারা? বেশ কিছুদিন ধরেই বিরোধী দল ও সরকারি দলের কয়েক নারী সংসদ সদস্য কে কতো বেশি খারাপ ভাষায় কথা বলতে পারেন, এরই যেন প্রতিযোগিতা চলছে গণতন্ত্রের সূতিকাগার জাতীয় সংসদে। স্পিকারের রুলিংকে প্রতিদিনই বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছেন দুপক্ষই। প্রথমে শুরু করেছিল বিএনপির তিন নারী সদস্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সরকারি দলেরও কোনো কোনো নারী সদস্য। সংসদে তাদের রুচিহীন ‘অমিয় বচন’-এর অনেকটাই রুচিশীল পাঠকের কথা চিন্তা করে তা প্রকাশ করাও সম্ভব নয়।
প্রতিবাদ যে হচ্ছে না, তা নয়। কেউ কারো কথা শুনতে চাইছে না যেন। বাজেটের ওপর বক্তব্যে রাখার জন্য স্পিকার তাকে ফ্লোর দিলে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে সরকারি দলের সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ বলেন, পবিত্র সংসদে এমন অশ্লীল বক্তব্যে শুনে সংসদ সদস্য হিসেবে আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে। সংসদে যেভাবে অশালীন ও কদর্যভাষায় বক্তব্য দেয়া হচ্ছে, একজন সংসদ সদস্য হিসেবে সারা দেশের মানুষের কাছে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। পবিত্র সংসদে অশালীন ভাষা প্রয়োগের প্রতিবাদে আমি বক্তব্যে না দিয়ে এই স্থান ত্যাগ করছি। এই বলে তিনি সংসদ থেকে ওয়াকআউট করতে গেলে বিরোধী দলের সদস্যরা বিদ্রƒপ করে হাততালি দিলে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আবদুল লতিফ। তিনি বলেন, ‘আপনাদের লজ্জিত হওয়া উচিত, অথচ আপনারা হাততালি দিচ্ছেন!’ প্রতিবাদে আবদুল লতিফ বাজেটের ওপর বক্তব্য রাখা থেকে নিজেকে বিরত রেখে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন। সরকারি দলের অন্য সিনিয়র সদস্য ও মন্ত্রীরাও সংসদের মতো জায়গায় বিরোধী দলের কিছু নারী সংসদ সদস্যের অশ্লীল বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন। এসব কী হচ্ছে এই সময়ে? এর জবাব কি দেবেন এদেশের মহান রাজনীতিকরা? প্রকারান্তরে তারাও কি আশকারা দিচ্ছেন না? যদি না দিতেন তা হলে তারা এ ব্যপারে কিছু বলছেন না কেন? এই বাংলাদেশ তিরিশ লাখ শহীদের কাম্য ছিল না। তারা চাননি, এদেশের মানুষেরা এভাবে বারবার প্রতারিত হবে। আমার খুব দুঃখ হয়, এদেশের এমপিরা বিদেশ সফর করেন। তারা বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টে অধিবেশন দেখেন। তারপরও তারা শিক্ষা নেন না। কেন নেন না?
‘মন্দ’ এর বিপরীতে একটি শব্দ আছেÑ ‘ভালো’। দেশের মানুষ এখন সেই ‘ভালো’ শব্দটির অন্বেষণ করছেন। তারা খুব বেশি কিছু চান না। তারপরও তাদের সেই ন্যূনতম চাওয়া-পাওয়ায় পরিণত হচ্ছে না কেবলমাত্র প্রতারকদের রাজনীতির কারণে। আজ আমরা বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় দেখছি কেউ কেউ বলছেÑ ‘নো মোর হাসিনা-খালেদা।’ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এদেশ থেকে হাসিনা-খালেদাকে মাইনাস করা যাবে না। যা ওয়ান ইলেভেনে সম্ভব হয়নি, তা এই মুহূর্তে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এদেশের পরবর্তী রাজনৈতিক কর্ণধার তারেক রহমানÑ সজীব ওয়াজেদ জয়। এটা অনেকটাই নিশ্চিত। বাদ বাকিরা ঐ দুই পরবর্তী নেতার ধ্বজাধারী হিসেবেই থেকে যাবে। যারা পরিবর্তনকামী বলে নিজেদের জাহির করেছিলেন, তারা ছিটকে পড়েছেন। তাদের অনেকে এখন নিজ নিজ দলের বিরুদ্ধেই কথা বলছেন। তাতে কি বড় দুদল কর্ণপাত করছে? নাÑ করছে না। করবেও না। কারণ এরকম কয়েক ডজন নেতা ছিটকে পড়লেও বিএনপি-আওয়ামী লীগের কিছু যায় আসে না।
যে কথাটি বলা দরকার, তা হলো এই দেশটি খুব ভালো থাকতে পারতো। এই দেশের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারতেন। যদি কিছু মৌলিক বিষয়ে রাজনীতিকরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারতেন। এর প্রথমটি হচ্ছেÑ রাষ্ট্রীয় স্বার্থ সংরক্ষণ। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছেÑ সুশাসন প্রতিষ্ঠা। তৃতীয়টি হচ্ছে- দুর্নীতিবাজদের শক্ত হাতে দমন। যে দেশে রাজনীতিকরা ইলেকশন করতে কালো টাকার মালিকদের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকেন, সে দেশে কাজগুলো খুবই কঠিন। সুবিধাবাদীরা যে কোনো দেশের রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতিকে ধ্বংস কিংবা পঙ্গু করে দিতে পারে। আর সে জন্যই এই চক্রের বিরুদ্ধে সদাসতর্ক থেকে দেশের রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে হয়। বাংলাদেশে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। ফলে আমরা দেখেছি কোনো নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই মধুলোভী ভ্রমরেরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এরা নিজেদের হীনস্বার্থ হাসিলের জন্য দলকে, দলের নীতিকে ঘায়েল করতে মোটেই কার্পণ্য করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ এর নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুরির পেছনে হাওয়া ভবনের ত্রাসের ঘটনাগুলোও সম্পৃক্ত বলা যায়। এই বিতর্কিত ভবনের শীর্ষ কর্ণধাররা দেশে একটা মিনি সিন্ডিকেট চালিয়ে যাচ্ছিল, তা তৃণমূল পর্যায়ের মানুষও জেনে গিয়েছিল। গণমানুষ এই অবৈধ উত্থানকে কোনোমতেই মেনে নিতে পারেনি। একই অবস্থা আজকের আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও। ভবন না থাকলেও দেশের সর্বত্র দখলদারদের দৌরাত্ম্য। আমার মনে হয় না, আগামী কয়েক মাসে সরকার তা সামাল দিয়ে উঠতে পারবে। আর যদি তা-ই হয়, তবে ফলাফল কী হবে তা এখন আর কারোই অজানা থাকার কথা নয়।
--------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : শনিবার, ২৯ জুন ২০১৩
২| ২৯ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৫৭
নীলতিমি বলেছেন: আপনার মতো আওয়ামী চামচা না থাকলেই দেশ ভালো থাকতে পারতো ।
কিংবা অন্যকোনো বিএনপি কিংবা জামাত-এর চামচা !
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১০:৩৯
যোগী বলেছেন: বাংলাদেশের ভাল থাকার আশা দিন দিন কমে যাচ্ছে