নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেষবেলায় ক্ষমতার পালাবদলের আগে

০৬ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:১৭

শেষবেলায় ক্ষমতার পালাবদলের আগে

ফকির ইলিয়াস

==========================================



একটি পরিকল্পিত মিশন নিয়ে এগোচ্ছে এদেশের একাত্তরের পরাজিত শক্তি। আর তাদের যারা মদত দিচ্ছে, ওরা ক্ষমতালোভী। এদের রক্ত চাই। তারা লাশের ওপর দিয়ে এর আগেও ক্ষমতায় গেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আরিফ রায়হান দীপ ৮৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা গেছেন। গত ৯ এপ্রিল সকালে নজরুল ইসলাম হলের ছাত্র দীপকে হলে ঢুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এতে মাথায় ও পিঠে গুরুতর জখম হন তিনি। দীপ গণজাগরণের কর্মী ছিলেন। এটাও ছিল তার একটি অপরাধ। ঘাতকরা যখন হামলে পড়ছে, তখন সরকারি দল ব্যস্ত নিজেদের কোন্দল নিয়ে। ঘর সামলানো তো দূরের কথা, বরং নৌকাটির যে ডুবু ডুবু অবস্থা তা তারা খেয়ালই করছেন না।



একটি মহল সরকারকে শেষ কামড় দিতে চাইছে। ইতিহাস বলে সতেরো দিনেরও বেশি কোনো সার্ভাইভার বাঁচতে পারেন। সাভারের রানা প্লাজা ধসের ১৭ দিন পর জীবিত উদ্ধার হওয়া পোশাক শ্রমিক রেশমাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করেছে সেই মহল। তারা এই অপবাদ দিয়ে দেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করতে চাইছে। তাদের আসল মতলব কী- তা অনেকেরই জানা ও বুঝা দরকার।



পাউন্ড-ডলার ঢালতে পারলে বিদেশের কোনো কোনো রিপোর্টারকে কেনা যায়, এটা সকলেরই জানা। রেশমার ঘটনা ভাঁওতাবাজি কিনা এমন প্রতিবেদন করেছেন সেই ব্রিটিশ সাংবাদিক সিমন রাইট যাকে গ্রেপ্তার করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা পুলিশ। তবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো আয়োজনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা মানসম্মত নয় তা প্রমাণের জন্য নাটক সাজানোর অভিযোগে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপের নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে নাটক সাজিয়েছিলেন ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড সানডে মিররের সাংবাদিক সিমন রাইট। ওই অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারের খবরও সে সময় প্রকাশ করে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন। আরো একটি ঘটনা আলোচিত হচ্ছে ব্যাপকভাবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের জিএসপি সুবিধা স্থগিতের পর খালেদা জিয়ার নামে ওয়াশিংটন টাইমসে প্রকাশিত নিবন্ধটি নতুন করে আলোচনায় আসে।



বিরোধীদলীয় নেতা ওই নিবন্ধ লেখার কথা অস্বীকারের পর এ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের প্রেক্ষাপটে এর সত্যতা যাচাইয়ে দেশের অন্যতম ওয়েব পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সংবাদপত্রটি তাদের অবস্থান জানায়। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ই-মেইলের উত্তরে ওয়াশিংটন টাইমসের নির্বাহী সম্পাদক ডেভিড এস জ্যাকসন জানান, এজেন্টের মাধ্যমে পাঠানো নিবন্ধটি যে খালেদা জিয়ার তা নিশ্চিত হওয়ার পরই তা ছাপিয়েছেন তারা।



‘ওই নিবন্ধটি ওয়াশিংটন টাইমসের কাছে আসে মার্ক পার্সির মাধ্যমে, লন্ডনভিত্তিক এই মধ্যস্থতাকারী খালেদা জিয়ার পক্ষে কাজ করেন। নিবন্ধটি প্রকাশের আগে এবং পরেও তার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রক্ষা করেছি, আমরা এর নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে নিঃসন্দেহ।’



প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, মার্ক পার্সি ১৯৯২ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের প্রতিটি নির্বাচনের প্রচারের কাজে যুক্ত ছিলেন। তিনি এক সময় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোন অপারেটর ভোডাফোনের কমিউকেশন্স অফিসার ছিলেন। তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জার্মানির কমিউনিকেশন্স ফর ডয়চে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টে।



ওয়াশিংটন টাইমসে খালেদা জিয়ার নামে ওই নিবন্ধ প্রকাশের পর ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সমালোচনায় ফেটে পড়েন। সংসদেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য ছিল, নিবন্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করলে এর জন্য খালেদা জিয়ার ওই নিবন্ধকে দায়ী করেন সরকারি দলের এমপিরা। ওই নিবন্ধে জিএসপি সুবিধা বাতিলের জন্য সরাসরি আহ্বান জানানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, খালেদা জিয়া সংসদে বলেন, ‘বলা হয়েছে, আমি নাকি চিঠি দিয়ে এই সুবিধা বন্ধ করেছি। কিন্তু আমি কোনো চিঠি পাঠাইনি।’



বিরোধীদলীয় নেতার এই বক্তব্যের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাতে থাকা ওয়াশিংটন টাইমসে ছাপা ওই নিবন্ধের অনুলিপি তুলে ধরলে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এটা আমার নয়। এমন কোনো লেখা আমি পাঠাইনি।’



অথচ দেশবাসীর মনে আছে, খালেদা জিয়ার ওই নিবন্ধ প্রকাশের পর বিএনপি নেতারা তখন তা দলীয় প্রধানের বলেই স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। নিবন্ধ প্রকাশের পরদিন ১ ফেব্রুয়ারি নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের এক সভায় মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সরকার আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এসব বিষয়ে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসে নিবন্ধ লিখেছেন। গণতন্ত্রকে সুরক্ষা করার জন্য এই নিবন্ধ লেখা হয়েছে।’



সরকারি দলের নেতাদের সমালোচনার জবাবে তিনি আরো বলেছিলেন, ‘সরকারের আঁতে ঘা লেগেছে বলেই বিরোধীদলীয় নেতার প্রকাশিত নিবন্ধ নিয়ে গতকাল (৩১ জানুয়ারি) সংসদে কুরুচিপূর্ণ ভাষার সমালোচনা করা হয়েছে। তাদের সমালোচনাই প্রমাণ করে বিরোধীদলীয় নেতা নিবন্ধে সত্য কথা বলেছেন।’ তবে খালেদা জিয়ার অস্বীকারের পর মওদুদ তার আগের বক্তব্য থেকে সরে এখন বলছেন, নিবন্ধটি যে খালেদা জিয়ার তা তিনি বলেননি। এটাই হলো ‘মওদুদীও’ মিথ্যাচার। ডিগবাজি খাওয়া এই নেতা যে সহজে বোল পাল্টাতে পারেনÑ তা কে না জানে! মওদুদের পাশাপাশি মির্জা ফখরুলও ৬ ফেব্রুয়ারি বলেছিলেন, ‘দেশের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরতে বিরোধীদলীয় নেতা এই নিবন্ধ লিখেছেন। দেশের নাগরিক হিসেবে তিনি (খালেদা জিয়া) তা লিখতেই পারেন।’



খালেদা জিয়ার অস্বীকারের পর তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী এজন্য ওয়াশিংটন টাইমসের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে নোটিশ পাঠাতে সংসদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা সংসদে বলেছেনÑ এটা তার লেখা না। আমরা তার কথাই ধরে নিচ্ছি, কারণ বিরোধীদলীয় নেতা একটি ইনস্টিটিউশন। তিনি যেই হোক না কেন।’ ‘ওয়াশিংটন টাইমসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। অবশ্যই আইনি নোটিশ দিই এবং উপযুক্ত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ আদায় করি।’ এই হলো দেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সত্য-মিথ্যা খেলা। পাঠক, আপনাদের মনে আছে এ বিষয়ে আমি একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম। ‘ওয়াশিংটন টাইমসের নিবন্ধ এবং গণতন্ত্র রক্ষার নামে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা’Ñ শিরোনামের নিবন্ধটি গেলো ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, শনিবার দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছিল।



সন্দেহ নেই, চারটি নগর নির্বাচনে বিপুল ভোটে পাস করার পর বিএনপি এখন সরকারি দলকে নাস্তানাবুদ করার জন্য সকল প্রচেষ্টাই চালাচ্ছে। বিরোধী দল তা করতেই পারে। কিন্তু কথা হচ্ছে সরকারি মহাজোট তা প্রতিহত করছে কিভাবে? তারা কি প্রতিহত করতে পারছে? যদি পারতো, তা হলে চারটি নগর নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভোট বিএনপিদের বাক্সে যেতো না। এরশাদ কি মহাজোটে আছেন, নাকি নেই তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমার ধারণা, এরশাদ এবার বিএনপি জোটের দিকেই ঝুঁকছেন। কারণ মহাজোট তাকে মূল্যায়ন করেনি।



আমেরিকা জিএসপি সুবিধা স্থগিত করার পর সরকার অনেক কথাই বলছে। কিন্তু এর আগেই সরকার কার্যকর জোরালো ভূমিকা নিতে পারতো। না নেয়ার কারণ হলো সরকার সমর্থক বড় বড় ব্যবসায়ীরা অনেক রকমের গার্মেন্টস ঘাপলার সঙ্গে যুক্ত। আর এরাই সরকারি দলের আগামী নির্বাচনে প্রার্থী এমপিদের অর্থ জোগানদাতা। যার ফলে দুদক, গার্মেন্টস বিষয়ক স্পেশাল কমিটি- তাদের কিছুই করতে পারে না। পারছে না। এটা একটি রাষ্ট্রের জন্য খুবই দুঃখজনক।



বর্তমান সরকার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নানাভাবে দুর্ব্যবহার করছে। এটা বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক দেশই ভালো চোখে নিচ্ছে না। সোনালী ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যায়। অথচ তা না দেখে সরকার দূরবীন দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের নানা অসঙ্গতি খুঁজে। আমেরিকা, এই সরকারের ওপর চটে যাওয়ার এটা একটি অন্যতম কারণ।



বাংলাদেশ একটি ধর্মপ্রাণ মানুষের দেশ। প্রত্যেক ধর্মের মানুষই শান্তি চান। কথা হচ্ছে, যারা কট্টর মৌলবাদী তারা কি কখনো উদারপন্থী জনপ্রতিনিধিকে ভোট দেন? নাÑ দেন না। এর পাশাপশি নতুন যে বিষয়টি যুক্ত হয়েছে, তা হলো ক্ষমতাসীন দলের অনেক রাঘব-বোয়ালদের লুটপাট। এসব ‘ব্ল্যাক-ক্যাট’রা মানুষের মনে কী প্রভাব তৈরি করেছেন তা সরকারি নীতিনির্ধারকদের ভাবা উচিত। আমি জানি, এই শেষবেলায় এসে সরকারের শীর্ষমহলকে আর বেশি কথা বলার দরকার নেই। শোনার মানসিকতাও তাদের নেই। ভাবখানা যেন এমন, বর্তমান সরকারি দল বিদায় নিচ্ছে। আর বিএনপি ক্ষমতা পেয়েই যাচ্ছে। সেটা দেশের গণমানুষের ভোটের অধিকার। কিন্তু কারোই মারমুখী আচরণ করা ঠিক নয়। যা বলা দরকার তা উচিত যুক্তি দিয়ে বলা। জাতীয় সংসদে কেউ কেউ যে ভাষা ব্যবহার করেছেন- তা বলতেও লজ্জা করে। আবার কেউ কেউ এর আভিধানিক অর্থ খুঁজতে ‘আনন্দবাজার’কেও সাক্ষ্য মেনেছেন। বলে রাখিÑ ক্ষমতার পালাবদল ভালো। তবে তা যেন এদেশে আবারো বাংলাভাই-শায়খ রহমানের চারণভূমির ঝাণ্ডাধারীদের লীলাক্ষেত্র না হয়।

--------------------------------------------------

দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : শনিবার, ৬ জুলাই ২০১৩

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.